একজন শিশু বা নবজাতক জন্মগ্রহণ করার পর পিতামাতার জন্য যা করার প্রয়োজনীয় হয়ে পরে তারমধ্যে রয়েছে আকিকা৷ সন্তানের ভবিষ্যতের জন্য আকিকা করার প্রয়োজনীয়তা ও গুরুত্ব অপরিসীম৷ আকিকা এর গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা, কখন কিভাবে করতে হবে এ সম্পর্কে এ আর্টিকেলে তুলে ধরা হলো৷
আকিকা কি?
আকিকা হচ্ছে মুসলিম শিশু জন্মগ্রহণ করার পর তার সুরক্ষার জন্য অবশ্য পালনীয় ধর্মীয় বিধান৷ শিশু জন্মের ৭,১৪,২১ দিনের ভেতরে আকিকার কাজ সম্পন্ন করতে হয়৷ কেননা এ আকিকা শিশুর ভবিষ্যত নিরাপত্তা ও সুরক্ষার সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত থাকে৷
আকিকার বিষয়ে মুসলিম আলেম-ওলামা বা স্কলারদের মাঝে কোনরূপ ভিন্নমত নেই৷ অর্থাত আকিকা করতে হবেনা বলে কেউ মনে করেন না৷ এ বিষয়ে সকলেই একমত যে সন্তান জন্মের পর পিতামাতার দায়িত্ব হচ্ছে তার আকিকার ব্যবস্থা করা৷
সন্তানভেদে আকিকা
এখানে প্রশ্ন আসতে পারে যে সন্তানভেদে আকিকা করার কোন নিয়ম রয়েছে কিনা বা সমাজে এ নিয়ে কিছুর প্রচলন থাকতে পারে৷ তবে ইসলামিক শরীয়ার মতে আকিকার জন্য উত্তম পদ্ধতি হচ্ছে ছেলে সন্তানের জন্য দুটি ছাগল ও মেয়ে সন্তানের জন্য একটি ছাগলের মাধ্যমে আকিরার কাজ সম্পাদন করা৷
এক্ষেত্রে কততম সন্তান তা বিবেচ্য বিষয় নয়৷ সন্তান হোক প্রথম, দ্বিতীয় বা তৃতীয় আকিরার সাথে সম্পর্কিত হচ্ছে সন্তান ছেলে না মেয়ে৷
সঠিকভাবে আকিকা করার পদ্ধতি
সঠিকভাবে আকিকার খুবই প্রয়োজনীয়৷ সঠিকভাবে আকিকা করা তেমন কঠিন কিছু নয়৷ বরং, কিছু নিয়মের যথাযথ অনুসরণ করলেই আকিকা সঠিকভাবে করা যাবে৷ সঠিকভাবে আকিকার জন্য সঠিক পশু নির্বাচন, গোশত বিতরণ ও এ সম্পর্কিত নিয়ম, জবাইকৃত পশুর চামড়ার সঠিক ব্যবহার ও আকিকা নিয়ে প্রচলিত কুসংস্কার এড়িয়ে চলা। নিম্নে এ সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে নিম্নে তুলে ধরা হলো৷
আকিকার জন্য পশু নির্ধারণ ও এর সংখ্যা
আকিকার জন্য পশু নির্ধারণ খুবই গুরুত্বপূর্ণ৷ পশু হিসেবে উট, গরু, ভেড়া, মহিষ বা ছাগল বেছে নিতে হবে৷ তবে আকিকার সুন্নত হচ্ছে ছাগলের মাধ্যমে আকিকা করা৷
কোরবানি পশুর মতই আকিকার পশু হতে হবে সুস্থ, সবল, রোগমুক্ত৷ আকিকার জন্য নির্ধারিত পশুতে কোনরূপ ত্রুটি গ্রহনযোগ্য হবেনা৷ এ বিষয়ে হয়রত আয়েশা (রাঃ) তার মুখ নিসৃত একটি হাদীসে বলেন,
আল্লাহর রাসূল (সাঃ) তাদেরকে ছেলে সন্তানের জন্য দুটি সমবয়সী ছাগল আর মেয়ে সন্তানের জন্য একটি ছাগল দিয়ে আকিকার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন৷ (তিরমিযী, ১ম খন্ড, পৃঃ১৮৩; আবু দাউদ, ২য় খন্ড, পৃঃ৪৪)৷
এছাড়াও আরেকটি হাদীসে হয়রত উম্মে কুরুজ রাঃ বলেন, আল্লাহর রাসূল (সাঃ) বলেছেন, সদ্যজাত শিশু ছেলে হলে দুটি ছাগল ও মেয়ে হলে একটি ছাগল দিয়ে আকিকা সম্পন্ন করবে৷ (তিরমিযী শরীফ, ১ম খন্ড, পৃঃ১৮৩ ও আবু দাউদ শরীফ, ২য় খন্ড, পৃঃ৪৪)
আকিকার গোশত বিতরণের নিয়ম ও পদ্ধতি
আকিকার গোশত যিনি এটা করেছেন, তার পরিবার রান্না করে খেতে পারবে৷ এমনকি রান্না করে আত্মীয়স্বজন ও গরীব অসহায়দের কে দাওয়াত দিয়েও খাওয়ানো যাবে৷ আকিকাকৃত পশুর গোশত ৩ ভাগ করা সুন্নাহ৷ এই তিন ভাগের একভাগ নিজের পরিবারের জন্য, অপর একভাগ হচ্ছে গরীব, অসহায়দের সদকাহ করে এবং শেষের ভাগটি আত্মীয়স্বজনের মাঝে বিতরণ করা যাবে৷
আকিকাকৃত পশুর চামড়ার বিষয়ে করণীয়
কোরবানির মতই আকিকার পশুর চামড়া নিয়ে করণীয় সম্পর্কে আমাদের মাঝে প্রচুর প্রশ্ন পরিলক্ষিত হতে দেখা যায়৷ এ সংশয়ের সমাধান হচ্ছে আকিকাকৃত পশুর চামড়া আমরা বিক্রি করে দিয়ে যে টাকা পাওয়া যাবে তা গরিব,অসহায় ও মিসকিনদের মাঝে বিতরণ করে দিতে হবে৷ আর তাহলেই আমাদের জন্য তা উত্তম হবে৷
আকিকার কল্যাণসমূহ
আকিকার মাঝে প্রচুর কল্যাণ নিহিত রয়েছে৷ আমরা রাসূল (সাঃ) এর হাদীস অধ্যায়ন করে বুঝতে পারি যে, আকিকার ফলে আল্লাহ সন্তানের বিপদ-আপদ, বালা-মুসিবত হতে রক্ষা করেন৷ অর্থাত্, যার আকিকা করা হয়, তার জীবনে অনেক অনেক বিপদ আপদ হতে সে মুক্তি পায়৷ আকিকার এ অশেষ নেয়ামত প্রাপ্তির জন্য সুন্নাহ নির্দেশিত পন্থায় আমাদের নবজাতকের আকিকা সম্পাদন করতে হবে৷
নওমুসলিমজের আকিকাঃ
নওমুসলিমদের জন্য আকিকার প্রয়োজনীয় নয়৷ তবে কোন নওমুসলিম চাইলে মুসলিম হবার পর তার আকিকা করতে পারে৷ এতে ইসলাম ধর্মমতে কোনরূপ বাধা নেই৷
মৃত সন্তানের জন্য আকিকাঃ
মৃত সন্তানের জন্য ধর্মীয় মতে আকিকার প্রয়োজনীয়তা নেই৷ কেবলমাত্র জীবিত সন্তানের জন্যই আকিকা করার বিধান রয়েছে৷
আকিকা নিয়ে প্রচলিত কুসংস্কারঃ
আকিকার মত গুরুত্বপূর্ণ একটি সুন্নাহকে নিয়ে সমাজে বহুল কুসংস্কার প্রচলিত রয়েছে৷ বিশেষত আমাদের দেশের গ্রামাঞ্চলে অনেক জায়গায় এ নিয়ে কুসংস্কার বাড়াবাড়ি পর্যায়ের বেশি৷ প্রচলিত কুসংস্কারের মাঝে রয়েছে, আকিকার জন্য পশু নানাবাড়ি থেকে দিতে হবে৷ আবার আকিকাকৃত পশুর গোশত নবজাতকের মা,বাবা, দাদা-দাদী, নানা-নানী খেতে পারবে না৷
আবার সনাতন ধর্মীয় বিশ্বাসের কাছাকাছি একটি হচ্ছে নবজাতকের মাথার চুল প্রথমবার মুন্ডানোর সময় কেচি বা ক্ষুর ধরে সে সময়ে আকিকার পশু জবেহ করতে হবে৷ যার ইসলামী শরীয়তের সাথে কোনরূপ যোগসাজশ নেই৷ আর এরকম বা এর কাছাকাছি যে কোন প্রথা অ-ইসলামিক, এজন্য সেগুলো এড়িয়ে চলতে হবে৷
ইতিকথা
আকিকার মত গুরুত্বপূর্ণ, যা সন্তানের নিরাপত্তার সাথে সম্পর্কিত ইবাদত, একে নিয়ে কোনরূপ অবহেলা করার সুযোগ নেই৷ আকিকা নিয়ে অবহেলা নিজের সন্তানের নিরাপত্তা নিয়ে অবহেলার নামান্তর৷ তাই আকিকার জন্য সকল নিয়মকানুন যথাযত অনুসরণ ও পালন করা জরুরী৷