বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে মানুষের শারীরিক সৌন্দর্যের পরিবর্তন ঘটে থাকে। চুল পাকা বয়স বৃদ্ধির সাথে সম্পৃক্ত একটি শারীরিক বিষয়। তবে অনেকেরই অল্প বয়সে চুল পাকার প্রবনতা লক্ষ্য করা যায়। কম বয়সে চুল পাকা মানে অস্বস্তিকর একটি বিষয়। অনেকেই জানতে চান অল্প বয়সে চুল পাকার হাদিস সম্পর্কে। পাশাপাশি অল্প বয়সে চুল পাকলে ইসলাম কি বলে এই বিষয়ে জানার আগ্রহও আছে অনেকের। তাই পুরো বিষয়টি কভার করবো এই আর্টিকেলে।
অল্প বয়সে চুল পাকার বৈজ্ঞানিক ব্যাখা
গবেষকেরা বলছেন এর কোনো সঠিক কারণ তাঁরা বের করতে পারেননি এখনো। তবে জিনগত কারণেই কম বয়সে চুল পাকে। তাছাড়া ঘুম কম হওয়া,চুলের যত্ন না নেওয়া এবং অতিরিক্ত ফাস্ট ফুড আসক্তিও অল্প বয়সে চুল পাকার কারণ বলে অনেকেই মনে করেন।
অল্প বয়সে চুল পাকার হাদিস
হাদিসে এসেছে, ‘রাসুল (সা.) বার্ধক্যের সাদা চুল উপড়ে ফেলতে নিষেধ করেছেন এবং বলেছেন, এটা হলো মোমিনের নুর।’ (মুসনাদে আহমাদ, হাদিস : ৬৯৩৭)।
তবে অনেক সময় এমন হয় যে, চুল পাকার বয়স হয়নি, এমনি অল্প বয়সে রোগের কারণে মাথার চুল পেকে গিয়েছে। সেক্ষেত্রে সাদা চুল তোলা বা উপড়িয়ে ফেলা যাবে অথবা কোন ঔষধ ব্যবহার করে চুলের রং পরিবর্তন করা যাবে। চুলে রং করা যাবে। কিন্তু কালো রঙের ব্যাপারে কিছু আপত্তি আছে। কালো ছাড়া অন্য যেকোনো রং, যেমন—মেহেদি রং বা এই ধরনের কোনো রং যদি করা হয়, তাতে অসুবিধা নেই।
হাদিসে যেহেতু কালো খেজাবকে বিশেষভাবে নিষেধ করা হয়েছে তাই যুবকদের জন্যও একেবারে কালো খেজাব ব্যবহার না করে লাল কালো মিশ্রিত খেজাব ব্যবহার করা উচিত। -ফায়জুল কাদির: ১/৩৩৬
রাসূলুল্লাহ (সা.) সাদা চুলে মেহেদী ব্যবহার করাকে পছন্দ করতেন। [আহসানুল ফাতাওয়া, ৮ : ১৮৩]
বার্ধক্যে চুল পাকা সম্পর্কে ইসলাম কি বলে?
বার্ধক্য মানুষের জীবনে স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। এতে বিচলিত হওয়ার কিছু নেই। কারণ বার্ধক্য মুমিনকে পরকাল সম্পর্কে স্মরণ করিয়ে দেয়। ইসলাম আমাদের শরীরে আল্লাহপ্রদত্ত সৌন্দর্যের মধ্যে অপ্রয়োজনীয় হস্তক্ষেপ করতে নিষেধ করেছে।
বয়স হলে চুল পাকা একটি প্রকৃতিগত ব্যাপার। কথিত আছে যে, এ জগতে সর্বপ্রথম চুল সাদা হয় হযরত ইবরাহীম (আঃ) এর। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, কোনো মুসলমানের একটি চুল পেকে গেলে আল্লাহতায়ালার তার জন্য একটি নেকি লেখেন। একটি মর্যাদা বাড়িয়ে দেন এবং একটি পাপ মোচন করে দেন। (নাসাঈ, মিশকাত)
পাকা চুল ও দাড়ি উঠানো যাবে না। রাসূল (সাঃ) বলেছেন, ‘তোমরা পাকা চুল তুলে ফেলো না। কেননা পাকা চুল হ’ল মুসলমানের জ্যোতি। (মুসনাদে আহমাদ, হাদিস : ৬৯৩৭)
যদি কারো চুল-দাড়ি যদি সাদা হয়ে যায়, সেগুলোকে রং করা বা মেহেদি দেওয়া,এটি মুস্তাহাব অর্থাৎ এটি ভালো কাজ। কিন্তু নিছক নিজের বয়সকে ঢেকে রাখার জন্য অথবা এক ধরনের প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে দাড়ি ও চুল, এগুলোকে কালো কলপ করা, অনেকেই বলেছেন এটি উচিত নয়। কেউ কেউ তো একে হারামও বলেছেন।
তবে কালো রং ব্যবহার করতে হাদিসে নিষেধ করা হয়েছে।কালো রং ব্যতীত অন্য পন্থা অবলম্বন করা যেতে পারে।সকল রঙকে চুলে লাগানোর জন্য বৈধ করা হয়েছে মাত্র একটি রঙ বাদে। অথচ এই একটি রঙের প্রতি আকর্ষণ অন্য সকল রঙের তুলনায় হাজারো গুন বেশী। ইচ্ছা করলেই আমরা শরীয়ত
বিরোধী এ কাজ থেকে বেচে থাকতে পারি।
রাসূল (সাঃ) আরো বলেছেনঃ “নিশ্চয় সর্বশ্রেষ্ঠ বস্তু যা দিয়ে বার্ধক্যের সাদা বর্ণকে পরিবর্তন করা যায় তা হচ্ছে মেহেদি ও কাতাম; যার ফল মরিচের ন্যায়”। (আবূ দাউদঃ ৪২০৫; নাসাঈঃ ৫০৮০।)
নবীজি (সাঃ) বলেন, শেষ জামানায় কিছু লোক কবুতরের ঝুঁটির মতো কালো খেজাব ব্যবহার করবে তারা কেয়ামতের দিন জান্নাতের ঘ্রাণও পাবে না। -সুনানে আবু দাউদ: ৪২০৯
নারীদের ক্ষেত্রেও একই বিধান। তারা মেহেদী ব্যবহার করতে পারেন।
পরিশেষে
সাদা চুল উঠিয়ে ফেলা থেকে শুরু করে হাদিস বিরোধী অন্যান্য কাজ থেকে বিরত থাকার তাওফিক দান করুন। তবে অল্প বয়সে চুল পাকার বিষয়টি ভিন্ন। আল্লাহ আমাদের হেফাজত করুন। আমীন। জানুন বুজুন শিখুন, সংগে থাকুন বাংলা আলোর।