ঝামেলা বিহীন ভাবে ফ্ল্যাট কেনার কথা চিন্তা করছেন? এক্ষেত্রে ফ্ল্যাট কেনার নিয়ম সম্পর্কে জানতে আগ্রহী? তবে এবারের আর্টিকেলটি আপনাকে বেশ উপকৃত করতে যাচ্ছে কারন এখানে উল্লেখ্যিত রয়েছে সে সকল বিষয় যা একজন ক্রেতা হিসেবে অবশ্যই বিবেচনা করতে হবে এবং এমন কিছু কথার কথাও বলা হয়েছে যা ফ্ল্যাট কেনার ক্ষেত্রে মোটেও করা যাবে না। ফ্ল্যাট ক্রয়ের মত গুরুত্বপূর্ণ এবং বড় বিনিয়োগের ক্ষেত্রে আর্টিকেলে উল্লেখিত বিষয় গুলো আপনাকে বড় ধরনের সমস্যার হাত থেকে রেহাই দিতে সক্ষম।
বাংলাদেশের মতোই স্থানে বর্তমানে সময়ে জমি কিনে ফ্ল্যাট বা বাড়ি তৈরি করা অনেকটা কঠিন হয়ে পড়েছে। অনেকে রয়েছে যারা চাহিদামত স্থানে নিজের বাড়ি তৈরি করতে চাচ্ছে কিন্তু সেভাবে পাচ্ছে না। এটা হতে পারে জমির স্বল্পতা অথবা অন্যান্য আনুষাঙ্গিক বিষয়। যার ফলে অনেকেই বর্তমানে জমি কিনে বাড়ি করার থেকে ফ্ল্যাট বা অ্যাপার্টমেন্ট কেনার জন্য বেশি ঝুঁকছে।
তবে সরাসরি ফ্ল্যাট বা প্রপার্টি কেনার ক্ষেত্রে বেশকিছু বিষয়ে কড়া নজরদারি রাখতে হয় এবং এবং অনেক বিষয় রয়েছে যেগুলো যাচাই-বাছাই করার পর ফ্ল্যাট বা অ্যাপার্মেন্ট কিনতে হয়। ফ্ল্যাট কেনার ক্ষেত্রে বিজ্ঞাপন বা কোন বিক্রয় কর্মীর তারা প্রলুব্ধ হয়ে তাড়াহুড়ো করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা মোটেও উচিত নয়।
কারন একটি ফ্ল্যাট কেনার সাথে আপনার সঞ্চিত অর্থের স্থায়ী ঠিকানা করার পাশাপাশি দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগের কথা ভাবছেন। যার কারণে ফ্লাট অ্যাপার্মেন্ট কেনার ক্ষেত্রে এমন কিছু নিয়ম রয়েছে বা এমন কিছু কাজ রয়েছে যা করণীয় এবং পাশাপাশি এরূপ কিছু কাজ রয়েছে যা বর্জন করা উচিত। এবারের আর্টিকেলে মূলত ফ্ল্যাট কেনার নিয়ম গুলো সম্পর্কে আলোচনা করা হবে এখানে থাকছে ফ্ল্যাট কেনার ক্ষেত্রে করণীয় ও বর্জনীয় কাজসমূহ।
যেকোনো ধরনের ফ্ল্যাট কেনার নিয়ম
ফ্ল্যাট কেনার ক্ষেত্রে এমন বেশ কিছু বিষয় রয়েছে যেগুলো অবশ্যই বিবেচনায় আনা উচিত। কেননা আপনি যার কাছ থেকে ব্লাড কিনছেন বা যে ব্লাড কিনছেন সেটিকে সম্পূর্ণ ঝামেলামুক্ত কিনা তা পূর্বে জেনে নেওয়া হবে বুদ্ধিমানের কাজ। তাছাড়া বিভিন্ন বিজ্ঞাপনের প্ররোচনা এবং অফারের ফাঁদে পড়ে অসাবধানতার কারণে নিজের সম্পূর্ণ সঞ্চয় হারিয়ে বসার গল্পও অপরিচিত নয় এই সেক্টরে। তাই জেনে নিন ফ্লাট কেনার ক্ষেত্রে কি কি করণীয় এবং বর্জনীয়। আপনার একটি শহরে হোক কিংবা গ্রামে অবশ্যই সঠিক নিয়মে সঠিক উপায়ে যাচাই-বাছাই করে তবেই ফ্ল্যাট কেনার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করুন। এরপর জানাবো ফ্ল্যাট কেনার ক্ষেত্রে কোন কোন বিষয় অবশ্যই করতে হবে সে সম্পর্কে।
ফ্ল্যাট কেনার ক্ষেত্রে করনীয় কাজ সমূহ
অবস্থান
একটি ফ্ল্যাট কেনার ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে তার অবস্থান। মূলত অবস্থানগত দিক থেকে একটি ফ্ল্যাটের মূল্য অনেকাংশে নির্ভরশীল। শহর পর্যায়ের একটি ফ্ল্যাটের দাম এর সাথে শহরের বাইরে বা গ্রামপর্যায়ে ফ্ল্যাটের মূল্য কখনোই এক হবে না। তাই আপনি যে ফ্ল্যাট কিনতে চাচ্ছেন সেটির অবস্থান সম্পর্কে সঠিক ধারণা রাখুন।
তাছাড়া আপনার পছন্দের অবস্থানের প্রেক্ষিতে ফ্ল্যাটের অবস্থান ও আপনার কর্মস্থান এর দূরত্ব কতটুকু সেটি বিবেচনায় আনুন। আপনি যেই এরিয়া এলাকায় ফ্ল্যাট কিনতে চাচ্ছেন সেই এলাকার নাগরিক সুবিধা কেমন রয়েছে সে বিষয়ে অবশ্যই বিবেচনায় আনতে হবে। আপনি যে ফ্ল্যাটটি দেখছেন তার থেকে স্কুল কলেজ হাসপাতাল এর দূরত্ব এবং যোগাযোগ বা পরিবহন ব্যবস্থা কেমন সেটিও দেখতে হবে। সবকিছু মিলিয়ে যদি আপনার কাছে ব্যক্তিগতভাবে ফ্ল্যাট এর অবস্থান অনুরূপ হয় তবে অবশ্যই এটা একটা ভালো ডিল হতে পারে।
নিরাপত্তা
আপনি যে অবস্থানে ফ্ল্যাট কিনতে চাচ্ছেন উক্ত অবস্থান বা এরিয়ার নিরাপত্তার ব্যাপারে বিবেচনা করতে হবে। উক্ত কলোনি বা এরিয়ার সামাজিক ও প্রাকৃতিক পরিবেশ কেমন হবে এবং সেই পরিবেশ আপনার জন্য অনুকূল কিনা সেটা নিয়ে ভাবুন। তাছাড়া দূষণের দিক থেকে আপনার ফ্ল্যাটের অবস্থান কেমন সে দেখুক মেজর একটি ব্যাপার। উক্ত এরিয়ার ময়লা আবর্জনা নিষ্কাশন এর যথাযথ ব্যাপার রয়েছে কিনা সেটি দেখুন।
আকার ও আয়তন
আপনার নিজের পরিবারের সদস্যসংখ্যা আসবাবপত্রের পরিমাণ এবং লে-আউট অনুযায়ী পাশাপাশি আপনার অবস্থানগত রুচি যেমন সেটির উপর নির্ভর করবে আপনার বাছাইকৃত ফ্ল্যাটে সাইজ বা আকার কেমন হবে। তার পাশাপাশি আপনি কত নাম্বার ফ্লোরে থাকতে চাচ্ছেন সেটিও বিবেচনায় রাখতে হবে।
আপনি পছন্দর ফ্ল্যাটটি যদি উপর তলায় থাকেন তবে গ্রীস্মের সময়ে গরমের ভোগান্তি পোহাতে হতে পারে। পাশাপাশি আপনি যদি আপনার পছন্দের ফ্ল্যাটের প্রথম ও দ্বিতীয় ফ্লোরে থাকেন তবে নিরাপত্তা থেকে একটু বেশিই সচেতন হতে হবে। তাছাড়া যেহেতু প্রতিটি বিল্ডিং এর ছাদ থাকে তাই আপনার বিল্ডিং এর ছাদ ব্যবহার করার ক্ষেত্রে কোনো কন্ডিশন রয়েছে কিনা তা জেনে নিন।
এছাড়া বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায় যেসকল এরিয়া বিল্ডিং এর ফ্ল্যাট তৈরি করে বিক্রি করে সেখানে অনেক বেশি থাকে। আপনার পছন্দ করা যদি চার থেকে পাঁচ তলার উপরে হয় তবে সেখানে লিফট সার্ভিস আছে কিনা সেটি বিবেচনায় রাখবেন।
সুযোগ সুবিধা
এই পর্যায়ে আপনি যে ফ্ল্যাটে বেছে নিতে চাচ্ছেন, সেই ফ্ল্যাটের ভবনের সুযোগ সুবিধার দিকে দৃষ্টিপাত করতে হবে। বর্তমানে প্রতিটি আধুনিক অ্যাপার্মেন্টে জিমনেসিয়াম,সুইমিং পুল, কমিউনিটি স্পেস, বাচ্চাদের খেলার স্থান, গাড়ি পার্কিং, multi-level সিকিউরিটি সিস্টেম, জরুরি ড্রেনেজ সিস্টেম, বিদ্যুৎ – গ্যাস ও পানির সংযোগ সুবিধা রয়েছে। তাছাড়া ভবনের বাহ্যিক দিক থেকেও ভালো লাগার বিষয় রয়েছে। এবং বাংলাদেশের পেক্ষাপটে চিন্তা করলে দক্ষিনমুখী হলে সেখানে আলো বাতাসের কমতি থাকে না।
মালিকানার ধরন
এই পর্যায়টি খুব গুরুত্বপূর্ণ বিবেচ্য বিষয়। কারন আপনি যে ফ্ল্যাটটি কিনতে চাচ্ছেন সেটির প্রকৃত মালিকের সাথে সম্পৃক্ততার প্রয়োজন রয়েছে। আপনাকে এটি নিশ্চিত করতে হবে আপনি যে ফ্ল্যাটটি কিনতে চাচ্ছেন তার সর্বশেষ রেকর্ডে বিক্রেতার নাম, সি এস, আর এস সহ অন্যান্য লেজারের আদেশ রয়েছে কিনা তা যাচাই করে নিতে হবে।
তাছাড়া আপনি যে কোম্পানি থেকে ফ্ল্যাট কিনতে আগ্রহী ইলিশ এই কোম্পানিটি নিবন্ধিত কিনা এবং সেটি রিহ্যাবের এর সদস্য কি-না এটা জানা বেশ জরুরি। তাছাড়া ডেভলপার কোম্পানী যদি কোন মালিকের কাছ থেকে জমি নিয়ে থাকে তবে সেক্ষেত্রে কোন চুক্তিতে চুক্তিবদ্ধ হয়েছে কিনা তা যাচাই বাছাই করা প্রয়োজন রয়েছে এতে করে ভবিষ্যতে বড় ধরনের সমস্যার হাত থেকে রেহাই পাওয়া যাবে।
নামজারি অবস্থা
নামজারি অবস্থা বলতে জমির নামকরণ সঠিক কিনা সেদিকে বোঝানো হয়েছে। এক্ষেত্রে, উক্ত জমি যদি কেউ উত্তরাধিকার সূত্রে জমির মালিক হয়ে থাকে তবে এক্ষেত্রে জমির বিতরণ সংক্রান্ত বিষয়ে কোনো মামলা আছে কিনা তা দেখে নিতে হবে ।
নকশাগত মিল
বিক্রয় জন্য যে ফ্ল্যাটে প্রস্তাব রাখা হয়েছে সেটের জন্য যে নকশা দেখানো হয়েছিল ঘটনাস্থলের নকশার সাথে তার মিল কতটুকু রয়েছে তা যাচাই বাছাই করা উচিত। উক্ত কাজের জন্য সেই জমির আশেপাশের জমির মালিকদের কাছ থেকে দাগ খতিয়ান জেনে নেওয়া যেতে পারে। এক্ষেত্রে চুক্তির একটি অনুলিপি রাখা খুব গুরুত্বপূর্ণ যাতে করে সমস্ত শর্ত গুলো স্পষ্টভাবে উল্লেখ থাকে যা অমিল হলে পরবর্তীতে আইনি সহযোগিতা পাওয়া যায়।
মামলা রয়েছে কি-না
আপনি যে জমিতে লাডি কিনতে যাচ্ছেন উক্ত জমির হালনাগাদে অবশ্যই দৃষ্টিপাত করতে হবে। উক্ত ভূমির জন্য যদি রেগুলার কর দেয়া হয়ে থাকে তবে কোনো সমস্যা নেই তবে যদি রেগুলার কর না দেয়ার কারনে কোনো সার্টিফিকেট কেস থেকে থাকে তবে সেটা অবশ্যই বিবেচনার বিষয়। এমন কোনো জমির প্রতি আগ্রহ দেখানো ঠিক না যেটা ইতিমধ্যেই মামলা জরিত। তাছাড়া উক্ত জমি সংক্রান্ত অন্য কোনো মামলা রয়েছে কিনা তা খুঁজে বের করে দেখা উচিত।
রাজউকের অনুমোদন
এটা সকলেরই জানা যে, যেকোনো জমিতে কিছু স্থাপনা করতে হলে সেক্ষেত্রে রাজউকের অনুমোদনের দরকার রয়েছে। এক্ষেত্রে আপনি যে সমতল স্থানের উপর নির্মিত ফ্ল্যাট কিনতে আগ্রহী হয়েছেন সেটির জন্য রাজউকের অনুমোদন আছে কিনা তা জেনে নিতে হবে। তাছাড়া উক্ত ফ্ল্যাটে বিদ্যুৎ সংযোগ রয়েছে কিনা এবং বিদ্যুৎ সংযোগ থাকলে সেটি বাণিজ্যিক নাকি আবাসিক সেটি যাচাই করে নিতে হবে এবং আপনার দিক থেকে যদি সেটি অনুকূল হয় তবে অবশ্যই সেটি গ্রহণ করতে পারেন।
তবে বর্তমানে নতুন ফ্ল্যাটগুলোতে গ্যাস সংযোগ দেওয়া হচ্ছে না যদি আপনার পছন্দের ফ্ল্যাটটিতে গ্যাস সংযোগ থেকে থাকে তবে সেটি খুবই উত্তম কিন্তু বর্তমানে নতুন তৈরি হওয়া ফ্ল্যাট গুলোর ক্ষেত্রে গ্যাস সংযোগ পাওয়া যাচ্ছে না।
খাস জমির খবরাখবর
ফ্ল্যাট তৈরীর জন্য প্রস্তাবিত জমিটি সরকারের খাস জমির অন্তর্ভুক্ত কিনা অথবা সরকারের কোন স্বার্থ রয়েছে কিনা এটা দেখা উচিৎ। তাছাড়া জমির ক্ষেত্রে আরো কিছু বিষয় যেমন – জমির পূর্বে কোনো সময়ে অধিগ্রহন, ওয়াকফ, দেবোত্তর রয়েছে কি-না তা যাচাই বাছাই করে দেয়া অবশ্যই জরুরি।
মালিকের সাথে যোগাযোগ করার মাধ্যমে উক্ত জমির পাওয়ার অফ অ্যাটর্নি যাচাই করে নেওয়া এবং অ্যাটর্নির মাধ্যমে যদি কোনো ক্ষমতা পেয়ে থাকে তবে তার বৈধতা যাচাই এর প্রয়োজন রয়েছে। একজনকে উক্ত বিষয় গুলো দেখালেই বৈধতার ব্যাপারে জানতে পারবেন।
কিস্তি সম্পর্কে ধারনা
অনেকেই রয়েছে যারা একবারে সম্পূর্ণ অর্থ প্রদানের মাধ্যমে ফ্ল্যাট কিনতে সক্ষম নয় তাদের ক্ষেত্রে রয়েছে বিভিন্ন স্কিম এর কিস্তির ব্যবস্থা। এক্ষেত্রে আপনি যে চুক্তিতে আবদ্ধ হয়েছেন সেই চুক্তিপত্রে আপনাকে মোট কয়টি কিস্তি কত পরিমাণ অর্থ দিতে হবে এবং কখন আপনার পুরোপুরিভাবে হয়ে যাবে আপনাকে হস্তান্তর করা হবে সেই বিষয়ের পাশাপাশি উক্ত ফ্ল্যাটটি আদৌ করা যাবে কিনা এবং যদি কোন কারনে পুরোপুরি ক্রয় করা না যায় তবে এটি কীভাবে নিষ্পত্তি করা হবে তার সুস্পষ্ট উল্লেখ চুক্তিপত্রে থাকতে হবে যাতে করে ভবিষ্যতে কিস্তি সংক্রান্ত ব্যাপারে কোন সমস্যার সম্মুখীন না হতে হয়।
অন্যান্য বিবেচ্য বিষয়
উপরে উল্লেখিত বিষয়গুলো অবশ্যই আপনার নজরদারির মধ্যে থাকতে হবে একটি ফ্ল্যাট ক্রয় করার ক্ষেত্রে। তবে আরো কিছু ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বিষয় রয়েছে যা জানা থাকলে বা যে বিষয়ে সচেতন থাকা ভালো। সেগুলো হচ্ছেঃ
এটা আপনার অবশ্যই দেখা উচিত আপনি যেই এলাকায় ফ্ল্যাট কিনতে চাচ্ছেন সেই এলাকার বাজার মূল্য কত। মূলত বিভিন্ন দালাল এর ধোঁকাবাজি থেকে বাঁচার জন্যই উক্ত কাজটি করবেন। আপনি যদি ফ্লাড পণ্য বিক্রির জন্য ক্রয় করে থাকেন তবে স্থান নির্বাচনে অবশ্যই সচেতন হোন কারণ সব স্থানের ফ্ল্যাট সকলে ক্রয় করে না। ফ্ল্যাট ক্রয়ের চুক্তিপত্র রয়েছে তা একাধিকবার ভালভাবে পড়ুন এবং প্রয়োজনে বিশেষজ্ঞ বা এই বিষয়ে ইতিমধ্যে জ্ঞান রাখে এমন কারো সাহায্য নিন যাতে করে কোন প্রকার সমস্যার সম্মুখীন না হতে হয়।
অনেকক্ষেত্রে দেখা যায় আপনি যদি কোন ব্যক্তি পর্যায়ের কারো কাছ থেকে ফ্ল্যাট ক্রয় করেন তবে প্রতারণার সম্মুখীন হতে হয় এভাবে যে উক্ত ফ্ল্যাটটি ইতিমধ্যে ব্যাংকের কাছে বন্ধক হিসেবে রয়েছে এতে করে আপনি ব্যাংকের কাছ থেকে ফ্ল্যাটটিকে নিয়ে আসতে উক্ত ঋণ পরিশোধ করতে হবে।
ফ্ল্যাট কেনার ক্ষেত্রে বর্জনীত কাজ সমূহ
এত সময় ধরে ফ্ল্যাট কেনার ক্ষেত্রে যেই সকল কাজ গুলো অবশ্যই বিবেচনায় নেওয়া উচিত বা করা উচিত সেগুলো নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। এই পর্যায়ে করণীয় কাজের পাশাপাশি যে কাজগুলো করা যাবে না বা বর্জনীয় কাজ বা বিষয় সেগুলো হলো:
ফ্ল্যাট কেনার ক্ষেত্রে জমি সংক্রান্ত বিষয়ে যথাযথ আইন-কানুন না জানা থাকলে বা না বুঝে থাকলে কখনোই কোনো সিদ্ধান্ত একা নিতে যাবেন না। এক্ষেত্রে অবশ্যই কোনো উকিল অথবা যে বিশেষজ্ঞ তাকে সঙ্গে রাখুন।
যে কোন ফ্ল্যাট কেনার ক্ষেত্রে কখনোই তাড়াহুড়ো করে কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা যাবে না। বিভিন্ন সময় মার্কেটিং স্ট্র্যাটেজি জন্য বিক্রয়কর্মী বিভিন্ন অফারের ফাঁদে ফেলে দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে বলতে পারে তবে যেহেতু ফ্ল্যাট কেনার মত বড় একটি প্রকল্পে বিনিয়োগ করতে যাচ্ছেন সেহেতু অবশ্যই আপনাকে পুরো ব্যাপারটি সম্পূর্ণভাবে বুঝে এরপরই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা উচিত।
কখনোই জমির হালনাগাদ অবস্থা না জেনে সেই জমি ক্রয় করা বাসেই জমির উপর নির্মিত ফ্ল্যাট ক্রয় করা উচিত হবে না।
কোনভাবেই ফ্ল্যাট কেনার ক্ষেত্রে সিদ্ধান্তহীনতায় ভোগে উচিত নয়। আপনি যদি মনে এই সন্দেহ রাখেন আপনি উক্ত ফ্ল্যাট ক্রয়ের ক্ষেত্রে সন্তুষ্ট হতে পারবেন কি নয়, সেটি অবশ্যই ভালো কোনো লক্ষণ নয় তাছাড়া যদি কিস্তিতে ফ্ল্যাট কেনার কথা চিন্তা করে থাকেন তবে এতে আরও ভয়াবহ হতে পারে। ফ্ল্যাট ক্রয়ের বিষয়ে যদি ভুল সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন তবে সেটি আপনাকে দীর্ঘকালীন ভোগান্তির কারণ হয়ে দাঁড়াবে।
ফ্ল্যাট ক্রয় বিক্রয় সংক্রান্ত চুক্তিপত্র
এটা সত্যি যে বর্তমানে ফ্ল্যাট কেনা জমি কিনে সেখানে বাড়ি নির্মাণ করা থেকে অনেকটা স্বস্তির বিষয়। তবে এই স্বস্তির বিষয়টি ভয়াবহ অস্বস্তির কারণ হতে পারে যদি ফ্ল্যাট ক্রয়ের সময় চুক্তিপত্র ঠিকভাবে তৈরি করা না হয় বা চুক্তিপত্রে এমন কোন বিষয় থাকে যা মূলত ক্রেতার জন্য মৃত্যু স্বরূপ। সিচুয়েশন যাই হোক না কেন ফ্ল্যাট ক্রয় বিক্রয়ের ক্ষেত্রে যে চুক্তিপত্র ব্যবহার করা হয়ে থাকে সেই চুক্তির ব্যাপারে বিক্রেতা এবং ক্রেতাকে অবশ্যই সচেতনতা অবলম্বন করতে হবে। এবং প্রতিটি ক্ষুদ্র থেকে ক্ষুদ্রতর বিষয় সুস্পষ্টভাবে উপস্থাপন বা উল্লেখ থাকতে হবে। এবার সচেতনতা সেগুলো নিম্নে উপস্থাপন করা হলো।
সাধারণত দেখা যায় চুক্তিপত্রের মধ্যে উল্লেখ থাকা ফ্ল্যাটের হস্তান্তরের বিষয়টির সময়সীমা একটি সময় ধরে দেখিয়ে দেওয়া হয় হতে পারে সেটি 2 থেকে তিন বছর কিন্তু নির্দিষ্ট করে কোন সময় উল্লেখ থাকে না যে সময়ে ক্রেতার কাছে সম্পূর্ণভাবে হস্তান্তর করা হবে। তাই একজন ক্রেতা হিসেবে অবশ্যই চুক্তিপত্রের এই বিষয়টির ওপর নজরদারি রাখতে হবে এবং উকিল বা আইনজীবী কে বলে একটি নির্দিষ্ট সময় নির্ধারণ করতে হবে।
চুক্তি পত্রে উল্লেখিত আরো একটি ব্যাপার রয়েছে যা অনেকের চোখ এড়িয়ে যায় সেটি হচ্ছে ক্রেতা যদি সময়ের মধ্যে উক্ত ফ্লাট এর সম্পূর্ণ অর্থ প্রদান করতে না পারে তবে তাকে শতকরা নির্দিষ্ট হারে সুদ প্রদান করতে হবে। কিন্তু এটা উল্লেখ থাকে না অনেক ক্ষেত্রেই যে যদি সময় সীমার পরেও বিক্রেতা ক্রেতার কাছে ফ্ল্যাট সম্পূর্ণভাবে হস্তান্তর না করে তবে বিক্রেতা ক্রেতাকে কি ক্ষতিপূরণ দেবে।
ফ্ল্যাট কেনার নিয়ম । আইনি সহযোগিতায় চুক্তিবদ্ধ হওয়া
বাংলাদেশে রিয়েল এস্টেট আইন অনুযায়ী একজন ক্রেতা জমি বা ফ্ল্যাট ক্রয়ের সম্পূর্ণ অর্থ পরিশোধের তিন মাসের মধ্যেই আবাসন নির্মাতা ফ্ল্যাটের ক্রেতার কাছে হস্তান্তর করতে বাধ্য থাকবে পাশাপাশি দলিল সম্পাদন এবং নিবন্ধনের যাবতীয় কাজ সম্পাদন করবে। এছাড়া ইতিমধ্যে উল্লেখিত উপরে যে বিষয়গুলো রয়েছে সেগুলোর আলোকে চুক্তিপত্র এমন রুপে সাজাতে হবে যেখানে ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়ের সাক্ষ্য রক্ষা হয়। সম্পূর্ণ চুক্তিপত্রটি তৈরি করা হয়ে গেলে সেটি একটি ভালো এবং নিরপেক্ষ আইনজীবী বা উকিলকে দেখিয়ে নিঃসরণ করে নিতে হবে যে সকল বিষয় ঠিক ভাবে উপস্থাপন রয়েছে।
এতে করে ভবিষ্যতে বিক্রেতা কর্তৃক ক্রেতা যদি কোন ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয় বা চুক্তি অনুযায়ী ফ্ল্যাট না পেয়ে থাকে তবে আইনি সহায়তা গ্রহণ করতে পারে। তবে সঠিকভাবে যদি চুক্তিপত্রে প্রতিটি বিষয়ে সুস্পষ্ট ভাবে উপস্থাপন করা না থাকে তবে আইন কোনভাবে এক্ষেত্রে আপনাকে সহায়তা করতে পারবে না। তাই আইনি সহায়তা চুক্তিবদ্ধ হওয়া অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ।
যদি কোন কারণে চুক্তিপত্র অনুযায়ী ক্রেতা বিক্রেতার কাছ থেকে কাঙ্ক্ষিত ফলাফল না পেয়ে থাকে এবং নিজেদের মধ্যে সমাধান না করতে পারে তবে সালিশ আইন ২০০১ অনুযায়ী সালিশ ট্রাইবুনাল গিয়ে উক্ত বিষয় নিষ্পত্তি করতে হবে। সেখানে যদি প্রমাণিত হয় যে ক্রেতা বা বিক্রেতা আইন বিধি বিধান লংঘন করেছে তবে সর্বোচ্চ 20 লাখ টাকা জরিমানা অথবা তিন বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড হতে পারে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে উভয় শাস্তি কার্যকর হতে পারে। তাই উপযুক্ত আইনি সহায়তার জন্য চুক্তিপত্রে অবশ্যই সকল বিষয় স্পষ্ট ভাবে উপস্থাপন করা জরুরি।
ফ্ল্যাট কেনার নিয়ম শেষে কিছু কথা
ফ্ল্যাট কেনার নিয়ম এর মধ্যে অনেকগুলো বিষয় রয়েছে যার অধিকাংশই উক্ত আর্টিকেলে উল্লেখ করা হয়েছে। তাছাড়া আরো আনুষাঙ্গিক কিছু বিষয় থাকতে পারে যা বিভিন্ন লোকেশন এবং বিভিন্ন পরিস্থিতি অনুযায়ী ভিত্তি করে পরিবর্তন হতে পারে। তবে তা যাই হোক না কেন ফ্ল্যাট কেনার ক্ষেত্রে উপরে উল্লেখিত বিষয়ে সচেতনতা অবলম্বন করলে কোন প্রকার ধোকার মধ্যে পড়তে হবে না। পাশাপাশি আইনি সহযোগিতা আরো শক্তিশালী করতে আইনজীবী বা উকিলকে অবশ্যই সঙ্গে রাখুন যে কোন ফ্ল্যাট কেনার ক্ষেত্রে। ফ্ল্যাট জমি বা অন্যান্য সম্পদ সংক্রান্ত বিষয়ে আরো বিস্তারিত ভাবে জানতে অনুসরণ করুন বাংলা আলো সাইটের আইন ক্যাটাগরিটি। ধন্যবাদ।