আপনার ফোন কি স্লো কাজ করছে? প্রায় সময় হ্যাং হয়ে যায়? এবং আপনি ফোন স্লো হলে করণীয় কি সেই বিষয়ে জানতে চাচ্ছেন? তবে এই আর্টিকেলটি আপনার চাহিদা পূর্ন করার জন্যই তৈরি করা হয়েছে। আপনার সমস্যা আমরা বুজি এবং আপনার সমস্যা গুলোকে সমাধান দিতে রয়েছি সর্বদা। তারই পেক্ষিতে এবারের আর্টিকেলে জানাবো ফোন স্লো হলে করণীয় কি সেই বিষয়ে জানাবো ১২ টি কার্যকর উপায় সম্পর্কে যে উপায় অনুসরণের মাধ্যমে আপনার স্লো ফোনকে করতে পারবেন দ্রুতগ্রামী।
আমাদের দৈনন্দিন ব্যবহারের লিস্টে স্মার্টফোন সবসময়ই থাকবে। বর্তমানের ব্যাপার এমন হয়ে দাঁড়িয়েছে যে ফোন ছাড়া চলা কোনো ভাবেই সম্ভব নয়। এমন পর্যায়ে অতিরিক্ত মাত্রায় ব্যবহারের ফলে ইলেক্টিক এই ডিভাইসটি স্লো হয়ে যাওয়া বা হ্যাং করা অস্বাভাবিক কিছু না। তবে সকল সমস্যার যেমন সমাধান রয়েছে, ফোন স্লো বা হ্যাং হয়ে যাওয়ার সমস্যার ও সমাধান রয়েছে। এবং সেই সমস্যার সমাধানই দেয়া হবে এই আর্টিকেলে, জানানো হবে ফোন স্লো হলে করণীয় কি সেই সম্পর্কে।
যেকোনো সমস্যার সমাধানের জন্য আমাদের জানতে হবে সমস্যাটা কোথা থেকে হচ্ছে এবং কেনো হচ্ছে তাই ফোন স্লো হয়ে যাওয়া সমস্যার কারন গুলো নিম্মে আলোচনা করা হলোঃ
- র্যাম, রোম, মেমোরি কম থাকা
- অপারেটিং স্টিস্টেমে সমস্যা থাকা
- অপ্রয়োজনীয় জিনিসে ফোন ভর্তি করে রাখা
- সারা রাত ফোন চার্জে রাখা
- ফোনের হার্ডওয়্যারের সমস্যা
তাছাড়াও আরো অনেক কারন আছে ফোন হ্যাং ও স্লো হওয়ার পিছনে যা নিয়ে আর্টিকেলের মাঝে আলোচনা করবো এবং এই পর্যায়ে চলে যাবো সরাসরি টপিকের মূল বিষয়ে “ফোন স্লো হলে করণীয় কি”
ফোন স্লো হলে করণীয় কি [ ১২ টি উপায় ]
১) রেগুলার সিস্টেম আপডেট দেয়া
আপডেট দেয়ার মাধ্যমে স্মার্টফোনের বিভিন্ন ধরনের বাগ গুলো ফিক্স করা হয়। ফোন কোম্পানি গুলো তাদের ফোন গুলোর পার্ফরম্যান্স ভালো রাখতে এবং ইউজার এক্সপ্রিরিয়ান্স ভালো রাখতে এই সকল আপডেট গুলো দেয়া হয়। যারা রেগুলার ফোনের সিস্টেম আপডেট দিয়ে রাখে তাদের ফোনে হ্যাং হওয়া সংক্রান্ত সমস্যা খুব কম হয়। তবে যারা এই বিষয়ে অবগত নয় তাদের উচিৎ সিস্টেম আপডেট গুলো রেগুলার দেয়া।
২) রেগুলার অ্যাপ আপডেট করা
আমরা ফোনে যে সকল অ্যাপস গুলো ব্যবহার করে থাকি সেই গুলোর ক্ষেত্রেও কিছু দিন পর পর আপডেট এসে থাকে। অ্যাপ এর ক্রুটি গুলো সংশোধন করা হয় আপডেটের মাধ্যমে। যখনই আপডেট আসবে তখন অ্যাপ গুলো আপডেট করে রাখুন আপনার ফোন স্লো হবে না
৩) মেমোরি স্ট্রোরেজ ফুল করে রাখবেন না
যেকোনো মোবাইল ফোন স্লো হওয়ার বড় একটি কারন মেমোরি স্ট্রোরেজ একদম ভরে যাওয়া বা ফুল হয়ে যাওয়া। একটা মানুষ যেমন অনেক কাজ করার পর বেশ ক্লান্ত হয়ে যায়, আগের মত কাজ করতে পারে না, তেমনই ফোনে যখন স্ট্রোরেজ ফুল হয়ে যায় তখন দেখা যাবে ফোন নিজের গতি ঠিক রাখতে না পেরে হ্যাং করছে বা স্লো হয়ে যাচ্ছে।
উক্ত সমস্যা থেকে সমাধান পেতে এবং আপনার ফোনকে গতিশীল করে রাখতে অবশ্যই আপনার ফোনে যে স্ট্রোরেজ রয়েছে তা সম্পুর্ণ ভর্তি করবেন না। অপ্রয়োজনীয় ছবি, ভিডিও, অডিও ডিলিট করে রাখবেন।
৪) ক্যাশে ক্লিয়ার করে রাখুন
ক্যাশ (cache) হলো সেই জিনিস যা যেকোনো ওয়েবসাইট অ্যাপ ব্যবহারের মাধ্যমে আমাদের ফোনে তা যুক্ত হতে থাকে ফোনের মেমোরিতে। যত বেশি অ্যাপ ও ওয়েবসাইট ভিজিট করবেন সেই ওয়েবসাইটের কুকিশ গুলো আপনার ফোন স্লো করে দিবে। উক্ত সমস্যা সমাধানের জন্য আপনার ফোনটি নিন। নিদিষ্ট অ্যাপ এর ইনফো অপশনে যান, যেখান থেকে স্ট্রোরেজ অপশন সিলেক্ট করে ক্লিয়ার ক্যাশে করে নিন।
৫) অপ্রয়োজনীয় অ্যাপ গুলো সরিয়ে ফেলুন
মনে করুন তো আপনার ফোনে থাকা কোন অ্যাপটি গত ১ মাসের বেশি সময় ধরে ব্যবহার করেন নি? তাহলে কেনো সেই অ্যাপটি রেখে দেয়ার মাধ্যমে আপনার ফোনের স্ট্রোরেজ ধরে রেখেছেন যা প্রতিনিয়ত নিজের কুকিস গুলো আপনার মেমোরিতে যুক্ত করে যাচ্ছে আপনার প্রসেসরকে লোড নিয়ে চাপ দিচ্ছে। আপনার উচিৎ হবে এমন সব অ্যাপ গুলো ফোন থেকে রিমুভ করে দেয়া যে অ্যাপ গুলো অনেক দিন যাবত ব্যবহার করছেন না।
৬) ফ্যাক্টরি ডাটা রিসেট করে ফেলুন
যখন দেখবেন আপনার ফোন একেবারেই বেশি স্লো কাজ করছে এবং বার বার হ্যাং করা সংক্রান্ত সমস্যা হয়েই যাচ্ছে তখন আপনার ফরজ কাজ হবে আপনার ফোনটি একদম ফ্যাক্টরি রিসেট করা। উল্লেখ্য যে, উক্ত কাজের আগে আপনার ফোন স্ট্রোরেজে থাকা জরুরি জিনিস (যেমনঃ ছবি, ভিডিও, সহ গুরুত্বপুর্ণ সকল কিছু) ব্যাকআপ নিয়ে রাখা। কারন ফ্যাক্টরি রিসেটের মাধ্যমে আপনার ফোন থেকে সকল কিছু ডিলিট হয়ে যাবে। এবং পুনরায় সকল কিছু সেটাপ করতে হবে। এটা তেমন হয়ে যাবে যেমনটা ছিলো যখন প্রথমবারের মত ফোনটি হাতে পেয়েছিলেন।
৭) SSD মেমোরি কার্ড ব্যবহার করা
বর্তমানে আমরা যে ফোন গুলো ব্যবহার করে থাকি সেগুলোতে রম অনেক বেশি থাকে। এই যেমন ৬৪ জিবি রোম দিয়েই এখন বেশি ভাগ ফোন গুলো বাজারে আসে। এমন অবস্থায় বছর কয়েক আগের মত ১৬, ৩২, ৬৪ জিবি ম্যামোরির ব্যবহার লোকেরা কমিয়ে দিয়েছে। তবে আপনি কি জানেন আপনি যদি আলাদা একটি SSD মেমোরি কার্ড ব্যবহার করেন তবে ফোনের উপর থেকে অনেক বড় চাপ কমে যায়। এবং যার ফলে ফোনের উপর লোড কম হয়। ওভারল বলতে গেলে ফোন অনেকটাই ভালো থাকে।
৮) কিছুক্ষনের জন্য ফোনটিকে বিশ্রাম দিন
আপনি মানুষ হয়েই সারাদিন অনাবরত কাজ করতে পারবেন না, এক সময় ক্লান্ত হয়ে গিয়ে চাইবেন একটু বিশ্রাম। ঠিক একই ব্যাপার ঘটে থাকে ফোনের বেলাতেও। যখন একটি ফোন অতিরিক্ত মাত্রায় অনাবরত কাজ করেই যায়, যার প্রসেসর থেকে শুরু করে স্কিন পর্যন্ত সচল থেকেই থাকে সেটা এক সময় গিয়ে, গরম হয়ে যাওয়া, স্লো বা হ্যাং হয়ে যাওয়া টাইপ সমস্যার সম্মুখীন হবে এটাই স্বাভাবিক। তাই যখন দেখবেন আপনার ফোনটি স্লো হয়ে গেছে তখনই আপনার ফোনটাকে একটু বিশ্রাম দিন।
৯) স্মার্টফোনে ডিফল্ট ওয়াল পেপার ব্যবহার করুন
এটা খুব বড় ফ্যাক্ট না হলেও অনেকটাই প্রভাব ফেলে ফোনের পার্ফরম্যান্স এর উপর। যখন ওয়াল পেপারের জন্য কাস্টম একটি ওয়াল পেপার অ্যাপ ব্যবহার করবেন সেটা কিন্তু সর্বদাই ফোনের ব্যাকগ্রাউন্ডে লোড হতেই থাকবে। এগুলো ফোনের স্ট্রোরেজ, র্যাম, ও প্রসেসরের উপর প্রভাব বিস্তার করে। তার চেয়ে ভালো হয় আপনি কোনো ছবি বা ডিফল্ট ফোনের ওয়াল পেপার ব্যবহার করেন।
১০) ফোনকে অতিরিক্ত চার্জ দেয়া থেকে বিরত থাকুন
আমাদের মধ্যে এমন অনেকেই আছে যারা রাতে ঘুমানোর সময় মোবাইল চার্জ দিয়ে রাখে। যার ফলে দেখা যায় ফোনটির চার্জ পুর্ন হওয়ার পরেও অতিরিক্ত সময় চার্জে যুক্ত থাকে এবং এর ফলে ফোনটি গরম হওয়ার পাশাপাশি ফোনের মাদারবোর্ড ও গরম হয়ে যায় আস্তে আস্তে। ব্যাটারির সাথে যুক্ত সকল কিছু গরম হয়ে রইলে তা দীর্ঘ সময়ের জন্য ক্ষতিগ্রস্ত হয়। যার ফলে একদা ওভারল সময় ধরে ফোনের ক্ষতি করে ফেলে এবং ফোন স্লো হয়ে পরে।
১১) ক্রোম ব্রাউজারের স্প্রিড দ্রুত করার নিয়ম
অনেক সময় দেখা যায় ফোন থেকে ব্রাউজ করার সময় অনেক স্লো কাজ করে ফোন। এর অনেক গুলো কারনের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে ব্রাউজারটি ঠিক ভাবে ব্যবহার হতে যেটুকু মেমোরি স্পেসের প্রয়োজন তার থেকে অনেক কম পরিমাণের ব্যবহারের পারমিশন পাওয়া। উক্ত বিষয়টি ফিক্স করার জন্য ক্রোম ব্রাউজার ওপেন করুন। একটি নিউ ট্যাব নিন এবং [ chrome://flags/#max-tiles-for-interest-area ] এটি কপি পেস্ট করুন। এবার একটি মেমোরি ইউজেস সেটিং আসবে সেখানে ডিফল্ট ভাবে 128 দেয়া থাকবে যা চেঞ্জ করে 512 দিয়ে দিন। ব্যাস আপনার কাজ শেষ।
১২) অ্যান্ড্রয়েড ফোন দ্রুতগতির করতে অ্যানিমেশন ব্যবহার বন্ধ করুন
অ্যান্ড্রয়েড অপারেটিং সিস্টেম অ্যানিমেশন থেকে মুক্তি পেতে অ্যান্ড্রয়েড ফোনে সেটিংস মেনু অপশন আনলক করতে হবে। উক্ত কাজ করার জন্য প্রথমে Settings থেকে About phone এ যেয়ে নিচে স্ক্রোল করে Build Number এ ঠিক ৭ বার ট্যাপ করুন। যার ফলে ফোনের সিস্টেম সেটিংসে একটি “ডেভেলপার অপশন” মেনুর অ্যাক্সেস পাবেন। এই মেনুতে আপনি উইন্ডো অ্যানিমেশন স্কেল, অ্যানিমেশন পরিবর্তন স্কেল, এবং অ্যানিমেশন সময়কাল স্কেল পাবেন প্রতিটি ট্যাপ করে .5x এ সেট করুন বা বন্ধ করে দিন।
আর্টিকেল শেষে কিছু কথা
এই ছিলো আপনার স্লো হয়ে থাকা ফোনকে কয়েক গুন বুস্ট করে দেয়ার মত কার্যকর কিছু উপায়। জানাচ্ছিলাম ফোন স্লো হলে করণীয় কি সেই সম্পর্কে। উক্ত কাজের টিউটরিয়াল দিতে গিয়ে জানিয়েছি ফোন স্লো হওয়ার কারন ও ১২ টি উপায় যা অনুসরণের মাধ্যমে আপনার স্লো হয়ে যাওয়া বা হ্যাং করা ফোন দ্রুতগ্রামী করতে সক্ষম হবেন। টেক রিলেটেড আরো অন্যান্য বিষয় জানতে থাকুন বাংলা আলো এর সাথেই। ধন্যবাদ।