আওয়াবিন নামাজ পড়ার নিয়ম, নিয়ত ও ফজিলত সম্পর্কে বিস্তারিত 

0
56

আল্লাহর সঙ্গে বান্দার সেতুবন্ধনের অন্যতম মাধ্যম হলো নামাজ। মুমিনের জন্য নামাজ হলো অন্যতম শ্রেষ্ঠতম ইবাদত।ফরজ নামাজ ছাড়াও রয়েছে নফল নামাজ। নফল নামাজ আদায়ের মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য অর্জন প্রত্যেক মুসলমানের জন্য অতিব জরুরি। ফজিলতপূর্ণ নফল ইবাদতের মধ্যে আওয়াবিন নামাজ অন্যতম। ফার্সি শব্দ আওয়াবিন এর অর্থ খোদাভীরু। মাগরিবের ফরজ ও সুন্নত নামাজের পর থেকে এশার সময়ের আগপর্যন্ত আওয়াবিনের সময়। আজ আমরা আলোচনা করবো আওয়াবিন নামাজের নিয়ম ও ফজিলত নিয়ে।

আওয়াবিন নামাজ পড়ার নিয়ম 

আওয়াবিন নামাজ পড়ার পদ্ধতি হলো- দুই দুই রাকাত করে তিন সালামে ছয় রাকাত আদায় করা।

এই নামাজ কমপক্ষে ছয় রাকাত এবং সর্বাপেক্ষা বিশ রাকাত পড়া যায়। প্রিয় নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘‘মাগরিব ও এশার মধ্যবর্তী সময়ে নামাজি ব্যক্তি যে নামাজ আদায় করে তাই হচ্ছে সালাতুল আওয়াবিন (অর্থাৎ আল্লাহমুখি বান্দাদের নামাজ)।’ (জামেউস সাগির : ২/৪২৭)। 

ছয় রাকাত পড়ার সুযোগ না হলে মাগরিবের দুই রাকাত সুন্নত মিলিয়ে ছয় রাকাত পড়া যায়। নবীজি (সা.) কখনো ছয় রাকাত (তিরমিজি) কখনো চার রাকাত (নাইলুল আওতার) কখনো বার রাকাত (ইতহাফুস সাদাহ: ৩/৩৭১) আবার কখনও বিশ রাকাত (তিরমিজি: ৪৩৫) পড়তেন। 

অধিকাংশ সময় ছয় রাকাতই  পড়তেন। তবে আপনার চাইলে শুধুমাত্র দুই রাকাত আদায় করতে পারবেন আবার চাইলে একবারে ২০ রাকাত আদায় করতে পারবেন। অন্যান্য নামাজের মতো করেই আওয়াবিন এর নফল নামাজ আদায় করতে হবে। প্রতি রাকাত নামাজে সূরা ফাতিহা পড়তে হবে এবং সূরা ফাতিহার সঙ্গে অন্য সূরা মিলাতে হবে।

তবে উত্তম হলো ২ রাকাত করে মোট ৬ রাকাত আওয়াবিন এর নামাজ আদায় করা।

আওয়াবিন নামাজের নিয়ত 

কেউ যদি মুখে নিয়ত উচ্চারণ না করেও নামাজ আদায় করেন তাহলেও নামাজ হয়ে যাবে। কারণ নিয়ত হচ্ছে অন্তরের বিষয়। তবে উত্তম হচ্ছে নিয়ত করে নেওয়া। আওয়াবিন যেহেতু নফল নামাজ সেহেতু আমরা নফল নামাজের নিয়ত করে নামাজ আদায় করতে পারি। দুই রাকাত করে করে নামাজ আদায় করার নিয়তে নামাজ আদায় করতে হবে। নিয়ত এর ক্ষেত্রে বাংলা অথবা আরবিতে করে নিতে পারেন। 

বাংলার ক্ষেত্রে এভাবে নিয়ত করতে পারেন – 

” আমি দুই রাকাত আওয়াবিন নফল নামাজ আদায় করার নিয়ত করছি। “

আরবি নিয়তের ক্ষেত্রে – “নাওয়াইতু আন উসাল্লিয়া লিল্লাহি তা’আলা রাকাতাই সালাতিল আওয়াবিন নাফলি রাসুলিল্লাহিতা’লা মুতাওয়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল কাবাতিশ শারীফাতি আল্লাহু আকবর “।

আওয়াবিন নামাজের ফজিলত 

আওয়াবিন নামাজের গুরুত্ব ও ফজিলত সম্পর্কে হাদিসে এসেছে নবীজি (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি মাগরিবের পরে ছয় রাকাত নফল আদায় করে, মাঝখানে কোনো দুনিয়াবি কথা না বলে, তার জন্য সেটা ১২ বছরের ইবাদতের সমান গণ্য হবে।’ (তিরমিজি : ১/৫৫৯)।

তাছাড়া অন্য হাদিসে বলা হয়েছে ‘যে ব্যক্তি মাগরিবের পর বিশ রাকাত নফল নামাজ পড়ে, আল্লাহতায়ালা তার জন্য জান্নাতে একটি ঘর নির্মাণ করে দেন।’

— (তিরমিযি, হাদিস নং : ৪৩৭, ইবনে মাজাহ, হাদিস নং : ১৪৩৫) 

হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) হতে বর্ণিত, নবী করিম (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি মাগরিবের নামাজের পর এ নামাজ পড়বে তার মর্যাদা জান্নাতের উঁচু স্থানে হবে।’ (ইতহাফুস সাদাহ : ৩/৩৭১)।

কোন সুরা দিয়ে আওয়াবিন নামাজ পড়তে হয়?

অনেকেই মনে করেন বিশেষ কোন সূরা পড়ে আওয়াবিন নামাজ আদায় করতে হয়।আসলে ইহা ঠিক নয়। আওয়াবিন নামাজে পড়ার বিশেষ কোনো সুরা নেই। (মাজমাউল আনহুর : ১/১৯৫, তিরমিজি, হাদিস : ৪৩৫, ফাতাওয়ায়ে ফকীহুল মিল্লাত : ৩/১৫৫)

সারকথা 

আমরা আশাবাদী আমাদের আলোচনা থেকে আওয়াবিন নামাজ পড়ার নিয়ম এবং নামাজের ফজিলত সহ যাবতীয় বিষয়গুলো আপনারা বুঝতে পেরেছেন। মহান আল্লাহ কুরআন-হাদিস মোতাবেক আমলি জিন্দেগি যাপন করে উনার নৈকট্য অর্জন করার তাওফিক দান করুন।

Visited 54 times, 1 visit(s) today

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here