–
অগ্রণী ব্যাংক একাউন্ট খোলার নিয়ম
–
ব্যাংক একাউন্ট খোলার নিয়ম বিষয়ক আর্টিকেলের ধারায় এবার থাকছে অগ্রণী ব্যাংক একাউন্ট খোলার নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত। আপনি যদি তাদের একজন হয়ে থাকেন যারা অগ্রণী ব্যাংকে একাউন্ট খোলার জন্য আগ্রহী তবে এই আর্টিকেলটি মিস করবেন না। কারন এখানে রয়েছে অগ্রণী ব্যাংক একাউন্ট খোলা সংক্রান্ত যাবতীয় সকল প্রশ্নের উত্তর।
অগ্রণী ব্যাংক সম্পর্কে তথ্য
অগ্রণী ব্যাংক হচ্ছে বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় বাণিজ্যিক ব্যাংক গুলোর মধ্যে অন্যতম। ১৯৭১ সালে দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭২ সালে যখন সমন্বয়ের কাজ চলছিলো তখন অগ্রণী ব্যাংক দেশের রাষ্ট্রীয় ব্যাংক হিসেবে স্বীকৃতি পেয়ে থাকে। এবং তখন থেকে এখন অব্দি ব্যাংকটি রয়েছে অনলাইনে ৯৬২ টি শাখা ও দেশের ৫৩ টি অঞ্চলে নিজস্ব শাখা। তথ্যসূত্রঃ উইকিপিডিয়া।
আরো একটি তথ্য অগ্রণী ব্যাংক সম্পর্কে যা না বললেই নয়, তা হলো ২০১০ সালে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে প্রথম ইসলামী শরিয়াহ মোতাবেক ব্যাংকিং কার্যক্রম শুরু করে অগ্রণী ব্যাংক। তার মানে এই যে, আপনি যদি ইসলামী শহিয়াহ মোটাবেক ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনা করতে চান তবে অগ্রণী ব্যাংক হতে পারে আপনার অন্যতম পছন্দ। আসুন জেনে নেয়া যাক অগ্রণী ব্যাংকের একাউন্ট কত ধরনের রয়েছে।
অগ্রণী ব্যাংক একাউন্টের প্রকারভেদ
বর্তমানে অগ্রণী ব্যাংক মোট ৬ ধরনের ব্যাংকিং সেবা প্রদান করে যাচ্ছে বিভিন্ন ভাবে যেগুলো হলোঃ জেনারেল ব্যাংকিং; গ্রীন ব্যাংকিং; ইসলামী ব্যাংকিং; এগ্রি ও রুরাল ব্যাংকিং; মার্চেন্ট ব্যাংকিং ও এজেন্ট ব্যাংকিং। আপনি চাইলেই আপনার প্রয়োজন মত যেকোনো ধরনের ব্যাংকিং সেবা এখান থেকে গ্রহন করতে পারেন।
তবে সাধারণ ভাবে একটি ব্যাংক এর মূল কার্যক্রম নির্ভর করে জেনারেল ব্যাংকিং এর মাধ্যমে। আপনি যদি স্বাভাবিক কোনো প্রয়োজনে ব্যাংক একাউন্ট খুলতে চান তবে আপনার জন্য জেনারেল ব্যাংকিং একাউন্ট রয়েছে। জেনারেল ব্যাংকিং একাউন্টের মধ্যে অনেক ধরনের একাউন্ট রয়েছে তবে সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয় দুইটি ধরন হলোঃ স্টুডেন্ট একাউন্ট ও সেভিংস একাউন্ট।
আপনি যদি একজন ছাত্র হয়ে থাকেন এবং যেকোনো প্রয়োজনে ব্যাংক একাউন্ট খুলতে চান তবে আপনার জন্য রয়েছে স্টুডেন্ট একাউন্ট। অন্যদিকে আপনি যদি সঞ্চয়ের উদ্দেশ্যে অগ্রণী ব্যাংকে একাউন্ট খুলতে চান তবে আপনার জন্য থাকছে সেভিংস একাউন্ট। উল্লেখ্য যে, সেভিংস একাউন্টে রয়েছে অনেক গুলো স্কিম বা ধরন। আপনি আপনার চাহিদা ও সুবিধা মোতাবেক যেকোনো ধরনের একাউন্টই খুলতে পারেন। এবার শুনে নেয়া যাক অগ্রণী ব্যাংকে একাউন্ট খোলার ফলে প্রাপ্ত সুবিধা সমুহ গুলোর সম্পর্কে।
অগ্রণী ব্যাংক একাউন্ট সুবিধা সমূহ
যেহেতু অগ্রণী ব্যাংকে জনপ্রিয় দুই ধরনের একাউন্ট রয়েছে তাই সুবিধা গুলো বলার ক্ষেত্রে অবশ্যই উভয়ের সম্পর্কেই জানানো হবে। মূলত সকল ধরনের ব্যাংকেই প্রায় একই ধরনের সুবিধা প্রদান করা হয় বিধায় আলাদা ভাবে বলা মত কিছু থাকে না। তব তার মধ্যেও অগ্রণী ব্যাংক একাউন্টে হাইলাইট করার মত কিছু সুবিধা রয়েছে।
অগ্রণী ব্যাংক স্টুডেন্ট একাউন্ট সুবিধা গুলোর মধ্যে যেটা অন্যতম তা হলো শিক্ষার্থীদের লোন গ্রহনের সুবিধা। প্রশ্ন উঠতেই পারে তবে কি অগ্রণী ব্যাংক ব্যাতিত অন্য কোনো ব্যাংক কি শিক্ষার্থীদের ঋণ সুবিধা প্রদান করে না? জী অবশ্যই করে তবে ইন্টারেস্ট রেট এর দিক থেকে অগ্রণী ব্যাংকে অনেকটাই কম। যেখানে অন্য সকল ব্যাংকে ইন্টারেস্ট রেট ৯% সেখানে অগ্রণী ব্যাংকে একই লোনের জন্য ইন্টারেস্ট রেট ৭%।
অপরদিকে অগ্রণী ব্যাংক সুপার সেভিংস একাউন্ট যদি আপনি করে থাকেন তবে সেখানেও স্পেশাল কিছু সুবিধা থাকছে। যেমনঃ সেভিংস একাউন্টে ইন্টারেস্ট রেট ২.৬০% যা অন্যদের থেকে তুলনামূলক ভাবে বেশি। থাকছে সেখানে এটিএম সার্ভিস, চেক বুক ও অনলাইন ব্যাংকিংয়ের মত সুবিধা। সর্বোচ্চ ২ টি নামে সেভিংস একাউন্ট করতে পারবেন। এবার জেনে নেয়া যাক একাউন্ট তৈরি করতে কি কি ডকুমেন্টসের প্রয়োজন হবে সেই সম্পর্কে।
অগ্রণী ব্যাংক একাউন্ট খোলার জন্য কি কি লাগে?
আপনি যেকোনো ধরনের একাউন্ট (সেভিংস অথবা স্টুডেন্ট) করে থাকুন না কেনো নিম্মে উল্লেখিত ডকুমেন্টস আপনার প্রয়োজন হবেই অগ্রণী ব্যাংক একাউন্ট খোলার জন্য। প্রয়োজনীয় কাগজগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো –
- আবেদনকারীর নাম, পিতা-মাতার নাম, ও নমিনির নাম
- সকলের বর্তমান ও স্থায়ী ঠিকানা
- আবেদনকারীর জন্ম সাল, মাস, তারিখ
- সকলের জাতীয়তাবাদ ও জাতীয় পরিচয় পত্র
- টিন সার্টিফিকেট (যদি থাক তাহলে দিতে পারেন অন্যথায় সমস্যা নেই)
- স্টুডেন্ট আইডি কার্ড (কেবল স্টুডেন্ট একাউন্ট করার ক্ষেত্রে প্রজোয্য)
- দুই কপি পাসপোর্ট সাইজের সদ্য তোলা রঙ্গিন ছবি (আবেদনকারী ও নমিনির)
- আইডেন্টিটি ভেরিফাই করার জন্য অফিসিয়াল ডকুমেন্টস (NID কার্ড, ড্রাইভিং লাইসেন্স, জন্মনিবন্ধন, পাসপোর্ট – যেকোনো একটি হলেই হবে)
- আবেদনকারীর মাসিক আয়ের বিবরণী (চাহিদার সাপক্ষে)
আপনি যেই একাউন্টই খুলে থাকেন না কেনো উপরের উল্লেখিত তথ্য বা ডকুমেন্টস গুলো আপনাকে সাবমিট করতে হবেই। তাছাড়া যদি ব্যবসায়ীক কাজের জন্য একাউন্ট খুলে থাকেন তবে অবশ্যই ট্রেড লাইসেন্স এর কাগজ দেখাতে হবে। এইতো গেলো ডকুমেন্টসের বিষয়, এবার জেনে নেয়া যাক অগ্রণী ব্যাংক একাউন্ট খোলার নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত।
অগ্রণী ব্যাংক একাউন্ট খোলার নিয়ম
উক্ত কাজের জন্য আপনি দুই ধরনের প্রসেস অনুসরণ করতে পারেন। প্রথমত আপনি সরাসরি ব্যাংকে গিয়ে উক্ত কাজটি সম্পাদন করতে পারেন অথবা আপনি অনলাইনে ঘরে বসেও অগ্রণী ব্যাংক একাউন্ট খুলে নিতে পারেন। এখানে উভয় নিয়ম সম্পর্কেই জানাচ্ছি। প্রথমেই বলছি অফলাইনেরটা।
আপনাকে সরাসরি চলে যেতে হবে নিকত্রতম অগ্রণী ব্যাংকের যেকোনো শাখায়। সেখান কর্মরত লোকদের জানাতে হবে আপনার প্রয়োজন। তারা আপনাকে একটি ফর্ম দিবে যার অনেক গুলো স্থানেই আপনাকে সম্মতি জানিয়ে স্বাক্ষর করতে হবে, ঠিক ভাবে পুরোটা পড়ে স্বাক্ষর প্রদান করুন অগ্রণী ব্যাংক একাউন্ট ফরম টিতে।
এই পর্যায়ে আপনাকে একাউন্ট খোলার জন্য ডকুমেন্টস দিতে বলা হবে। আপনি ইতিমধ্যে জেনে গেছেন একাউন্ট খোলার জন্য কি কি প্রয়োজন হবে তাই নতুন করে চিন্তার কিছু নেই, সেই ডকুমেন্টস গুলো পেশ করে ব্যাংকারকে সময় দিন প্রসেস গুলো সম্পন্ন করার জন্য।
কিছু সময়ের মধ্যেই আপনার একাউন্ট তৈরি হয়ে যাবে এবং আপনার একাউন্টের সাথে জরিত সকল ম্যাটারিয়ালস (যেমনঃ একাউন্ট নাম্বার, এটিএম কার্ড, চেক বই) প্রদান করা হবে। এবার জেনে নেয়া যাক আপনি যদি ঘরে বসেই অগ্রণী ব্যাংকের একাউন্ট খুলতে চান সেক্ষেত্রে কি করবেন।
অনলাইনে অগ্রণী ব্যাংক একাউন্ট খোলার নিয়ম
যারা ঘরে বসেই অগ্রণী ব্যাংক একাউন্ট খুলতে যাচ্ছেন তাদের জন্য এই প্রসেসটি। অগ্রণী ব্যাংক তাদের গ্রাহকের সুবিধার কথা চিন্তা করে অনলাইনে কার্যক্রমের জন্য একটি একক অ্যাপ তৈরি করে রেখেছে যার নাম “অগ্রণী ই-একাউন্ট” গুগল প্লে স্ট্রোরে সার্চ করলে সহজেই অ্যাপটি পাওয়া যাবে।
এই অ্যাপ এর মাধ্যমে আপনি কেবল সেভিংস একাউন্টই খুলতে পারবেন। স্টুডেন্ট একাউন্ট খোলার কোনো অপশন পাওয়া যাবে না অ্যাপের মধ্যে। এখানে একাউন্ট খোলা অনেকটাই “বিকাশ একাউন্ট খোলার নিয়ম” এর মতই। তবুও উক্ত বিষয় গুলো সংক্ষেপে হাইলাইট করে দিচ্ছি।
- ইন্সটল হয়ে গেলে ওপেন করুন
- ভাষা নির্বাচন করুন
- ক্রিয়েট সেভিংস একাউন্ট সিলেক্ট করুন
- মোবাইল নাম্বার সাবমিট করুন
- OTP আসলে সেটি প্রদান করুন
- NID কার্ডের ছবি সাবমিট করুন
- ফেস ভেরিফিকেশনের জন্য সেলফি সাবমিট করুন
- একটি ফর্ম আসলে সেটি পূরন করুন
ব্যাস এগুলো করলেই আপনার একাউন্ট তৈরি করার কাজ সম্পন্ন হয়ে যাবে। তবে অনলাইনে একাউন্ট করার ৩ মাসের মধ্যে আপনাকে অবশ্যই ব্যাংকে গিয়ে যাবতীয় ডকুমেন্টস গুলো সাবমিট করে আসতে হবে নয়তো একাউন্ট লক করে দেয়া হবে।
অগ্রণী ব্যাংক সংক্রান্ত FAQ
১) অগ্রণী ব্যাংকের চার্জ কত?
চার্জ বলতে আপনাকে একাউন্ট খোলার সময় কোনো ধরনের চার্জ কাটা হবে না। স্টুডেন্ট একাউন্ট খুলে থাকলে সকল ধরনের চার্জ ফ্রি। তাছাড়া সেভিংস একাউন্টের ক্ষেত্রে একাউন্ট চার্জ, এটিএম চার্জ, চেক বুক চার্জ, এসএমএস ব্যাংকিং চার্জ প্রজোয্য হবে যা একাউন্ট হিসেবে ভ্যারি করে। তাই উক্ত বিষয়ে জানতে আপনাকে একাউন্ট খোলার সময় সেখানে কর্মরত ব্যাংকারকে জিজ্ঞাস করতে হবে অথবা অগ্রণী ব্যাংকের হটলাইন নাম্বার ( 9585748, 9585749) যোগাযোগ করতে হবে।
২) অগ্রণী ব্যাংক লিমিটেড কি সরকারি?
জী অগ্রণী ব্যাংক ১৯৭২ সালে রাষ্ট্রীয় ব্যাংক হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে সেই সুবাদে এটি একটি সরকারি ব্যাংক।
৩) ব্যাংক একাউন্ট খুলতে কত টাকা লাগে
অনলাইনে ব্যাংক একাউন্ট খোলার ক্ষেত্রে আপনাকে কোনো চার্জ দিতে হবে না। তবে সরাসরি ব্যাংকে গিয়ে একাউন্ট খোলার সময় ৫০০ থেকে ১০০০ টাকা প্রয়োজন হবে। যদিও সেই টাকা চার্জ হিসেবে নয় বরং আপনার একাউন্টেই জমা রাখা হবে।
আর্টিকেল শেষে কিছু কথা
পরিশেষে এই ছিলো “অগ্রণী ব্যাংক একাউন্ট খোলার নিয়ম” সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্যবহুল প্রতিবেদন যেখানে আলোচনা করা হয়েছে অগ্রণী ব্যাংক একাউন্ট সম্পর্কে জানানো হয়েছে তার সুবিধা, প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস, একাউন্ট খোলার নিয়ম, ও দেয়া হয়েছে সচারসর জিজ্ঞাসা করা কিছু প্রশ্নের উত্তর। আশা করি ব্যাংক একাউন্ট খোলার নিয়ম ক্যাটাগরির উক্ত আর্টিকেলটি আপনার উপকারে এসেছে। ব্যাংকিং কার্যক্রমকে সহজে বুজতে ও জানতে অবশ্যই ভিজিট করুন বাংলা আলো ওয়েবসাইটি।