আপনি ট্রেনে ভ্রমণ করতে চান? অথবা জরুরি কোন কাজের জন্য ট্রেন দিয়ে কোথাও যেতে চান? তাহলে সহজে অনলাইনে ট্রেনের টিকেট কাটার নিয়ম আপনার জন্য জেনে রাখা গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়।
বাংলাদেশে ট্রেনে টিকেট কাটতে হলে eticket.railway.gov.bd এই ওয়েবসাইট টি ব্যবহার করতে হয়। আগে একটা সময় ছিলো; যখন কি না লাইনে দাঁড়িয়ে টিকেট কিনতে হত।
কিন্তু বর্তমানে ট্রেন বিষয়ক প্রায় সকল টিকেটই অনলাইন থেকে পাওয়া যায়। ফলে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়ানোর ঝামেলাটি এখন আপনি এড়াতে পারেন। এজন্য অনলাইনে ট্রেনের টিকেট কাটার নিয়ম আপনাকে অবশ্যই জানতে হবে। এই আর্টিকেলে আপনাদেরকে পার্ট টু পার্ট সবকিছু জানানোর চেষ্টা করবো ইনশা আল্লাহ্। তো চলুন বিস্তারিত জেনে নেয়া যাকঃ
অনলাইনে ট্রেনের টিকেট কাটার সময়
অনলাইনে মূলত ওয়েবসাইটের মাধ্যমে ট্রেন টিকেট গুলো বিক্রয় করা হয়। এটি যেহেতু অনলাইন প্ল্যাটফর্ম; তাই সপ্তাহে ৭ দিন এবং দিনে ২৪ ঘন্টাই ট্রেনের টিকেট কাটা যায়। এর জন্য ধরাবাঁধা কোন সময় নির্ধারণ করা নেই।
অগ্রিম টিকেট অথবা রেগুলার টিকেট – যেটাই হোক না কেন তা যে কোন সময় কেনা যায়। তবে ওয়েবসাইট ডাউন, সার্ভার বিজি অথবা ওয়েবসাইটে কোন কাজ চললে তখন সাময়িক কার্যক্রম বন্ধ থাকতে পারে।
অনলাইনে ট্রেনের টিকেট কাটার নিয়ম
এটি কোন কঠিন কিছু নয়। আপনাকে প্রথমে বাংলাদেশ রেলওয়ে এর অফিসিয়াল ওয়েবসাইটের রেজিস্ট্রেশন মেনুতে যেতে হবে। সেখানে গিয়ে আপনাকে রেজিস্ট্রেশন বা নিবন্ধন করার জন্য কিছু তথ্য দিতে হবে। সেগুলো হলোঃ
- আপনার পূর্ণ নাম
- সচল ই-মেইল
- মোবাইল নম্বর
- পাসওয়ার্ড
- জন্ম নিবন্ধন অথবা এনআইডি নম্বর
- পোস্ট কোড
- আপনার সংক্ষিপ্ত ঠিকানা
আপনাকে প্রথমে আপনার পুরো নামটি লিখতে হবে সঠিকভাবে। এরপর আপনার ব্যবহৃত সচল ই-মেইল অ্যাড্রেস দিবেন। অব্যবহৃত ই-মেইল দিবেন না কখনোই। আপনার সচল একটি মোবাইল নম্বর দিবেন। এরপর ৮ ডিজিটের পাসওয়ার্ড দিয়ে দিবেন।
এরপর নিচে সে পাসওয়ার্ড টি পুনরায় টাইপ করে কনফার্ম করবেন। এরপর আপনার জন্ম নিবন্ধন অথবা জাতীয় পরিচয়পত্র/এনআইডি নম্বর দিবেন। পোস্ট কোড দিবেন এবং আপনার ঠিকানাটি সংক্ষিপ্তভাবে দিবেন। যেমনঃ Narinda, Dhaka এরকম। সবকিছু চেক করে সাইন আপ বাটনে ক্লিক করে দিবেন।
এরপর আপনি আপনার চাহিদানুযায়ী তথ্য বসিয়ে ট্রেনের টিকেট বুক করতে পারবেন। যেমনঃ কোথায় থেকে কোন জায়গায় যাবেন, কোন ক্লাসের ট্রেন এবং সিটে যাবেন, কত তারিখে যাবেন – এসব তথ্য আপনার সুবিধামতো দিয়ে ইসলামী ব্যাংকের ডেবিট কার্ডের মাধ্যমে পেমেন্ট করে টিকেট কনফার্ম করতে পারেন। ইসলামী ব্যাংকের ডেবিট কার্ড সুদমুক্ত।
মোবাইলে ট্রেনের টিকেট কাটার নিয়ম
অনলাইনে কম্পিউটার অথবা ল্যাপটপ দিয়ে যেভাবে টিকেট কাটতে হয়; মোবাইল দিয়ে ট্রেনের টিকেট কাটার নিয়ম অনেকটা সেরকমই। তবে আপনি কম্পিউটার/ল্যাপটপের সুবিধা আপনার মোবাইল অথবা স্মার্টফোনে পেতে চাইলে গুগল ক্রোম ব্রাউজার থেকে ডেস্কটপ মোড করে নিতে পারেন।
আপনার কিছু তথ্য এবং মোবাইল নম্বর দিয়ে eticket.railway.gov.bd সাইট থেকে সাইন আপ করে সহজেই ট্রেনের টিকেট কাটতে পারেন। পেমেন্ট ইসলামী ব্যাংক এর ডেবিট কার্ড দিয়ে করতে পারেন।
এছাড়া প্লে স্টোর থেকে rail sheba (রেল সেবা) অ্যাপ দিয়েও ট্রেনের টিকেট ক্রয় করতে পারেন। আপনাকে টিকেট নিতে হলে আপনার একটি সচল ই-মেইল, একটি সচল মোবাইল নম্বর এবং আপনার জাতীয় পরিচয়পত্র লাগবে।
রেল সেবা অ্যাপে আপনি কোথায় থেকে কোথায় যেতে চান; সেটা চয়েস করতে পারবেন। আপনি নিজের ইচ্ছানুযায়ী সিট সিলেক্ট করে বুকিং দিতে পারবেন। এছাড়াও, আপনি যাতায়াতের ডেটও সিলেক্ট করতে পারবেন।
ট্রেন ছাড়ার ৩০ মিনিট পূর্ব পর্যন্ত আপনার টিকেটটি শো করে কাউন্টার থেকে টিকেট নিতে পারবেন। আর যদি আপনি লেট করেন; তাহলে আপনার টিকেটটি প্রিন্ট করে সেটা দিয়ে ট্রেনের টিকেট এর কাজটি করতে পারবেন। আপনার টিকেটের পিন নম্বরটি কাউকে শেয়ার করবেন না।
তবে মোবাইলে ট্রেনের টিকেট কাটার ক্ষেত্রে সাবধানতা অবলম্বন করবেন। আপনার টিকেটটি আপনার মেমরি কার্ডের একটি বিশেষ ফোল্ডারে যত্নসহকারে সেভ করে রাখুন। এছাড়াও আপনার ই-মেইল থেকেও টিকেটটি পেতে পারেন।
যদি আপনি ডাউনলোডকৃত টিকেটটি হারিয়ে ফেলেন; তাহলে এই টিকেটটি বাতিল বলে ধর্তব্য হবে। সুতরাং আপনাকে প্রমাণ অবশ্যই যত্নসহকারে সংরক্ষণ করতে হবে। টিকেট আপনার মোবাইলের ফোন মেমরি তে সেভ হতে পারে। তাই ফোন তখন ফ্যাক্টরি রিস্টার্ট করা যাবে না; যতক্ষণ না আপনি এর ব্যাকআপ রাখছেন।
অনলাইনে ট্রেনের টিকেট মূল্য কেমন?
আসলে অনলাইনে ট্রেনের টিকেটের মূল্য নির্ভর করে আপনার গন্তব্যস্থল এবং সিট কোয়ালিটির ওপর। আপনি যদি কাছাকাছি ভ্রমন করেন; তাহলে সেক্ষেত্রে খরচ কম। যেমনঃ আপনি ঢাকা থেকে নারায়ণগঞ্জ যেতে চান। তাহলে টিকেটের মূল্য আনুমানিক ৪০ থেকে ৮০ টাকার মত।
আপনি যদি ভিআইপি চেয়ার বা সিটে যেতে চান, এসি সুবিধা পেতে চান; তাহলে খরচ তুলনামূলক বেশি। অনলাইনে মূল্য অনেকটা এরকমই। তবে এর সাথে অতিরিক্ত কিছু চার্জ যুক্ত হতে পারে।
অনলাইন ট্রেন টিকেট যেভাবে বাতিল করবেন এবং ট্রেনের টিকেটের শর্তাবলী
অনেকে হয়তো ভাবতে পারেন যে, অনলাইনে ট্রেনের টিকেট কিনলে সেটা ফেরত দেয়া যায় না। কিন্তু এটা সঠিক নয়। অনলাইনে ট্রেনের টিকেট কিনে ফেললেও সেটা ফেরত দিয়ে টাকা রিটার্ন পাওয়া যায়।
এজন্য আপনার ফোনে আসা ট্রেনের টিকেট বিষয়ক ম্যাসেজটি আপনার নিকটস্থ রেল স্টেশনে নিয়ে গিয়ে দেখাতে হবে। তারপর আপনার ম্যাসেজের তথ্যানুসারে তারা টিকেটটি প্রিন্ট করে নির্দিষ্ট শর্তাবলী তে তারা আপনার টাকা ফেরত দিবে ইনশা আল্লাহ্।
টিকিট বাতিল করার সাথে কিছু শর্ত রয়েছে; যেগুলো হলোঃ
- ট্রেন ছাড়ার ৪৮ ঘন্টা আগে টিকেট বাতিল করলে এসি ফার্স্ট ক্লাসে ৪০/-, শুধু ফার্স্ট ক্লাসে ৩০/- এবং অন্যান্য গুলোতে ২৫/- টাকা কর্তন করা হবে।
- ট্রেন ছাড়ার ৪৮ ঘন্টার কম কিন্তু ২৪ ঘন্টার বেশি সময়ের ক্ষেত্রে টিকেট বাতিল করলে সার্ভিস চার্জ বাবদ ২৫% কর্তন করা হবে।
- মূলত ট্রেন ছাড়ার ২৪ ঘন্টার কম কিন্তু ১২ ঘন্টার বেশি সময়ের ক্ষেত্রে টিকেট বাতিল করলে সার্ভিস চার্জ বাবদ ৫০% কর্তন করা হবে।
- ট্রেন ছাড়ার ১২ ঘন্টার কম কিন্তু ৬ ঘন্টার বেশি সময়ের ক্ষেত্রে টিকেট বাতিল করলে সার্ভিস চার্জ বাবদ ৭৫% কর্তন করা হবে।
সবচেয়ে উত্তম হলো ট্রেন ছাড়ার ৪৮ ঘন্টা আগে টিকেট ফেরত দেয়া। কেননা, সময় যত কমে টিকেটের মূল্য ফেরতের পরিমানও কিন্তু সে অনুসারে কমে যায়। তাই শেষ সময়ে টিকেট বাতিল করলে তেমন একটা টাকা ফেরত পাওয়া যায় না।
অনলাইন থেকে ট্রেনের টিকেট কাটার সময় এইসব শর্তাবলী আপনাকে মেনে কিনতে হবে। আপনি না জেনে কিনলেও এই শর্ত প্রযোজ্য বলে ধরা হবে। আপনি তা মানতে বাধ্য। তাই ট্রেনের টিকেট কাটার নিয়ম ও অন্যান্য বিষয়গুলো আপনার প্রথমে জেনে নেয়া উচিত।
অনলাইনে ট্রেনের টিকেট কাটার নিয়ম শুধু একটিমাত্র বিষয় নয়; বরং এর সাথে জড়িয়ে আছে আরও কিছু বিষয়। টিকেট কাটার নিয়ম যেমন আপনার জানা দরকার; তেমনিই জানা দরকার টিকেট বাতিল করার বিষয়টিও।
এমনিভাবে আরও জানা প্রয়োজন ট্রেনের টিকেটগুলোর মূল্য, শর্তাবলী এবং সময়। একটা বিষয় খেয়াল রাখতে হবে আপনাকে। আর তা হলো – ট্রেনের টিকেট কাটার পর টিকেটটি আপনাকে অবশ্যই সেভ করে রাখতে হবে।
যদি এটা না করেন তাহলে আপনার ব্যবহৃত ই-মেইল থেকে তা সংগ্রহ করতে পারবেন ইনশা আল্লাহ্। তবে আপনি যদি সেভ না করেন আর ই-মেইল থেকেও সংগ্রহ করতে না পারেন – তাহলে আপনার টিকেট বাতিল হিসেবে ধরতে হবে। সুতরাং এ বিষয়গুলো খেয়াল রেখে আপনি সঠিকভাবে ট্রেনের টিকেট কাটতে পারেন।