অর্কিড ফুল চাষ পদ্ধতি, রোগবালাই দমন, ফলন ও ফুল সংগ্রহ 

0
7
অর্কিড ফুল চাষ পদ্ধতি রোগবালাই দমন ফলন ও ফুল সংগ্রহ

অর্কিড, খুব কঠিন একটা নামের সুন্দর একটা ফুল। আজকে আপনাদের সাথে চমৎকার একটি ফুল নিয়ে আলোচনা করব ইনশাআল্লাহ আর সেফুলটির নাম হল অর্কিড ফুল। কিভাবে এই ফুলের চাষ করবেন, সে বিষয়ে আজকে আমাদের এই আলোচনা। তো চলুন অর্কিড ফুল চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে জেনে নেয়া যাক।

অর্কিড ফুল সম্পর্কিত কিছু খুঁটিনাটি তথ্য জেনে নিন

অর্কিড ফুল ফোঁটে প্রধানত শীত ও বসন্তকালে। আমরা সাধারণত যে সমস্ত ফুলগুলো সম্পর্কে জানি ও দেখি সেগুলো সাধারণত কয়েক দিনের মধ্যেই দ্রুত মরে যায়। যেমনঃ গোলাপ ফুল। কিন্তু ফুলের ক্ষেত্রে একটি মজাদার বিষয় আছে আর তা হলো অন্য ফুলগুলো যেখানে অল্প কিছুদিনের মধ্যেই ঝরে যায়, সেখানে অর্কিড ফুল একবার ফুটলে থাকে কয়েক সপ্তাহ।

তাই বাণিজ্যিকভাবে অর্কিড ফুল চাষ পদ্ধতি গ্রহণ হল একটি লাভজনক প্রকল্প ও অর্থোপার্জনের মাধ্যম। অর্কিড ফুল বাণিজ্যিকভাবে চাষ করার জন্য ৪০ লাখ থেকে শুরু করে তার বেশি পরিমাণ অর্থ প্রয়োজন হয়। তাই হুট করে কোনকিছু না বুঝেই কারো এই প্রকল্পে নামা উচিত নয়। 

অস্ট্রেলিয়া ও পাপুয়া নিউগিনিতে এর জন্ম হলেও এ দেশে এখন এই অর্কিড দিব্যি মানিয়ে গেছে। অর্কিড ফুলের বহুরকমের জাত রয়েছে। তার মধ্যে ডেনড্রোবিয়াম (Dendrobium) হলো সবচেয়ে পরিচিত জাতগুলোর একটি।

ডেনড্রোবিয়াম জাতের অর্কিড ফুল বাংলাদেশের জন্য সবচেয়ে বেশি উপযোগী চাষ করার জন্য। এই জাতটির মধবযে বেগুনি রঙের ফুল এবং সাদা রঙের ফুল হয়। তবে বেগুনি রঙের ডেনড্রোবিয়াম জাতের ফুলের চাহিদা বেশি।

কেননা, অর্কিড ফুলের উৎপাদন কেমন হবে এবং সেটা চাহিদা কেমন, সেটা ভালো পরিমাণে সেল হবে কিনা, ন্যায্যমূল্য পাওয়া যাবে কিনা – এই সমস্ত বিষয়গুলো দেখার প্রয়োজন আছে। তাই সবকিছু ভেবেচিন্তে বাণিজ্যিকভাবে অর্কিড ফুল চাষ পদ্ধতি গ্রহণ করা উচিত।

তবে অনেকে অর্কিড ফুলের ছাদ বাগান করেন যা একটি চমৎকার বিষয়। অর্কিড ফুল সাধারণত প্রতি এক বর্গমাইলে একটি করে গাছ লাগানো যায় এবং একটি গাছে পাঁচ থেকে সাতটির মত ফুল পাওয়া যায় সাধারণত। তো চলুন অর্কিড ফুল চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিই।

অর্কিড ফুল চাষ পদ্ধতি

অর্কিড ফুল যদি ছাদ বাগানে বেশি পরিমাণে বা অন্যত্র বাণিজ্যিকভাবে অধিক পরিমাণে চাষ করতে চান, তাহলে একটি বিশেষ নেটের মধ্যে চাষ করতে হবে। তবে টবেও চাষ করতে পারেন।

মনে রাখবেন, অর্কিড ফুলের চারা মাটিতে বোনা যাবেনা, কেননা তা গাছের ক্ষতি করে। নারকেলের ছোবড়া, ইট বা কাঠের টুকরো এগুলোর মধ্যে চারা বুনতে হবে সঠিক পদ্ধতি মেনে।

আর পানি দেওয়ার ক্ষেত্রে গাছটি যদি টবে হয়, তাহলে এক পাত্র স্বাভাবিক ঠান্ডা পানির মধ্যে টবটি কিছুক্ষণ চুবিয়ে রাখতে হবে। টবের চারপাশে কিছু ছিদ্র যেন থাকে,তা নিশ্চিত করতে হবে।

অর্কিড ফুল চাষের জন্য  ইউরিয়া, টিএসপি ও এমপি সমৃদ্ধ ২০:২০:২০ মিশ্র সার বেশ উপযোগী।

  • সার পানিতে গুলিয়ে সপ্তাহে ১-২দিন গাছে স্প্রে করতে হবে।
  • স্প্রে করার সময় লক্ষ্য রাখতে হবে গাছের পাতা যেন ভালোভাবে ভিজে যায়।
  • অবস্থা বুঝে নিয়মিত সেচ দিতে হবে।
  • এছাড়াও এ ফুল চাষের জন্য বাতাসের আপেক্ষিক আর্দ্রতা ৬০ ডিগ্রি বজায় রাখতে হলে স্প্রিংকলার দিয়ে মাঝে মাঝে পানি স্প্রে করতে হয়। (সূত্রঃ বীজঘর ডট কম)

রোগবালাই দমন

সাধারণত অর্কিড ফুলে তেমন কোন রোগ বা পোকার আক্রমণ দেখা যায় না।

তবে ভাইরাস রোগে আক্রান্ত গাছ তুলে পুড়িয়ে ফেলতে হবে। ফুলের কুঁড়ির কীড়া দমনের জন্য যে কোন অনুমোদিত কীটনাশক স্প্রে করতে পারেন। (সূত্রঃ বীজঘর ডট কম)

ফলন ও ফুল সংগ্রহ

জাতভেদে অর্কিডের ফুল সারা বছর ফোটে তবে দেশীয় অর্কিড গাছে সাধরনত ফাল্গুন-চৈত্র মাসেফুল আসে।

সাকার থেকে গাছ লাগানোর ১ বছরের মধ্যেই ফুল আসলেও, টিস্যু কালচারের চারা থেকে ফুল পেতে কমপক্ষে ১৮ মাস অপেক্ষা করতে হয়।

বাণিজ্যিক অর্কিড ফুল চাষ পদ্ধতি অনুসরণের ক্ষেত্রে স্টিকের ১ -২টি ফুল ফোটার সাথে সাথে কাটতে হবে। তবে টবে সৌখিন চাষের ক্ষেত্রে ফুল কাটার প্রয়োজন নেই।

বৃষ্টির সময় অথবা ভেজা অবস্থায় ফুল সংগ্রহ করা উচিত নয়। ফুল সংগ্রহের পর পরই এর ডাটার গোড়া পানিতে ডুবিয়ে রাখলে ফুল বেশি দিন সতেজ থাকে।

হেক্টর প্রতি প্রথম বছরে ৮০০০ স্টিক, দ্বিতীয় বছরে ১৫০০ স্টিক, তৃতীয় বছরে ২৫০০০ স্টিক উৎপাদিত হয় | (সূত্রঃ বীজঘর ডট কম)

অর্কিড ফুল চাষের ক্ষেত্রে যে বিষয়গুলো থেকে সতর্ক থাকা জরুরী 

আমাদেরকে অর্কিড ফুল চাষ পদ্ধতি অনুসরণ করার ক্ষেত্রে তাপমাত্রাযর বিষয়টি অবশ্যই বিবেচনায় রাখতে হবে। কেননা, এই ফুল চাষের জন্য তাপমাত্রা ‌১৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস থেকে ৩২ ডিগ্রি সেলসিয়াস এর মধ্যে থাকতে হয়। এর চেয়ে কম বা বেশি তাপমাত্রায় অর্কিড গাছের ক্ষতি হয়। 

এছাড়াও অর্কিড ফুল চাষ করার ক্ষেত্রে রোদের বিষয়টিও আপনাকে খেয়াল রাখতে হবে। কেননা, সরাসরি রোদ যদি অর্কিড গাছের উপর পড়ে, তাহলে সেটি গাছের উপর বিরূপ প্রভাব ফেলে। 

বাণিজ্যিকভাবে অর্কিড ফুল চাষ পদ্ধতি অনুসরণ করার ক্ষেত্রে প্রতিটি চারার জন্য আলাদা করে টব ব্যবহার না করলেও চলে। তবে, আপনি যদি ছাদ বাগান করতে চান, তাহলে টব ব্যবহার করাটাই উত্তম এছাড়া যদি আপনি বারান্দায় করতে চান সে ক্ষেত্রে টব ব্যবহার করাটাই উত্তম। 

এছাড়াও যখন অর্কিড গাছ থেকে আপনার কোন ডাল বা কোন কিছু কাঁটার প্রয়োজন হবে তখন গাছ কাটার কাঁচিটি যেন অবশ্যই জীবাণমুক্ত হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।

টব বা পাত্রের মধ্যে অর্কিড ফুল চাষ করার ক্ষেত্রে মাটি ব্যবহার করা যাবে না। ‌ নারকেলের ছোবড়া বা ছোট ইট – এই জাতীয় পদার্থ ব্যবহার করতে হবে। অর্কিড গাছের পাতা এবং ফুলের উপর সরাসরি পানি স্প্রে করা বা পানি দেয়া যাবে না। কেননা, অর্কিড গাছের পাতা বা ফুলের ওপর পানি দিলে ক্ষতি হয়। যেমনঃ গাছের পাতার ওপর পানি দিলে পাতা লাল হয়ে যায়।

আর অর্কিড গাছের গোঁড়াতে যাতে পানি জমে না থাকে, সেদিকে বিশেষভাবে লক্ষ্য রাখতে হবে। একদম পানি না দিলে এবং গাছের গোঁড়াতে পানি জমে থাকলে অর্কিড গাছের ক্ষতি হয়। অর্কিড গাছের জন্য বিশেষভাবে তৈরি করা সার দিতে হবে। সাধারণ বা অন্য কোন সার এক্ষেত্রে ব্যবহার করা যাবে না।

মন্তব্য 

বর্তমান সময়ের প্রেক্ষাপটে অর্কিড ফুল চাষ পদ্ধতি গ্রহণ করা হলো একটি লাভজনক প্রকল্প। সারা বিশ্বে এটি জনপ্রিয় ও পরিচিত একটু ফুল। তবে পারিপার্শ্বিক অবস্থা, চাহিদা, নিজের দক্ষতা ও জ্ঞান ইত্যাদি বিবেচনা করে তবেই এ প্রকল্প গ্রহণ করা উচিত। অন্যথায় বাণিজ্যিকভাবে অর্কিড চাষ পদ্ধতি গ্রহণ করা লস এর কারণ হতে পারে।

তবে সব রকমের অবস্থা বিবেচনায় এই ফুলটি চাষ করা সামগ্রিকভাবে একটি লাভজনক ব্যবসায়িক প্ল্যাটফর্ম – এটা নিঃসন্দেহে বলা যায়। আজকে এ পর্যন্তই। এরপর অন্য কোন বিষয় নিয়ে আপনাদের সামনে আসবো ইনশা আল্লাহ। আপনি যদি আরো অন্যান্য ফল – ফুল – সবজি চাষের পদ্ধতি সম্পর্কে জানতে চান তবে বাংলা আলো ওয়েবসাইটের কৃষি নামক ক্যাটাগরিটি অনুসরণ করুন। 

Visited 1 times, 1 visit(s) today

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here