তারাবির নামাজের নিয়ম, নিয়ত, দোয়া ও মোনাজাত । সালাতুল তারাবিহ

0
32
তারাবির নামাজের নিয়ম, নিয়ত, দোয়া ও মোনাজাত

দীর্ঘ ১১ মাস পর পর তারাবি নামাজ পড়তে হয় বিধায় অনেকেই তারাবির নামাজের নিয়ম সম্পর্কে অবগত নয়। তাই এবারের রমজানে তারাবির নামাজের নিয়ম সরণ করিয়ে দিতে এই লিখাটি। 

 

পবিত্র রমজান মাসের নিদ্দিষ্ট সালাত আদায়ের নাম হচ্ছে সালাতুল তারাবি। পাশাপাশি এটা রোজা রাখার ক্ষেত্রে গুরুত্বপুর্ন একটা অঙ্গ। আমাদের নবী রাসুল (সঃ) রমজান মাসে তারাবির নামাজ আদায় করতেন এবং সাহাবায়ে কিরামকেও তারাবির নামাজ পড়ার জন্য আদেশ করতেন। আমরা রমজান মাসে রোজা রাখার পাশাপাশি অবশ্যই তারাবির নামাজ পড়বো এবং এখন তারাবির নামাজের নিয়ম, নিয়ত, দোয়া ও মোনাজাত সম্পর্কে জানবো। প্রথমেই তাবাবি সম্পর্কে কিছু তথ্য তুলে ধরি।

 

সালাতুল তারাবি বা তারাবির নামাজ কি?

 

রমজান মাসের রাতের বিশেষ ইবাদাত হচ্ছে তারাবি নামাজ। আরবী ভাষার তারাবিহ (تَرَاوِيْح) শব্দের অর্থ বিশ্রাম করা। মূলত দীর্ঘ কিরাত তিলায়াতের মাধ্যমে সালাত আদায় করা করার ক্ষেত্রে প্রতি ৪ রাকাত নামাজের পর পর বিশ্রাম নেয়া হয় বিধায় উক্ত নামাজকে তারাবিহ বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। ১২ মাসের মধ্যে কেবল রমজান মাসেই তারাবি নামাজ পড়া হয়। 

 

তারাবির নামাজ জামায়াতের মধ্যে আদায় করা খুব সোয়াবের কাজ এবং তা যদি কোরআন শরিফ খতমের মাধ্যমে আদায় করা হয় তাহলে আরো বেশি সোওয়াব। তবে সূরা কিরাতের মাধ্যমেও তারাবির নামাজ আদায় করা যায়। 

 

খতম তারাবির ক্ষেত্রে বলা যায়, কোরআন শরিফের মধ্যে মোট ৫৪০ টি রুকুহ রয়েছে। এক্ষেত্রে প্রতিদিন ২০ রাকাত নামাজে ২০ রুকুহ আদায় করলে ২৭ রোজা অব্দি কোরআন খতম দেয়া সম্ভব হয় এবং লাইলাতুল কদরেরে রাতে সম্পুন্ন কোরআন খতম দেয়ার সোওয়াব পাওয়া যাবে। 

তারাবির নামাজ সুন্নত নাকি নফল

 

মূলত তারাবির নামাজ না সুন্নত আর না নফল। এটা আসলে সুন্নাতে মুয়াক্কাদা। প্রশ্ন, সুন্নাতে মুয়াক্কাদা কি? এটা অনেকটা ওয়াজিবের মতনই। ওয়াজিবের জন্য যেমন জবাবদিহী করতে হবে তেমনই সুন্নাতে মুয়াক্কাদার জন্যও জবাবদিহী করতে হবে। তবে একটা বিষয় অবশ্যই উল্লেখ্য করতে হয় যে, ওয়াজিবের ক্ষেত্রে ওয়াজিব পালন না করলে নিদিষ্ট কোনো শাস্তি পেতে হয় না, কিন্তু সুন্নাতে মুয়াক্কাদার ক্ষেত্রে অবশ্যই শাস্তির ব্যবস্থা আছে। তাই আমরা সবাই চেষ্ঠা করবো রমজান মাসে রোজা রাখার পাশাপাশি তারাবির নামাজ পড়বো। 

তারাবির নামাজ কত রাকাত

তারাবি রাতের নামাজ, মানে এই মাসে প্রতিদিন ইশার নামাজের ৪ রাকাত ফরজ, ২ রাকাত সুন্নত ও ২ রাকাত নফল নামাজের পর এবং বেতর নামাজের আগে তারাবির নামাজ পড়তে হয়। তারাবির নামাজে প্রতি দুই রাকাত অথবা ৪ রাকাত পর পর বিশ্রাম নিতে হয় কিছুক্ষন এভাবে সম্পুর্ন সালাত আদায় করা হয়। 

 

তারাবির নামাজ কত রাকাত এই বিষয়ে অনেকের অনেক রকম মতবাদ আছে কারন তারাবির নামাজ কি পরিমান পড়তে হবে এই বিষয়ে সুনিদ্দিষ্ট কোনো নিয়ম বাধা নেই। এক্ষেত্রে 

 

  • হানাফি, শাফিয়ি, হাম্বলি ফিকহের অনুসারীগণ – ২০ রাকাত সালাত আদায় করেন
  • মালিকে ফিকহির অনুসারীগণ – ৩৬ রাকাত সালাত আদায় করেন
  • আহলে হাদীসেরা – ৮ রাকাত সালাত আদায় করেন।

তারাবির নামাজের নিয়ম

 

তারাবির নামাজের নিয়য়ের কথা বললেই প্রথমে আসবে বাংলাদেশে প্রচলিত দুই ধরনের তারাবির কথা। প্রথমটা হচ্ছে খতম তারাবিহ ও দ্বিতীয়ত হচ্ছে সূরা তারাবি। খতম তারাবীহ নামাজের ক্ষেত্রে সম্পুর্ন কোরআন খতম দেয়ার মাধ্যমে নামাজ পড়ানো হয় এবং সূরা তারাবীহ এর ক্ষেত্রে ছোট বড় সূরা ও কিছু কোরআনের আয়াতের মাধুমে তারাবীহ সালাত আদায় করা হয়। 

 

তবে উভয়ের ক্ষেত্রেও নামাজের নিয়ম একই থাকবে যেমন – দুই রাকাত নামাজ আদায় করে সালাম ফিরানোর মাধ্যমে নামাজ শেষ করা এভাবে দুই রাকাত করে নামাজ পড়া পাশাপাশি প্রতি ৪ রাকাত নামাজের পর কিছু সময় বিশ্রাম নেয়া। এই বিশ্রামের সময় টুকুতে বিভিন্ন দোয়া, ইসতেগফার পড়া যায়। 

তারাবির নামাজের নিয়ত আরবীতে

 

نويت أن أصلي لله تعالى ركعتين صلاة التراويح سنة رسول الله تعالى متوجها إلى جهة الكعبة الشريفة الله اكبر

 

উচ্চারণ: নাওয়াইতু আন উসাল্লিয়া লিল্লাহি তায়ালা, রাকাআতাই সালাতিত তারাবিহ সুন্নাতু রাসূলিল্লাহি তায়ালা, মুতাওয়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল কাবাতিশ শারিফাতি, আল্লাহু আকবার।

অর্থ: আমি কেবলামুখি হয়ে দু’রাকাত তারাবির সুন্নতে মুয়াক্কাদা নামাজের নিয়ত করছি; আল্লাহু আকবার।

 

তাছাড়া নামাজের নিয়ত করার মানে হচ্ছে মন থেকে নামাজের শুরু করার ধারনা এক্ষেত্রে বাংলায় হোক বা আরবীতে উভয় ক্ষেত্রেই নামাজ পড়া যাবে। তাই যদি আরবী একান্তই না জানা থাকে এক্ষেত্রে বাংলায় নিয়ত করা যাবে। 

 

অতঃপর, পবিত্র রমজান মাসে সকলের উচিত আল্লাহর নির্দেশ অনুযায়ী ইবাদত করা। ঠিক ভাবে রোজা রাখা এবং নিয়মিত নামাজ পড়া। পবিত্র রমজান মাস সকলের জন্য রহমত নিয়ে আসুক। 

তারাবির নামাজের মোনাজাত 

তারাবির নামাজের ক্ষেত্রে প্রতি ৪ রাকাত পরপর মোনাজাত করা যায় আবার সম্পুন্ন নামাজ শেষ করেও মোনাজাত করা যায়। এক্ষেত্রে মোনাজাতটি নিম্মে উল্লেখ্য করা হলোঃ 

 

اَللَهُمَّ اِنَّا نَسْئَالُكَ الْجَنَّةَ وَ نَعُوْذُبِكَ مِنَ النَّارِ يَا خَالِقَ الْجَنَّةَ وَالنَّارِ- بِرَحْمَتِكَ يَاعَزِيْزُ يَا غَفَّارُ يَا كَرِيْمُ يَا سَتَّارُ يَا رَحِيْمُ يَاجَبَّارُ يَاخَالِقُ يَابَارُّ – اَللَّهُمَّ اَجِرْنَا مِنَ النَّارِ يَا مُجِيْرُ يَا مُجِيْرُ يَا مُجِيْرُ- بِرَحْمَتِكَ يَا اَرْحَمَ الرَّحِمِيْنَ

উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা ইন্না নাসআলুকাল জান্নাতা ওয়া নাউজুবিকা মিনাননার। ইয়া খালিক্বাল জান্নাতি ওয়ান নার। বিরাহমাতিকা ইয়া আঝিঝু ইয়া গাফফার, ইয়া কারিমু ইয়া সাত্তার, ইয়া রাহিমু ইয়া ঝাব্বার, ইয়া খালিকু ইয়া বার্রু। আল্লাহুম্মা আঝিরনা মিনান নার। ইয়া মুঝিরু, ইয়া মুঝিরু, ইয়া মুঝির। বিরাহমাতিকা ইয়া আরহামার রাহিমিন।’

অতঃপর, পবিত্র রমজান মাসে যথাযথ ইবাদতের মাধ্যমে সকলেই আল্লাহ তায়ালাকে খুশি করার চেষ্টা করবো, বেশি বেশি দোয়া ও মোনাজাতের মধ্য দিয়ে আল্লাহর কাছে চাইবো ও নিজের দ্বীনের সাথে চলার পথ সহজ করার জন্য প্রার্থনা করবো।

Visited 20 times, 1 visit(s) today

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here