আপনি কি ব্যাংক একাউন্ট খুলতে চাচ্ছেন, সেটাও আবার ইসলামী শরিয়াহ মোতাবেক! তবে ইসলামী ব্যাংক হতে পারে আপনার জন্য সেরা পছন্দ। জানুন ইসলামী ব্যাংক একাউন্ট খোলার নিয়ম সম্পর্কে এবং করে নিন বিভিন্ন ধরনের একাউন্ট। বিস্তারিত নিয়ে থাকছে পুরো আর্টিকেল।
ব্যাংকিং সেবা বর্তমানে একটি অত্যন্ত প্রয়োজনীয় হয়ে গিয়েছে আমাদের প্রতিদিনের জীবনে। তাছাড়া অর্থের নিরাপত্তা ও তার সঠিক ব্যবহারের জন্য অনেকেই বেছে নিচ্ছে ব্যাংককে তাদের টাকা রাখার জন্য। যেহেতু ব্যাংকের সাথে সুদের ব্যাপারটিও জরিত তাই অনেক ধর্ম অবলম্বনকারীরা সুদের থেকে দূরে থাকলে ইসলামি শরিয়াহ মোতাবেক পরিচালিত ব্যাংক গুলার ক্ষেত্রে ঝুকছে।
এবার কথা বলবো ইসলামী শরিয়াহ অনুযায়ী পরিচালিত ব্যাংক গুলোর মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম সেরা ব্যাংক সম্পর্কে যার নাম হলো ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড। আসুন জেনে নেয়া যাক ইসলামী ব্যাংক সংক্রান্ত কিছু তথ্য।
ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড
দক্ষিন এশিয়ায় প্রথম ইসলামী শরিয়াহ ভিত্তিক ব্যাংক হিসেবে খ্যাতি সম্পন্ন ইসলামী ব্যাংক প্রথম বারের মত শুরু হয়েছিলো ১৯৮৩ সালে। বাংকটি বর্তমানে ৩৬.৯১% স্থানীয় এবং ৬৩.০৯% দেশের বাইরে বিনিয়োগ রয়েছে। ইসলামী ব্যাংকের বর্তমানে মোট ৪৫০ টি শাখা স্থাপনার মাধ্যমে বাংলাদেশে ২য় বৃহত্তম ব্যাংক হিসেবেও পরিচিত। উভয়পক্ষের দিক থেকে প্রতিষ্ঠানটি বাংলাদেশের সবচেয়ে বেশি মূলধনী কোম্পানি, এবং বেসরকারি খাতে তা রয়েছে প্রথম পজিশনে। ইসলামী ব্যাংকের ঝুড়িতে বর্তমানে আছে
- ২৮৪ টি শাখা
- ২২৫ টি উপশাখা
- সর্বোমোট ১৮৫১ টি এটিএম বুথ
- ৫৩১ টি সিআরএম মেশিন
- ২৩৭৪ টি এজেন্ট ব্যাংকিং শাখা
ইসলামী ব্যাংক একাউন্টের প্রকারভেদ
বাংলাদেশে প্রচলিত যত ধরনের ব্যাংক একাউন্ট আছে সেগুলোর মধ্যে প্রায় সব গুলোই ইসলামী ব্যাংকে এভেইলেবল। বাংলাদেশে সাধারণত জনপ্রিয় ব্যাংক একাউন্ট গুলো হচ্ছে :
- চলতি অ্যাকাউন্ট (Current Account)
- সঞ্চয় অ্যাকাউন্ট (Savings Account)
- পুনর্নবীকরণ ডিপোজিট অ্যাকাউন্ট (Recurring Deposit Account)
- ফিক্সড ডিপোজিট অ্যাকাউন্ট (Fixed deposit Account)
- স্টুডেন্ট একাউন্ট (Student Account)
বাংলাদেশের পেক্ষাপটে আপনি যদি ইসলামী শরিয়াহ মোতাবেক নিয়মে ব্যাংকিং কার্যক্রম করতে চান তবে ইসলামী ব্যাংকে আপনার লিস্টের প্রথমে রাখতে পারেন।
ইসলামী ব্যাংকে একাউন্ট খোলার নিয়ম
এতো সময় ধরে ইসলামী ব্যাংক সংক্রান্ত ব্যাসিক তথ্য গুলো প্রদান করলাম। এবার জানাবো কিভাবে একাউন্ট খুলবেন সেই নিয়ম সম্পর্কে। নিম্মে ধাপে ধাপে উক্ত বিষয় গুলো উপস্থাপন করছি। ইসলামী ব্যাংকের একাউন্ট দুই ভাবে করা যায়। আপনি চাইলে সরাসরি ব্যাংকে গিয়ে উক্ত কাজটি করতে পারেন অথবা অনলাইনেও করতে পারেন। এখানে দুইটি উপায় দেখানো হবে। প্রথমেই ব্যাংকে বা অফলাইনে কিভাবে একাউন্ট করতে হবে সেটি জানাচ্ছি।
১) প্রথমেই আপনার অবস্থানের দিক থেকে নিকট থাকা ইসলামী ব্যাংকের শাখায় চলে যান। অবশ্যই যাবতীয় প্রয়োজনীয় কাগজপত্র গুলো নিয়ে যেতে হবে। কি কি ডকুমেন্টস প্রয়োজন হবে সেগুলো পরের ধাপে আলোচনা করা হয়েছে।
২) সেখানে উপস্থিত হওয়ার পর সেখানে কর্মরত থাকা লোকদের একাউন্ট খোলার ব্যাপারে জানালে আপনাকে একটি ফরম দেয়া হবে। সঠিক ভাবে পুরো ফরমটি পড়ে পূরণ করে জমা দিবেন।
৩) ফরমের পাশপাশি একাউন্ট ভিত্তিক যে ডকুমেন্টস গুলো প্রয়োজন হবে সেগুলো জমা দিতে হবে।
৪) উক্ত একাউন্ট খোলার জন্য নির্ধারিত চার্জ পরিশোধ করতে হবে। একেক ধরনের একাউন্ট খোলার ক্ষেত্রে একেক চার্জ প্রজোয্য।
৫) কর্মরত এজেন্ট দ্বারা আপনার কাগজপত্র গুলো ভেরিফাই করা হবে। আপনি যদি একাউন্ট খোলার যোগ্য হয়ে থাকেন তবে আপনার মোবাইলে একটি কোড পাঠানো হবে। সেই কোডের আলোকে আপনাকে একাউন্ট তৈরি ও একাউন্ট সংক্রান্ত সকল ম্যাটারিয়ালস গুলো দেয়া হবে।
অনলাইনে ইসলামী ব্যাংকে একাউন্ট খোলার নিয়ম
তাছাড়া আপনি যদি ঘরে বসে অনলাইনের মাধ্যমে ইসলামী ব্যাংকে বিভিন্ন একাউন্ট খোলার কথা ভাবছেন তবে আপনাকে প্রথমেই গুগল প্লে স্ট্রোর থেকে ইসলামী ব্যাংকের একক মোবাইল ব্যাংকিং অ্যাপ Cellfin ইন্সটল করে নিতে হবে।
এই পর্যায়ে প্রথমে আপনাকে অ্যাপটি ওপেন করে সেখানে থাকা অপশন থেকে Open Account এ ক্লিক করে একটি ফরম পূরণ এবং যে ধরনের একাউন্ট খুলতে চাচ্ছেন সেটা উল্লেখ্য করে সহজেই ভার্চুয়ালি একাউন্ট তৈরি করে নিতে পারবেন।
পরবর্তীতে ব্যাংক একাউন্ট ভিত্তিক এটিএম কার্ড ও চেকবুক গ্রহনে আপনাকে অবশ্যই ব্যাংকে যেতে হবে। এবার জেনে নেয়া যাক কি কি কাগজ প্রয়োজন পড়বে একেক ধরনের একাউন্ট তৈরি করার জন্য।
ইসলামী ব্যাংক একাউন্ট খোলার জন্য যা যা লাগবে
যেমনটা বলেছিলাম, সকল ধরনের একাউন্টের জন্য এক রকম ডকুমেন্টস প্রয়োজন হয় না, এখানে অবশ্যই ভিন্নতা রয়েছে। সেগুলোই উপস্থাপন করা হচ্ছে। বুজার সুবিধার্থে সকল ধরনের একাউন্টকে শর্ট আকারে ৩ টি শ্রেনীতে ভাগ করে উপস্থাপন করছি।
ইসলামী ব্যাংক কারেন্ট একাউন্ট খোলার জন্য যা যা লাগবে
- উক্ত একাউন্টের জন্য নির্ধারিত ফরম
- সর্বনিম্ম এক হাজার টাকা একাউন্টে ইন্সট্যান্ট জমা দান
- সদ্য তোলা ২ কপি ছবি
- আপনার যে নমিনি থাকবে তার ১ কপি ছবি
- আপনার ও আপনার নমিনির – NID কার্ড / পাসপোর্ট / চেয়্যারম্যান সার্টিফিকেট
- নিদিষ্ট কিছু স্থানে একাউন্ট ক্রিয়েটরের স্বাক্ষর
# ইসলামী ব্যাংক সেভিংস একাউন্ট খোলার জন্য যা যা লাগবে
- যার একাউন্ট তার ২ কপি ছবি, জাতীয় পরিচয় পত্রের ফটোকপি
- যার নামে নমিনি দেয়া হবে তার ১ কপি ছবি ও জাতীয় পরিচয় পত্রের কপি
- সর্বনিম্ম ৫০০ টাকা ডিপোজিট করতে হবে। এবং উক্ত টাকা একাউন্টেই রাখত হবে।
- নির্ধারিত কিছু স্থানে স্বাক্ষর
# ইসলামী ব্যাংক স্টুডেন্ট একাউন্ট খোলার জন্য যা যা লাগবে
- উক্ত একাউন্ট খুলতে অবশ্যই শিক্ষার্থী হতে হবে
- বয়স যদি ১৮ এর নিচে হয় তবে এখন খোলা থেকে শুরু করে প্রতিটি কাজে অবিভাবকের প্রয়োজন পরবে।
- শিক্ষার্থী ও অবিভাবকের ২ কপি করে পাসপোর্ট সাইজের ছবি প্রয়োজন।
- নমিনির ১ কপি ছবি প্রয়োজন
- শিক্ষার্থীর স্টুডেন্ট আইডি কার্ডের কপি
- চেয়ারম্যান সার্টিফিকেট / স্কুল – কলেজের অথোরিটি সার্টিফিকেট
- এক্ষেত্রে একাউন্টে কমপক্ষে ১০০ টাকা জমা রাখতে হবে।
- নির্ধারিত স্থানে স্বাক্ষর সমূহ।
ইসলামী ব্যাংক একাউন্ট খোলার ফরম
ব্যাংকে একাউন্ট খোলার জন্য ব্যক্তি, প্রাতিষ্ঠানিক ও সরকারি পর্যায়ে একাউন্ট খোলার জন্য যে আলাদা ভাবে যেসব একাউন্টের ফরম গুলো রয়েছে তার সব গুলো একত্রে এখানে পেয়ে যাবেন। আপনি চাইলে এগুলো এখান থেকে ডাউনলোড করে সেটিকে পূরন করে একেবারে ব্যাংকে জমা দিতে পারেন। অথবা ব্যাংকে গিয়ে তাদের কাছ থেকে নিয়ে পূরণ করতে পারেন।
ব্যাংকে একাউন্ট খোলার সুবিধা
১) আপনি যদি ইসলামী ব্যাংকে কারেন্ট বা চলতি একাউন্ট খুলে থাকেন তবে, যেকোনো সময় যেকোনো স্থান থেকে টাকা জমা ও উত্তোলন করতে পারবেন যত খুশি তত। এখানে টাকা জমা ও উত্তোলোনের ক্ষেত্রে কোনো নির্ধারিত টাইম সেট করা হয়নি। বিশেষ করে ব্যবসায়ীরা তাদের রেগুলার লেনদেনের জন্য উক্ত একাউন্টটি খুলে থাকে।
২) আপনি যদি চান আপনাকে কাছে থাকা একটি নিদিষ্ট পরিমাণের টাকাকে সুরক্ষিত উপায়ে কোনো স্থানে বিনিয়োগ অবস্থায় রাখতে চান তবে আপনার উচিৎ হবে ইসলামী ব্যাংকে সেভিংস একাউন্টে টাকা রাখা। তবে আপনি একটি নিদিষ্ট সময়ের আগে উক্ত টাকা তুলতে পারবেন না, আর যদি তুলেও ফেলেন তবে সেখান থেকে পাওয়া মুনাফার পরিমাণ কম হবে।
৩) শিক্ষার্থীরা খুব সহজেই তাদের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্রে অর্থ গুলো একত্রে এক স্থানে জমিয়ে রাখতে পারবেন ইসলামী ব্যাংকের স্টুডেন্ট একাউন্টের মাধ্যমে। এতে করে তারা ভবিষ্যতে অর্থের ব্যবস্থাপনা শেখার পাশাপাশি জমানো টাকা দিয়ে বড় কিছু করতে পারবে।
আর্টিকেল থেকে যা শিখলেন
পরিশেষে সমাপ্ত হলো “ ইসলামী ব্যাংক একাউন্ট খোলার নিয়ম “ সংক্রান্ত বিস্তারিত আর্টিকেল যেখানে জানানো হয়েছে ইসলামী ব্যাংক সম্পর্কে, ইসলামী ব্যাংক একাউন্ট খোলার নিয়ম ও কত ধরনের একাউন্ট রয়েছে সেই সম্পর্কে। পাশাপাশি জানানো হয়েছে ব্যাংকে একাউন্ট খোলার সুবিধা সমূহ সম্পর্কেও। তাছাড়া আপনার যদি ইসলামী ব্যাংক সংক্রান্ত আরো কিছু তথ্য প্রয়োজন হয় তবে সেগুলোও বাংলা আলো ওয়েবসাইটে রয়েছে যা খুযে পেতে উক্ত লিংকটি অনুসরণ করুন।