ইউজারে প্রয়োজনের দিক থেকে ৮ হাজার টাকার মোবাইল ফোন এর চাহিদা খুব বেশি। তার পেক্ষিতে সেরা ৫ টি ফোন নিয়ে সাজানো তালিকা দেখে নিন। বর্তমান সময়ের পেক্ষিতে মোবাইল ফোনের চাহিদা কতটা তা বলা বাহুল্য। তবে বাংলাদেশের পেক্ষিতে সবার পক্ষে ভালো বাজেটের মোবাইল ফোন ব্যবহার করা সম্ভব হয়ে উঠে না। তাই এবার মূল টার্গেট তাদের করে আর্টিকেলটি লিখা হচ্ছে যাদের বাজেট খুবই কম। কিন্তু চাচ্ছে মোটামোটি লেভেলের একটি মোবাইল ফোন ব্যবহার করতে। এখানে অবশ্যই সব গুলো স্মার্টফোন কেন্দ্রিক রিভিউ হবে।
এই আর্টিকেলটি তাদের জন্য খুব হেল্পফুল হবে যারা কিনা কম বাজেটে স্মার্টফোন নিতে চাচ্ছেন তবে জানেন না কম বাজেটে ভালো ফোন কোনগুলো। তাই ধৈর্য সহকারে সম্পুর্ন আর্টিকেলটি পড়ুন এবং কম দামি মোবাইল ফোন বেছে নিতে সক্ষম হোন।
৮ হাজার টাকার মোবাইল ফোন
বিভিন্ন সোর্স থেকে তথ্য গ্রহন করার পর ফলাফল অনুযায়ী বলা যায় মোটামোটি নাম করা ব্রান্ডের কম টাকায় স্মার্টফোন গুলোর প্রাইজ শুরু হয় ৮ হাজার টাকা থেকেই। এই কারনে উক্ত তালিকায় ৮ হাজার টাকার স্মার্টফোন গুলোর মধ্যে সেরা ৫টি অবস্থান করছে যার বিস্তারিত নিম্মে।
এক্ষেত্রে কিছু ফোন ২০২০ বা ২০২১ সালে লঞ্চ হওয়া তবে সেটা বর্তমানে কোনো কিছুতেই নেগেটিভ ইফেক্ট ফেলবে না। তাই নিশ্চিত হয়ে নিম্মের তালিকার যেকোনো ফোন নিতে পারেন যদি আপনার বাজেট ও চাহিদা হয়ে থাকে ৮০০০ টাকার মধ্যে ভালো ফোন কেনাতে। শুরু করা যাক।
১. Infinix Smart HD (2021)
শুরু করবো জনপ্রিয় ব্রান্ড Infinix এর বাজেট ফ্রেইন্ডলি ফোন দিয়ে। নামের মত কাজেও ফোনটি স্মার্ট। বলছিলাম Infinix Smart HD এর কথা।
২০২১ সালে লঞ্চ হওয়া এই স্মার্টফোনটি পাচ্ছেন ৬৯৯০ টাকা বা ধরা যায় ৭০০০ টাকায়। থাকছে ২ জিবি র্যাম ও ৩২ জিবি রোম সাথে ৫০০০ এম্পিয়ারের বড়সড় একটা ব্যাটারি।
একটা ফোনের পারফর্মেন্স কেমন হবে তা নির্ভর করে ফোনটির প্রসেসরের উপরে। আর এইফোনটির প্রসেসর (Mediatek MT6761D Helio A20) বাজেট অনুযায়ী খুব ভালো।
পিছনে রয়েছে ডুয়েল ক্যামেরা সেটআপ যেখানে থাকছে ৮ মেগাপিক্সেল মেইন ক্যামেরা ও ফন্টে রয়েছে ৫ মেগাপিক্সেলর সেল্ফি ক্যামেরা।
মোটামুটি সব ধরনের কাজই এর মাধ্যমে করা যাবে তবে এটা মোটেও গেমিং ফোন না তবে টুকটাক গেম খেলাটা আহামরি কিছু হবে না। সেন্ড ফোন হিসেবে এটা নেয়া খুব ভালো সিদ্ধান্ত হবে।
২. Symphony Z18
বাংলাদেশের বাজারে মাত্র ৭৭৯০ টাকায় অফিসিয়ালি পেয়ে যাবেন এই দারুন ফিচার্স সম্পন্ন কম বাজেটের স্মার্টফোনটি। প্লাস্টিক বডির ফোনটিতে রয়েছে দুইটা কালার (Midnight Blue, Amazon Green)
5000 এম্পিয়ার এর ব্যাটারি থাকায় এর ওজন দাঁড়িয়েছে 114 গ্রাম। 6.52 ইঞ্চির বড় ডিসপ্লেতে ব্যবহার করা হয়েছে , যেখানে রেগুলেশন থাকছে 1600*720 পিক্সেল
পিছনে রয়েছে 13 মেগাপিক্সেল + 2 মেগাপিক্সেল এর ডুয়েল ক্যামেরা সেটআপ, রয়েছে এলইডি ফ্ল্যাশ এবং সেলফি ক্যামেরা হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে 5 মেগাপিক্সেল ক্যামেরা। দারুন ব্যাপার এই যে অন্ধকারে সেলফি তোলার জন্য সেলফি ক্যামেরার সাথে রয়েছে এলইডি ফ্ল্যাশ।
বাংলাদেশের তৈরি এই ফোনটিতে সিকিউরিটি সিস্টেম হিসেবে থাকছে ফিঙ্গারপ্রিন্ট সেন্সর ও ফেস আনলক এর মত ফিচারসও পাশাপাশি 2 জিবি Ram ও 32gb Rom তো থাকছেই ।
৩. Infinix Hot 9 Play
ভুলে গেলে চলবে না যে ইনফিনিক্স বাংলাদেশের বাজারে কম দামি মোবাইল ফোন গুলোর মধ্যে সবচেয়ে ভালো পারফর্মেন্স করা ফোনগুলোর ব্রান্ড। তাই ইনফিনিক্সের আরেকটি ৭ থেকে ৮ হাজার টাকার মধ্যে স্মার্টফোন হলো Infinix Hot 9 Play। নামের দিক থেকে গরম হলেও ফোনটি ব্যবহারে গরম হয় না তবে এর চাহিদা মার্কেট অবশ্য গরম করে দিয়েছে।
রিলিজের পর থেকে এখন অব্দিও ফোনটির ব্যাপারে ইউজারদের জয়জয়কার অর্জন ও ক্রেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেই যাচ্ছে Infinix Hot 9 Play
MediaTek Helio A25 প্রসেসরে রান করা ফোনটি ২ জিবি র্যাম ও ৩২ জিবি রম ভ্যারিয়েন্টের ফোন নিতে পারচ্ছেন ৭৯৯০ বা ৮০০০ টাকা। ৭ থেকে ৮ হাজার টাকার স্মার্টফোন এর মধ্যে Infinix hot 9 play আর দুটো হবে না।
চার চারটি কালারে (Midnight Black, Quetzal Cyan, Violet, Ocean Wave) স্মার্টফোনটি আয়তনে ৬.৮২ ইঞ্চি। HD+ স্কিনে 720 x 1640 পিক্সেল রেগুলেশনেরর ভিডিও প্লে করা যাবে অনায়াসে। এখানে ব্যবহার করা হয়েছে IPS LCD টার্চস্কিন।
যারা ফোনে মাল্টিটাস্কিং করতে পছন্দ করে অথবা করতে হয় তাদের জন্য ভালো খবর এই যে এই ফোনটিতে সেই ফিচার্সটি যুক্ত আছে।
এবার ক্যামেরা নিয়ে কিছু বলা যাক, ১৩ মেগাপিক্সেলের ডুয়েল ক্যামেরা সেটআপ রয়েছে অটোফোকাস, ট্রিপল এলইডি ফ্লাস, লো লাইট সেন্সর সহ আরো অনেক ফিচার্স রয়েছে ক্যামেরায়। সেল্ফি নেয়ার জন্য ব্যবহার করা হয়েছে ৮ মেগাপিক্সেলের ক্যামেরা। সোসাল মিডিয়া রেডি সেল্ফি ও অনলাইন ক্লাস এর জন্য এই ক্যামেরা বাজেট অনুযায়ী অন্যদের থেকে এগিয়ে।
এই ফোনের সব চেয়ে দারুন ব্যাপারটি হলো এখানে আছে ৬০০০ এম্পিয়ারের জাম্বু ব্যাটারি তবে এর কারনে ওজনটাও একটু বেশি অন্য কম বাজেটের মোবাইল ফোন এর তুলনায়। এরাউন্ড ২০৯ গ্রাম এর মত ওজন হয়ে যায় ফোনটি।
কেবল ডিসপ্লে এর দিক থেকে পিছনে তবে ওভারল হিসেব করলে ৮ হাজার টাকার ফোন হিসেবে এর চেয়ে ভালো আমি আর অন্যটি দেখছি না।
৪. Samsung Galaxy M02
One of the Top level brand Samsung তবে তারাও ইউজারের চাহিদার দিক থেকে চিন্তা করে বেশ কিছু কম বাজেটের স্মার্টফোন বাজারে এনেছে। এর মধ্যে Samsung Galaxy M02 এর ফিচার্স গুলো বাজেট অনুযায়ী সন্তুষ্টজনক।
বাংলাদেশের বাজারে চারটি কালার (Black, Gray, Blue, red) নিয়ে ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে লঞ্চ করা হয় গ্যালেক্সি এম০২। মিনিমাল নচ ব্যবহার করা হয়েছে ফোনটিতে। প্লাস্টিক বডির ফোনটি আকারে ৬.৫ ইঞ্চি যেখানে রেগুলেশন হিসেবে আছে HD+ 720 x 1600 পিক্সেল।
Mediatek MT6739W চিপসেট ব্যবহার করে এতে দেয়া হয়েছে ২/৩ জিবি র্যাম ও ৩২ জিবি রম। মোটেও গেমিং ফোন নয় তবে ব্যাসিক গেম গুলো খেলা যাবে। চার্জিং ও হেভি ইউজে হাল্কা গরম হতে পারে।
নেটওয়ার্ক হিসেবে ৪জি পর্যন্ত চলছে তবে স্যামসাং এর নেটওয়ার্কের ইস্যু আছে তা আমাদের সকলেরই জানা। তাই যারা একটু গ্রামে অঞ্চলের দিকে থাকে তাদের একটু সমস্যা হতে পারে।
ক্যামেরা মোটামুটি ভালোই রয়েছে। ডুয়েট ক্যামেরা সেটআপে পিছনে ১৩ মেগাপিক্সেল ও সামনে সেল্ফির জন্য ৫ মেগাপিক্সেল ক্যামেরা ব্যবহার করা হয়েছে।
২০৬ গ্রাম ওজন হওয়াতে একহাতে বেশিক্ষন ব্যবহারে ব্যাথা অনুভব হতে পারে। সিকিউরিটি হিসেবে ফেস আনলক ব্যবহার করা হয়েছে ফোনটিতে। বাংলাদেশের বাজারে এরাউন্ড ৮০০০ টাকায় পাওয়া যাবে স্যামসাং এর যেকোনো শো-রুমে।
৫. Symphony ATOM
কম বাজেটের স্মার্টফোন খুজলে Symphony এর নাম আসবে না এটা হয়েই পারেনা। ৭ থেকে ৮ হাজার টাকার স্মার্টফোন এ যা যা দেয়া যায় তার সবটুকুই দেয়া হয়েছে Symphony ATOM এ
এক হাতেই ব্যবহারযোগ্য 6.22 ইঞ্চির ডিসপ্লেটি এইচডি + আইপিএস স্ক্রিনের সাথে আসে। এটিতে একটি পূর্ণ ভিউ waterdrop-notch রয়েছে। মোট তিন কালারের (Midnight Blue, Denim Blue, Pine Green) প্লাস্টিক বডিতে পাওয়া যাবে Symphony atom
ব্যাক ক্যামেরাটি অটোফোকাস, LED ফ্ল্যাশ, পোর্ট্রেট মোড, নাইট মোড, ফেস বিউটি, সোনি সেন্সর ইত্যাদি এবং সম্পূর্ণ এইচডি ভিডিও রেকর্ডিং করা যাবে 13 মেগাপিক্সেল ক্যামেরা দিয়ে। পাশাপাশি সেল্ফি তোলার জন্য সামনে থাকছে ক্যামেরা 5 মেগাপিক্সেল এর ক্যামেরা।
4000 এম্পিয়ারের ব্যাটারি থাকায় ফোনটিতে ওজন মিলেছে ১৮০ গ্রাম। এতে রয়েছে ২ গিগাবাইট র্যাম যা 1.8 গিগাহার্টজ অক্টা-কোর সিপিইউ এবং পাওয়ারভ্র জিএইচ 8300 জিপিইউ। ব্যাসিক ইউজারদের জন্য ফোনটি পার্ফেক্ট মনে করছি।
ফোনটিতে একটি mediatek চিপসেট ব্যবহার করা হয়েছে যার ফলে টানা ব্যবহারে, বেশি গেম খেললে, চার্জে বসালে একটু গরম হতে পারে। ডিভাইসটি 32 গিগাবাইট অভ্যন্তরীণ স্টোরেজ এবং মাইক্রোএসডি স্লট দেয়া আছে। সিকিউরিটি সিস্টেম হিসেবে ফোন আনলক করতে এই ফোনে একটি ব্যাক-মাউন্টেড ফিঙ্গারপ্রিন্ট সেন্সর দেয়া আছে।
ইতিকথা
পড়ছিলেন ৮ হাজার টাকার মোবাইল ফোন এর কথা। এই বাজেটে অন্যান্য ফোন গুলোর তুলনায় এই ৫ টির অবস্থান তুলনা মূলক ভাবে যথেষ্ট ভালো। প্রত্যেকটির একক রিভিউ তুলে ধরেছি এতো সময় যা আপনার সিদ্ধান্ত নিতে সহায়ক হবে।
চাহিদার দিকে চোখ রেখে আপনার বাজেট যদি একটু কম বা বেশি হয়ে থাকে তাহলে আমাদের অন্যান্য কম দামি মোবাইল ফোন গুলোর রিভিউ দেখতে পারেন। আমরা ৫ থেকে ৬ হাজার টাকার স্মার্টফোন ও ৮ থেকে ৯ হাজার টাকার স্মার্টফোন গুলোর মধ্যে সেরা যেগুলো তা আপনার সুবিধার্থে উপস্থাপন করেছি যা পেয়ে যাবেন এই ওয়েবসাইটেই। তবে বাজেট যেমনই হোক এখানে ক্লিক করে পাবেন প্রতি বাজেট রেঞ্জের সেরা মোবাইলের রিভিউ।
