–
অনলাইনে আয়কর রিটার্ন দাখিলের নিয়ম: ট্যাক্স বা আয়কর রিটার্ন সম্পর্কে যা যা তথ্য রয়েছে তা উপস্থাপন ও সহজে অনলাইনের মাধ্যমে প্রক্রিয়াটির ব্যাখ্যা থাকছে পুরো আরটিকেলে।
যারা এতো দিন কর প্রদান করে আসছিলেন তারা অবশ্যই জানেন আয়কর রিটার্ন দাখিলা সম্পর্কে। এতোদিন সেটা অফলাইনের মাধ্যমে সাবমিট করা হলেও বর্তমানে অনলাইনের মাধ্যমে তা করা যাচ্ছে। আপনি কি অফলাইনের পাশাপাশি অনলাইনে আয়কর রিটার্ন দাখিলা করার নিয়ম সম্পর্কে জানতে ইচ্ছুক? সরাসরি অফিসে গিয়ে আয়কর রিটার্ন দাখিলা করার হাত থেকে মুক্তি পেয়ে চান এবং ঘরে বসে খুব সহজেই আয়কর রিটার্ন দাখিল করতে চান তবে এই এই আর্টিকেলটি আপনার জন্যই।
টিন সার্টিফিকেটধারী প্রতিটা ব্যক্তিকেই বাধ্যতামূলক প্রতি বছর আয়কর রিটার্ন দাখিল করতে হয়। এবং এই আর্টিকেলের মাধ্যমে যেকোনো সময় আয়কর রিটার্ন দাখিলের জন্য নিয়ম সম্পর্কে জানানো হবে যার মাধ্যমে আপনি খুব সহজেই এই কাজটি করতে পারবেন। বিষয় গুলো সহজে উপস্থাপনের জন্য ধাপে ধাপে ব্যাখ্যা করা হবে।
আয়কর রিটার্ন দাখিলা কখন করা হয়?
টিন সার্টিফিকেট গ্রহনের পর থেকে প্রতি বছর আপনাকে আয়কর রিটার্ন দাখিলের প্রয়োজন হবে এক্ষেত্রে প্রতি বছরের নভেম্বর মাসে এই হিসাব গ্রহন করা হয়। আপনার আয় যদি আয়কর যোগ্যে সীমায় থাকে তাহলে আয়কর রিটার্ন করতে তো হবেই এমনকি যদি আয়কর যোগ্য আয় সে বছর না হয়ে থাকে তাহলেও এটা জমা দিতে হয়।
অনলাইনে আয়কর রিটার্ন দাখিলের নিয়ম
এই কাজটি করার জন্য আপনাকে প্রথমেই ই রিটার্ন রেজিস্ট্রেশন করার প্রয়োজন হবে। উক্ত কাজের জন্য আপনাকে প্রথমেই চলে যেতে হবে E-Return Registration ওয়েবসাইটে এবং সেখান থেকে মেনু বার থেকে সাইন আপ বাটনে ক্লিক করে একটি একাউন্ট ক্রিয়েট করে নিতে হবে যদি প্রথমবারের মত এই কাজটি করে থাকেন। সাইন আপ করার জন্য আপনার প্রয়োজন হবে –
- ট্যাক্স প্রদানকারীর টিন সার্টিফিকেট নাম্বার
- মোবাইল নাম্বার
- ক্যাপচা পূরন
এই পর্যায়ে মোবাইল নাম্বার ভেরিফিকেশন করা হবে মোবাইলে ৬ অক্ষরের OTP কোড প্রদান করার মাধ্যমে। সেটা জমা দেয়ার পরপরেই একাউন্টের জন্য পাসওয়ার্ড সেট করতে বলা হবে। পাসওয়ার্ড অবশ্যই এমন দিতে হবে যা সহজে ডিডেক্ট করতে না পারে। ব্যাস এটুকু করার মাধ্যমেই অনলাইনে আপনার ই রিটার্ন রেজিস্ট্রেশন তৈরি সম্পন্ন হবে।
আয়কর রিটার্ন দাখিলের পূর্ব প্রস্তুতি
প্রথমেই আপনার উচিৎ হবে এই বছর আসা আয়কর নির্দেশনা গুলো ভালো ভাবে পড়ে নেয়া। আগের বছরে যে আয়কর রিটার্ন দাখিল করেছিলেন তার কপি সঙ্গে রাখুন। আপনার আয় বিবরনী, লাভ-লোকসান বিবরনী, ব্যক্তিগত ও পারিবারিক আয় ব্যয়ের বিবরনী সঙ্গে রাখুন। এবং উক্ত কাজের ক্ষেত্রে কোনো বিষয়ে বুজতে সমস্যা হলে অবশ্যই অভিজ্ঞ কারো কাছ থেকে সাহায্য নিন।
আয়কর রিটার্ন দাখিলের নিয়ম (ধাপে ধাপে)
১ম ধাপ – ই রিটার্ন এ সাইন ইন করুন
কিছুক্ষন আগে যে ওয়েবসাইটটিতে সাইনআপ করেছিলেন সেখানে সাইনইন করুন আপনার টিন সার্টিফিকেট, মোবাইল নাম্বার ও ক্যাপচা পূরনের মাধ্যমে। সাইন ইন করার পর যে ড্যাশবোর্ডটি আপনার স্কিনের সামনে আসবে সেখান থেকে স্কিনের বাম পাশের মেনু গুলো থেকে Return Submission অপশনে ক্লিক করুন। এরপর পরের ধাপের কাজ শুরু।
২য় ধাপ – কর নির্ধারন তথ্য প্রদান
এই ধাপের প্রথমেই আপনাকে আয়ের সন ও উৎস সংক্রান্ত তথ্য প্রদান করতে হবে। এগুলো বিস্তারিত অপশন হিসেবে উল্লেখ্য করা হচ্ছে –
- Return Scheme এর স্থানে Universal Self অপশনটি দিন, কারন এটা বাংলায় সর্বজনীন স্বনির্ধারনী একটি পদ্ধতি।
- Assessment Year এর মধ্যে আপনার কর প্রদানের বছর উল্লেখ্য করুন
- Income Year এর মধ্যে আপনি যে বছরের ইনকামের অনুযায়ী আয়কর প্রদান করবেন সেই বছর লিখুন।
- এই পর্যায়ে আপনি যদি করযোগ্য আয় সীমার মধ্যে ইনকাম করে থাকেন তবে Yes দিবেন।
- বাংলাদেশ সরকার অনেক ক্ষেত্রের আয়কে করমুক্ত করে দিয়েছে আপনি যদি তেমন কোনো ক্ষেত্র থেকে আয় করে থাকেন তবে এই খানে Yes অপশনে ক্লিক করুন।
- বাংলাদেশি নাগরিক হলে এখানে Resident অপশনটি সিলেক্ট করুন।
- Heads of Income অপশনটি হচ্ছে আয়ের উৎস সমূহ উল্লেখ্য করার জন্য। আপনি কোন ক্ষেত্র থেকে আয় করছেন বা কিভাবে আয় করছেন্স এটি সিলেক্ট করে দিবেন।
- Any income from the following sources নামক অপশনে থাকা সোর্স গুলো থেকে যদি কোনো সোর্সের মাধ্যমে আপনার আয় হয়ে থাকে তবে সেটি সিলেক্ট করুন অন্যথায় স্কিপ করুন।
৩য় ধাপ – আয়ের তথ্য প্রদান করুন
আপনি সর্বোমোট কোন কোন উৎস থেকে আয় করেন এবং কত টাকা আয় করেন সেই সকল তথ্য প্রদান করতে হবে এই ধাপে। উল্লেখ্য করার মত যে যে অপশন থাকবে সেগুলো ধাপে ধাপে বুজিয়ে দেয়া হচ্ছে –
- Additional Information এর ঘরে আপনাকে আপনার আয়ের উৎসের এলাকা দিতে হবে। দুইটি অপশন দেয়া থাকবে সিটি কর্পোরেশন এবং অন্যান্য
- যদি আপনি মুক্তিযোদ্ধা হোন তবে এখানে টিন দিন।
- আপনি যদি কোনো ধরনের প্রতিবন্ধি ব্যক্তি বা শিশুর পিতা – মাতা হয়ে থাকেন তবে এখানে টিক দিন
- Claim Tax rebate for investment এর ঘরে টিক তখনই দিবেন যদি আপনি এমন কোনো বিনিয়োগের মাধ্যমে আয় করে থাকেন সেখানে বাংলাদেশ সরকার কর ছাড় দিয়েছে।
- পরবর্তিতে আপনি যদি কোনো পাবলিক বা প্রাইভেট কোম্পানির শেয়ার হোল্ডার হয়ে থাকেন তবেই।
- IT10B Requirement: আপনার আয় যদি ৪০ লাখ টাকার বেশি হয়ে থাকে তবে অবশ্যই এটির মধ্যে আয় ব্যয়ের হিসাব দেখাতে হবে। যদি তা না হয়ে থাকে তবে এটি পূরণ করা বাধ্যতামূলক নয়।
৪র্থ ধাপ – আয়ের বিস্তারিত তথ্য প্রদান
আপনার যা আয় হয়েছে তা বিস্তৃত ভাবে জানানোর জন্য কিছু প্রসেসের মধ্য দিয়ে যেতে হবে। যার মধ্যে মূলে রয়েছে আয়ের সোর্স, ধরা যাক যদি আপনার আয়ের প্রধান উৎস বেতন হয়ে থাকে তবে এটি সিলেক্ট করবেন। বেতন না হয়ে যদি অন্য কোনো সোর্স হয়ে থাকে তবে ড্রপ ডাউনের মাধ্যমে তা সিলেক্ট করে দিতে হবে। আপনার আয়ের উৎস প্রদানের ক্ষেত্রে দেখতে হবে আপনি কি এমন কোনো উৎস থেকে আয় করছেন সেখানে কর প্রদান করতে হয় না? সেক্ষেত্রে আপনার কর কম আসবে বা আসবেই না। অন্যথায় আপনার আয়ের বিস্তারিত তথ্য যেমন – মোট আয় কত এবং সেখান থেকে বিভিন্ন ব্যয় বাদ দিয়ে নীট আয় কত সেটার তথ্য প্রদান করতে হবে।
৫ম ধাপ – ব্যয়ের তথ্য
এতো সময় ধরে তো সব ধরনের আয়ের তথ্য সম্পর্কে জানতে চাওয়া হয়েছে। এই পর্যায়ে আপনাকে ব্যয়ের তথ্য গুলো প্রদান করতে হবে। যদি যদি আইটি১০বি নামক অপশনটি পূরন করে থাকেন বা আপনার মোট আয় ৪০ লাখ টাকা হয়ে থাকে তবেই এটি পূরন করা বাধ্যতামূলক অন্যথায় না। আপনি যদি চান তবে পূরণ করতে পারেন সমস্যা নেই। তবে আপনাকে অবশ্যই বাৎসরিক পারিবারিক ও ব্যক্তিগত আয় সমূহ সম্পর্কে বিস্তারিত পরিমাণ উল্লেখ করতে হবে।
৬ষ্ঠ ধাপ – আয়কর ও পরিশোধ
এই পর্যায়ে আপনাকে প্রদানকৃত করের পরিমাণ দেখাবে। আপনি যদি কোনো প্রকার উৎস কর কিংবা অগ্রিম কর প্রদান করে থাকেন তবে অটোমেটিক ভাবে তা এখানে ডেডিক্ট করে তার সমমূল্য বাদ দেয়া হবে এবং আপনাকে ঠিক কত পরিমাণের কর প্রদান করতে হবে তা দেখানো হবে।
যদি আপনাকে কোনো প্রকার কর দিতে না হয় বা payble amount শুণ্য আসে তবে তাকে জিরো রিটার্ন বলা হয়। এক্ষেত্রে আপনার করযোগ্য আয় সীমার মধ্যে আপনার আয় নেই বা আপনার আয়কৃত অর্থর উপর কোনো কর গ্রহন করা হবে না এটাই বুঝায়।
অফলাইন রিটার্ন – স্কিনের বাম পাশের হলুদ কালারের বাটনে ক্লিক করে আপনার আয়কর রিটার্ন ফরমটি প্রিন্ট করে নিন। এর পর সেটি আপনার এরিয়া ভিত্তিক আয়কর অফিসে জমা দিয়ে দিন। এর জন্য আপনাকে কোনো প্রকার ফি প্রদান করতে হবে না।
অনলাইন রিটার্ন – তাছাড়া ডান পাশের নীল রঙ্গের বাটনে ক্লিক করার মাধ্যমে অনলাইনে রিটার্ন প্রসেস সাবমিট করতে পারবেন। এক্ষেত্রে আপনাকে অফলাইনের মত অফিসে গিয়ে তা জমা দিতে হবে না। এক্ষেত্রে আপনাকে একটি প্রিভিউ দেখানো হবে এবং সবশেষে ভেরিফিকেশন বাটনে টিন চিহ্নতে ক্লিক করে সাবমিট করতে হবে। তারপর পপ আপের মাধ্যমে একটি সতর্কতা দেখানো হবে যেখানে উল্লেখ থাকবে যে আপনি কি রিটার্ন সাবমিট করতে চান কি না। ইয়েস বাটনে ক্লিক করুন। মনে রাখবেন ইয়েস বাটনে ক্লিক করলে আর কোনো ভাবে তা ইডিট করা যাবে না।
৭ম ধাপ – Download Acknowledgement Receipt
সফলভাবে আয়কর রিটার্ন জমা দেয়ার পর আপনাকে একটি ম্যাসেজ দেখানো হবে যেখানে রিটার্ন সবমিশনের আইডি নাম্বার দেয়া থাকবে এবং একটি রিসিপ্ট দেয়া হবে। সেটা আপনি ডাউনলোড করে রাখতে পারেন বা প্রিন্ট আউট করে নিতে পারেন।
পরিশেষে, এই ছিলো অনলাইনে আয়কর রিটার্ন দাখিলের নিয়ম সংক্রান্ত বিস্তারিত আর্টিকেল যেখানে আয়কর রিটার্ন এর জন্য রেজিস্ট্রেশন থেকে শুরু করে সঠিক ভাবে তা জমা দেয়া অব্দি সকল প্রসেস একেক করে ধাপ অনুযায়ী উপস্থাপন করা হয়েছে। প্রতিটি বিষয় সহজ ও সুন্দর ভাবে ব্যাখ্যা সহকারে টিন সার্টিফিকেট সংক্রান্ত অন্যান্য বিষয় গুলো জানতে উক্ত লিংকে ক্লিক করুন এবং বাংলা আলো এর পাশেই থাকুন।