ব্যাংক চেক সম্পর্কে আমরা সকলে শুনে থাকলেও ব্যাংকের চেকগুলো কত প্রকার এবং ব্যাংক চেক লেখার নিয়ম সম্পর্কে সকলে অবগত নয়। আপনি যদি তাদের একজন হয়ে থাকেন এবং জানতে চান কিভাবে ব্যাংকের চেক লেখা হয় তবে এই আর্টিকেলটি আপনার জন্য। আর্টিকেলটিতে চেক সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা দেওয়া হবে যেখানে থাকবে চেক কি, চেক কত প্রকার ও কি কি এবং সবশেষে ব্যাংক চেক লেখার নিয়ম। থাকবে আরো কিছু প্রশ্ন এবং উত্তর ব্যাংক সম্পর্কে। তাহলে প্রথমেই যে কি সেই বিষয়ে জানার মাধ্যমে এবারের আর্টিকেলটি শুরু করা যাক।
চেক এর ব্যবহার একসময় ব্যাপক ভাবে হলেও বর্তমানে সচরাচর চেয়ে ব্যবহার করতে দেখা যায় না। যখন থেকে অনলাইনে মানি ট্রান্সফার করার সূচক চালু হয়েছে ঠিক তখন থেকেই চেক ব্যবহারের সংখ্যা তুলনামূলকভাবে কম হচ্ছে। তবে চেকের ব্যবহার একেবারেই হচ্ছে না এমনটা নয়। এখনো চেক এর গুরুত্ব অনেক। বড় বড় এমাউন্টের টাকা লেনদেনের ক্ষেত্রে চেক ব্যবহার করা হয়ে থাকে। তাছাড়া যেহেতু ব্যাংকে যেকোনো অ্যাকাউন্ট খুললেই চেক প্রদান করা হয় তাই চেকের পাতা লেখার নিয়ম সম্পর্কে জানা অতীব জরুরী। এবারের আর্টিকেল এর মাধ্যমে যেকোনো চেক লেখার নিয়ম সম্পর্কে জানিয়ে দেয়া হবে।
চেক কি (What is a cheque) ?
সহজ ভাষায় বলতে গেলে চেক এমন একটি হস্তান্তরযোগ্য দলিল লিখিত আকারে থাকে এবং আমানতকারী লিখিত এবং শর্তহীনভাবে ব্যাংকে এই নির্দেশ প্রদান করা যায় জেকের বাহক কে নির্দিষ্ট পরিমাণে অথবা চেক এর মধ্যে উল্লেখিত পরিমাণে অর্থ প্রদান করতে হবে।
যে ব্যক্তি চেক লিখে থাকে তাকে চেকের আদেষ্টা বলা হয়। চেকের আদেষ্টা চেক এর মধ্যে টাকার পরিমান তারিখ সহ অন্যান্য বিবরণ লিখে স্বাক্ষর করে থাকে। চেক এর বাহক সেই স্বাক্ষর করা লিখিত দলিল নিয়ে ব্যাংকে উপস্থিত হলে ব্যাংক ওই ব্যক্তিকে উল্লেখিত অর্থ প্রদান করে থাকে।
বাংলাদেশের সংবিধানে 1881 সালে হস্তান্তরযোগ্য দলিলের 6 নম্বর ধারায় উল্লেখ রয়েছে যে, হল এমন এক ধরনের বিনিময় বিল কোন ব্যাংকের উপর কাটা হয় এবং চাহিবামাত্র উক্ত ব্যাংক চেকের অর্থ পরিশোধ করতে বাধ্য থাকিবে।
চেক এমন একটি দলিল যার মাধ্যমে যে কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের তার নির্দিষ্ট ব্যাংক একাউন্ট থেকে অন্য একটি ব্যক্তি বা ব্যাংক একাউন্টে নির্দিষ্ট পরিমাণের অর্থপ্রদানের আদেশ দিয়ে থাকে। যেই ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে একাউন্ট থেকে অর্থ প্রদানের আদেশ দেওয়া হয় ওই ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক চেক ইস্যু করে থাকে।
যেকোনো অ্যামাউন্ট এর অর্থ আদান-প্রদানের ক্ষেত্রে চেক অন্যতম সেরা মাধ্যম। কোন প্রকার চার্জ ছাড়া চেকের মাধ্যমে টাকা উত্তোলন করা যায়। চেকের মাধ্যমে ব্যাংকে রাখা অর্থ সুরক্ষিত এবং নিরাপদ ভাবে উত্তোলন করা যায়। বলা হয়ে থাকে ঠিক হলো একটি ব্যাংকের ব্যাংকিং জগতের মেরুদন্ডের মত কাজ করে।
চেক কত প্রকার ও কি কি ?
চেকের ব্যবহার আমরা সেই প্রাচীনকাল থেকে দেখতে পাচ্ছি যা বিংশ শতাব্দীতে এসে বেশ জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। মূলত বিভিন্ন প্রকার হয়ে থাকে বিভিন্ন ব্যবহারের উপর ভিত্তি করে। ব্যাংক তাদের গ্রাহকের সুবিধার জন্য বিভিন্ন ধরনের চেকের ব্যবস্থা রেখেছে। প্রধানত দুই প্রকার হলেও মূলত বর্তমানে অনেকগুলো চেক রয়েছে প্রত্যেকটি সম্পর্কে আলোচনা করা রয়েছে।
যে ব্যক্তি চেক প্রদান করে থাকে তাকে Drawee এবং যে ব্যক্তি চেক গ্রহণ করে থাকে তাকে Payee বলে। আপনার জন্য কোন ধরনের চেকটি প্রযোজ্য এটা নির্ভর করবে আপনি কত অর্থের জন্য জেল ব্যবহার করতে চাচ্ছেন সেটির উপরে বা মূলত আপনার ব্যবহারের উপর নির্ভর করবে আপনি কোন চেকটি গ্রহণ করবেন বা ব্যবহার করবেন।
এই পর্যায়ে যতগুলো হচ্ছে রয়েছে সচরাচর ব্যবহার করা হয় ব্যাংকগুলোতে তার প্রত্যেকটি নিয়ে বিস্তারিত তথ্য প্রদান করা হচ্ছে যাতে করে ব্যাংক চেক সম্পর্কে আপনার কাছে একটি স্বচ্ছ ধারণা সর্বদা থাকে।
বাহক চেক । Bearer Cheque
যেই চেকের মাধ্যমে যে কোন ব্যক্তি ব্যাংকের উপস্থিত হয়ে চেকটি প্রদর্শনের ফলে সাথে সাথে টাকা সংগ্রহ করতে পারে তাকে বাহক চেক করা হয়। মূলত যে চেকের অর্থ পরিশোধ কারীর নামের পরে “বা বাহক কে” শব্দটি লেখা থাকে তাকে বাহক চেক বলা হয় কাকে।
এই ধরনের চেক যিনি বহন করছে তাকে ব্যাংক সরাসরি অর্থ প্রদান করে থাকে। এই যেগুলো ডেলিভারির মাধ্যমে প্রেরকের কাছ থেকে প্রাপক এর কাছে পৌঁছে থাকে। বাহক চেক এর বাহক যখন চেক নিয়ে ব্যাংকে উপস্থিত হবে তখন চেক ইস্যু কাদের কাছ থেকে কোনরকম অনুমতি ছাড়াই বাহককে অর্থ পরিশোধ করবে।
বাহক চেক যে বহন করবে তার নাম উল্লেখ করা থাকতেও পারে আবার নাও থাকতে পারে এটা মেজর কোনো বিষয় নয়। কোন বাহক যখন চেকটি ব্যাংকে উপস্থাপন করবে তখন ব্যাংক তাকে অর্থ দিতে বাধ্য থাকবে এক্ষেত্রে বাহককে অবশ্যই চেক এর বিপরীত পৃষ্ঠায় স্বাক্ষর প্রদান করতে হবে।
বাহক চেক এর ক্ষেত্রে কোন সত্যায়িত করার বিষয় থাকে না এটি যখন যার হাতে থাকবে তখন সেই উক্ত থেকে মালিক হিসেবে বিবেচিত হবে। যার কারণে যদি কোন কারণে চেকটি চুরি হয়ে যায় তবে মালিক ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। তবে বাহকের মাধ্যমে বড় অংকের লেনদেন করা খুব একটা দেখা যায় না।
আদেশ চেক । Order Cheque
সহজ ভাষায় বলতে গেলে যে চেক কোন নির্দিষ্ট ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের জন্য লিখা হয়ে থাকে বা চেক লিখিত আদেশ অনুসারে অপর কাউকে অর্থ প্রদানের জন্য ব্যাংকে আদেশ করে থাকে তাকে অর্ডার চেক বা আদেশ চেক বলা হয়।
এই ধরনের চেকের ক্ষেত্রে পরিষ্কার নামের পাশে “বা আদেশ” শব্দটি লেখা থাকে। অর্ডার চেকের ক্ষেত্রে এনডোর্সমেন্ট সহ ডেলিভারির মাধ্যমে চেকের প্রেরক প্রাপক এর কাছে পাঠিয়ে থাকে বা হস্তান্তর করে।
আদেশ চেকের ক্ষেত্রে কেকের মধ্যে যে ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের নাম লেখা রয়েছে এবং মাত্র তাকেই ব্যাংক অর্থ প্রদান করতে বাধ্য থাকে অন্যথায় অন্য কাউকে নয়। চেক ইস্যু কারী ব্যক্তি অর্ডার চেক এর পিছনে স্বাক্ষর করেছে একটিকে বাহক চেক এ রূপান্তরিত করতে পারেন এতে কোন সমস্যা হবে না।
ক্রসড চেক । Crossed Cheque
মূলত ক্রসচেক সে সকলকে নির্দেশ করে যেগুলো উপরে বাম দিকের কোণে সমান্তরাল রেখার সাথে আরারি দুটি দাগ টানা হয় এবং “এন্ড কোং” শব্দগুলো ছাড়া অথবা লাইনগুলোর মধ্যে হস্তান্তরযোগ্য নয় উল্লেখ করা থাকে, সেই সকল চেককে ক্রসড চেক বলা হয়।
সহজ ভাষায় বললে, যখন কোন চেকের উপরে বাম দিকের কোণে দুইটি লাইন সমান্তরালভাবে তারা হয় তখন সেটিকে ক্রস চেক হিসেবে ধরা হয়। এ ধরনের লাইন এটা নির্দেশ করে যে, যার নামে চেকটি সাইন করা হয়েছে কেবল তাকেই অর্থ প্রদান করবে অন্যথায় কাউকে নয়।
ক্রস চেক যখন লেখা হয় তখন নির্দিষ্ট ব্যক্তির নাম ও তার ব্যাংক অ্যাকাউন্ট নাম্বার যুক্ত করে দিতে হয়। তবে এ ক্ষেত্রে দেখা যায় যখন চেক এর মধ্যে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট নাম্বার লিখা হয়ে থাকে তখন ব্যাংক সরাসরি উক্ত একাউন্টে টাকা পাঠিয়ে দেয়। লেনদেনের জন্য প্রজেক্ট সুরক্ষিত এবং নিরাপদ মাধ্যম কারণ এর মাধ্যমে অর্থ অন্য কারও হাতে যাওয়ার সম্ভাবনা একদমই থাকেনা।
ওপেন চেক । Open Cheque
যেচে কে কোন প্রকার দাগ কাটা থাকে না তাকে ওপেন চেক বা খোলা চেক বলা হয়। এই ধরনের চেক cross-cheque এর সম্পূর্ণ বিপরীত। চেকের প্রেরক থেকে এই ধরনের চেক খুব সহজেই প্রাপকের কাছে হস্তান্তর করা যায়। খোলা চোখ গুলো যে কোন ব্যাংক থেকে উত্তোলন করা যায়।
যে ব্যক্তি উক্ত চেকটি বহন করছে সেই হবে একটি ধারক এবং তাকেই অর্থ পরিশোধ করতে বাধ্য থাকবে। খোলা চেক ইস্যু করে কে চেক এর সামনে এবং পিছনে উভয় দিকে তার স্বাক্ষর প্রদান করতে হয়।
পোস্ট-ডেটেড চেক
এটি এমন এক ধরনের চেক যেখানে একটি নির্দিষ্ট তারিখ উল্লেখ করা থাকে এবং উক্ত তারিখের আগে কোনোভাবেই চেকটি ব্যবহার করে ব্যাংক থেকে নগদ অর্থ উত্তোলন করা যাবে না। চেকটির ইস্যুকারী নগদ অর্থ উত্তোলন করার জন্য ভবিষ্যতের একটি নির্দিষ্ট তারিখের মধ্যে উল্লেখ করে থাকে।
উক্ত চেকের বহনকারী বা প্রাপক যদি একটি পাওয়ার সাথে সাথে ব্যাংকে গিয়ে উপস্থিত হয় এবং চেকটি থেকে নগদ অর্থ প্রদান করতে বলে ব্যাংক চেলে থাকা নির্দিষ্ট তারিখের আগে কোনভাবেই একটিকে ভাঙ্গাবেনা বা নগদ অর্থ প্রদান করবে না। এটি কেবলমাত্র উক্ত কালকের পর বৈধ হিসেবে বিবেচিত হবে।
স্টেল চেক
এটি এমন একটি চেক যেখানে এক্সপায়ারি ডেট থাকে। মূলত এই চেকটি যখন প্রেরক প্রাপক কে প্রদান করবে তখন সেখানে একটি তারিখ উল্লেখ থাকে। সেই তারিখ হতে ঠিক তিন মাস পর স্পেল ছেক তার বৈধতা হারায়। যখন উক্ত চেকটির তিন মাসের মধ্যে অর্থ উত্তোলন করা হবে তখন সেই চেকটি অবৈধ হিসেবে গণ্য করা হবে। এমন কন্ডিশন যুক্ত চেককে স্টেল চেক বলা হয়ে থাকে।
ট্রাভেলার্স চেক
যারা ট্রাভেলার বা এক দেশ থেকে অন্য দেশে ভ্রমণ করো তাদের জন্য কাস্টমাইজ করা চেককে ট্রাভেলার্স বলা হয়। এটা এমন এক ধরনের চেক যার মেয়াদ কখনো শেষ হবে না এবং ভবিষ্যতে যেকোন দেশে ভ্রমণ করার ক্ষেত্রে ক্যাশ টাকার পরিবর্তে উক্ত চেক ব্যবহার করা যাবে।
ট্রাভেলার্স চেক কিভাবে কাজ করে? মূলত আপনি দেশের যেকোনো ব্যাঙ্ক থেকে যখন ট্রাভেলার্স চেক গ্রহণ করেন এবং দেশের বাইরে যাওয়ার পর সেখানে অবস্থিত অন্য একটি ব্যাংকে উপস্থিত হন তখন সেই ব্যাংক ট্রাভেলার্স চেক গ্রহণ করে এবং সমপরিমাণের উক্ত দেশের কারেন্সি অনুযায়ী যে অর্থ আছে তা আপনাকে প্রদান করে থাকে। এটা অনেকটা ডুয়েল কারেন্সি চেক হিসেবেও বিবেচিত হয়।
সেলফ চেক
যখন চেক ব্যবহারকারী এবং ইস্যুকারী একই ব্যক্তি হয় তখন চেকটি সেলফ চেকে রূপান্তরিত হয়। মূলত চেকের ড্রয়ী কলামে “সেলফ” শব্দটি লিখা থাকে একটি এ রূপান্তরিত হয়। যে ব্যক্তি এই চেক ইস্যু করে কেবল একই ব্যক্তি তার নিজস্ব ব্যাংক একাউন্ট থেকে নির্দিষ্ট এমাউন্টের অর্থ উত্তোলন করতে পারবে বা নিজেই উক্ত চেক ব্যবহার করতে পারবে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে একাউন্ট থেকে নিজে যখন টাকা উত্তোলনের প্রয়োজন হয় তখন।
ব্যাংকারের চেক
ব্যাংক যখন নিজে চেক ইস্যু করে তখন তাকে ব্যাংক কাকে বলা হয়। এটা কিভাবে কাজ করে? ব্যাংক তার নিজস্ব একাউন্ট হোল্ডার এর পক্ষ থেকে একই শহরে অন্য একজনকে অর্থ প্রেরণ করার ক্ষেত্রে ইস্যু করে থাকে।
এক্ষেত্রে উক্ত একাউন্ট হোল্ডার এর একাউন্ট থেকে নির্দিষ্ট পরিমাণে অর্থ নিয়ে সেটি তৈরি করে থাকে। যেহেতু এই ধরণের চেক ব্যাঙ্ক নিজেই শুরু করেছে সেহেতু কোন ব্যাংক উক্ত চেকের অবজ্ঞা করার ক্ষমতা নেই। ব্যাংকের চেক মূলত তিন মাসের জন্য বৈধ থাকে।
অতঃপর এই ছিল ব্যাংক চেক এর প্রকারভেদ মূলত এই ৯ ধরনের চেক এর ব্যবহার বাংলাদেশের সচরাচর করতে দেখা যায়। এই পর্যায়ে দেখে নিব যেই কোন ধরনের চেক কিভাবে লিখতে হয় বা চেক লেখার নিয়ম সম্পর্কে। তবে প্রথমেই একটি চেক এর বিভিন্ন অংশ নিয়ে আলোচনা করা যাক।
একটি চেকে কি কি অংশ থাকে । চেকের প্রধান অংশ সমূহ
Bank and Branch name
একটি ছেকের এই অংশে ব্যাংকের শাখার নাম উল্লেখ করা থাকে যেখানে রাউটিং নাম্বার সহ ব্রাঞ্চের পুরো ঠিকানা লেখা থাকে তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে রাউটিং নাম্বার ব্যবহার করা হয় ইলেকট্রনিক ফান্ড ট্রান্সফার করার ক্ষেত্রে।
Cheque Number
প্রায় প্রতিটি চেক বইয়ের প্রতিটি পৃষ্ঠায় একটি ইউনিক নাম্বার দেখা যায় যা চেক ট্র্যাক করার ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। এটি মূলত 6 থেকে 12 সংখ্যার একটি বিশেষ নাম্বার হয় যার তারা চেক টিকে আইডেন্টিফাই করা হয়ে থাকে।
Date
চেকের পাতা ডানদিকের উপরের অংশে ইংরেজিতে লেখা থাকে তারিখ যেখানে বেশ কিছু ছোট ছোট বক্স দেখতে পাওয়া যায় এই বক্সগুলোতে সেই তারিখ মাস ও বছরের সংখ্যা লিখতে হয় এই দিনে ব্যাংক থেকে চেয়ে ব্যবহার করার মাধ্যমে টাকা উত্তোলন করা হবে।
Pay to
এটি মূলত সেই অংশ যেখানে উক্ত চেকের প্রাপকের নাম লিখে দিতে হয় অর্থাৎ কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের এর নাম দিতে হয় যাকে চেকটি প্রদান করা হবে ব্যাংক থেকে নগদ অর্থ উত্তোলন করার জন্য। যদি চেক ইস্যুকারী এবং চেক ব্যাংকে উপস্থাপনের মাধ্যমে অর্থ উত্তোলন কারী একই ব্যক্তি হয় তবে উক্ত স্থানে সেলফ শব্দটি লিখে দিতে হবে। অন্যথায় বেয়ারার শব্দটি থাকলে যে বহন করবে তাকেই ব্যাংক অর্থ প্রদান করবে।
The sum of taka
একাউন্টধারী মোট যত টাকা উত্তোলন হস্তান্তর করার জন্য চেক লিখছে চেকটি ইস্যু করছে সেই পরিমান স্পষ্ট ভাবে লিখে দিতে হবে। এখানে বাংলা অথবা ইংরেজি যেকোনো একটি ভাষায় সম্পূর্ণ পরিমাণ কথায় লিখতে হবে।
TK
এই বক্সে একাউন্টধারী যে পরিমাণে অর্থ উত্তোলন করতে ইচ্ছুক তা স্পষ্ট ভাবে সংখ্যায় লিখে দিতে হবে এক্ষেত্রে ইংরেজি অথবা বাংলা যে কোন সংখ্যা ব্যবহার করতে পারে।
Account Holder information
এই অংশে অ্যাকাউন্টধারীর নাম ও তার অ্যাকাউন্ট নাম্বার লেখা থাকে যা ব্যাংক কর্তৃক মুদ্রিত হয়।
Signature Line
একাউন্টধারী নিজের স্বাক্ষর প্রদানের মাধ্যমে উক্ত চেক বৈধ করে এবং এই স্থানে অনুরূপ সেইরকম স্বাক্ষর দিতে হবে যেমনটা একাউন্ট খোলার সময় একাউন্টধারী দিয়েছিলো।
MICR line
MICR এ এর পূর্ণরূপ হল Magnetic ink Character Recognition যার সাহায্যে ব্যাংক কোন প্রকার ত্রুটি ছাড়াই দ্রুত পদ্ধতিতে চেকের প্রক্রিয়ার কাজ সম্পন্ন করতে পারে এই নাম্বারটি সাধারণত চেকের নিচে প্রিন্ট অবস্থায় থাকে এবং কোনভাবে এই প্রিন্ট নষ্ট করা যাবে না। যদি এই প্রিন্ট কোন ভাবে নষ্ট হয় তবে উক্ত একটি বাতিল হিসেবে বিবেচিত হবে।
কিভাবে চেক লিখতে হয় । চেক লেখার নিয়ম
যে কোন ব্যাংকে যখন একাউন্ট খুলবেন তখন একাউন্ট খোলার পরে আপনাকে একটি চেক বই দেওয়া হবে যেখানে প্রত্যেকটি পাতাকে এক একটি চেক বলা হয়। আপনি যখন টাকা উত্তোলন করবেন অথবা কাউকে চেক প্রদান করবেন তখন আপনার নিজেকে চেকটি ভালোভাবে লিখতে হবে যেখানে বেশ কিছু বিষয়ে সঠিক ভাবে উল্লেখ করে দিতে হবে। সঠিক উপায়ে কিভাবে একটি চেক লিখতে হয় সেই বিষয়ে এখন জানানো হবে নিম্নে প্রতিটি ধাপে ধাপে উপস্থাপন করা হলো।
তারিখ লিখুন
একটি চেকের উপরের দিকে ডান পাশে Date বা তারিখ নামের একটি বক্স রয়েছে যেখানে dd/mm/year বিন্যাস তৈরি করা আছে। এখানে প্রথম দুইটি বক্সে তারিখ, মাঝে দুটি বক্সে মাসের সংখ্যা এবং শেষের চারটি বক্সে সালের সংখ্যা লিখে দিতে হবে।
এখানে মূলত সেই দিনের তারিখ লিখতে হবে যেই দিন ব্যাংক থেকে চেকের মাধ্যমে টাকা উত্তোলন করা হবে। তবে যদি আপনি অন্য কাউকে চেক প্রদান করার জন্য যে লিখে থাকেন তবে পরবর্তী তিন মাসের মধ্যে যেকোনো একটি তারিখ লিখে দিতে হবে কেননা যেকোনো চেক তিন মাসের অধিক হয়ে গেলে সেটি বাতিল হয়ে যায় বা অবৈধ হিসেবে বিবেচিত হয়।
Payee বা প্রাপকের নাম লিখুন
যেকোনো চেকের ক্ষেত্রে এটা খুব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আপনি যে যাকেই ইস্যু করেছেন সেই ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের নাম চেকে অবশ্যই উল্লেখ করে দিতে হবে। যদি আপনি নিজেই নিজের চেক এর মাধ্যমে অ্যাকাউন্ট থেকে অর্থ উত্তোলন করতে চান তবে Payee এর স্থানে Self লিখে দিতে হবে। যদি চেক এর মধ্যে কোন স্পেসিফিক নাম উল্লেখ না করেন বা সেখানে Bearer বা বহনকারী উল্লেখ থাকে তবে উক্ত চেকটি যে বহন করবে সেই ব্যাংকে গিয়ে অর্থ উত্তোলন করতে পারবে।
অর্থের পরিমাণ শব্দে ও সংখ্যায় লিখুন
চেক এর মধ্যে থাকা The Sum of Taka অপশনটিতে আপনি মোট যত টাকা উত্তোলন করতে চাচ্ছেন বা হস্তান্তর করতে চাচ্ছেন সেই পরিমাণ টাকা উল্লেখ করে দিতে হবে। ধরা যাক আপনি ১০ হাজার টাকা উত্তোলন বা অন্য কাউকে প্রেরণের উদ্দেশ্য চেক লিখছেন এক্ষেত্রে উক্ত স্থানে ইংরেজিতে “Ten Thousand Taka only” অথবা বাংলাতে “দশ হাজার টাকা মাত্র” এভাবে লিখে দিতে হবে।
এরপর TK নামক বক্সে একই পরিমাণ টাকার কথা অংকে লিখে দিতে হবে। এক্ষেত্রে বাংলাতে ১০,০০০/= অথবা ইংরেজিতে 10,000/= লিখতে হবে।
স্বাক্ষর করুন
সবশেষে চেকের নিচের দিক থেকে ডানপাশে সিগনেচার নামক অপশনে অ্যাকাউন্টধারী নিজের স্বাক্ষর প্রদান করবেন। এবং চেকের পিছন পৃষ্ঠায় ENDORSE HERE লিখার ঠিক নিচের দিকে থেকে আরো দুইটি স্বাক্ষর প্রদান করবে। এবং এভাবেই একটি চেক লেখার সম্পুর্ণ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে।
MICR ব্যান্ডের উপর সই করবেন না
চেক লেখার ক্ষেত্রে অনেকেই একটি ভুল সচরাচর করে থাকে যা হলো, চেকের নিচে থাকা MICR ব্র্যান্ডের ওপর স্বাক্ষর প্রদান করে ফেলে। এটি ব্যাংকের শাখা সম্পর্কিত একটি সংখ্যা যা কোনো কারণে অস্পষ্ট থাকলে আপনার একটি বাতিল হিসেবে গণ্য করা হবে। তাই যখন সিগনেচার অপশনে নিজের স্বাক্ষর প্রদান করবেন তখন সিগনেচার শব্দটির উপরে নিজের স্বাক্ষর দিবেন।
ওভাররাইট করবেন না
একটি চেক যখন ওভাররাইট করা হয় বা কাটাকাটি অক্ষর ব্যবহার করা হয় তখন সেটি বাতিল হিসেবে গণ্য করা হয় যার কারণে আপনি যখনই একটি চেক লিখবে তখন সেখানে যথাসম্ভব চেষ্টা করবে যাতে কোনো বানানে অথবা লিখতে গিয়ে ভুল না হয়। যদি কোন কারনে ওভাররাইট একটি থেকে হয়ে যায় তবে চেকের পাতা টি বাতিল করে নতুন অন্য একটি পাতায় লেখা শুরু করুন। যদিও এটি খুব বড় একটি বিষয় না তবে বিভিন্ন ব্যাংকের শাখা গুলোতে উক্ত কারণে বাতিল করে থাকে যা একটি বিব্রতকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করে তুলবে।
ব্যাংক চেক লেখার নিয়ম সংক্রান্ত কিছু প্রশ্ন ও উত্তর
১) ব্যাংক চেক লেখার ক্ষেত্রে মিশ্র ভাষা ব্যবহার করা যাবে?
কোনোভাবেই এটা করা ঠিক হবে না যদি আপনি ব্যাংক চেক লিখতে চান তবে হয় সম্পূর্ণ ইংরেজিতে লিখতে হবে অথবা সম্পূর্ণ বাংলাতে লিখতে হবে কারণ এমন কিছু শব্দ রয়েছে যেগুলো ইংরেজি ও বাংলা একত্রে করলে টাকার পরিমাণে ভুল হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
২) একটি চেকের মেয়াদ কাল কত হয়ে থাকে?
একটি ছেলে যখন ইস্যু করা হয় সেই তারিখ থেকে ১৮০ দিন বা ৬ মাস পর্যন্ত একটি বৈধ থাকে ১৮০ দিনের পর একটি অবৈধ হিসেবে বিবেচিত হয়।
৩) চেক হারিয়ে গেলে কি করবো?
ইস্যু করা অথবা সাইন করা চেয়ে যদি কোনভাবে হারিয়ে যায় তবে সাথে সাথে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ কাছে জানাতে হবে এবং তারা নিজেদের মতো করে ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
পরিশেষে কিছু কথা
অতঃপর এই ছিল ব্যাংক চেক কি, ব্যাংক চেক কত প্রকার ও কি কি এবং ব্যাংক চেক লেখার নিয়ম সংক্রান্ত আর্টিকেল যেখানে ব্যাংক চেক সম্পর্কে খুঁটিনাটি সকল বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে জানানো হয়েছে চেকের প্রকারভেদ এবং তার পাশাপাশি সতর্কমূলক বিষয়গুলো উপস্থাপন করা হয়েছে। ব্যাংক এবং ব্যাংকিং সম্পর্কে আরো অন্যান্য বিষয়ে বিস্তারিত জানতে অনুসরণ করুন বাংলা আলো ওয়েবসাইটের ব্যাংক নামক ক্যাটাগরিটি। ধন্যবাদ।