স্টক ব্যবসার আইডিয়া । লাভজনক ১৫ টি স্টক মালের ব্যবসা আইডিয়া 

0
5

আপনি কি এমন ব্যবসা খুজছেন যেখানে বিনিয়োগ করা বর্তমান সময়ে বেশ লাভজনক হবে? স্টক ব্যবসা অপেক্ষা করছে আপনার জন্যই। স্টক মালের ব্যবসায় বিনিয়োগ করে সারা বছর লাভবান হোন সহজেই। থাকছে বেশ কিছু  স্টক ব্যবসার আইডিয়া ও পুর্নাঙ্গ গাইডলাইন সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য। শুরু করা যাক স্টক ব্যবসা কি সেই বিষয়ে জানার মাধ্যমে।

স্টক ব্যবসা কি? 

Stock শব্দের বাংলা অর্থ গুদামজাতকরণ। সাধারণত স্টক ব্যবসা বলতে আমরা যা বুজি তা হলো কোনো একটি পণ্য পরবর্তী সময়ে বিক্রি করার জন্য গুদামজাত করে রাখাতে স্টক ব্যবসা বলে। আরবি ভাষায় একই ব্যবসাকে ইহতিকার বা রাখি ব্যবসা বলা হয়ে থাকে। 

খুব সহজ করে বললে, কোনো একটি পণ্য অনেক গুলো একত্রে কিনে মজুদ করে রাখা এবং একটা নিদ্দিষ্ট সময় পর যখন পণ্যের চাহিদার পাশাপাশি দাম কিছুটা বৃদ্ধি হবে তখন সেগুলো বিক্রি করাকেই স্টক ব্যবসা বলে। 

বর্তমানে সবচেয়ে লাভজনক ব্যবসা গুলোর মধ্যে স্টক ব্যবসা অন্যতম। ২০২২ সালে আমরা দেখেছি অর্থনীতির জোয়ার ভাটাকে। উক্ত বিষয়টিকে মাথায় রেখে বর্তমানে বাংলাদেশের পেক্ষিতে এবং ভবিষতেও স্টক মালের ব্যবসার বড় একটি মার্কেট ও সুযোগ রয়েছে। 

যদিও যথাযথ জ্ঞান ও মার্কেট এনালাইসিস করতে না পারার কারনে স্টক ব্যবসা করে অনেকেই ধরা খেয়েছে তবে আপনি যদি নিজের পুরোটা দিয়ে বুদ্ধিমানের মত স্টক ব্যবসা করতে পারেন তবে অল্প সময়ে বেশি লাভবান করার মত ব্যবসা এটি। আসুন এবার জেনে নেই স্টক ব্যবসা শুরু করার উপায় কি। 

স্টক মালের ব্যবসা শুরু করার উপায়? 

স্টক ব্যবসা করার জন্য কোনো বয়সের সময়সীমার প্রয়োজন হয় না। ব্যবসা করার জন্য একটি ট্রেড লাইসেন্স ও পর্যাপ্ত পরিমাণের বিনিয়োগের পাশাপাশি পণ্য মজুদ করার জন্য পরিবেশ বান্ধব উপযুক্ত স্থান থাকলেই আপনি স্টক ব্যবসা শুরু করতে পারবেন। 

এই ব্যবসা এমন একটি একটিভ ইনকামের পথ যেখানে আপনাকে অর্থ উপার্জনের জন্য শারীরিক শ্রমের থেকে বেশি মানসিক শ্রম ব্যয় করতে হবে এবং যথাযথ ভাবে সেটি করা গেলে অল্প সময়ে অধিক লাভবান হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। অনেকেই আছে যারা নিজের অর্থ বিনিয়োগ করার জন্য উপযুক্ত মাধ্যম খুজে থাকেন তাহলে জন্য উক্ত ব্যবসাটি বেশ লাভবান বিনিয়োগের মাধ্যম হয়ে উঠতে পারে। 

স্টক ব্যবসা শুরু করার উপায় হিসেবে কিছু বুলেটিং পয়েন্ট হাইলাইট করে দিচ্ছি যা আপনার কাছে যথাযথ ও আপনি উক্ত বিষয়ের সাথে মানিয়ে নিতে পারবেন বলে মনে হলে স্টক ব্যবসাটি আপনার জন্য একেবারে উপযুক্ত। 

  • পূর্বে যারা স্টক ব্যবসা করেছে তাদের সাথে ঘনিষ্ঠতা গড়ে তোলার মাধ্যমে তাদের ব্যবসা পরিচালনার ধ্যান ধারনা, কৌশল, পদ্ধতি গুলো জেনে নেয়া। কারন আপনার থেকে তারা বেশি অভিজ্ঞ এবং উক্ত ব্যবসায় কিভাবে করলে লস হওয়ার সম্ভাবনা কম সেটি তারা ভালো ভাবেই জানে। তবে হ্যা মেন্টর বেছে নেয়ার ক্ষেত্রে খুব সর্তকতা অবলম্বন করতে হবে। 
  • এক স্থানে একটি পণ্যের দাম কম এবং অন্য স্থানে একই পণ্যের চাহিদা বেশি থাকার কারনে পণ্যের দাম তুলনামূলক ভাবে বেশি এমন পণ্য এনালাইসিস করে খুজে বের করুন। কারন এসকল পণ্যের মজুদ করার পাশাপাশি বিপণনের ব্যবস্থা করলেই অধির পরিমাণের মুনাফা পাওয়া যাবে সল্প সময়েই। 
  • মার্কেট এনালাইসিস করে দেখুন আপনার এরিয়াতে কোন কোন পণ্যের চাহিদা খুব বেশি। এবং সেই সকল পণ্যের লিস্ট করে দেখুন যে কোন পণ্যের মজুদ কোন সিজনে করলে ভালো হবে। 
  • সময়, মৌসুম, পরিশেষ, চাহিদা ও মূল্য অনেক বেশি প্রভাব বিস্তার করে স্টক ব্যবসায়। তাই এসকল ব্যাপারে পূর্নাঙ্গ জ্ঞানার্জন করুন। 

এবার চলুন দেখে নেয়া যাক বাংলাদেশের পেক্ষাপটে কোন পণ্য গুলোর মজুদ করা বর্তমানে লাভজনক হবে সে বিষয় সম্পর্কে। 

সেরা ১৫ টি স্টক মালের ব্যবসা আইডিয়া 

প্রথমেই বলে রাখি এখানে যে ব্যবসা গুলোর কথা উল্লেখ্য করা হয়েছে সেগুলোই যে করতে হবে এমন কোনো ব্যাপার নেই। আমরা এখানে বেশ কিছু বিষয় এনালাইসিস করে এবং দক্ষ লোকের পরামর্শ নেয়ার পাশপাশি অনলাইন জগতকে সূত্র হিসেবে ধরে বেশ কিছু স্টক ব্যবসা আইডিয়া সম্পর্কে জানাচ্ছি। আপনি কেবল এখান থেকে ধারনা গ্রহন করবেন এবং নিজের মত করে বাজার পর্যালোচনা করার মাধ্যমেই স্টক ব্যবসা শুরু করবেন। তাহলে শুরু করা যাক স্টক ব্যবসার আইডিয়া.. 

আলুর স্টক ব্যবসা 

আমার মনে হয় না এমন কোনো মানুষ আছে যে আলু খায় না, এমন কোনো তরকারি আছে যার সাথে আলু যায় না। আলু এমন একটি পণ্য যার চাহিদা সারাটি বছর জুড়ে। এবং সবচেয়ে ভালো ব্যাপারটি হচ্ছে এটি সহজে পচনশীল পণ্য না।যখন বাজারে নতুন আলু আসে তখন এর দাম অনেক কম থাকে,  সে সময় সরাসরি কৃষকের কাছ থেকে নিয়ে যদি স্টক করে রাখা যায় তবে সারা বছরই বিভিন্ন ধাপে ধাপে আলুর ব্যবসা করা সম্ভব। 

আলু চাষ সারা বছর করা সম্ভব হয় না, এর জন্য উপযুক্ত সময় শীতকাল। নতুন আলু বাজারে আসা শুরু জানুয়ারি মাস থেকে। যা পুনরায় চাষ যোগ্য সময় হয় অক্টোবর – নভেম্ব। বাকি সময়ে আলু চাষ হয় না তবে চাহিদা থাকে ভরপুর। তাই যখন উৎপাদিত মাস গুলোতে আলুর দাম কম থাকবে তখনই মজুদ করার উপযুক্ত সময়। 

স্টক করার আদর্শ পণ্য – ধান বা চাল 

বাংলাদেশ শর্করা ভোগী যা বলতে গেলে ভাত প্রিয়। বাঙ্গালির প্রধান খাদ্য ভাত যা তৈরি হয় ধান থেকে। তাহলে বুজানোর আর কি দরকার আছে যে যতটা চাহিদা সম্পন্ন পণ্য এটি সারা বছরের জন্য? পুরো পৃথিবীতে বাংলাদেশ সর্বোচ্চ ধান উৎপাদনকারী দেশ হিসেবে বেশ পরিচিয় যার অন্যতম কারন হচ্ছে বাংলাদেশ এখনও কৃষিপ্রধান দেশ। 

আমাদের দেশে উৎপাদিত ধান রপ্তানি হয় দেশের বাইরে অনেক দেশ গুলোতে। কোটি কোটি মেট্রিকটন ধান উৎপাদন হয় প্রতি বছর আমাদের দেশে। এবং সবচেয়ে ভালো ব্যাপারটা এই যে, যখন ধান তোলা হয় তখন ধানের দাম খুবই অল্প থাকে যা পরবর্তী সময়ে চাহিদার পাশাপাশি ধানের দাম বেড়ে যায় অনেক।

তাছাড়া ধান থেকে চাল তৈরি করার প্রসেস করার মত সক্ষমতা থাকলে সেখান থেকে প্রায় ২ গুন বেশি লাভ করা যায় তাৎক্ষণিক ভাবেই। চালের ব্যবসা কিভাবে করবেন সেই বিষয়েও রয়েছে পুর্নাঙ্গ গাইডলাইন। তাছাড়া আপনি যদি কেবল স্টক করে রাখতে চান তবে উৎপাদন মৌসুমে যে মূল্যে ধান কিনতে পারবেন তার থেকে প্রতি বস্তায় অনুমানিক ২০০ টাকার কাছাকাছি বেশি মূল্যে ধান বিক্রি করতে পারবেন যখন মৌসুম শেষ হয়ে যাবে তখন। 

আপনি যদি সরাসরি কৃষক পর্যায় থেকে ধান ক্রয় করতে পারেন তবে আরো বেশি লাভবান হওয়ার সম্ভাবনা থাকবে। এবং আপনি চাইলে পুরো বছর জুড়ে বিভিন্ন সময়ে ধানের দাম উঠা – নামা কালীন ধানের ব্যবসা করে যেতে পারবেন। 

মজুদ করতে পারেন – গম, ভুট্টা 

ঘুম থেকে উঠেই প্রয়োজন সকালের নাস্তা। খাবারের মেনুতে রয়েছে রুটি পরোটা – যা তৈরি করা হয় আটা বা ময়দা থেকে। আপনি অবশ্যই জেনে থাকবেন গমই হলো প্রদান উপাদান এসকল আটা ময়দা তৈরি করার। ধান বা চালের পর যদি সবচেয়ে বেশি শর্করা ভোগ্য পণ্য থেকে থাকে তবে সেটি হচ্ছে গম। 

ঠিক ভাবে মজুদ করতে পারলে প্রায় সারা বছরই গমের ব্যবসা করে আয় করতে পারবেন অনায়াশেই। গম পচনশীল কোনো খাদ্য নয় যার কারনে অনায়াসেই নিশ্চিন্তে উৎপাদিত সময় কালীনে কম মূল্যে কিনে স্টক রাখতে পারেন গমের। 

পাশপাশি ভুট্টার ক্ষেত্রেও একই বিষয় লক্ষনীয়। আমাদের দেশে ভুট্টা বা গম উভয়ই বছরে একবার ফলন করা হয়। এবং সেই ফলনে উৎপাদিত গম, ভুট্টাই সারা বছরের চাহিদা মেটাতে সক্ষম হয়। ঠিক ভাবে পরিচর্চার মাধ্যমে উপযুক্ত স্থানে মজুদ করলে এখান থেকে লাভ করা যাবে যা ধানের থেকে কম যায় না। 

বাদাম মজুদ করার কথা ভেবেছেন তো? 

“ সময় যখন বেসামাল, বাদাম তখন ধরবে হাল ” আড্ডা হোক বা গল্প লাগবে বাদাম অল্প। বাদামের ব্যবহার ও উপকারীতা সম্পর্কে সকলেই অবগত আছি আমরা। তার পাশপাশি জানি বাদামের বাজার কতটা বিস্তৃত। সাধারণত শীতকালে বাদামের চাহিদা হয় আকাশচুম্বু। আমাদের দেশে আষাঢ় শ্রাবণ মাসে বাদাম উৎপাদন করা হয়। 

বাংলাদেশের বরিশাল বিভাগে সবচেয়ে বেশি আদর্শ মাটি থাকায় সেখানে বাদামের উৎপাদন খুব বেশি লক্ষ্য করা যায়। তাছাড়া ভারতের উত্তরবঙ্গের দিকে বাদাম প্রচুর পরিমাণের উৎপাদন করা হয়। আপনি দেশ থেকেই হোক বা ভারত থেকে। উৎপাদন কালীন সময়ে মজুদ করা সারা বছর – বিশেষ করে শীতকালে, বাদামের ব্যবসা করলে লাভবান হওয়ার সম্ভবনা খুবই বেশি। 

স্টক ব্যবসায় খেজুর বাছাই

যেহেতু স্টক ব্যবসায়ের অন্যতম একটি হাতিয়ার হলো টাইমিং তাই খোপ বুজে টোপ মারার জন্য উপযুক্ত স্টক ব্যবসার আইটেম হচ্ছে খেজুর। বাংলাদেশে ব্যবসা করার জন্য খেজুরের মজুদ করার মাধ্যমে ব্যবসা করার উপযুক্ত সময় হচ্ছে রমজান মাস। 

সারা বছর খেজুরের চাহিদা কম থাকলেও রমজান মাসে তার চাহিদা হয় খুবই প্রখর। যার কারনে আপনি যদি রমজান মাসের আগে ভাগেই খেজুর ক্রয় করে মজুদ করে রাখেন তবে রমজান মাস জুড়ে খুব ভালো দামেই খেজুর বিক্রি করতে পারবেন।

আপনি যদি এমন কোন পণ্যের খোজে থাকেন যার উপর অল্প সময়ে বিনিয়োগ করে বেশি লাভ করার সুযোগ থাকবে তাহলে খেজুর আপনার জন্য উপযুক্ত পণ্য। 

কাপড়ের স্টক সম্পর্কে ভেবেছেন তো? 

আপনি কি একটি Everygreen স্টক ব্যবসার আইডিয়া সম্পর্কে জানতে চান? তাহলে জানুন কাপড়ের ব্যবসা সম্পর্কে। আমরা জানি বাংলাদেশ বস্ত শিল্পে বেশ এগিয়ে। আমাদের দেশের তৈরি বস্ত রপ্তানি হয় বিভিন্ন দেশে। 

পোশাক তৈরি জন্য প্রয়োজন আদর্শ কাপড়ের যা নিয়ে সারাবছরই ব্যবসা করা সক্ষম। প্রতিনিয়ত কাপুড় তৈরি হচ্ছে এবং সেগুলো থেকে পোশাক তৈরি করে বিক্রি করা হচ্ছে। যেহেতু এটা মানুষের একান্ত প্রয়োজনীয় পণ্য তাই কাপড়ের ব্যবসা চলছে আর চলবেই। 

এটা সাধারণত সকলেরই জানা যে শীত কালীন সময়ে গরমের কাপুড়ের দাম কম এবং বিপরীত ভাবেই গরমের সময়ে শীত কালীন কাপুড়ের দাম কম থাকে। এই উইক পয়েন্টটির সুযোগ নিয়ে আপনি এক সিজনে অন্য সিজনের কাপুড়ের স্তুপ কিনে স্টক করে রেখে দিতে পারেন, যা উপযুক্ত সিজনে ভালো দামে বিক্রি করা যাবে।  

সিগারেট স্টক করে ব্যবসা করুন 

আপনার জন্য আরেকটি সল্প সময়ে স্টক ব্যবসা করার মাধ্যমে আয় করার মত ব্যবসার আইডিয়া দিচ্ছি – যা হচ্ছে সিগারেট। আমরা সকলেই জানি প্রতি বছর জুন – জুলাই মাসে দেশের বাজেট তৈরি করা হয়। এবং প্রতিটি বছরেই সিগারেটের দাম কিছুটা হলেও বৃদ্ধি পায়। 

এই সুযোগটাই আপনাকে কাজে লাগাতে হবে। আপনি জুনের আগেই বিভিন্ন ধরমের সিগারেট পাইকারি মূল্যে ক্রয় করে স্টকে রেখে দিবেন। এটা কেবল ২ মাস আগে থেকে করলেই হবে। ৩-৪ মাস পর যখন বাজেটে দাম বাড়বে তখন পাইকারি বা খুরচা পর্যায়ে বিক্রি করে দিবেন। 

বলে রাখা ভালো যে, সিগারেট হালাল পণ্য নয়। সিগারেটকে কেন্দ্র করে কোনো দলিল না পাওয়া গেলেও যে সকল বিষয়ের উপর কেন্দ্র করে কোনো পণ্যকে হারাম করা হয়েছে সেটার আওতায় সিগারেট রয়েছে।  এবং হারাম জিনিসের ব্যবসা অবশ্যই হালাল নয়! তাই যারা হালাল ব্যবসায়ের মধ্যে থাকতে চান তারা অবশ্যই এই ব্যবসাটি বাদ দিবেন লিস্ট থেকে। 

পেয়াজ, রসুন মজুদ করে ব্যবসা 

বাংলাদেশের বাজারে পেয়াজের দাম কতটা উচ্চে উঠেছিলো তা আমাদের সকলেরই জানা। যখন চাহিদার তুলনায় পণ্যের পরিমাণ বা উৎপাদন কম হয়ে থাকে তখনই পণ্যের দাম হুরহুর করে বেড়ে যায়। ঠিক একই ব্যাপার ঘটেছিলো পিয়াজের ক্ষেত্রে। সে সময় উৎপাদন কম হওয়ার কারনে পেয়াজের দাম উঠেছে আকাশচুম্বু স্থানে। 

ভেবে দেখুন একবার যারা পেয়াজ মজুদ করে রেখেছিলো তারা কি পরিমাণের লাভবান হয়েছে। এটা যে কেবল একবারই হয়েছে বা হবে এমনটা মোটেও নয়। আমাদের দেশে প্রায় সব ধরনের পণ্যই একবার এবং সর্বোচ্চ দুই বার উৎপাদন করা হয়। পিয়াজ, রসুনের ক্ষেত্রেও ব্যাপারটা একই। 

তবে হ্যা, যেহেতু এসকল পণ্য পচনশীল তাই অবশ্যই অতিরিক্ত লাভের আশায় বেশি সময় ধরে মজুদ করে রাখা ঠিক হবে না। ক্রয় মূল্যের থেকে ন্যায্য মুনাফা আসলেই এই ধরনের পণ্য গুলো বিক্রি করে দেয়া উচিৎ। 

সুপারি 

বাঙ্গালির কালচারের সাথে বিভিন্ন ভাবে পান সুপারি এক সুতোয় গেথে গেছে। এটা প্রায় দেশের সকল স্থানে বিশেষ করে গ্রামঞ্চলে বেশ প্রচলন। যার কারনে প্রতি বছর সুপারির চাহিদা ব্যাপক। পানের সাথে অন্যান্য যে উপাদন গুলো রয়েছে সেগুলো না হলেও খাওয়া যায় কিন্তু সুপারি ছাড়া নয়। এর মধ্যেও রয়েছে বেশ ফারাক। কেউ খাবে শুকনা সুপারি আবার কেউ খাবে কাচা সুপারি। 

তাই সুপারির সিজনে গাছ থেকে পেরে মজুদ করতে পারবেন দুই ভাবে। হয়তো শুকিয়ে শুকনা সুপারি বানাতে পারবেন অথবা পানিতে ভিজিয়ে রেখে বা এমন ভাবে মজুদ করে যেখানে বাতাস ঢুকতে পারবে না – কাচা সুপারি তৈরি করতে পারেন। উভয় ক্ষেত্রেও বেশ লাভবান হওয়ার সুযোগ রয়েছে সারা বছর জুড়ে। 

ডাল স্টক ব্যবসা করে আয় 

ধান, চাল ও গমের মতই ডালও আমাদের নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের আওতায় পড়ে থাকে। আমাদের রোজকার খাদ্য তালিকায় রয়েছে ডাল। ডালের রয়েছে হরেক রকমের ভ্যারিয়ান্ট মুগ, মসুর, ছোলা, মটর, অড়হর, মাষকলাই, খেসারি এগুলোর মধ্যে অন্যতম। এসব ডাল একেক সিজনে একেকটি হয়ে থাকে। যার ফলে সময় ও প্রয়োজন বুজে ডাল মজুদের প্রয়োজনীয়তা লক্ষ্যনীয়। প্রায় প্রতিটি ডালই বছরে একবার চাষ করা হয় তাই সেই সময়েই মজুদের উপযুক্ত সময়। তবে এই ব্যবসা করার জন্য পাইকারি ও খুচরা পর্যায়ের ব্যবসায়ীদের সাথে পরিচিত হওয়া জরুরি। 

সরিষা থেকে তেল – স্টক থেকে লাভ

সরিষা তেলের চাহিদা বাংলাদেশ সহ ভারতেও রয়েছে ব্যাপক পরিমানে। তেলের চাহিদা ও দামের উঠা নামার উপর ভিত্তি করে সরিষার দামও সারা বছর উঠা নামা করতে থাকে। আমাদের দেশে শীতকালের শেষের দিক থেকে শুরু করে গরমকাল জুড়ে সরিষা চাষ করা হয়ে থাকে। এই সময়ে সরিষার দাম বেশ কম থাকে। যদি উপযুক্ত পরিবেশে সরিষা মজুদ করা যায় তবে এখান থেকে বেশ ভালো পরিমাণের লাভ করা সম্ভব হবে সারা বছর জুড়েই। 

ইটের স্টক ব্যবসা 

আপনার যদি প্রচুর পরিমাণে বিনিয়োগ সক্ষমতা থেকে থাকে যার বিপরীতে প্রচুর আয়ের সম্ভাবনার খোজে থাকেন তবে ইটের ব্যবসা আপনার জন্য একেবারেই পার্ফেক্ট। প্রায় সারা বছরই বিভিন্ন ধরনের নির্মাণ কাজে ইট একটি অবশ্যকীয় উপাদান। আর বছরের সকল সময়ে ইট উৎপাদন সম্ভব হয় না, এই যেমন বর্ষাকাল। এই সময় ইটের ভাটায় কাজ করা সম্ভব হয় না তাই উৎপাদন বন্ধ থাকে।

কিন্তু চাহিদা তো কমবে না, যার কারনে সৃষ্টি হয়েছে ইট স্টক করে ব্যবসা পরিচালনা করার। আপনি অন্যান্য সময়ে – যখন ইটের দাম ন্যায্য বা কম থাকে তখন ইট কিনে মজুদ করতে পারেন এবং পরবর্তীতে বর্ষাকাল হোক বা দাম বৃদ্ধির সময়েই হোক, মজুদকৃত ইট বিক্রি করে দিতে পারেন। যেহেতু এটি পচনশীল কোনো পণ্য নয় তাই নির্দিধায় উক্ত ব্যবসাটি পরিচালনা করতে পারবেন। 

স্টক মালের ব্যবসা সফল হওয়ার উপায় 

স্টক ব্যবসাটি দারুন রকমের বুদ্ধি সংক্রান্ত ব্যবসা। আপনার মার্কেট এনালাইসিস ক্ষমতা যত ভালো হবে এই ব্যবসায়ে আপনি ততটাই লাভবান হবেন। প্রায় সময় দেখবেন একই সাথে একই পণ্যের স্টক রেখে দুইজন মজুদকারীর একজন লাভবান হচ্ছে আর অন্যজন হচ্ছে ক্ষতিগ্রস্ত। 

স্টক ব্যবসা করার ক্ষেত্রে একটি ব্যাপার সব সময় মেনে চলা উচিৎ যে কখনই একটি পণ্যকে কেন্দ্র করে সকল অর্থের মজুদ করবেন না। মজুদ করে রাখা যায় এমন বেশ কিছু পণ্যের আইডিয়া ইতিমধ্যে আপনাদের মাঝে শেয়ার করেছি। এসকল পণ্য দীর্ঘ সময় ধরে মজুদ তো করে রাখা যায় তবে একেক সময় এক এক ধরনের পণ্যের চাহিদা বেশি লক্ষনীয় হয়ে থাকে। 

দেখা গেলো আপনি চাল মজুদ করে রেখেছেন এবং সেটি এমন ভাবেই যে নতুন আলু বাজারে এসেছে কিন্তু আপনি সেটি স্টক করে রাখতে পারছেন না। এতে কি হলো? সারা বছর ব্যাপি আলুর যে ব্যবসাটি সেটা থেকে আপনি বঞ্চিত হয়ে গেলেন। তাই যারা পুরাতন স্টক ব্যবসায়ীরা রয়েছেন তারা সব সময় বলে থাকেন একাধিক পণ্যের মজুদ করার জন্য। তাই চেষ্টা করবেন এমন পণ্যে বাছাই করতে যা অনেকদিন যাবত মজুদ করা যায়। 

সর্বদা চেষ্ঠা করবেন যাতে করে পচনশীল পণ্যের মজুদ কম রাখা যায়। কারন এটি একটি নিদ্দিষ্ট সময়ের পর আর ধরে রাখা যায় না, মার্কেট এনালাইসিস করায় যদি ভুল হয় তবে শেষ সময়ে মার্কেটে প্রাইজ যেমনই হোক সেগুলোকে বিক্রি করতে হবেই। এমন অবস্থায় উক্ত পণ্যের যদি বাজারে পর্যাপ্ত মজুদ থাকার কারনে দাম কম থাকে তাহলে আপনি ব্যবসায়ে লাভ করতে পারবেন না বরং লস হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি থাকবে। 

কখনই অতিরিক্ত লোভের আশা করা যাবে না। বিশেষ করে যারা পচনশীল পণ্য যেমন “পিয়াজ” মজুদ করে রাখে, দেখা গেলো চাহিদা সম্পন্ন সময় হওয়ার পরেও – “পরবর্তীতে আরো দাম বৃদ্ধি পাবে তখন বিক্রি করবো” এমন মানসিকতা রাখার ফলে দেখা গেলো কোনো না কোনো ভাবে উক্ত পণ্যের জন্য পর্যাপ্ত মজুদ বাজারে এসে পড়লো তখন কিন্তু ঠিকই আপনার ব্যবসাটি ক্ষতির সম্মুখীন হবে। তাছাড়া ইসলামেও উক্ত বিষয়টি সমর্থন করে না যা পরের স্টেপে বিস্তারিত জানানো হয়েছে।

স্টক ব্যবসা কি হালাল? স্টক মালের ব্যবসা হালাল করার উপায় 

ইসলামী শরিয়াহ মোতাবেক আলোচনা করলে স্টক ব্যবসা হালাল এবং হারাম দুইটাই হতে পারে। এই ব্যাপারটা নির্ভর করবে উক্ত মজুদকারী কিভাবে তার স্টক ব্যবসা পরিচালনা করছে। কিছু স্টক ব্যবসা রয়েছে যেগুলোকে ইসলাম পুরোপুরি সমর্থন করছে আবার কিছু এমনও রয়েছে যেগুলোকে সমর্থন করছে না। প্রশ্ন হচ্ছে সেগুলো বুজবো কিভাবে?

ধরা যাক একজন তেলের মজুদকারী একটি নিদ্দিষ্ট এলাকা থেকে প্রচুর পরিমাণের তেল কিনে গুদামজাত করলো এমন ভাবে যাতে দেখা গেলো ঐ নিদ্দিষ্ট এরিয়াতে তেলের সংকট দেখা দিলো। অতিরিক্ত লাভের আশায় কিছুদিন এরুপ পরিস্থিতি সৃষ্টি করার পর বাজারে উচ্চ মূল্যে অল্প অল্প করে মজুদকারী তেল বিক্রি শুরু করলো।

লক্ষ করে দেখুন, এখানে কি করা হয়েছে? ইচ্ছাকৃতভাবে বাজারে কোনো পণ্যের সংকট সৃষ্টি করে মানুষের দুর্বলতা ও চাহিদাকে কেন্দ্র করে অতিরিক্ত মুনাফা অর্জন করে নেয়া হচ্ছে যা কি-না সিন্ডিকেটের আওতাভুক্ত। 

উক্ত কাজকে ইসলাম কিভাবে দেখছে? বলা হয়েছে, যদি মানুষ ও প্রাণীর প্রয়োজনীয় জিনিস এমন ভাবে স্টক করে রাখা হয় যার কারনে উক্ত পণ্যের জন্য মানুষের ভোগান্তি, কষ্ট অথবা ক্ষতি হয় তবে সেই স্টক ব্যবসাকে নাজায়েজ বলা হয়েছে পাশাপাশি এটি হবে মাকরুহে তাহরিমি। 

অন্যদিকে, যদি এমন হয় যে – নিজের উৎপাদিত পণ্য সামগ্রি জমা করে রাখে যার উদ্দেশ্য দুরের এমন কোনো এলাকায় বিক্রি করা যেখানে উক্ত পণ্যের চাহিদা রয়েছে। বা কোনো স্থান থেকে এমন পণ্য নিদিষ্ট এলাকায় নিয়ে আসার মাধ্যমে মজুদ করা যা সাধারণত আমদানি করা হয় না। এবং নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য বা খাদ্য সামগ্রী ব্যাতিত এমন কোনো পণ্য মজুদ করা যা সারা বছরই মানুষের প্রয়োজন হয় এবং বর্তমানে খুব বেশি রয়েছে বাজারে যা এক সময় সংকট সৃষ্টি হতে পারে এমন পরিসংখ্যানের কারনে মজুদ করে রাখলে উক্ত স্টক ব্যবসা জাহেজ হবে বা হালাল হবে। 

তাছাড়া স্টক ব্যবসা করা কালীন যদি দেখা যায় পরিস্থিতির কারনে বাজারে সেই পণ্যের বিশেষ প্রয়োজন দেখা দিয়েছে সেই সময় পণ্য সামগ্রী মজুদ করে না রেখে ন্যায্য মূল্যে তা বিক্রি করা হয় তবে সেটিকে ইসলাম সমর্থন করে এবং এটি একটি মানুষ্যত্ব মূলক কাজ হবে। 

আর্টিকেল থেকে যা শিখলাম 

পরিশেষে এই ছিলো “ স্টক ব্যবসার আইডিয়া “ সংক্রান্ত পুরো আর্টিকেল যেখানে স্টক ব্যবসা কি সে থেকে শুরু করে উক্ত ব্যবসায়ের পদ্ধতি, নিয়ম, সচেতনা ও বেশ কিছু স্টক মালের ব্যবসা আইডিয়া দেয়া হয়েছে যেগুলো থেকে আইডিয়া গ্রহন করে আপনিও শুরু করতে পারেন আপনার স্টক ব্যবসা। বাংলা আলোর পক্ষ থেকে প্রতিনিয়ত ব্যবসার আইডিয়া বিষয়ক আর্টিকেক পাবলিশ করা হয় যা পেতে ফলো করুন ওয়েবসাইটি অথবা যুক্ত থাকুন ফেসবুক পেজ এর সাথে। 

Visited 8 times, 1 visit(s) today

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here