অগ্নিবীমা কি । অগ্নি বীমার প্রকারভেদ, ক্ষতিপূরন পাওয়া ও বাতিলের কারন 

0
43

আপনি কি অগ্নিবীমা সম্পর্কে জানতে আগ্রহী? ব্যবসা প্রতিষ্ঠান অথবা বাসা বাড়ির নিরাপত্তার সুবাধে অগ্নিবীমা করাতে চাচ্ছেন? কিন্তু অগ্নিবীমা সম্পর্কে যথাযথ ধারনা কিংবা কোন ক্ষেত্রে কোন ধরনের বীমা করবেন সেই বিষয়ে জানেন না? তবে এই আর্টিকেলটি আপনার জন্য। কেননা, এখানে আলোচনা হবে অগ্নিবীমা সংক্রান্ত সকল বিষয়ের খুঁটিনাটির উপর। 

সাল ১৬৬৬ তৎকালীন সময়ে লন্ডনে চার দিন চার রাত পর্যন্ত ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘটে অগ্নি সংক্রান্ত। সে ঘটনায় 436 একর এলাকা পুরে  একদম ছারখার হয়ে যায়। ক্ষতিগ্রস্ত হয় ১৩ হাজারেরও বেশি অট্টলিকার। সাল ১৮৬১, টালি  স্টেটের অগ্নিকাণ্ডের ক্ষতির পরিমাণ ছিল 10 লক্ষ পাউন্ড। তৎকালীন সময়ে যুদ্ধ মহাযুদ্ধ এবং বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন অগ্নিকাণ্ড মানুষকে বিচলিত করে তুলেছিল। 

মূলত অগ্নির ধ্বংসাত্মক রূপ থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য মানুষ বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন কৌশল আবিষ্কার করার চেষ্টা করে। এবং তারই ফসল বর্তমানে অগ্নিবীমা। আগুনের ধ্বংস থেকে বাঁচার জন্য বা  অগ্নি তাণ্ডবের কারণে হওয়া ক্ষয়ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে অগ্নি বীমা নামক পলিসিটি উঠে এসেছে। 

সভ্যতার শুরুতেই মানুষ আগুনের সাথে পরিচিত। এটি যেমন মানব সভ্যতাকে বিকশিত করতে সহায়তা করেছে তেমনই এটির অপব্যবহারের কারণে হয়েছে অনেক ক্ষয়ক্ষতি।যার কারণে আগুনে পুড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্পত্তির আর্থিক ক্ষয়ক্ষতিগুলো পুষিয়ে উঠতে অগ্নি বীমা এর বিকল্প নেই।  বর্তমানে প্রতিটি দেশের নামে বাংলাদেশেও বীমার প্রচলন রয়েছে এবং বীমার বিভিন্ন প্রকারভেদের মধ্যে অগ্নিবীমা অন্যতম।  নির্দিষ্ট প্রিমিয়াম গ্রহণ করার মাধ্যমে বিভিন্ন ইন্সুরেন্স কোম্পানি অগ্নি বীমা পলিসি ইস্যু করে থাকে।  

এই পর্যায়ে জানবো অগ্নিবীমা কি সেই সম্পর্কে বিস্তারিত সাথে থাকছে অগ্নিবির বার প্রকারভেদ সহ কিভাবে অগ্নিবীমার  ক্ষতিপূরণ পাওয়া যায় এবং কি কি কারণে অগ্নি সংক্রান্ত ঘটনা ঘটার পরেও ইন্সুরেন্স কোম্পানি দ্বারা সেটিকে বাতিল করা হয়। বাংলা আলো ওয়েবসাইট থেকে ইন্সুরেন্স বিষয়ক সিরিজে এবারের আর্টিকেলে থাকছে অগ্নিবীমা সংক্রান্ত সকল বিষয়ের খুঁটিনাটি। শুরু করা যাক অগ্নিবীমা কি সেই বিষয়ে জানার মাধ্যমে। 

অগ্নিবীমা  কি?

নামের মাধ্যমে বোঝা যাচ্ছে যে বিষয়টি আগুনের সাথে জড়িত। আগুনে পুড়ে যাওয়া বা আগুনে জন্য ক্ষয়ক্ষতি থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য যে বিমা প্রচলিত রয়েছে সেটিকে অগ্নি বীমা বলা হয়ে থাকে। এটি ইন্সুরেন্স কোম্পানি এবং গ্রাহকের মধ্যে ঘটা একটি চুক্তি মাত্র। 

এই চুক্তিতে এমন হয়ে থাকে যে,একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য এখানে বীমা গ্রহীতাকে বীমাকারি নির্দিষ্ট  প্রিমিয়াম প্রদান করবে যার বিনিময় স্বরূপ উক্ত সময়ের  মধ্যে বীমা গ্রহীতা যে বিষয়ে বীমাটি করিয়েছে সেটির কোন প্রকার ক্ষতির সম্মুখীন হলে বীমা কারী প্রতিষ্ঠান উক্ত ক্ষয়ক্ষতির ক্ষতিপূরণ পরিশোধ করবে। 

এক্ষেত্রে আর এস শর্মা এর মতে অগ্নি বীমা হলো, “অগ্নিবীমা চুক্তি একটি চোখ দিয়ে যার মাধ্যমে প্রতি তাদের বিনিময়ে একপক্ষ অপর এক পক্ষের বর্ণিত বিষয়বস্তু দ্বারা অথবা চুক্তিতে বর্ণিত অন্য কোন বিপদে ক্ষতিগ্রস্ত হলে চুক্তিতে নির্ধারিত পরিমাণ ক্ষতিপূরণ করার অঙ্গীকার করে।”

এবং সহজে বলতে গেলে, অগ্নিকাণ্ডের কারণে সৃষ্ট ক্ষতির ক্ষতিপূরণের দেওয়ার প্রতিশ্রুতিকে অগ্নিবীমা বলা হয়। এই পর্যায়ে জানব অগ্নি বীমার কিছু বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে। 

অগ্নি বীমার বৈশিষ্ট্য সমূহ 

অগ্নিবীমা কি সে বিষয়ে জানার পরে অগ্নিবীমা সংক্রান্ত বিষয় গভীরভাবে বুঝতে প্রয়োজন অগ্নিবীমার বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে জানা। অগ্নিবীমার বৈশিষ্ট্য সেইগুলো যেগুলোর প্রেক্ষিতে অগ্নিবিমাকে চিহ্নিত করা যাবে। এই পর্যায়ে অগ্নিবীমার কিছু বৈশিষ্ট্য উপস্থাপন করা হলো।

১)  অগ্নিবীমা নামক চুক্তিতে সাধারণত দুইটি পক্ষ থাকে। একপক্ষ বীমা গ্রহণ করে এবং অন্যপক্ষ বীমা  প্রিমিয়াম গ্রহণ করে । 

২) অন্যান্য সকল বীমা পলিসির মতো এটিও একটি ক্ষতিপূরণের চুক্তি।

৩) অগ্নিবীমা যুক্তির বিষয়বস্তু সর্বদা সম্পত্তি হবে।

৪) অগ্নি সংক্রান্ত কোনো ক্ষতি হলে সেটির ক্ষতিপূরণ পেতে হলে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে অগ্নিজড়িত ক্ষতি সংঘটিত হতে হবে যা বীমা চুক্তিতে উল্লেখ থাকবে।

৫) অগ্নি বিমার ক্ষেত্রে ক্ষতির পূরণের পরিমাণ কত হবে, সেটি  নির্ধারণ করে বীমা প্রিমিয়ামের উপরে এবং উক্ত ঘটনার ক্ষয়ক্ষতির ওপর।

৬) উক্তি বীমার ক্ষেত্রে এটির অবশ্যই বিষয়বস্তু নির্ধারণ করা থাকে। যেমন, অগ্নি বা আগুন তখনই নির্ণয় হয় যখন সাধারণভাবে এটি কোন কিছুকে পুড়িয়ে ফেলে। তাছাড়া কেবলমাত্র আলো বা উত্তাপ সৃষ্টি করে তা কখনো আগুন হিসেবে বিবেচিত হবে না। যার কারণে বজ্রপাত বা বিদ্যুৎ উত্তাপ বা আলোর সৃষ্টি করলেও তা অগ্নি বিমার ক্ষেত্রে আগুন বলে বিবেচিত হবে … যার কারণে বজ্রপাতের ফলে কোন কিছু পুড়ে গেলে সেটিকে অগ্নিবীমার আওতাভুক্ত করা হয় না। 

অগ্নি বীমার প্রকারভেদ

সময়ের সাথে সাথে এবং ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসারের কারণে অগ্নি বীমার সম্প্রসারণ ঘটেছে। বর্তমানে অনেকেই রয়েছে যারা অগ্নি বীমা করতে আগ্রহী। এক্ষেত্রে বীমা গ্রহীতার চাহিদা প্রয়োজন সম্পত্তি তথা বীমার বিভিন্ন বিষয়বস্তু প্রকৃতি, মূল্য, ঝুঁকি ইত্যাদি প্রতিনিয়ত পরিবর্তন হওয়ার কারণে নতুন নতুন অগ্নিবীমার পলিসির  সৃষ্টি হয়েছে। এই পর্যায়ে অগ্নি বীমা সংক্রান্ত কিছু ভিন্ন ভিন্ন পলিসি সম্পর্কে ও উপস্থাপন করা হলো, এগুলোকে অগ্নিবীমার প্রকার বলা যেতে পারে।

মূল্যায়িত  অগ্নিবীমা পত্র

অগ্নিবীমার অনেকগুলো প্রকারভেদের মধ্যে মূল্যায়িত বীমা পত্র বেশ জনপ্রিয়। এটি এমন এক ধরনের  চুক্তি যেখানে বীমার বিষয়বস্তুর মূল্য পূর্বেই নির্ধারণ করা হয়ে থাকে। যখন অগ্নিকাণ্ডের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয় তখন বীমা কারী বিভাগিতাকে উক্তমূল্যের সমপরিমাণ ক্ষতিপূরণ দিয়ে থাকে। এক্ষেত্রে যেহেতু ক্ষতিপূরণের পরিমাণ পূর্বে নির্ধারিত করা রয়েছে। তাই বীমা দাবির সময় নতুন করে সম্পদের মূল্যের প্রমাণপত্র উপস্থাপন করতে হয় না। 

খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং মূল্যবান জিনিসপত্র যেমন স্বর্ণালঙ্কা ও শিল্প কর্মের ক্ষেত্রে এই ধরনের বমাপত্র গ্রহণ করা হয়ে থাকে। মূল্যায়িত বীমা পত্রের বেশ কিছু সুবিধা অসুবিধা রয়েছে যা  নিম্নরূপ: 

 সুবিধা

  • সম্পত্তির মূল্যের প্রমাণপত্র দাখিল করতে হয় না।
  •  একজন বীমা কারী পূর্বে থেকেই ক্ষতির পরিমাণ বা দাবির পরিমাণ সম্পর্কে অবহিত থাকে।
  •  নৈতিক বিপত্তির সম্ভাবনা এতে কম থাকে।

 অসুবিধা

  • এই বীমাটির ক্ষতিপূরণের নীতি যথাযথভাবে কার্যকর হয় না।
  • প্রিমিয়ামের হার তুলনামূলক বেশি হয়।
  • ক্ষতির পরিমাণ যদি আংশিক হয় তবে তার পরিমাণ নির্ণয়ে জটিলতা পোহাতে হয়।
  •  সম্পত্তির মূল্য বেড়ে গেলে নতুন সম্পত্তি ক্রয়ের ক্ষেত্রে বীমা গ্রহিত তার স্বার্থ ক্ষুন্ন হয়।

অমূল্যায়িত বীমা পত্র

একটি মূল্যায়িত বীমা পত্রের একদম বিপরীত। যেহেতু এখানে ক্ষতির পরিমাণ পূর্বে নির্ধারিত করা থাকে না তাই যতটুকু ক্ষতি হয়েছে তার বাজার মূল্যের উপর নির্ভর করে ইন্সুরেন্স কোম্পানিগুলো বীমা গ্রহে তাকে  ক্ষতিপূরণ প্রদান করে। এক্ষেত্রে অবশ্যই ক্ষতিপূরণের লিখিত উপস্থাপন প্রয়োজন রয়েছে।

গড়পরতা বীমা পত্র

মানুষের মধ্যে বেশ ভিন্নতা রয়েছে, ভিন্নতা রয়েছে তাদের চিন্তা ভাবনায়। যার ফলে অগ্নিবীমার ক্ষেত্রে দেখা যায় কেউ বাজার মূল্য থেকে কম মূল্যের বিমা করে থাকে আবার কেউ কেউ বাজার মূল্য থেকে বেশি মূল্যের বিমা করে থাকে। যেহেতু এটি একটি বড় সমস্যা তাই এটিকে সমন্বয় সাধনের মাধ্যমে যে বীমা পত্রটি উপস্থাপন করা হয় সেটিকে  গড়পরতা বীমা পত্র বলা হয়।

 এ ক্ষেত্রে বীমার মূল্য এবং বর্তমান বাজার মূল্য এই দুইয়ের মধ্যে সমন্বয় সাধন ঘটিয়ে অনুপাতের হারে ক্ষতিপূরণ নির্ধারণ করা হয়। অর্থাৎ যে বীমা পত্রে বীমা গ্রহীতাকে ক্ষতিপূরণ করা হয় বীমাকিত মূল্য ও বাজার মূল্যের সমন্বয়ের মাধ্যমে সেটিকেই গড়পরতা বীমা পত্র হিসেবে  চিহ্নিত করা হয়। 

সুনির্দিষ্ট বীমা পত্র

 যখন কোন বীমার পরিমাণ সুনির্দিষ্ট অবস্থায় থাকে তখন সেটিকে সুনির্দিষ্ট বীমা পত্র বলা হয়। সাধারনত এটি কিছুটা মূল্যায়িত বীমা পত্রের মতো হলেও সম্পূর্ণরূপে নয় কেননা মূল্যায়িত বীমা পত্রে ক্ষতির পরিমাণ কম বেশি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে তবে সুনির্দিষ্ট বীমা পত্রের ক্ষেত্রে ক্ষতি যাই হোক না কেন বীমা কারী প্রতিষ্ঠানকে চুক্তিতে উল্লেখিত ক্ষতিপূরণ প্রদান করতে হবে। 

ভাসমান  বীমা পত্র

এই ধরনের বীমা পত্র গুলো একাধিক জায়গা বা রক্ষিত পণ্য অথবা সম্পত্তি এর জন্য গ্রহণ করা হয়ে থাকে। যদি একই মালিক বিভিন্ন স্থানে রক্ষিত সম্পত্তির জন্য একটি মাত্র বীমা পত্র গ্রহণ করে তাকে ভাসমান বীমা পত্র বলা হবে। ভাসমান বীমা পত্রের সুবিধা হল, মজুদ পণ্যের হ্রাস বৃদ্ধির ক্ষেত্রে এ ধরনের বীমা বেশ কার্যকর হয়ে থাকে। এবং অসুবিধা হল গড় সালামি বা প্রিমিয়াম করা বেশ জটিল প্রক্রিয়া। 

বাড়তি বীমা পত্র

যে সকল কারবারি মজুদ পণ্যের পরিমাণ নির্দিষ্ট না করে কম কিংবা বেশি ঘটে তাদের জন্য বাড়তি বীমা পত্র বেশ কার্যকর। এক্ষেত্রে বীমা গ্রহিতার চেয়ে পরিমাণ মজুদ পণ্য তার কাছে সর্বদা থাকে তার জন্য একটি বীমা এবং এর অতিরিক্ত যে পরিমাণ মজুদ  হয় তার জন্য অন্য একটি বীমা পত্র গ্রহণ করা হয়ে থাকে। এই খাতে একই ব্যক্তি একই পণ্যের জন্য দুইটি বিভাগ গ্রহণ করে থাকে। প্রথম মজুদ বীমাটিকে প্রথম ক্ষতির বীমা পত্র এবং পরের বিমাটিকে বাড়তি বিমাপত্র হিসাবে চিহ্নিত করা হয়।

ঘোষণা যুক্ত  বীমা পত্র

 এই জাতীয় বীমা পত্র বাড়তি বীমা পত্রের অসুবিধা সমূহ দূর করার নিমিত্তে তৈরি হয়েছে। এক্ষেত্রে বীমা গ্রহীতার সর্বোচ্চ পরিমাণের মজুদ মালের মূল্য ধরে বীমা করা হয়।প্রাথমিকভাবে সাধারণত 75% প্রিমিয়াম প্রদান করা হয়। পরবর্তীতে নির্দিষ্ট সময় অন্তর সাধারণত মাসে মজুদ পরিমাণ পণ্যের মূল্য ঘোষণা দিতে হয় এবং বচ্ছর শেষে মোট মজুদের গড় করে প্রিমিয়াম নির্ধারণ করা হয়। 

যদি প্রিমিয়াম পূর্বের প্রদত্ত প্রিমিয়াম থেকে কম হয় তবে তত পরিমাণ অর্থ ফেরত দেওয়া হয় আর প্রিমিয়াম বেশি হলে দাবি বা অতিরিক্ত প্রিমিয়াম বীমা কারিকে দিতে হয়। 

সমন্বয়যোগ্য বীমা পত্র

এই ধরনের বীমা পত্রের ক্ষেত্রে বীমাকৃত মূল্য বীমা পত্র গ্রহণের সময় কালেপ্রকৃত মজুদ পণ্যের মূল্যের সমান হবে। এই মূল্য অস্থায়ী প্রিমিয়াম নির্ধারণ করা হয় এবং তা বীমা পত্র গ্রহণ করলে পরিশোধ করতে হয়। এক্ষেত্রে মজুদ পণ্যের পরিমাণ কম বা বেশি হলে তা ঘোষণা প্রদানের মাধ্যমে জানিয়ে দিতে হয় কেননা ঘোষণা অনুযায়ী বীমাকারী প্রতিষ্ঠান বীমা কিস্তি বেশি বা কম করে থাকে। যতবার মজুদ পণ্য হ্রাস বা বৃদ্ধি পাবে ততবারই ঘোষণা প্রদান করতে হবে।

পূর্ণ স্থাপন বীমাপত্র

মূলত দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর এই ধরনের বীমা চালু হয়। অগ্নিকাণ্ডের কারণে সম্পত্তি নষ্ট হলে তার জন্য কোন প্রকার ক্ষতিপূরণ না দিয়ে উক্ত সম্পত্তি পুনরায় প্রতিস্থাপন করার জন্য দিমাকারী প্রতিষ্ঠান প্রতিশ্রুতি বন্ধ হয়ে থাকে অনেক সময় বীমা কারী সম্পত্তি প্রতিস্থাপনে প্রয়োজনীয় অর্থ প্রদানে অধিকার সংরক্ষণ করে রাখে। এই ধরনের বিমাপত্র শুধুমাত্র যন্ত্রপাতি ও দালানকোঠার জন্য প্রদান করা হয়। 

অগ্নি নিবারণি বিকল বীমা পত্র

এটি খুব গুরুত্বপূর্ণ বীমা পত্র।অগ্নি নিবারণী যন্ত্র অনেক দালানকোঠায় ব্যবহার করা হয়ে থাকে। যদি অগ্নিকান্ড ঘটে তবে যন্ত্রগুলো সক্রিয়ভাবে চালু হয় এবং অগ্নি নিবারণে কাজ করে যায়। হঠাৎ করে যদি শব্দটি নষ্ট হয়ে পড়ে এবং দিমাকিত সম্পত্তির ক্ষতিগ্রস্ত হয় তবে তার ক্ষতিপূরণ আদায়ের নিমিত্তে এ ধরনের বীমাপত্র গ্রহণ করা হয়ে থাকে। 

অগ্নি বীমা পেতে করনীয় 

যখন কোন ব্যক্তি বীমার প্রিমিয়াম পাওয়ার জন্য আবেদন করে, তখন প্রতিষ্ঠান থেকে দায়িত্ব কর্মকর্তা উক্ত দাবিটি সঠিক কিনা তা যাচাই-বাছাই করতে আসে যার কারণে গ্রাহককে অবশ্যই বেশ কিছু বিষয় সচেতনতা অবলম্বনের সাথে কিছু কাজ করে রাখতে হবে পূর্বেই। এই পর্যায়ে সে কাজগুলো কি সে সম্পর্কে জানানো হচ্ছে। 

১) যখনই  বীমা সংক্রান্ত যে কোন বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হবে তখন বীমা চুক্তির সাথে প্রয়োজনীয় যাবতীয় জিনিস যেমন: বীমা অংক কত টাকা, উক্ত বীমাতে কি ধরনের কভারেজ রয়েছে, তাছাড়া বীমা যুক্তিতে কোন কোন বিষয় লিপিবদ্ধ আছে আর কোন কোন বিষয় অন্তর্ভুক্ত নেই সেসব  যথাসময়ে উপস্থিত রাখতে হবে. 

২) পলিসির যে প্রিমিয়াম প্রদান করা হচ্ছিল সেটি সঠিকভাবে কোম্পানিতে জমা হয়েছে কিনা সে বিষয়ে যাচাই করা হবে তাই যখনি কোন প্রিমিয়াম কোন এজেন্ট এর মাধ্যমে প্রদান করবেন তখন অবশ্যই যাচাই করবেন উক্ত অর্থ ঠিকভাবে কোম্পানিতে জমা হচ্ছে কিনা। 

৩)যখনই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটবে সে সময় থেকে যত দ্রুত সম্ভব বীমা কোম্পানিকে সেই বিষয়ে অবগত করতে হবে। পাশাপাশি উক্ত হতাহতে কি পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তার লিখিত আকারে জানাতে হবে। 

৪) ক্ষতিপূরণের পরিমাণ কত হবে সেই বিষয়ে সিদ্ধান্ত বা  নিশ্চিত হওয়ার আগ পর্যন্ত উক্ত সম্পত্তির হস্তান্তর মেরামত বা পূর্ণ স্থাপন মূল কোন কার্যক্রম করা যাবে না।

৫) ইন্সুরেন্স কোম্পানির সমন্বয় সাধনকারীর সাথে যোগাযোগ রাখতে হবে এবং ইন্সুরেন্স চুক্তিপত্র যদি হারিয়ে যায় বা অন্য কোন ভাবে নষ্ট হয়ে যায় তবে শীঘ্রই বিমাপত্রটির একটি অনুলিপি কোম্পানির কাছ থেকে সংগ্রহ করে নিতে হবে। 

৬) বিমার সাথে সংযুক্ত প্রতিটি ফাইল যখন কোন অ্যাডজাস্টারের কাছে জমা দেবেন তখন সতর্কতা অবলম্বন করুন এবং প্রতিটি ফাইল এর কপি আপনার কাছে রেখে দিন।

৭) যখন বীমা দাবি করবেন তখন থেকে ৯০ দিনের মধ্যে নিষ্পত্তি না হলে কোম্পানির কাছে জিজ্ঞাসাবাদ করুন এবং উক্ত ঘটনার দেরীর ব্যাখ্যা চান। 

৮) যদি ইন্সুরেন্স কোম্পানি ৯০ দিনের মধ্যে বীমা দাবি পরিশোধ করতে না পারে তবে ৯০ দিনের পর থেকে প্রতিদিন বিলম্বের জন্য ব্যাংক সুদের হারে মাসিক হারে ৫% করে যোগ হতে থাকবে। এরপর সুদ সহ বীমার পূর্ণ টাকা পরিশোধ করা হবে। 

প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস 

  • সঠিকভাবে পূরণকৃত বীমা দাবির ফরম (ফায়ার ক্লেইম ফরম),
  • সমর্থনকারি কাগজ বা নথিসহ অনুমিত ক্ষতির পরিমাণ,
  • ফায়ার ব্রিগেডের প্রতিবেদন,
  • ফায়ার লাইসেন্স কপি,
  • অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা সম্পর্কে স্থানীয় চেয়ারম্যান বা ওয়ার্ড কমিশনারের বিবৃতি,
  • ক্ষতিগ্রস্ত পণ্যের আমদানির বা স্থানীয় চালানপত্র,
  • ঘটনার সময় উপস্থিতির লিখিত বিবৃতি,
  • সিল-স্বাক্ষরসহ জেনারেল ডায়েরি বা জিডি’র অনুলিপি,
  • অগ্নিকাণ্ডের আগের তিন মাসের স্টক রেজিস্টারের অনুলিপি এবং ব্যাংক স্টেটমেন্ট ইত্যাদি।
  • এছাড়াও ক্ষতিগ্রস্ত প্রতিষ্ঠানের ধরণ অনুযায়ী অন্যান্য কাগজপত্র প্রয়োজন হতে পারে।

অগ্নি বীমা না পাওয়ার কারন সমূহ 

  • প্রাকৃতিক আবহাওয়ার কারনে যেমন বর্জপাত ঘটলে। 
  • অসম্পূর্ণ পাইপলাইন, ত্রুটিযুক্ত পাইপলাইন থাকলে।
  • অসম্পূর্ণ নকশা, কাঠামোগত দুর্বলতা, অপরিমিত উপাদান (রড, সিমেন্ট, বালু, ইট) বিন্যাসের কারনে। 
  • ত্রুটিযুক্ত নকশা বা অদক্ষ কারিগরের কারনে সম্পদের ক্ষতি হলে।
  • সরকারি নির্দেশের ফলে পরিবর্তন ঘটানো হলে। 
  • সিধেল চুরি, বাড়ী ভেঙ্গে চুরি করা হলে। 
  • প্রস্তাবিত বীমার বিষয়বস্তু বা সম্পদের উপর নিজ (বীমা গ্রাহক এবং বীমাকারী) স্বার্থ না থাকা।
  • বৈদ্যুতিক বা যান্ত্রিক গোলযোগ এর ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হলে। 
  • প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ  না করা হলে।

গুরুত্বপূর্ণ মন্তব্য 

এই ছিলো অগ্নিবীমা কি, অগ্নি বীমার প্রকারভেদ, ক্ষতিপূরন পাওয়া ও বাতিলের কারন সমূহ নিয়ে বিস্তারিত ভাবে উপস্থাপন করা আর্টিকেল। আশা করি উক্ত আর্টিকেলের মাধ্যমে অগ্নিবীমা সংক্রান্ত যাবতীয় সকল বিষয়ে ধারনা প্রদান করা হয়েছে। এটি ব্যতীত আপনি যদি অন্যন্য বীমা সম্পর্কে জানতে চান তবে বাংলা আলো ওয়েবসাইটের ইন্সুরেন্স ক্যাটাগরিটি অনুসরণ করতে পারেন।

Visited 10 times, 1 visit(s) today

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here