অসুস্থ ব্যক্তির জন্য দোয়া: সুস্থতা আল্লাহ তাআলার অনেক বড় নেয়ামত। অসুস্থতাও আল্লাহর নেয়ামত। সুস্থতা – অসুস্থতা নিয়েই জীবন। নবী-রাসুলরাও অসুস্থ হয়েছেন। অসুস্থতাও আল্লাহর নেয়ামত। অসুস্থতার মাধ্যমে আল্লাহ বান্দাকে পরীক্ষা করেন। তার গুনাহ মাফ করেন। অসুস্থ ব্যক্তির জন্য দোয়া পড়তে হয়। এতে করে আল্লাহ রহমত করলে অসুস্থতা থেকে অনেকাংশে রক্ষা পাওয়া যায়।
অসুস্থতা একজন মুমিনের জন্য তার গোনাহর কাফফারাও হতে পারে। প্রিয় নবী (সা.) বলেছেন, ‘সত্যের নিকটবর্তী থাকো এবং সরল-সোজা পথ অবলম্বন করো। মুমিনের যে কষ্টই হোক না কেন, এমনকি তার গায়ে যদি কোনো কাঁটা বিঁধে বা সে কোনো বিপদে পতিত হয়- সবকিছুই তার গোনাহের কাফফারা হয়।’ – তিরমিজি : ৩০৩৮
অসুস্থ ব্যক্তিকে দেখতে যাওয়ার ফজিলত
অসুস্থ ব্যক্তিকে দেখতে যাওয়া অনেক পুণ্যের কাজ।
হযরত আলী রা. বর্ণনা করেন, আমি রসুল সা. কে বলতে শোনেছি, যে ব্যক্তি সকালবেলা কোনো অসুস্থ মুসলমানকে দেখতে যায়, সত্তর হাজার ফেরেশতা বিকেল পর্যন্ত তার জন্য দোয়া করতে থাকে। আর বিকেলে রোগী দেখতে গেলে পরদিন সকাল পর্যন্ত সত্তর হাজার ফেরেশতা দোয়া করে। (সুনানে তিরমিজি ৯৬৭)
হযরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, নবীজি (সাঃ) বলেছেন, আল্লাহ তাআলা কেয়ামতের দিন মানুষকে ডাকবেন এবং বলবেন, হে আদম সন্তান! আমি যখন অসুস্থ হয়েছিলাম,তখন তুমি আমার সেবাযত্ন করতে আসনি। মানুষ বলবে, হে প্রভু! আপনি মহান রব, আমি কিভাবে আপনার সেবা করব? আল্লাহ বলবেন, তুমি কি জানতে পারোনি যে, আমার অমুক বান্দা অসুস্থ ছিল? কিন্তু তখন তুমি তাকে দেখতে যাওনি। তুমি কি জানতে না যে, তুমি যদি তাকে (অসুস্থ ব্যক্তিকে) দেখতে যেতে (সেবাযত্ন করতে) তাহলে সেখানে আমার দেখা পেতে? (মুসলিম ও মিশকাত)
অসুস্থ ব্যক্তির জন্য দোয়া
রোগী দেখতে গিয়ে করণীয় হলো তার সুস্থতার জন্য দোয়া করা। হাদিসে রোগী দেখার অনেক দোয়া বর্ণিত হয়েছে। আসুন তন্মধ্যে অত্যাধিক গুরুত্বপূর্ণ ও ফজিলতপূর্ণ কিছু দোয়া শিখে নেই।
প্রথম দোয়া
১) হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বলেন, আমাদের মধ্যে কেউ যখন অসুস্থ হতো তখন রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর ডান হাত রোগীর শরীরে বুলাতেন এবং বলতেন –
উচ্চারণ : আজহাবিল বা’সা রব্বান না-সি, ওয়াশফি আনতাশ শা-ফি-, লা শিফাআ’ ইল্লা- শিফা-উকা শিফা-আ’ লা ইউগাদিরু সাক্বমা।
২) আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা: থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সা: রোগী দেখে সাতবার এই দোয়া পাঠ করতেন।
উচ্চারণ:আসআলুল্লাহাল আজিমা রাব্বাল আরশিল আজিমি আই-ইয়াশফিয়াকা’ (সুনানে তিরমিজি-২০৮৩)
৩) হযরত আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবীজি (সাঃ) একবার একজন অসুস্থ বেদুইনকে দেখতে গেলেন। আর কোনো রোগীকে দেখতে গেলে তিনি বলতেন, (লা-বাসা তুহুরুন ইংশা-আল্লহ) ভয় নেই, আল্লাহ চান তো তুমি খুব শীঘ্রই ভালো হয়ে যাবে। এ রোগ তোমার পবিত্র হবার কারণ হয়ে দাঁড়াবে। এ নিয়ম অনুযায়ী তিনি বেদুঈনকে সান্ত্বনা দিয়ে বললেন, ‘ভয় নেই, তুমি ভালো হয়ে যাবে।
আল্লাহর ইচ্ছায় এটা তোমার পবিত্র হবার কারণ হয়ে যাবে। তার কথা শুনে বেদুঈন বলল, কক্ষনো নয়। বরং এটা এমন এক জ্বর, যা একজন বৃদ্ধ লোকের শরীরে ফুঁটছে। এটা তাকে কবরে নিয়ে ছাড়বে। তার কথা শুনে এবার নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, আচ্ছা, তুমি যদি তাই বুঝে থাক তবে তোমার জন্য তা-ই হবে। (বুখারি ৩৬১৬, ৫৬৫৬, ৫৬৬২, মিশকাত ১৫২৯)
রোগী দেখতে গিয়ে সব সময় মঙ্গলজনক কথা বলা
অসুস্থ ব্যক্তির জন্য ওষুধ ও দোয়া ছাড়া সবচেয়ে বেশি কার্যকরী হলো তার যত্ন নেয়া। অসুস্থ ব্যক্তির সেবা-শুশ্রুষা করার পাশাপাশি ওষুধ এবং তাঁর নাম উল্লেখ করে আল্লাহর কাছে দোয়া করা।তার পাশাপাশি যখন রোগী দেখতে যাবেন তখন রোগী কে নিয়ে ভালো ভালো কথা বলা উচিত। কেননা হাদিসে এসেছে – ‘যখন তুমি কোনো রোগীর কাছে যাবে কিংবা মরণোন্মুখ ব্যক্তির কাছে যাবে, তখন তার সঙ্গে মঙ্গলজনক কথাবার্তা বলো। কেননা তুমি যা বলো ফেরেশতাগণ তার ওপর আমিন আমিন বলে।’ (মুসলিম ও মিশকাত)
পরিশেষে
অসুস্থতা দেহের জাকাত স্বরূপ।আমাদের আশে পাশে যখন কেউ অসুস্থ হয়ে পড়ে, তখন তাদের জন্য যেমন দোয়া করা আমাদের কর্তব্য। ঠিক তেমনি, অসুস্থ ব্যক্তিকে দেখতে যাওয়াও আমাদের কর্তব্য। জানুন আরো অন্যান্য ধর্মীয় বিষয় সম্পর্কে বাংলা আলো ওয়েবসাইটের ইসলাম ক্যাটাগরিতে।