বীমা বা ইন্সুরেন্স কি এবং কেনো ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের জন্য ইন্সুরেন্স গুরুত্বপূর্ণ পাশাপাশি এর ব্যবহার ভিত্তিক প্রকারভেদ সহ সকল তথ্য জানার আগ্রহ থাকলে উক্ত আর্টিকেলটি আপনার জন্যই, কেননা এখানে জানানো হয়েছে ইন্সুরেন্স সংক্রান্ত সকল বিষয়ের খুঁটিনাটি এবং করা হয়েছে চিরুনি তল্লাশি।
একটি দেশের অর্থনীতিতে ইন্সুরেন্স খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ইন্স্যুরেন্সের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র সঞ্চয় সংগ্রহ করে বিভিন্ন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের মূলধন গঠন করে অন্যদিকে উক্ত সঞ্চয় গুলো প্রদানের মাধ্যমে জীবন, ঋণ, এবং সম্পত্তির ক্ষতি পূরণের নিশ্চয়তা পাওয়া যায়। এখানে পুরো বিষয়টি মানুষের জীবন যাত্রার মান উন্নত করে, উন্নত করে দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা এবং দেশের মানুষের জীবনধারা।
ইন্সুরেন্স এর জন্য মানুষের ব্যক্তি উৎপাদন বৃদ্ধি পায়, জীবনের কর্ম ক্ষেত্রে বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে অবদান রাখে যার ফলে দেশের মোট জাতীয় উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়ে থাকে। আরেকটি দেশের জাতীয় উৎপাদন যত বৃদ্ধি পাবে সে দেশের জীবনযাত্রার মান তত বেশি উন্নত হবে। তাই ওভারভিউ দিক থেকে চিন্তা করলে, ইন্সুরেন্স বীমা দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে। এই পর্যায়ে জানবো, ইন্সুরেন্স কি, ইন্সুরেন্স কিভাবে কাজ করে, ইন্সুরেন্স এর প্রকারভেদ সহ সকল খুঁটিনাটি বিষয়।
ইন্সুরেন্স কি? ইন্সুরেন্স শব্দের বাংলা প্রতিশব্দ হলো বীমা যার দ্বারা অর্থের বিনিময়ে জীবনমূখী সুবিধা বোঝায়। সংক্ষেপে বলতে গেলে নির্দিষ্ট অর্থের বিনিময় জীবন সম্পদ সম্ভাব্য ক্ষয়ক্ষতি এবং ঝুঁকির হস্তান্তরকে বীমা বোঝায়।
এ ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট প্রতিষ্ঠান গ্রাহকের কাছ থেকে অর্থের বিনিময়ে গ্রাহকের আংশিক অথবা সম্পূর্ণ সম্ভাব্য ঝুঁকি বহন করে থাকে। যেকোনো ধরনের অনিশ্চিত ক্ষতি এড়াতে ঝুকি ব্যবস্থাপনার একটি অংশ হিসেবে ইন্সুরেন্স বীমা কাজ করে থাকে।
যে সকল কোম্পানি বীমা সংক্রান্ত চুক্তিতে আবদ্ধ তারা গ্রাহক বা যারা বীমা গ্রহণ করতে আগ্রহী তাদের কাছ থেকে নির্ধারিত সময় ও অর্থের বিনিময় এর মাধ্যমে তাদের সকল ধরনের সম্ভাব্য ক্ষতির হাত থেকে মুক্তি দেয়ার প্রতিশ্রুতি প্রদান করে। অন্যদিকে বিভিন্ন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের সকল বীমা কোম্পানিগুলোর কাছ থেকে সে সকল ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র সঞ্চয় প্রিমিয়াম সংগ্রহ করে নিজেদের মূলধন বৃদ্ধি করে। উক্ত কাজের সাথে কিছুটা ব্যাংকের সাদৃশ্যতা লক্ষ করা যায়, তবে এদের কার্যক্রম ব্যাংকের কার্যক্রম থেকে ভিন্ন।
বীমা বা ইন্সুরেন্স হলো এক ধরনের চুক্তি। এই চুক্তিটি দুই পক্ষের মধ্যে আইনগত ভাবে হয়ে থাকে। উক্ত চুক্তির মধ্যে এক পক্ষ অন্য পক্ষকে ক্ষতিপূরণ দিবে বলে নিশ্চয়তা দিয়ে চুক্তিতে আবদ্ধ করে এবং অন্যপক্ষ ক্ষতিপূরণ পাওয়ার জন্য নির্দিষ্ট হারে নির্দিষ্ট অর্থ প্রদানের নিশ্চয়তা দিয়ে চুক্তিপত্রে চুক্তিতে আবদ্ধ হয়। ইন্সুরেন্স অনেক প্রকারের হয়ে থাকে যার মধ্যে একটি হলো জীবন বীমা বা লাইফ ইন্সুরেন্স। মূলত জীবনের মূল্য অর্থ দ্বারা পরিমাপ করা যায় না তাই এর ক্ষতিপূরণ হিসেবে আর্থিক নিরাপত্তা প্রদান করা হয়।
মানুষের জীবন সহ জীবনের সাথে জড়িত প্রতিটি বিষয় ঝুঁকিময়। যে কোনো সময় যে কোনো অঘটন ঘটতেই পারে যার জন্য ক্ষয় ক্ষতি হতে পারে খুব মূল্যবান সম্পদ। কেউ কেউ সেই ক্ষতি থেকে নিজেকে সামলে উঠতে পারে আবার কেউ পারে না। অনিশ্চয়তার উক্ত খাতটিকে কেন্দ্র করেই গড়ে উঠেছে বীমা নামক আর্থিক কার্যক্রম যেখানে একটি প্রতিষ্ঠান একটি নির্দিষ্ট হারে অর্থবহন এর মাধ্যমে যে কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান ভবিষ্যতে সম্ভাব্য ঝুঁকিগুলো আংশিক অথবা সম্পূর্ণ গ্রহণ করবে।
যে কোন জিনিসের বৈশিষ্ট্যর মাধ্যমে উক্ত জিনিসকে চিহ্নিতকরণ করা হয়। তেমনই ইন্স্যুরেন্সের কিছু বৈশিষ্ট্য রয়েছে যার মাধ্যমে উক্ত বিষয়টি কোন ইন্সুরেন্স সেটিকে চিহ্নিত করা যায় এটা আদৌ ইন্সুরেন্স কিনা সেটি বোঝা যায়। মূলত ব্যাংকিং কার্যক্রমের সাথে ইন্সুরেন্স এর কার্যক্রম সম্পন্ন তাই এই দুইটি বিষয়ে জানা হয়ে যায় তার জন্য হলেও ইন্সুরেন্স এর বৈশিষ্ট্যগুলো জানা জরুরি। নিম্মে ইন্স্যুরেন্সের কিছু বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে জানানো হলোঃ
১) ইন্সুরেন্স বা বীমা হল ঝুঁকির বিপক্ষে এক প্রকার আর্থিক প্রতিরক্ষামূলক ব্যবস্থা।
২) বীমা ঝুঁকির সম্মুক্ষিন ব্যক্তিবর্গের মধ্যে ঝুঁকি বন্টন করে নেয়।
৩) মানুষের জীবনে এবং সম্পদের উপর যে ঝুঁকিগুলো প্রভাব বিস্তার করে সেটাই হলো বীমার মূল বিষয়বস্তু।
৪) একটি নির্দিষ্ট হারে নির্দিষ্ট প্রিমিয়ামের (বীমা প্রিমিয়াম কি সে বিষয়ে পরবর্তী ধাপে জানানো রয়েছে) বিনিময় বীমা কোম্পানি গ্রাহকের জীবন ও সম্পদের ঝুঁকি গ্রহণ করে থাকে।
৫) যদি কোন ব্যক্তি কোন ক্ষতির সম্মুখীন হয় এবং উক্ত ব্যক্তি উক্ত খাতে বীমা করে থাকে তবে বীমা কোম্পানি অর্থ প্রদানে বাধ্য থাকবে যা ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি ক্ষতিপূরণ হিসেবে পাবে।
৬) ক্ষতিপূরণ পাওয়ার পূর্বশর্ত হলো যে খাতে ক্ষতি হয়েছে শেখাতে বীমা কোম্পানী কর্তৃক যে শর্ত আরোপ করা হয়েছিল সেই শর্ত পূরণ হয়েছে কি-না। যদি হয়ে থাকে তবে যেকোনো বীমা কোম্পানি উক্ত ক্ষতিপূরণ দিয়ে থাকবে।
বীমা সংক্রান্ত বিষয়ে আলোচনা করার মধ্যেই প্রিমিয়াম নামক শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে। যার কারণে অবশ্যই জানা উচিত প্রিমিয়াম মূলত কি। প্রিমিয়াম শব্দটির পূর্বে ইন্সুরেন্স বীমা শব্দটি অবশ্যই ব্যবহার করতে হবে। তাহলে বিষয়টি দাঁড়ায়, একটি ইন্সুরেন্স বা বীমার যে চুক্তি হয় সেই চুক্তিতে বীমাকারী বীমা গ্রহীতাকে ক্ষতিপূরণ প্রদান দাবি পরিষদের প্রতিশ্রুতি প্রদানকে বীমা প্রিমিয়াম বলা হয়।
সহজে বুঝতে গেলে বলতে হয়, একজন বীমাগ্রহীতা যখন ক্ষতিপূরণ প্রাপ্তির আশায় বা প্রত্যাশায় বীমাকারী প্রতিষ্ঠানকে মাসিক হারে যে নির্দিষ্ট অর্থ প্রদান করে থাকে এবং কোনভাবে উক্ত ক্ষতির সম্মুখীন হলে বীমা কোম্পানি বিমাগ্রহীতা কে যে অর্থ প্রদান করে সেই অর্থকেই বীমা প্রিমিয়াম বলা হয়।
জীবন বীমার ক্ষেত্রে ইন্সুরেন্স প্রিমিয়াম কিছুটা ভিন্ন, যেহেতু জীবনের কোনো ক্ষতিপূরণ করা সম্ভব না সে ক্ষেত্রে, বিমাগ্রহীতা বীমাকারী প্রতিষ্ঠানকে প্রিমিয়াম প্রদানের মাধ্যমে বিমান সংস্থা নির্দিষ্ট মেয়াদপূর্তি সেবা মেয়াদপূর্তির পূর্বেই বীমাকৃত ব্যক্তির মৃত্যু হলে বীমা দাবি চুক্তি অনুযায়ী নির্ধারণ করা হয়েছিল তা পরিশোধ করা হয়ে থাকে।
2010 সালের বীমার আইন অনুযায়ী একটি বীমার প্রিমিয়াম নির্ধারণ করতে নিম্নলিখিত বিষয় বিবেচনায় আনতে হবে এবং তার আলোকে বীমা প্রিমিয়াম কত হবে তা নির্ধারণ করা হয়:
স্বাভাবিকভাবে এটা আপনার মনে প্রশ্ন আসতে পারে ইন্সুরেন্স কেন প্রয়োজন? কেন আপনি প্রতিমাসে নির্দিষ্ট এমাউন্টের অর্থ একটি প্রতিষ্ঠানকে দিয়ে ঝুঁকি গ্রহণ করার জন্য ভালো থাকবেন? আপনি চাইলেই উক্ত অর্থ নিজের কাছে গচ্ছিত রেখে সম্ভাব্য ঝুঁকি মোকাবেলা করতে পারেন। জি হ্যাঁ পারেন তবে সব সময় সকল ধরনের ঝুঁকির জন্য প্রস্তুত ধাকা স্বাভাবিকভাবে কোন ব্যক্তি একার পক্ষে সম্ভব নয়। অর্থ নামক সম্পদ সর্বদা হাত বদল করতে পছন্দ করে যার ফলে অনিশ্চয়তা ও ঝুঁকি এমন ভাবে আপনাকে গ্রাস করতে পারে যার জন্য আপনি সর্বদা প্রস্তুত নাও থাকতে পারেন।
জীবন সুন্দর, এইসুনদর জীবনে ভালো কিছু পাওয়ার প্রত্যাশা আমাদের সকলের। তবে তার পাশাপাশি জীবনে আশা মন্দ পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য, নিজেদের নিরাপত্তা ও প্রশান্তি বলার জন্য ইন্সুরেন্স খুব গুরুত্বপূর্ণ। ইন্সুরেন্স যে কেবল মানুষের জীবনের জন্য তা নয়, আরো বিভিন্ন ক্যাটাগরির বিভিন্ন ঝুঁকি এড়ানোর জন্য ইন্সুরেন্স করা হয়ে থাকে। পরবর্তী ধাপে আমরা জানবো ইন্সুরেন্স কিভাবে কাজ করে এবং কত ধরনের ইন্সুরেন্স রয়েছে। ইন্সুরেন্স করা হয় ভবিষ্যতে অনিশ্চয়তার মধ্যে থাকা পরিস্থিতিতে বা যেকোন ঝুঁকিতে নিজেকে সামলে নেওয়া বা পরিস্থিতি মোকাবেলা করার মতো সক্ষমতা অর্জনের সুবাদে আর্থিকভাবে উক্ত ক্ষয়ক্ষতির মোকাবেলা করার জন্যই ইন্সুরেন্স করা হয়ে থাকে।
এই পর্যায়ে জানাবো ইন্সুরেন্সের প্রকারভেদ সম্পর্কে। আমরা বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ইন্সুরেন্সের কথা শুনে থাকি তবে এখানে জানবো ইন্সুরেন্সের প্রকৃত ধরন গুলর সম্পর্কে। মূলত যত গুলো ইন্সুরেন্স রয়েছে সেসব গুলোকে প্রধান দুই ভাবে ভাগ করা হয়েছে। ১ম টি হলো জীবন বীমা এবং ২য় টি হলো সাধারণ বীমা। এক্ষেত্রে সাধারণ বীমার মধ্যেই অন্য সকল ধারনের বীমা বিধ্যমান। নিম্মে বিস্তারিত এই বিষয়ে জানানো হলো।
জীবন বীমা হল মানুষের মৃত্যুজনিত ঝুঁকি, ক্ষতি, বিপদ হস্তান্তরে বা এড়ানোর একটি কৌশল। বীমাগ্রহীতার মৃত্যু অথবা বার্ধক্য অবস্থায় বীমাগ্রহীতা অথবা তার পরিবার পরিজনদের আর্থিক ক্ষতি থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য আধুনিক যুগে জীবন বীমা একটি কার্যকর মাধ্যমে হিসেবে কাজ করে।
বীমাগ্রহীতার নির্দিষ্ট হারে প্রিমিয়াম পরিশোধের বিনিময়ে বীমাকারী প্রতিষ্ঠান বা বীমা কোম্পানীর বা মেয়াদ শেষে একটি নির্দিষ্ট সময় পরে অথবা তার মৃত্যুর পর পূর্ব নির্ধারিত পরিমান অর্থ পরিশোধের যে প্রতিশ্রুতি দেয় এ চুক্তিগত ব্যবস্থাকে জীবন বীমা বলা হয়। সুতরাং জীবন বীমা হলো বীমাগ্রহীতা এবং বীমাকারী প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সম্পাদিত একটি আধুনিক চুক্তি যাতে সুনির্দিষ্ট প্রিমিয়াম পরিশোধের প্রতিদান হিসেবে বীমাকারী প্রতিষ্ঠান বীমাগ্রহীতাকে অথবা তার উত্তরাধিকারীদের বা তার মনোনীত ব্যক্তিকে তার মৃত্যুর পর অথবা একটি নির্দিষ্ট মেয়াদ শেষে নির্ধারিত পরিমাণ অর্থ পরিশোধের প্রতিশ্রুতি প্রদান করে। [১]
অন্যদিকে এই ক্যাটাগরিতে রয়েছে অন্য বাকি সকল ধরনের ইন্সুরেন্স গুলো। এসব ইন্সুরেন্স জীবন বীমার থেকে অন্য রকম এবং প্রতিটি কিছু স্পেসিফিকে ক্ষেত্র বিশেষে ব্যবহার হয়ে থাকে। নিম্মে এগুলো নিয়ে একেক করে ধারনা দিচ্ছি।
মূলত আগুনে পুড়ে কোনো সম্পত্তির ক্ষতি হয়ে থাকলে সেটি পূরনের জন্য যে বীমাচুক্তি করা হয়েছিলো, ইন্সুরেন্স কোম্পানি সেটির ক্ষতিপূরণ প্রদান করলে সেটিকে অগ্নি বীমা বলা হবে। এটা সাধারণত এক্সিডেন্টিয়াল আগুন লাগার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হয়ে থাকে।
যে বা যারা সমুদ্র পথে আমদানি রপ্তানি মূলক কার্যক্রম করে বা শিপিং সার্ভিস প্রদান করে তাদের জন্য বিশেষ ভাবে যে বীমা চুক্তি নির্ধারন করা হয়েছে সেটিকেই নৌ বীমা বলে। এক্ষেত্রে সমুদ্রে চলমান কোনো জাহাজ যে কোনো বিপদ কিংবা ক্ষতির সম্মুখীন হলে তার ক্ষতিপূরণ প্রদানের প্রত্যাশা ইন্সুরেন্স কোম্পানি দিয়ে থাকে।
মানুষের স্বাস্থ্য সংক্রান্ত বিষয়ে যে বীমা চুক্তি করা হয় সেটিকে স্বাস্থ্য বীমা বলে। মূলত মানুষের অসুস্থতার কথা হলফ করে বলা যায় না, তাছাড়া যেকোনো হঠাৎ ঘটে যাওয়া এক্সিডেন্ট বা দুর্ঘটনার সম্মুখীন হলে সেটিকে মোকাবিলা করার জন্য আর্থিক সক্ষমতা প্রাপ্তির আশায় কোনো ব্যক্তি যদি ইন্সুরেন্স কোম্পানিকে নিদিষ্ট হারে প্রিমিয়াম প্রদান করে তবে সেটিকে স্বাস্থ্য বীমা হিসেবে আখ্যায়িত করা হবে। স্বাস্থ্য বীমার ক্ষেত্রে কেবল মানুষের জীবিত থাকা অবস্থায় চিকিংসা সংক্রান্ত বিষয়ের জন্যই দেয়া হয়।
মোটর গাড়ি, প্রাইভেট গাড়ি সহ যানবাহনের ক্ষতি হলে তার ক্ষতিপূরণের প্রত্যাশায় ইন্সুরেন্স কোম্পানি গ্রাহকের কাছে যে প্রিমিয়াম গ্রহন করে যার পরিবর্তে উক্ত ঘটনা ঘটলে যে আর্থিক সাহায্য দিবে তাই মোটর বীমা। মোটরগাড়ির মালিকদের বাধ্যতামূলক এই বীমা করতে হয় যা ১৯৫৬ সালের আইন অনুযায়ী নির্ধারন করা হয়েছে।
অনেকেই আছে যারা ভ্রমণ করতে পছন্দ করে বা প্রতিনিয়ত ভ্রমণ করে থাকে। এক্ষেত্রে ভ্রমণের সময় অনেক অঘটন ঘটে যায়। মূলত ভ্রমণের সময় অপ্রত্যাশিত ঘটনার ফলে ক্ষতি হয়ে থাকলে তার ক্ষতিপূরণ মূলক যে চুক্তিতে দুই পক্ষ আবদ্ধ হয় সেটিই ভ্রমণ বীমা হিসেবে পরিচিত। যেসব ঘটনার জন্য এই বীমা কার্যকর হয় সেগুলো হলো: ট্রিপ বাতিল, লাগেজ হারানো, চুরি, একটি মেডিকেল সমস্যা বা এমনকি বিমান হাইজ্যাকের মাধ্যমে হওয়া ক্ষয় ক্ষতি।
গৃহ বা বাড়ি বা বাসার মালিক ও বীমাকারী প্রতিষ্ঠানের মধ্যে হওয়া চুক্তি যার মাধ্যমে বীমা ক্রয়কারী (বাড়ির মালিক) একটি নিদিষ্ট প্রিমিয়াম প্রদানের মাধ্যমে এই প্রতিসুতি গ্রহন করে যে, কারো দ্বারা কিংবা প্রাকৃতিক ভাবে উক্ত বাড়ির কোনো ক্ষতিসাধন হলে বীমা কোম্পানি সেই ক্ষতিপূরণ প্রদান করবে।
যদি কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের সম্পদ চুরি বা ডাকাতি জনিত কারনে কোনো ক্ষতিসাধন হলে তার ক্ষতিপূরণ দেয়ার অঙ্গিকার দেয়ার জন্য বীমা কোম্পানি উক্ত ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান থেকে যে প্রিমিয়াম গ্রহন করে তাকে অপহরণ বীমা ক্যাটাগরিতে রাখা হয়। কোনো ব্যক্তির উপর অপরহন বীমা থেকে থাকলে এবং সেই ব্যক্তিকে অপহরণ করা হলে তার জন্য যে মুক্তিপ্রাণ দাবী করা হয় তা বীমা কোম্পানি প্রদান করবে।
বীমা কোম্পানি আপনাকে আপনার ক্ষতিপূরনের জন্য অর্থ প্রদান করে থাকবে তো ঠিক কিন্তু তার জন্য তাদের পক্ষ থেকে বেশ কিছু শর্ত প্রদান করাও থাকবে। এগুলোকে অনেকটা রুলস বলাও যেতে পারে। মূলত ইন্সুরেন্স কোম্পানি কতৃক ক্ষতিপূরণ প্রদানের কিছু শর্ত থাকে। এসব শর্ত গুলো নিম্মে উল্লেখ্য করা হলো।
১) নিদিষ্ট ক্ষয়ক্ষতিঃ আপনি যদি একটি গাড়ির ইন্সুরেন্স করিয়ে থাকেন তবে সেটা একটি নিদিষ্ট সেক্টরের উপরেই করে থাকবেন। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, আপনি যদি একটি গাড়িতে আগুন লাগা সংক্রান্ত ইন্সুরেন্স করেন তবে সেটি হবে অগ্নি বীমা। কিন্তু কোনভাবে যদি আপনার গাড়িটি চুরি হয়ে যায় তবে কিন্তু ইন্সুরেন্স কোম্পানি তার জন্য ক্ষতিপূরণ দিবে না। আপনার গাড়িটি যদি আগুনে দগ্ধ হয়ে ক্ষতিসাধন হত তবেই কেবল ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি উক্ত ক্ষতিপূরণ প্রদান করত।
২) দুর্ঘটনাজনিত ক্ষতিঃ আপনি যদি কোন বস্তু বা ব্যক্তির উপর বীমা করে থাকেন দুর্ঘটনা সংক্রান্ত এবং উক্ত দুর্ঘটনা ঘটে থাকে তবে আপনাকে বীমা কোম্পানি তার ক্ষতিপূরণ দিতে বাধ্য থাকবে তবে তার তদন্ত যদি কোনভাবে এটার প্রমান মিলে যে সেটা দুর্ঘটনা নয় বরং পরিকল্পিত বা কারো হাত রয়েছে তবে বীমা কোম্পানি ক্ষতিপূরণ প্রদান করবে না।
৩) বৃহৎ আকারের ক্ষতির সাপেক্ষে অবশ্যই তা বীমা গ্রহীতার দিক থেকে যৌক্তিক হতে হবে। ১০ টাকার জিনিসের জন্য ক্ষতি ২০ টাকা দেখানো হলে সেটা গ্রহণযোগ্যতা পাবে না।
৪) ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ যত বেশি হোক না কেন, বীমা প্রিমিয়াম এর পরিমাণ অবশ্যই বীমা গ্রহীতার নাগালের মধ্যে হতে হবে বা পরিশোধযোগ্য সামর্থের মধ্যে হতে হবে।
৫) ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ অবশ্যই পরিমানযোগ্য হতে হবেঃ যেহেতু সবধরনের ক্ষতি পুষিয়ে দেওয়া যায় না এবং বীমা কোম্পানি শুধুমাত্র টাকার অঙ্কে ক্ষতিপূরণ দিতে পারে তাই সম্ভাব্য ক্ষয়ক্ষতি টাকার অঙ্কে পরিমাপ করতে হবে।
৬) প্রাকৃতিক মহাদূর্যোগের ক্ষেত্রে ক্ষতিপূরণের পরিমাণ সীমিত হবেঃ যেমনঃ বন্যা বা ভূমিকম্পের ফলে যে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়, বীমা কোম্পানিগুলো এই পরিমাণ ক্ষতিপূরণ দেওয়া থেকে বিরত থাকে কারণ এত ব্যাপক পরিমাণ ক্ষতিপূরণ কোনো একক বীমা কোম্পানির পক্ষে দেওয়া সম্ভব হয় না।
অনেকেই ইন্সুরেন্স বীমা সুবিধা সমূহ জানতে আগ্রহী তাদের জন্য নিম্নে কিছু সুবিধার আলোকপাত করা হলো:
১) ইন্সুরেন্স জীবন এবং সম্পদের নিরাপত্তা প্রদান করে। যেকোনো পরিস্থিতিতে যে কোনো ক্ষতি সাধন হলে ইন্সুরেন্স প্রিমিয়াম এর মাধ্যমে তার ক্ষতিপূরণ পাওয়ার প্রতিশ্রুতি প্রদান করে।
২) ইন্সুরেন্স মূলধন সৃষ্টি করে। যখন বীমা গ্রহীতা ভবিষ্যৎ সম্ভাব্য ক্ষতিপূরণ প্রাপ্তির আশায় ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অংশে সঞ্চয়ের ন্যায় বীমা প্রিমিয়াম পরিশোধ করে তখন তা ইন্সুরেন্স কারী প্রতিষ্ঠান অন্যান্য ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের কাছে সেটিকে মূলধন হিসেবে হস্তান্তর করেন। যার দ্বারা উক্ত ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান মূলধন সংগ্রহ করতে পারে।
৩) বিমাকে অনেকেই বৃদ্ধ বয়সের সম্বল হিসেবে আখ্যায়িত করে কেননা জীবনে এমন পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হতেই পারে যেখানে কর্মক্ষম ভাবে জীবন যাপন করতে হচ্ছে তখন আর্থিক নিরাপত্তা জন্য বীমা সুবিধা প্রদান করে।
৪) ইন্সুরেন্স মূলত মানসিক প্রশান্তি প্রদান করে। কেননা যখনই কোনো কাজ বা কোন বস্তুর উপরে অনিশ্চয়তা বা ঝুঁকির মানসিকতা কাজ করবে না তখন উক্ত বিষয়ে চিন্তা মুক্ত ভাবে জীবন পরিচালনা করা যাবে। আর চিন্তামুক্ত অনুভূতিকেই এখানে প্রশান্তি হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে।
৫) ইন্সুরেন্স মুদ্রাস্ফীতি হ্রাস করে, কারণ এটি অর্থ সংগ্রহের পর সেটিকে জমিয়ে রাখে না বরং বিভিন্ন স্থানে বিনিয়োগের মাধ্যমে উক্ত অর্থে বৃদ্ধি করতে কার্যক্রম চালিয়ে যায়।
৬) বীমা সর্বদা সামাজিক নিরাপত্তা প্রধানের প্রতিশ্রুতি দিয়ে থাকে।
আপনি কিভাবে একটি ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি থেকে পছন্দের যেকোন বীমা করবেন সেই বিষয়ে অবশ্যই জানা জরুরী। এক্ষেত্রে আপনি প্রথমেই বীমাকারী প্রতিষ্ঠান এর বিক্রয় প্রতিনিধি অথবা তাদের ওয়েবসাইট থেকে গ্রাহকের জন্য নির্ধারিত বিভিন্ন প্রকল্প পরিকল্পনা সম্পর্কে ধারণা নিতে পারেন বা অবহিত হতে পারেন। আপনার যদি সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়ে যায় যে আপনি কোন বিমানটি গ্রহণ করবেন তবে পছন্দমত বীমাকারী প্রতিষ্ঠানে গিয়ে উক্ত প্রতিষ্ঠানে উক্ত বীমার জন্য নির্ধারিত ফরমে আবেদন করতে হবে। এক্ষেত্রে আপনি যদি না জেনে থাকেন কিভাবে বিভিন্ন ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি গুলোতে কিভাবে ইন্সুরেন্স আবেদন করতে হয় তবে উক্ত লিংকে ক্লিক করুন।
আবেদন ফরম পূরণ করার পর উক্ত ফরমের সাথে আপনাকে নির্দিষ্ট কিছু ডকুমেন্টস সাবমিট করতে হবে। কি কি ডকুমেন্টস বীমা করতে প্রয়োজন হয় সেগুলো নিম্নে বলে দেওয়া হয়েছে। এই পর্যায়ে বীমাকারী প্রতিষ্ঠান প্রতিনিধিরা আপনার ডকুমেন্টস যাচাই-বাছাই করবে।
বিমাকারী প্রতিষ্ঠান থেকে সিদ্ধান্ত গ্রহণের পর আপনি বীমার জন্য উপযুক্ত হলে এই পর্যায়ে আপনাকে প্রিমিয়াম পরিশোধ করতে হবে। বীমা প্রিমিয়াম পরিশোধের পর বীমা প্রতিষ্ঠান F.P.R. এর মাধ্যমে চুক্তি চূড়ান্ত ভাবে সম্পন্ন করবে।সবশেষে বীমা প্রতিষ্ঠান কর্তৃক এফ ডি আর সম্পাদনের পর গ্রাহককে বীমা দলিল সংগ্রহ করতে হবে।
প্রতিটি অফিসিয়াল কাজের ক্ষেত্রেই ভেরিফিকেশনের জন্য বেশ কিছু ডকুমেন্টস সাবমিট করতে হয়। এবং বীমার মত দীর্ঘমেয়াদী অর্থায়নের ক্ষেত্রে অবশ্যই বেশ কিছু কাগজপত্র প্রয়োজন হবে। সেটা ডকুমেন্টস গুলো হলো:
পরিশেষে বলা যায়, ইন্সুরেন্স খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রকল্প সকল ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের জন্য, এটা যে কেবল আমাদের জীবন যাত্রাকে প্রশান্তি দেয় তা না, বরং তার পাশাপাশি এটা দেশের অর্থনীতিতে ব্যাপক ভুমিকা পালন করে এবং জীবন যাত্রার মানকে উন্নত করে। আপনি যদি ইন্সুরেন্স কি সেই বিষয়ে জানার পর ইন্সুরেন্স সম্পর্কে আরো বিস্তারিত জানতে চান, পাশাপাশি কোন প্রতিষ্ঠানের ইন্সুরেন্স ডিল কি রকম সেই বিষয়েও সঠিক তথ্য চান তবে বাংলা আলো ওয়েবসাইটের ইন্সুরেন্স সিরিজ অনুসরণ করতে পারেন।
শরীর ভালো তো মন ভালো” ছোটবেলা থেকে আমরা এই কথায় অভ্যস্ত হলেও ঠিকঠাকভাবে মানতে নারাজ। মানসিক সুস্থতা ও শারীরিক স্বাস্থ্য…
লাললালালালালালালালালালালালালালালালালালালালা যদি বারে বারে একই সুরে প্রেম তোমায় কাঁদায়তবে প্রেমিকা কোথায় আর প্রেমই বা কোথায়?যদি দিশেহারা ইশারাতে প্রেমই ডেকে যায়তবে…
ফুটবল বিশ্বকাপকে কেন্দ্র করে পুরো দেশে সবুজায়নের পদক্ষেপ নিয়েছে কাতার সরকার। বাংলাদেশি নার্সারি ব্যবসায়ীরাও অংশ নিচ্ছে সবুজায়ন প্রকল্পে। কাতারে ফুটবল…
এআইয়ের সাহায্যে সরু রাস্তার নির্দেশনাও দেখতে পারবেন চালকরা কোনো নির্দিষ্ট স্থানে কুয়াশা ও বন্যার পানি রয়েছে কি-না, তা গুগল ম্যাপসের…
রাগের কারণে আপনার কর্মজীবনেও প্রভাব পড়ে একটুতেই রেগে যান? রাগের মাথায় প্রিয়জনকে কটূ কথা বলে আফসোস করতে হয়? এবার একটু…
সম্পর্ক হতে হবে পারস্পরিক শ্রদ্ধা এবং দুদেশের জনগণের সম্মতির ভিত্তিতে ১. ইসলামপন্থি কিংবা জঙ্গিরা নয় সম্প্রতি যে আন্দোলনের মুখে শেখ…
This website uses cookies.