ঈদ মানে খুশি, ঈদ মানে আনন্দ৷ ঈদের আনন্দ বহুগুণে বেড়ে যায় যখন ঈদের নামাজ পড়তে যেয়ে দেখা হয় পরিচিতদের সাথে৷ ঈদের আনন্দ বহুগুণে বৃদ্ধি করা ঈদের নামাজ পড়ার সঠিক নিয়ম আমরা বেশিরভাগ মানুষ জানিনা৷ আজকে এ লেখনীতে ঈদের নামাজ পড়ার সঠিক নিয়ম সম্পর্কে জানবো৷
ঈদের নামাজ পড়ার সঠিক নিয়ম
ঈদের নামাজের প্রস্তুতি গ্রহণ: ঈদের নামাজের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করা রাসূল (সা:) এর সুন্নাহ এর অন্তর্ভুক্ত৷ মহানবীর জীবনী বিশ্লেষণ করে দেখা যায় ঈদের নামাজ পড়ার উদ্দেশে সকাল বেলা গোসল করা, সুগন্ধি মাখানো রাসূল (সা:) এর ঈদের নামাজের প্রস্তুতি গ্রহণের আমল৷
ঈদুল ফিতরের নামাজ আদায় করতে যাবার পূর্বে হালকা কিছু খাওয়া আর ঈদুল আযহার ক্ষেত্রে নামাজ আদায় করে কোরবানির পর কিছু খাওয়া হচ্ছে এ সম্পর্কিত ইসলামিক আদব৷
ঈদের নামাজের জন্য পোশাক নির্বাচন: ঈদের নামাজ আদায়ের জন্য পোশাক নির্বাচনে আমরা বেশ সতর্কতা অবলম্বন করে থাকি৷ ঈদ উপলক্ষে কেনা পোশাক ই পরে আমরা সাধারণত ঈদের নামাজ আদায় করি৷ তবে, এ ক্ষেত্রে ইসলামি শরীয়াহ এর মতামত হচ্ছে ঈদের নামাজ পড়তেপড ইচ্ছুক ব্যক্তির থাকা সবচেয়ে ভালো পোশাক পরে সে নামাজ আদায় করতে যাবে৷ নতুন পোশাক হতে হবে এরকম কোন বাধ্যবাধকতা না থাকলেও পোশাক পরিস্কার থাকা বাঞ্ছনীয়৷
খোলা/উন্মুক্ত আকাশের নিচে ঈদের নামাজ আদায়: ঈদের নামাজ আদায় করার জন্য খোলা বা উন্মুক্ত মাঠ রাসূলের সুন্নাহ৷ রাসূল (সা:) সাহাবীদের নিয়ে খোলা মাঠে ঈদের নামাজ আদায় করেছেন৷ তবে, বৃষ্টির জন্য বা অন্যকোন কারণে মসজিদের ভেতরেও ঈদের নামাজ আদায় করা জায়েয রয়েছে৷
খুতবা পাঠ: ঈদের নামাজের পূর্বে ইমাম কর্তৃক মুসুল্লীদের উদ্দেশে খুতবা পাঠ করবেন৷ আরবী ও বাংলায় ইমাম জুমার নামাজের মতন খুতবা দিতে পারেন৷ এ সময়ে মুসুল্লীরা চুপচাপ ইমাম সাহেবের ঈদের খুতবা শুনবেন৷
কিভাবে ঈদের নামাজ পড়তে হয়
ঈদের নামাজের নিয়্যত: ঈদের নামাজের জন্য আলাদা করে মুখে নিয়্যত করা জরুরী নয়৷ তবে যদি কেউ নিয়্যত করতে চায় তবে বলবে, দুই রাকাআত ওয়াজিব নামাজ অতিরিক্ত ৬ তাকবিরের সঙ্গে এই ইমামের পেছনে কেবলামুখী হয়ে আল্লাহর জন্য আদায় করছি৷ অতপর আল্লাহু আকবার বলে হাত বাধবে৷
ঈদের নামাজ পড়ার সঠিক নিয়ম: ঈদের নামাজ অন্যান্য সময়ের নামাজের থেকে ভিন্নতর পন্থায় আদায় করা হয়ে থাকে৷ আর এ কারনে আমাদের ঈদের নামাজ পড়ার সঠিক নিয়ম সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা থাকা বাঞ্ছনিয়৷
অন্যান্য নামাজের সাথে ঈদের নামাজের পার্থক্য হলো অতিরিক্ত ৬টি তাকবির দিতে হয়। অর্থাত অন্যান্য নামাজের শুরুতে কেবল তাকবীর দেওয়া হলেও দুই ঈদের নামাজে প্রথম রাকআতে অতিরিক্ত তিনবার তাকবীর বা আল্লাহু আকবার, দ্বিতীয় রাকআতেও অতিরিক্ত তিনবার আল্লাহু আকবার বলে ঈদের নামাজ আদায় করতে হবে৷
প্রথম রাকাআতের শুরুতে ‘আল্লাহু আকবার’ বলে হাত বেঁধে অতিরিক্ত তিন তাকবির (আল্লাহু আকবার) দেবার পর সানা পড়ে সুরা ফাতিহা পড়া শুরু করতে হবে। এরপর অন্যান্য সময়ের মতনই রুকু, সেজদা আদায় করে প্রথম রাকআত শেষ হবে৷
প্রথম রাকাআতের সেজদা থেকে উঠে দ্বিতীয় রাকাআতে সুরা ফাতিহা ও আরেকটি সুরা পড়ার পর অতিরিক্ত তিনবার তাকবির অর্থাত ‘আল্লাহু আকবার’ বলতে হবে৷ তৃতীয়বার আল্লাহু আকবার বলার পর রুকতে যেতে হবে৷ রুকু শেষে সেজদা ও শেষ বৈঠকে বসে তাশাহুদ, দুয়া মাসুরা পড়ে সালাম ফিরিয়ে ঈদের দুই রাকআত নামাজ শেষ করতে হবে৷
নামাজ শেষে ঈদ মোবারক বলা: ঈদের নামাজ শেষে পরিচিত, অপরিচিত যে কাউকেই ঈদ মোবারক বলার ও কোলাকুলি করার প্রচলন আমাদের সমাজে রয়েছে৷ যদিও ইসলামের দৃষ্টিতে ঈদের নামাজের পর এরূপ কোন আচার – অনুষ্ঠান নেই৷
পরিশেষে
সাধারণ নামাজ থেকে নিয়মে ভিন্নতা ও বছরে মাত্র দু’বার পড়া হয় বিধায় ঈদের নামাজ পড়ার নিয়ম আমরা ভুলে যাই৷ এ আর্টিকেলে ঈদের নামাজ পড়ার সঠিক নিয়ম তুলে ধরা হয়েছে যা সকলের উপকারে আসবে৷