ওসমান গনি
লেখকঃ সাংবাদিক ও কলামিস্ট
আসন্ন কোরবানীর ঈদকে সামনে রেখে তৎপর হয়ে উঠছে জালটাকার ব্যাবসায়ীরা। একটি দেশের অর্থনীতি কে ধবংস বা পঙ্গু করার জন্য জাল টাকার নোটই যথেষ্ট। আমাদের দেশে অতীতেও জাল নোট ছিল এখনও আছে। দেশের একটি কুচক্রী মহল এ জালনোট তৈরি করে থাকে। তাদের ই আরেকটি অংশ দেশের প্রত্যন্তঞ্চলে জালটাকা ছড়িয়ে ছিটিয়ে দেয়ার কাজে ব্যস্ত।
তবে জালটাকা প্রস্তুতকারীরা ঈদ কে সামনে রেখে বেশী তোরজোড় হয়ে উঠে। বিগত দিনেও আমরা আমাদের দেশে এমনটা দেখছি। এ বছরও ঈদুল আযহা কে সামনে ঐ সংঘবদ্ধ গ্রুপটি আবার সক্রিয় হয়ে উঠছে। ঈদুল ফিতরের সময় তারা এ জালটাকার বাণিজ্য টা সফলভাবে করতে না পারলেও সামনের কোরবানীর ঈদ হলো তাদের প্রধান টার্গেট। এই সুযোগ কে তারা কাজে লাগানোর জন্য বেশ তৎপর হয়ে উঠছে।
গত ২৮ জুন ( রোববার) ঢাকার মিরপুর ও বসুন্ধরায় এমন একটি গ্রুপ ধরা পড়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে। এসময় বাংলাদেশের জালটাকা, ভারতীয় রুপি ও জালটাকা তৈরির যন্ত্রপাতি, সরঞ্জামাদিসহ বিপুল পরিমান জালনোট উদ্ধার করে এবং এ কাজে জড়িত ৬ জনকে আটক করে র্যাব।
এ সময় তাদের কাছ থেকে প্রায় পৌনে চারকোটি টাকা মূল্যের ১০০০ টাকার বাংলাদেশী নোট এবং ৫০০ ও ২০০০ রুপি নোটে প্রায় ৪৪ লাখ টাকার ভারতীয় মূদ্রা উদ্ধার করা হয়েছে। দেশে জালনোট তৈরীর এটিই একমাত্র চক্র নয়। বিভিন্ন স্থানে এ ধরনের আরো অনেক চক্র সক্রিয় রয়েছে বলে সংশ্লিষ্টদের ধারণা।
ইতিপূর্বে গত জানুয়ারি মাসে রাজধানীর ধানমন্ডির একটি বাড়ি থেকে জালনোট তৈরীর কারখানাসহ বিপুল পরিমান জালনোট জব্দ করেছিল র্যাব।
আমাদের দেশের সাধারণ মানুষ প্রায় সময় এ জালটাকার বিড়ম্বনায় পড়ে থাকেন। অনেক সময়ে বিভিন্ন ব্যাংকেও জালটাকার বিড়ম্বনায় পড়তে হচ্ছে।
ব্যাংকে টাকা জমা দিতে গিয়ে জালটাকা শনাক্ত হওয়ার পর অশেষ বিড়ম্বনা ও প্রতারণার শিকার হচ্ছে অনেকে।এই জালনোট চক্রের সাথে একশ্রেণীর ব্যাংক কর্মচারির যোগসাজশ থাকার অভিযোগও অতীতে বিভিন্ন সময়ে উঠে এসেছে।
জালনোট চক্রগুলোর পরস্পরের মধ্যে যোগাযোগ ও যোগসুত্র থাকার সম্ভাবনা অস্বাভাবিক নয়। বিভিন্ন সময়ে জালনোট তৈরীর মেশিন ও সরঞ্জামাদিসহ চক্রের সদস্যরা ধরা পড়লেও আন্ডারগ্রাউন্ড সিন্ডিকেটের মূল হোঁতারা সম্ভবত ধরাছোঁয়ার বাইরেই থেকে যায়।
তা না বিপুল পরিমান মূদ্রা ও সরঞ্জামসহ দু’চারজন র্যাবের হাতে ধরা পড়ার পরও বাকীরা সক্রিয় থেকে এমন তৎপরতা চালাতে পারত না।
ঈদের বাজার শুরু হওয়ার আগ মুহূর্তে রাজধানীতে কোটি কোটি টাকার জালনোটসহ চক্রের সদস্যদের আটকের ঘটনা খুবই ইতিবাচক। তবে এ ধরনের আরো অনেক চক্র দেশে-বিদেশে সক্রিয় থাকা যেহেতু অস্বাভাবিক নয়, অতএব ব্যক্তিগত ও প্রাতিষ্ঠানিক সর্তকতার পাশাপাশি গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধির উদ্যোগ নিতে হবে।
জালমূদ্রা নিয়ন্ত্রণে মৃত্যুদন্ড বা যাবজ্জীবন কারাদন্ডের শাস্তির বিধান রেখে বাংলাদেশ ব্যাংক আইন পরিবর্তনের উদ্যোগ নিলেও বছরের পর বছর ধরে তা ঝুলে আছে।
অবশেষে সম্প্রতি সর্বনিম্ন দুই বছর ও সর্বোচ্চ শাস্তি যাবজ্জীবন কারাদন্ডের বিধান রেখে আইনের খসড়া চুড়ান্ত করা হয়েছে বলে জানা গেছে। তবে প্রথমবার ও দ্বিতীয়বার জালটাকার কারবারে জড়িত থাকার প্রমান পাওয়ার পরও প্রস্তাবিত আইনে লঘুদন্ডের বিধান থাকায় এ ধরনের আইন জালনোট বন্ধে কতটা কার্যকর ভূমিকা রাখবে তা নিয়ে কিছুটা সংশয় রয়েছে।
পর পর তিনবার এবং ৫০০ পিসের বেশি জালনোট নিয়ে ধরা পড়লেই কেবল কেউ সর্বোচ্চ শাস্তির আওতায় আসবে। এমন আইনের কারণে জালনোট চক্রের হোঁতারা কৌশল বদল করে নতুন নতুন নিয়মে তারা ব্যবসা চালাচ্ছে।