গায়েবি মামলার মতো গায়েবি শয্যা, মৃত্যু ও শনাক্তের হিসাব
— মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, করোনা মোকাবিলা করতে সরকার সম্পূর্ণভাবে ব্যর্থ হয়েছে।
হাসপাতালের শয্যা নিয়ে, করোনায় মৃত্যু ও শনাক্তের সংখ্যা নিয়ে সরকার গায়েবি তথ্য দিচ্ছে।
একে বিরোধী দলের নেতা–কর্মীদের বিরুদ্ধে দেওয়া গায়েবি মামলার মতো অবস্থা বলে উল্লেখ করেন।
সোমবার, আগস্ট ০২, ২০২১ সকালে লালমনিরহাট জেলায় করোনা হেল্প সেন্টারের উদ্বোধন এবং করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের সহায়তা প্রদান উপলক্ষে ভার্চ্যুয়াল অনুষ্ঠানে বিএনপির মহাসচিব এ অভিযোগ করেন।
বিএনপির মহাসচিব বলেন, এখন পর্যন্ত সরকারের যে হিসাব, তা এতটুকু সঠিক নয়।
তাদের হিসাবে দেখা যাচ্ছে যে ১২ লাখ ৬৪ হাজার ৩২৮ জন গতকাল পর্যন্ত শনাক্ত হয়েছেন, এটা একদম ডাহা মিথ্যা কথা।
তিনি বলেন, মানুষজন টেস্টই তো করতে পারছেন না।
তাঁরা উপজেলা পর্যায়ে টেস্ট দেন না, জেলা পর্যায়ে টেস্ট দেন। সেখানে গিয়েও মানুষ টেস্ট করতে পারেন না।
ঢাকায় যে পরীক্ষার কেন্দ্রগুলো আছে, সেখানেও দুই ঘণ্টা টেস্ট করার পর আর হয় না। এখানেই কিন্তু ‘স্ক্রিন আউট’ করে দিচ্ছে।
মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, সরকার বলছে আক্রান্ত হয়ে এখন পর্যন্ত ২০ হাজার ৯১৪ জন মারা গেছেন।
তিনি কিছু তথ্য যুক্ত করে বলেন, মৃতের সংখ্যা এক লাখের নিচে কখনোই না।
মির্জা আলমগীর বলেন, ‘আজকের একটি পত্রিকায় হেডিং হচ্ছে—করোনা নিয়ে সরকারের নানা অসংগতি।
এই কথাটা আমরা বারবার বলে আসছি। আপনি যদি প্রকৃত তথ্য না দেন,
তাহলে সমাধান হবে কী করে? এটা কোনো দায়িত্বশীল সরকার করতে পারে না।’
করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরকারের ব্যর্থতার সমালোচনা করে বিএনপির মহাসচিব বলেন,
‘আমরা প্রথম থেকে বলছি যে এটা যেহেতু বৈশ্বিক মহামারি, এটাকে মোকাবিলা করতে হবে সবাইকে সঙ্গে নিয়ে।
আমরা প্রস্তাব দিয়েছিলাম একটা জাতীয় কমিটি গঠন করে জাতীয় বিশেষজ্ঞসহ জনগণকে
সম্পৃক্ত করে এই করোনা মহামারি মোকাবিলার জন্য। কিন্তু তারা শোনেনি।’
তিনি বলেন, ‘অভিজ্ঞতা থেকে দেখেছি, যেকোনো দুর্যোগ অথবা মহামারি পুরোটাই
হয়তো নির্মূল করা যায় না, কিন্তু জনগণকে সম্পৃক্ত করে এটাকে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।
আজকে যদি রাজনৈতিক দলগুলো সম্পৃক্ত হতো, যদি সব এনজিও সম্পৃক্ত হতো, আজকে
যদি স্বেচ্ছাসেবক সংগঠনগুলো সম্পৃক্ত হতে পারত, তাহলে দেখা যেত পরিস্থিতি এত মারাত্মক আকার ধারণ করত না।’
রোগী গায়েব
—————
বিএনপির মহাসচিব বলেন, করোনা চিকিৎসার জন্য নির্ধারিত কয়েকটি হাসপাতালে আইসিইউ বেড না থাকলেও স্বাস্থ্য অধিদপ্তর তথ্য দিচ্ছে যে আইসিইউ শয্যা আছে।
যেমন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হিসাবে ভোলা, কুষ্টিয়া, বাগেরহাট, পটুয়াখালী, জামালপুরে করোনা
রোগীদের জন্য ২০টি আইসিইউ রয়েছে। কিন্তু আসলে এগুলোতে কোনো আইসিইউ নেই।
তিনি আরও বলেন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলেছে সিলেটের চারটি হাসপাতালে গতকাল (রোববার)
পর্যন্ত ১৩৬ জন চিকিৎসাধীন ছিলেন। প্রকৃতপক্ষে সেখানে চিকিৎসাধীন আছেন ৪৩৬ জন।
৩০০ রোগী নাই, গায়েব। এখন গায়েবি মামলার মতো গায়েবি বেড, গায়েবি মৃত্যুর সংখ্যা, গায়েবি রোগীর হিসাব দেওয়া হচ্ছে।
এমনকি তাদের হিসাবে হাসপাতালও উধাও হয়ে যাচ্ছে।
ঈদের আগে ও পরে সরকারের অপরিকল্পিত বিধিনিষেধেরও সমালোচনা করেন বিএনপির মহাসচিব।
তিনি বলেন, কঠোর বিধিনিষেধের কদিন পরে গণপরিবহন ছেড়ে দিল, এরপর ঈদের সময় ছেড়ে দিল।
তারপরে শ্রমিকদের ছুটি দিল, তারা ঈদের আগে ছুটিতে চলে গেল।
সাতটা দিন এভাবে তারা সংক্রমণ গ্রামের দিকে আরও বেশি করে পাঠিয়ে দিল।
আমরা সীমান্ত বন্ধ করতে বলেছিলাম, কারণ ভারতে ডেলটা ভেরিয়েন্ট বাড়ছে।
সেভাবে সরকার বন্ধ করল না। বিভিন্ন স্থলবন্দরে ভারত থেকে ট্রাক এল, চালক, সহকারীরা এল, তারা এই পাশে থাকল, সংক্রমণ বাড়িয়ে দিল।
বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘আপনারা দেখেছেন, ঢাকা থেকে গাদাগাদি করে হাজার হাজার মানুষ বাড়ি গেল।
এখন হঠাৎ করেই ১ তারিখ থেকে কলকারখানা সরকার খুলে দিল।
যানবাহন খুলল না। ফলে মানুষ চরম ভোগান্তিতে পড়েছে। পায়ে হেঁটে, রিকশায়, যে যেভাবে পারে কাজে যোগ দিতে ঢাকায় এসেছে।
এরপরে তাদের বোধোদয় হয়েছে যে রাত্রিতে বলল, গতকাল দুপুর ১২টা পর্যন্ত গণপরিবহন খোলা থাকবে।
তুঘলকও হেরে যায়। আমি এ জন্য কয়েক দিন আগে বলেছিলাম, আমার কাছে মনে হয় যাঁরা এসব সিদ্ধান্ত দেন, তাঁরা সব পাবনা হেমায়েতপুর থেকে এসেছেন।’
‘এটা তাদের সিদ্ধান্তহীনতা নয়, এটা পরিকল্পিত’ এমন মন্তব্য করে মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন,
তারা তো বলেই যে বাংলাদেশে ৫ লাখ লোক ১০ লাখ লোক মরে গেলে কী হবে।
এই হচ্ছে এই সরকার। যাদের জনগণের প্রতি কোনো দায়িত্ব নেই, যারা জনগণের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করছে রাজনৈতিকভাবে।
এখন তারা মানুষের জীবন-জীবিকা নিয়ে বিশ্বাসঘাতকতা করছে।
নেতা-কর্মীদের জনগণের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন,
‘বিএনপির নেতা-কর্মীরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মানুষের পাশে থাকার চেষ্টা করছেন।
আমাদের জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশন, ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন, আমাদের দলের স্বাস্থ্যবিষয়ক
কমিটি তারা মানুষের সঙ্গে থেকে তাদের সহযোগিতা করছে। বিএনপি জনগণের পাশে আছে, পাশে দাঁড়াচ্ছে।’