অতিরিক্ত চিন্তা থেকে মুক্তি পাওয়ার উপায় | বাংলা আলো 

0
4

– 

আপনি কি তাদের মধ্যে একজন যে কি-না দিনের সিংহভাগ সময় নষ্ট করে থাকে অতিরিক্ত চিন্তা করে? আপনি এর বেরিয়ে আসার জন্য অতিরিক্ত চিন্তা থেকে মুক্তি পাওয়ার উপায় খুজছেন? তবে এই আর্টিকেলটি আপনার জন্য। কারন এখানে আলোচনা করা হবে আপনার সমস্যা নিয়ে এখন খুজে দেয়া হবে সমস্যার সমাধান।  

যে মানুষ সারাক্ষণ চিন্তা করে, তার বিবেচনা করা ছাড়া চিন্তা করার কিচ্ছু নেই। তার জন্য সে বাস্তবের জীবন থেকে দূরে সরে যায় এবং বিভ্রমের দুনিয়ায় বাস করতে থাকে। 

যারা অতিরিক্ত চিন্তা করেন তারা কাজ করার শক্তি হারিয়ে ফেলেন। অতিরিক্ত চিন্তা করলে আমাদের মাথায় ইগো এবং নেগেটিভ থটস ক্রমশ চেপে ধরে। সেই বিবেচনা ধীরে ধীরে রিয়েলিটিতে পরিণত হয়। 

আপনি ঠিক যেমন বিবেচনা করবেন ঠিক তেমনি হবে আপনার জীবনের প্রতি অনুভূতি। জীবনে এগিয়ে চলার ধরন অনেকাংশে নির্ভর করে মানুষের ভাবনার উপর। সফল লোকেরা মনে করেন, বিচার-বিবেচনার অনেক শক্তি আছে। যদি সঠিক পদ্ধতিতে করা যায় তাহলে এমন কোন লক্ষ্য নেই যে আপনি হাসিল করতে পারবেন না। 

যখন আমরা কোন জিনিস ভাবতে শুরু করি তখন আমাদের ব্রেইন ঠিক সেই জিনিসের সঙ্গে জড়িত অনেক বিষয় নিয়ে একটা চেইন তৈরি করে। কিন্তু সমস্যা হল চেইনটা এমন জটিল এবং এত লম্বা হয়ে যায় যে আপনি নিজেই ভুলে যান কোথা থেকে শুরু হয়েছিল। 

নিজের চিন্তার গোলকধাঁধায় নিজেই হারিয়ে যান। আপনি যতই ভাববেন, ভাবনার কোন শেষ নেই। ধরুন আপনি কোন কাজ শুরু করতে চলেছেন। কিন্তু শুরু করার আগেই ভাবতে বসলেন: 

  • কাজটা পারবে তো? 
  • কাজটা কঠিন না তো ?  
  • যদি কঠিন হয় কি করব? 
  • যদি না পারি কি হবে? 

এভাবেই আপনি দেখবেন আপনার কাজ করার ইচ্ছে একেবারে মরে গেছে। আপনার মাথায় নেগেটিভ থটস ঘুরে বেড়াবে এবং তারা এটা ভাবতে বাধ্য করবে যে আপনি কাজটা না করে ঠিকই করেছেন। 

এর ফলে আপনি একটার পর একটা কাজ এভাবেই নষ্ট করবেন। এতে কোনো লাভ তো হলোই না উল্টে আপনার ক্ষতি হলো। তাই সময় থাকতে থাকতেই নিজের চিন্তার জাল থেকে মুক্ত হন। বিচারের শৃঙ্খল ভেঙে বাস্তবের মাটিতে পা দিন। 

অনেক সময় আমরা কাল্পনিক দুনিয়া বানিয়ে বাস্তবের সঙ্গে জোড়ার চেষ্টা করি। বহু মানুষকে আপনি বলতে শুনবেন, 

  • চাকরি করে আমি গাড়ি কিনব! 
  • বাড়ি কিনব! 
  • আমি ক্লাসে ফার্স্ট হবো! 
  • আমি বিরাট কোম্পানিতে চাকরি করব! 

কিন্তু এগুলোর সবটাই স্বপ্ন। যা আমরা নিজেদের দেখাই কোনটাই বাস্তব হয়নি। কল্পনা আর বাস্তবের দুনিয়া থেকে তারা শত শত দূরে। এই সব কল্পনা আমাদের ইলিউশন বা বিভ্রমের অন্ধকারে ডুবিয়ে দেয়। আমরা দেখতে পাই না আমাদের সঙ্গে কি হতে চলেছে।

মনে আছে প্রথম প্রেমের কথা ? প্রথম প্রেমে পড়লে মানুষ অন্ধ হয়ে যায়। চারপাশের দুনিয়া থেকে সে একেবারে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। মনের মধ্যে থাকে শুধু সেই মানুষটাই। ঠিক তেমনই হল চিন্তা। চিন্তা আমাদের বাস্তবের মাটিতে পা রাখতে দেয় না। এটা খুবই ডেঞ্জারাস। 

এই কাল্পনিক বিচার আমাদের মধ্যেই ইগোর জন্ম দেয়। এর ফলে আমরা নিজেদের ওপর থেকে কন্ট্রোল হারিয়ে ফেলি। লেখক বলেন, “আমাদের উচিত বর্তমানে বেঁচে থাকা” আমরা – এই মুহূর্তে কি পরিস্থিতি, আজ কি ঘটছে, সেই দিকে নজর দেবো। আর যদি নিজের লক্ষ্য পূরণ আমরা না করি তাহলে কালকের দিন টা দেখবো কেমন করে? 

আমরা এখন ভীষণ ভাবেই আত্মকেন্দ্রিক হয়ে পড়ছি। নিজেদের ছাড়া আমরা কিছুই বুঝি না। আমাদের উচিত অন্যদের জন্য ভাবা। আশেপাশে যা ঘটছে তাতে ইনভলব্ড থাকা।

এত গেল তত্ত্বকথা,আপনি হয়তো ভাবছেন উদাহরণ কোথায় আছে জনাব। আছে, আছে, কাহিনী তো আপনাদের শোনাতেই হবে। তাহলে শোনা যাক, একজন কমান্ডার এর জীবন কাহিনী। তার পরিণতি কি হয়েছিল? সেটা আপনারা নাহয় পরেই বুঝবেন।

জর্জ ম্যাকলেনন, তিনি আমেরিকান সোলজার তো ছিলেনই সেইসঙ্গে সিভিল ওয়ার ইউনিয়ন জেনারেল এবং নিউজার্সির গভর্নর ছিলেন। জর্জের টিমের সৈনিকরা তাকে খুবই ভালোবাসতেন। 

১৮৬২ এর জুলাইয়ে ৭ দিনের লড়াই শুরুর সময় জর্জ নিজের সেনার কামান সামলাচ্ছিলেন। তিনি নিজেদের সৈন্য নিয়ে রবার্ট এলি এবং তার সৈনিকদের উপর হামলা করেন। জর্জ ভাবছিলেন তার সৈনিকরা তার কন্ট্রোলেই আছেন। 

এই ফাঁকে রবার্ট এলি এবং তার সৈন্য দল নিজেদের রক্ষা করার পরিস্থিতিতেই চলে আসে। জর্জ হারার ভয়ে পেছনে সরে যান। তার মাথায় তখন অন্য কিছু ঘটছিল। যুদ্ধের মাঝে তাকে দেখে মনে হচ্ছিলো যেন তিনি কোথাও হারিয়ে গেছেন, একটা ঘোরের মধ্যে আছেন, কেমন উদাসিন ভাব। 

নিজের বিচার এর জন্যই তিনি এই লড়াইটা হেরে যান। এত বড় অসফলতার পরেও, রাষ্ট্রপতি আব্রাহাম লিংকন, জর্জকে আরো একটা সুযোগ দেওয়ার কথা ভাবলেন। যা প্রায় দু’মাস পর এন্টিএটোমে হয়েছিল। কিন্তু এবারেও জর্জ, এলি ও তার সেনাদের হারাতে অসফল হল। 

এই ব্যর্থতা দেখে ভীষণই নিরাশ হয়ে পড়েন আব্রাহাম লিংকন। বাধ্য হয়েই তিনি জর্জকে জেনারেলের পদ থেকে সরিয়ে দেন। আপনি কি জানেন ইউনিয়ন জেনারেল হিসেবে জর্জ এত খারাপ কেন ছিলেন? 

কারণ তিনি নিজের বিবেচনার মধ্যে আটকে ছিলেন। কখনো সেখান থেকে বের হতে পারেননি। তিনি সবসময় ভাবতেন তিনি একজন বিরাট মুখ্য সেনা ছিলেন। যে কাউকে হারানোর ক্ষমতা তার আছে। এমনটাই ভাবতেন জর্জ। যুদ্ধে জিতলে নিজের বড়াই করা ছিল তার স্বভাব। 

নিজেকে বাহবা দিতে ভালোবাসতেন তিনি। এমনও হয়েছে যে লড়াই এখনো শেষই হয়নি তিনি ভাবতেন জিতে গেছেন। নিজের মনেই ভেবে তিনি এটা বাস্তবের সঙ্গে মিলানোর চেষ্টা করতেন আর এটাই হয়েছিল তাঁর কাল।

নিজের ভাবনাকে কন্ট্রোল করতেই হবে। কখনো আমাদের কাবু করতে দেওয়া চলবে না। ধরুন পরীক্ষা দিতে যাওয়ার আগে আপনি ভেবে বসলেন আমারতো সব মুখস্থ, সব জানি আর পড়ে কি লাভ! 

তাহলে কি আপনি পরীক্ষায় পাস করতে পারবেন? খেলতে যাওয়ার আগেই ভাবলেন আমিতো খেলার সব নিয়ম জানি। কিভাবে অপর পক্ষের সঙ্গে লড়াই করব সেটাও জানি। আর প্র্যাকটিস করে কি লাভ! তাহলে কি আপনি খেলায় জিততে পারবেন? কক্ষনো না। 

আর আমরা এভাবেই ভাবনার জালে ভেসে থাকি। আর পরে বাস্তবের মাটিতে ধাক্কা খেয়ে পরি। কেন? কারন আমরা শুধু স্বপ্ন দেখেছি কোনো কাজ করিনি। পরিশ্রম না করলে কখনোই আমরা সফল হতে পারব না। 

লেখক তাহলে স্বপ্ন দেখতে বারণ করেননি। স্বপ্ন তো সবাই দেখে। স্বপ্ন দেখাও ভালো। কিন্ত শুধুই স্বপ্ন দেখে গেলে বিপদ। সেটা বাস্তবে পূরণ করার জন্য কাজ করতে হবে। কল্পনায় যদি কোন প্ল্যান আমরা বানায় তাহলে সেটা ভুল হবেই। কারণ সেই প্ল্যানের কোন বাস্তবিকতা নেই। 

প্ল্যানটা বাস্তবে করতে গেলেই দেখা যাবে, পদে পদে কতইনা বাধার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। আর আপনি সেগুলো অতিক্রম করে লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে যাচ্ছেন। লেখক বলেন আমাদের বাস্তবে বাঁচতে হবে। বর্তমান নিয়ে ভাবতে হবে। আমরা নিজেদের কতই না মিথ্যে কাহিনী শোনাই। 

কিন্তু আমাদের ব্রেইন সেগুলোকেই সত্যি ভেবে বসে। আমাদের অ্যাকশন ও তাই অবাস্তব হয়। ইলিউশন আর ইগোতে থাকতে থাকতে আমরা নিজেদের ক্ষতি করি। কত সম্পর্ক এভাবে নষ্ট হয়, কত কাজ অসম্পূর্ণ থেকে যায়। সফল যদি হতে চান আর দেরি না করে নিজের চিন্তার জাল থেকে মুক্ত হন। ড্রিমি ওয়ার্ল্ড থেকে বেরিয়ে বাস্তবে পা দিন। পরিশ্রম করুন। দেখবেন সাফল্য আপনার কাছে ঠিক আসবে।

পরিশেষে, এই ছিলো “অতিরিক্ত চিন্তা থেকে মুক্তি পাওয়ার উপায়” নিয়ে বিস্তারিত আর্টিকেল যেখানে মানুষের চিন্তা ভাবনা কিভাবে কাজ করে, চিন্তার ফলে মানুষের বাস্তবিক জীবনে কি পরিবর্তন আসে এবং চিন্তা যদি অতিরিক্ত মাত্রায় করা হয় তবে এর প্রভাব কি হবে সেই সকল বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। 

আশা করছি উক্ত আর্টিকেলের মাধ্যমে আপনার সমাস্যার সমাধানের পথে কিছুটা হলেও আগানো গেছে। শেষ করছি একটা বই সাজেশন করার মাধ্যমে। বিখ্যাত লেখক ডেল কার্নেগীর “দুশ্চিন্তাহীন নতুন জীবন” বইটি পড়ার মাধ্যমে ডেইলি জীবনের টেনশন বা দুশ্চিন্তা গুলো থেকে কিভাবে রেহাই পাওয়া যায় সেই সম্পর্কে আরো ভালো ভাবে জানতে পারবেন। তাছাড়া বাংলা আলো ওয়েবসাইটের রয়েছে আত্ন-উন্নয়ম মূলক বিভিন্ন বইয়ের রিভিউ যা থেকে নিত্য নতুন জ্ঞানার্জন করতে পারেন। 

Visited 1 times, 1 visit(s) today

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here