কবর জিয়ারতের দোয়া ও নিয়ম । কবর জিয়ারতের হাদিস ও দলিল

0
49
কবর জিয়ারতে অন্তরে মৃত্যু ও পরকালের ভয় জাগ্রত হয়। মৃত ব্যক্তিকে কবরস্থ করাই ইসলামের বিধান।কবর জিয়ারত করা মহানবী (সা.)-এর সুন্নত। এজন্য কবর জিয়ারতের দোয়া ও নিয়ম যথাযথভাবে শিখা এবং আমল করা জরুরি।


ইসলামের প্রথম দিকে কবর জিয়ারতের অনুমতি না থাকলেও পরে রাসুলুল্লাহ (স.) অনুমতি দেন। আখিরাতের স্মরণের গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হলো কবর জিয়ারত। মৃত্যুর চিন্তা আত্মাকে বিদগ্ধ করে।
ফলে পরকালমুখী জীবনযাপনের প্রতি মানুষ আত্মতাড়িত হয়। জিয়ারতকারীকেও ক্ষমা করা হবে মর্মে ঘোষণা দিয়েছেন বিশ্বনবি।হাদিসে নবীজি (সাঃ) বলেছেন, আমি তোমাদের কবর জিয়ারতে নিষেধ করেছিলাম, এখন থেকে কবর জিয়ারত করো। কারণ, তা দুনিয়াবিমুখতা এনে দেয় এবং আখিরাতকে মনে করিয়ে দেয়। (সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস : ১৫৭১)
কবর জিয়ারতের দোয়া ও নিয়ম

জিয়ারত শুরু করতে হয় এই বলে –
‘আসসালামু আলাইকুম দারা ক্বাওমিম মুমিনিনা ওয়া ইন্না ইনশাআল্লাহু বিকুম লাহিকুন।

অর্থ : মুমিন ঘরবাসীর ওপর শান্তি বর্ষিত হোক। ইনশাআল্লাহ, আমরা আপনাদের সঙ্গে মিলিত হবো। (সহিহ মুসলিম : ২৪৯)
আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, একবার রাসুলুল্লাহ (সা.) একটি কবর জিয়ারতে গিয়ে উপরিউক্ত দোয়াটি পড়েন।

এরপর কবরবাসীর ইসালে সওয়াবের নিয়তে দরুদ শরিফ ও বিভিন্ন সুরা ইত্যাদি আদায় করা। দরুদ শরিফ পড়া,সুরা ফাতিহা, সুরা ইখলাস এবং আয়াতুল কুরসি সহ কোরআনের অন্যান্য আয়াত বা সুরা পড়া।অতঃপর মৃত ব্যক্তির রুহের মাগফেরাত তথা ক্ষমা প্রার্থনা করে মোনাজাত করা। কবরস্থানে ঢুকে ‘আসসালামু আলাইকুম ইয়া আহলাল কুবুর’ বলতে হয়।
কবর জিয়ারত করতে ওযুর প্রয়োজন আছে কি না?

কবর জিয়ারত করতে ওযু করা শর্ত নয়।
তবে স্বাভাবিকভাবে লোকেরা যখন কোথাও যান, তখন আল্লাহর বান্দারা পবিত্র অবস্থায় যান। সালাতে ওযুর করা জরুরি,জিয়ারত হচ্ছে শুধু দোয়া, এখানে সালাত নেই। সুতরাং, দোয়ার জন্য ওযুর কোনো প্রয়োজন নেই।
কবর জিয়ারতের উদ্দেশ্য

প্রথমত : কবর-জিয়ারতের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উদ্দেশ্য সম্পর্কে (সাঃ) ইরশাদ করেছেন, কবরের দৃশ্য দেখে দুনিয়ার ক্ষণস্থায়িত্বের বিশ্বাস জাগ্রত করা,নিজের মৃত্যু ও কবর-জীবনকে স্মরণ করা এবং আখিরাতের প্রস্তুতির সংকল্প গ্রহণ করা।

দ্বিতীয়ত : আত্মীয়-স্বজনের হক আদায় করা এবং মাগফিরাতের দুআ ও ঈসালে সওযাবের মাধ্যমে তাদের উপকৃত করা। আর আল্লাহওয়ালাদের কবর যিয়ারতের দ্বারা যে পথে চলে তারা আল্লাহর দরবারে মাকবূল হয়েছেন ঐ পথে চলার পাক্কা মনোভাব প্রকাশ ও ইচ্ছাপোষণ করা।
কবর জিয়ারতে কবরবাসীর উপকার

কোনো মুসলিম যদি সুন্নত পদ্ধতিতে কবর জিয়ারত করে এবং বিদআত থেকে বিরত থাকে,তবে কবরবাসী তা থেকে উপকৃত হয়।তা কোরআন ও বিশুদ্ধ হাদিস দ্বারা প্রমাণিত। কেননা কবর জিয়ারতের মূল বিষয়টিই হলো কবরবাসীর পাপমুক্তি ও মর্যাদা বৃদ্ধির জন্য মোনাজাতের মাধ্যমে আল্লাহর কাছে দোয়া করা। আর কোরআনে মৃত ব্যক্তিদের জন্য দোয়া করতে বলা হয়েছে। হাদিসে বলা আছে ‘যারা তাদের পরে এসেছে, তারা বলে, হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদের এবং ঈমানে অগ্রণী আমাদের ভাইদের ক্ষমা করুন এবং মুমিনদের বিরুদ্ধে আমাদের অন্তরে বিদ্বেষ রাখবেন না। হে আমাদের প্রতিপালক! আপনি তো দয়ার্দ্র, পরম দয়ালু।’ (সুরা : হাশর, আয়াত : ১০)
কখন কবর জিয়ারত করা ভালো?

জুমআর দিন কবর জিয়ারত করা উত্তম এবং সুন্নাত। জুমআর দিন কবর জিয়ারত করলে জিয়ারতকারীর জন্যও তা ক্ষমা লাভের কারণ।

‘যে ব্যক্তি প্রতি জুমআয় তার মা-বাবা বা তাদের একজনের কবর জিয়ারত করবে, তাকে ক্ষমা করে দেয়া হবে এবং মা-বাবার সঙ্গে সদ্ব্যবহারকারীদের মধ্যে গণ্য করা হবে।’ (আল মুজামুল আউসাত)

কবর জিয়ারত করার জন্য ঈদের দিনও উত্তম। তবে আবশ্যক মনে করা বিদআত। কেউ এই দিন কবর জিয়ারত না করলে, তাকে নিন্দা করা গুনাহের কাজ।
(মিরকাতুল মাফাতিহ ৩/৩১; ফাতাওয়া মাহমুদিয়া : ৯/২০১-২০২)

নারীদের কবর জিয়ারতের ব্যাপারে বিধান

পরবর্তীতে ইসলামে কবর জিয়ারতের উপর যখন নিষেধাজ্ঞা উঠিয়ে নিয়ে কবর জিয়ারতের অনুমতি প্রদান করা হয়েছে তখন সে অনুমতি নর-নারী নির্বিশেষে সবার জন্যই দেওয়া হয়েছে। ’
হজরত আলী (রা.) হতে বর্ণনা বর্ণিত, নবী কন্য হজরত ফাতেমা (রা.) প্রতি জুমাবারে তার চাচা হজরত হামজা (রা.) এর কবর জিয়ারত করতেন।
তিনি সেখানে নামাজ পড়তেন, কান্নাকাটি করতেন। -মুস্তাদরাকে হাকিম: ১৩৯৬

নারীদের নিষেধ করার কারণ এই যে, ইলম ও সবরের স্বল্পতার কারণে তারা কবরস্থানে গিয়ে অস্থিরতা, কান্নাকাটি এবং বিদআত ও গায়রে শরয়ী আচরণ থেকে বিরত থাকতে পারে না। যেহেতু তাদের সেখানে যাওয়ায় ফিতনার আশঙ্কাই প্রবল তাই তাদেরকে বিশেষভাবে নিষেধ করে দেওয়া হয়েছে। সুতরাং যদি কোনো নারী কবরস্থানে গিয়ে কোনো প্রকারের বিদআত ও গায়রে শরয়ী কার্যকলাপে লিপ্ত না হন তাহলে তার অনুমতি আছে। তবে বৃদ্ধা নারীরা যেতে পারেন, যুবতীদের না যাওয়াই ভালো।
-ফাতাওয়ায়ে শামী খ. ২ পৃ. ২৪২, নতুন মুদ্রণ, মিশর
কবরস্থানে যা করা নিষিদ্ধ

১) কোনোভাবেই কবরবাসীর কাছে কোনো কিছু কামনা করা যাবে না

২) কবরের উপর বসা তার উপর চলা ও দলা বৈধ নয়।

৩) কবর তাওয়াফ করা থেকে বিরত থাকা।

৪) জিয়ারত শেষে দোয়ার সময় কবরের দিকে না ফিরে কিবলামুখী হয়ে দোয়া করা। তবে হাত উঠিয়ে দোয়া করতে কোনো সমস্যা নেই। কেননা রাসুল (সা.) কবরস্থানে গিয়ে তাদের জন্য হাত তুলে দোয়া করেছেন। (মুসনাদে আহমদ, হাদিস : ২৪৪৯৩)

৫) কবরস্থানে পশু জবাই করা যাবে না।
শেষকথা
আল্লাহতালা আমাদের সবাইকে সহিহ সুন্নাহ অনুযায়ী কবর জিয়ারতের মাধ্যমে মৃত্যুর স্মরণ ও আখিরাতে মুক্তি নসিব করুন। আমিন ইয়া রব্বুল আলামীন।

Visited 15 times, 1 visit(s) today

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here