এলার্জি শব্দটার সাথে আমরা কম বেশি সকলেই পরিচিত। খুবই সাধারণ তবে খুব মারাত্নক রোগটি সম্পর্কে এবং এলার্জির চুলকানি দূর করার উপায় সম্পর্কে জানা প্রতিটা মানুষের জন্য খুব জরুরি। কেননা এটা শুনতে অনেকটা সাধারণ হলেও এলার্জির প্রভাবে শরীরের বিভিন্ন স্থানে ভয়াবহ রকমের যন্ত্রনা করা শুরু হয়ে যায়। বাংলা আলো ওয়েবসাইটের পক্ষ থেকে সুস্বাস্থময় জীবনের ধারাবাহিকতায় এবার থাকছে “এলার্জি চুলকানি দূর করার উপায়” সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য যেখানে জানানো হবে এলার্জির খুঁটিনাটি, দেয়া হবে ঘরোয়া ভাবে বিভিন্ন স্থানের এলার্জি ভালো হওয়ার টিপস এবং প্রতিকার ও প্রতিরোধে গ্রহনীয় কিছু ব্যবস্থা ও ব্যাসিক ঔষধের সম্পর্কে। আর গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি সহজে বুজতে এবং সচেতনতা বৃদ্ধি করতে অবশ্যই পুরো আর্টিকেলটি মন দিয়ে পড়ুন। শুরু করতে যাচ্ছি এলার্জি সম্পর্কে প্রাথমিক ধারনা প্রদানের মাধ্যমে।
এলার্জি কি এবং এলার্জি চুলকানি হওয়ার কারন
এলার্জি শব্দটি প্রথম পাওয়া গেছে গ্রিক শব্দ Allos ও Ergos এর সমন্ধয়ে, যেখান থেকে তৈরি করা হয়েছে Allergy এবং আমরা যদি এর বাংলা অর্থের দিকে দৃষ্টিপাত করি – এলার্জির আভিধানিক বাংলা অর্থ হলো পরিবর্তিত প্রতিক্রিয়া। বিষয়টিকে আরেকটু ভেংগে বলি, আমরা সব সময় খাবার গ্রহন করি, রাস্তায় ধুলাবালি, ফুলের রেণুর সংস্পর্শে আসা, অসুখ হলে ঔষধ গ্রহন করি – এর ফলে যে আমাদের শরীরের প্রভাব জনিত ব্যাপার ঘটতে থাকে যেখানে প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে। আর তখনই সেই মুহুর্তকে স্বাভাবিক ভাবে এলার্জি বলে থাকি।
সাধারণ ভাবে শরীরের বিভিন্ন ক্রিয়া চলমান অবস্থায় থাকাকে আমরা সেটাকে ইমিউন সিস্টেম বলে আখ্যায়িত করি, এবং যখন এই ইমিউন সিস্টেমে বাধা সৃষ্টি হয় বা কোনো প্রকার সমস্যার সম্মুখীন হয় তখনই সেটা এলার্জি সংক্রান্ত পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া দেখানো শুরু করে থাকে।
এলার্জি রয়েছে সবারই, এবং ক্ষেত্র বিশেষে কারো বেশি কম। এটা অনেকটা নিজেদের জীবন যাপনের ধরনের উপর নির্ভর করে থাকে। তবে তা যাই হোক না কেনো, এলার্জি যে সকলের কাছে বিরক্তি এবং ভয়াবহ ব্যাপার এই বিষয়ে কোনো মতবিরোধ নেই।
এলার্জি চুলকানির কারন
আমাদের শরীরে থাকা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ক্ষতিকর জিনিস থেকে শরীরকে সুস্থ রাখার জন্য বেশ কিছু ব্যবস্থা গ্রহন করে থাকে। এবং মাঝে মাঝে এমন কিছু বস্তুকেও ক্ষতিকর হিসেবে ধরে বসে থাকে যা মূলত শরীরের জন্য ক্ষতিকর নয়, মূলত সেই অবস্থায় যে শরীরের বাহ্যিক অংশে যে প্রতিফলন দেখা দেয় সেটাই এলার্জি। এলার্জি মূলত শরীরের চামড়ার উপর হয়ে থাকে, নিদিষ্ট স্থান লাল হয়ে যাওয়া, ফুলে যাওয়া এমনকি চুলকাতে থাকাও। নিম্মে এর কিছু কারন উল্লেখ্য করছি।
১) এলার্জির প্রথম ও প্রধান শত্রু হলো ধুলোবালি, যখন মানুষ ধুলোবালির সংস্পর্শে আসে ঠিক তখনই সেখানে থাকা মাইট (ছোট পোকা যা খালি চোখে দেখা যায় না, চামড়ার মৃতকোষগুলো বিছানা, কার্পেট, সোফায় পড়ে থাকে – সেগুলো খেয়েই বেঁচে থাকে) নামক জীবাণু শরীরে প্রবেশ করে এবং এই জীবাণুটিই ৬০ শতাংশ এলার্জি সৃষ্টি করে মানব শরীরে। বিশেষ করে যারা হাপানি রোগের আক্রান্ত তাদের জন্য বেশ ভয়াবহ পরিবেশ হলো এটি।
২) বেশ কিছু খাবারের কারণে এলার্জি সমস্যা হয়ে থাকে। সেগুলোর মধ্যে উল্লেখ্যযোগ্য কিছু খাবার হলো: গরুর মাংস, চিংড়ি, ইংলিশ, গরুর দুধ ও বিভিন্ন সবজি। যার কারণে যখন এলার্জির প্রভাব শরীরের লক্ষনীয় হয় তখন এই জাতীয় খাবার থেকে দূরে থাকতে হবে।
৩) বিশেষ করে যাদের হাঁপানি রোগ রয়েছে তাদের জন্য বেশ কিছু উপাদান এলার্জির বিক্রিয়া ঘটাতে পারে সে উপাদানগুলো হলো: দূষিত বাতাস, ফুলের পরাগ, ধোয়া, কাঁচা রং এর গন্ধ, পুরনো ফাইলে জমে থাকা ধুলোবালি ইত্যাদ।
৪) আমরা জানি ছত্রাক যেকোনো খাবার কে নষ্ট বা দূষিত করে ফেলে। বিশেষ করে শুকনা জাতীয় খাবারে ছত্রাকের মাত্রা বেশি হয়ে থাকে। যাদের হাঁপানি রয়েছে বা ইতিমধ্যেই এলার্জির সংস্পর্শে অনেকবার এসেছে এমন ব্যক্তি এই জাতীয় ছত্রাকের সংস্পর্শে আসলে জিৎ সমস্যা বা চুলকানি ব্যাপক হারে লক্ষ্যণীয় হবে।
৫) তাছাড়া যেকোনো দুর্বল রোগের চিকিৎসার জন্য ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়াই বিভিন্ন প্রকার মেডিসিন, অ্যান্টিবায়োটিক গ্রহণ করে থাকে। এগুলোর মাত্রা যথাযথভাবে প্রয়োগ না করার ফলে শরীরে স্বাভাবিকভাবেই প্রতিক্রিয়া লক্ষণীয় হয় যাকে আমরা এলার্জি নামে আখ্যায়িত করব। তাহলে বলা যায় পরামর্শ গ্রহণের কারণে এলার্জি হয়।
এলার্জি হলে কিভাবে বুঝবেন?
স্বাভাবিকভাবে চুলকানি জাতীয় সমস্যাকে এলার্জি হিসেবে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হয়। তবে স্বাভাবিক চুলকানি বিভিন্ন কারণেই হতে পারে। বিষয়টি কখনো এরকম নয় যে চুলকানি হলেই সেটা এলার্জি হিসেবে বিবেচিত হবে। যখন ধুলাবালির সংস্পর্শে আসা, ফুলের ঘ্রাণ নেয়া, খাবারের মধ্যে গরুর মাংস, চিংড়ি, গরুর দুধ, হাঁসের ডিম,এবং বিভিন্ন ধরনের সবজি খাওয়ার পরে, ধীরে ধীরে শরীরের বিভিন্ন স্থানে চুলকানি শুরু হওয়া, চামড়া লাল হয়ে যাওয়া এবং লাল হয়ে যাওয়া অংশ ধীরে ধীরে ফুলে উঠলে নাক এবং চোখ চুলকাতে শুরু করলে বুঝতে হবে আপনার অ্যালার্জি জনিত সমস্যা রয়েছে এবং তার প্রকাশ করছে। এমতাবস্থায় দ্রুত এলার্জি চুলকানি দূর করার ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে হতে পারে সেটি মেডিসিন গ্রহণ অথবা ঘরোয়া কোন পদ্ধতি অবলম্বন করা। এই পর্যায়ে বিভিন্ন স্থানে অ্যালার্জির সমস্যা দেখা দিলে সেটা দূর করার উপায় কি সেই বিষয়ে বিস্তারিত জানানোর চেষ্টা করেছি।
এলার্জি জনিত চুলকানি দূর করার উপায়
ইতিমধ্যেই আমরা বলেছি এলার্জি জনিত চুলকানি কেন দেখা দেয় এবং এটা হলে শরীরের কি কি পরিবর্তন ঘটে সেই সম্পর্কে এবার এমতাবস্থায় যদি হয়ে যায় তাহলে পরবর্তী করণীয় কী হবে সে বিষয়ে জানাবো। শরীরের বিভিন্ন স্থানে এলার্জি সংক্রান্ত চুলকানি হতে পারে, এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো: চোখ, মুখ এবং শরীরের যে কোন স্থান। যদিও থেকে প্রতিটি ক্ষেত্রেই সিমিলারিটি রয়েছে তবুও ক্ষেত্রবিশেষে কিছুটা পার্থক্য রয়েছে। তাই নিম্নে প্রতিটির জন্য আলাদা আলাদাভাবে এলার্জি দূর করার সহজ এবং নির্ভরযোগ্য উপায় সম্পর্কে জানাচ্ছি।
চোখের এলার্জি দূর করার উপায়
চোখের এলার্জির ক্ষেত্রে সাধারণত দুই ধরনের সমস্যা দেখা দেয়। প্রথমটি সিজনাল, বারোমাসি। জার্মানি এইযে প্রথমটি হলো এমন এলার্জি যেটা কিনা নির্দিষ্ট কারণে হয়ে থাকে কিছু সময়ের জন্য যন্ত্রণা প্রদান করে। বিশেষ করে শরৎকাল ও বসন্ত কালে সিজনাল চোখের এলার্জি হয়ে থাকে। এই সময়ে গাছ থেকে যে পরাগ রেণু বাতাসে ছড়িয়ে পড়ে সেটি চোখের সংস্পর্শে আসে এবং এই কারণেই চোখের এলার্জি ভাবটা প্রকাশ পায়।
অন্যটি বারোমাসি, এটি মূলত সারাবছরই থেকে থাকে এটার মূল কারণগুলো ধুলোবালি, পাখির পালক, গায়ের লোম, বিভিন্ন ধোয়া, ক্লোরিন, কসমেটিক্স, পারফিউম ইত্যাদি। এই সকল উপাদান যখন চোখের সংস্পর্শে আসে তখন চোখের এলার্জি ভাব প্রকাশ পেয়ে থাকে। যেহেতু এই সকল উপাদান আমরা সারা বছরই ব্যবহার করে থাকে তাই এগুলো ফলে সৃষ্টি হওয়া চোখের এলার্জি ভাবতে বারোমাসি বলা হয়।
যখন চোখের এলার্জির ভাব দেখা যায় তখন চোখ লাল হয়ে যায়, চোখে চুলকানি হওয়া এবং অনবরত পানি পড়া লক্ষণীয় হয়, এটা মনে হয় যে চোখের ভেতর কোন ময়লা জমে আছে যার কারণে বারবার চুলকানির সমস্যা দেখা দেয়। এবং সবচেয়ে বাজে ব্যাপার হলো এই সকল ঘটনার কারণে চোখ ভয়াবহ রকমের ফুলে লাল হয়ে যায়।
চোখের এলার্জির সমস্যা দূর করার জন্য যে পদ্ধতি গুলো রয়েছে সেটা খুবই সহজ এবং ঘরোয়া উপায়ে সেগুলো করা যেতে পারে। এবার একেক করে সেই উপায় গুলো বলছি।
গোলাপ জল
শুনলে অবাক হবেন গোলাপজলের প্রভাবে চোখের এলার্জির সম্পূর্ণরূপে দূর করা সম্ভব। এক্ষেত্রে গোলাপের ভেজানো জল পানি দুই থেকে তিন ফোটা চোখের ভেতরে প্রবেশ করাতে হবে। গোলাপ জল চোখে দেওয়ার পর কিছুক্ষণ চোখ বন্ধ করে রাখতে হবে এবং খেয়াল রাখতে হবে আমি পুরো যেন বেরিয়ে না যায়। গোলাপ জল চোখের ভেতরে ইনফেকশন গুলো প্রতিরোধ করবে এবং বেশ কয়েকবার এমনটা করলে চোখ শীতল হবে এবং চোখ ফোলা লাল হয়ে যাওয়া অথবা চুলকানি বেশ কিছুটা কমে আসবে।
লবণ পানি
চোখের এলার্জি দূর করনের লবণ পানির ভূমিকা রয়েছে অন্যতম এ কাজে আপনাকে যা করতে হবে তা হলো প্রথমেই একটি গ্লাস ভর্তি পানিতে তিন চার চামচ পরিমাণ লবণ নিয়ে সেটিকে 20 মিনিট ফুটাতে হবে। লবণ পানি ফুটানোর শেষ হলে প্রথমে ঠান্ডা করে নিতে হবে। এই পর্যায়ে একটু গ্রুপ পরিষ্কার তুলা অথবা স্বচ্ছ কাপড় দিয়ে ভিজিয়ে চোখের কোণে তে মুছে দিতে হবে, যাতে করে চোখের ভেতরে থাকা ময়লা বেরিয়ে আসতে পারে। এবং ধিরে ধিরে এটা করে যেতে হবে। কিছু ক্ষন এমনটা করতে থাকলে চোখের ফুলে থাকা ভাব ও লাল হওয়া কমে যাবে। এবং বেশ কিছু সময়ের মধ্যেই চোখের ভেতরের জীবাণু গুলোও ধংস হয়ে যাবে।
ঠান্ডা পরিষ্কার পানি
এটা খুব বেশি পরিচিত একটা পদ্ধতি, যখনই চোখ জনিত কোন সমস্যা হয়ে থাকে – হোক সেটা চোখে ময়লা যাওয়া অথবা চোখ লাল হয়ে যাওয়া। আমরা তাৎক্ষণিকভাবে চোখে স্বচ্ছ ঠান্ডা পানি প্রবেশ করিয়ে সেটিকে আরাম দেয়ার চেষ্টা করে থাকে এবং একই কাজ করতে হবে চোখের এলার্জির ভাব দেখা দিলে।
আমলকি ও মধু মিশ্রন
এই পর্যায়ে যে উপায়টি বলবো সেটা বাহ্যিক প্রয়োগ নয় বরং ভেতরে গ্রহণ করা। আমলকির পাউডার এখন সব স্থানেই পাওয়া যায়। যা করতে হবে তা হলো, প্রতিদিন রাতে আমলকির পাউডারের সাথে মধু মিশিয়ে খেতে হবে নিয়ম করে। কিছুটা অনিয়ম হলেও সমস্যা নেই তবে এতে করে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায় এবং শরীরকে এলার্জি মুক্ত করে ফেলে।
সায়েনি
সায়েনি চোখের ময়লা দূর করার পাশাপাশি শরীরের রক্ত চলাচল উন্নত করে এবং টক্সিন রিলিজ করে থাকে। এটা দেখতে অনেকটা মরিচের মত। এটাকে অনেকেই হার্বের সাথেও তুলনা করে থাকে। মূলত চোখের এলার্জি ভাব দূর করনে সায়েনির ভুমিকাও রয়েছে বেশ।
মুখের এলার্জি দূর করার উপায়
বিশেষ করে শীতকাল এলেই ত্বকে নানা ধরনের সমস্যা দেখা দেয় এর মধ্যে অন্যতম হল কাউকে এলার্জির প্রভাব। এই পর্যায়ে জানাবো মুখে এলার্জি লক্ষণ দেখা দিলে সেটি দূর করার উপায়। আমরা জানি এনার্জি বিভিন্ন স্থানে হতে পারে এবং ক্ষেত্রবিশেষে এক একটি বিশেষ উপায় অবলম্বন করতে হয়। তার সুবাদে চোখের জন্য যেগুলো আছে সেগুলো মুখের জন্য ব্যবহার করতে পারবেন না এবং ব্যবহার করলেও সেটা কার্যকর হবেনা। তাই এবার মুখে এলার্জি দূর করার উপায় গুলো জানাচ্ছি।
নারিকেল তেল
এটা খুব কার্যকর ভাবে কাজ করে শিশুদের ত্বকের ক্ষেত্রে যদি কোন শিশুর মুখে এলার্জির প্রভাব লক্ষণীয় হয় তবে নিরাপদ এবং ঘরোয়া উপায় হিসেবে নারিকেল তেল ব্যবহার করা শ্রেয়। আক্রান্ত স্থানে নারিকেল তেল লাগিয়ে রাখতে হবে প্রায় 30 মিনিটের মত। এবং পরে হালকা গরম পানি দিয়ে উক্ত স্থান ধুয়ে নিতে হবে। অবশ্যই প্রথমবারে এটা ঠিক হবে না একই প্রসেসে চার থেকে পাঁচবার করলে এলার্জি চুলকানি থেকে রেহাই পাওয়া সম্ভব।
তুলসী পাতা
তুলসী পাতায় রয়েছে অ্যান্টি-ইনফ্লামেটরি নামক উপাদান যা মুখের চুলকানি দূর করতে সম্ভব। ডেকেছে পদ্ধতি হলো একমুঠো তুলসী পাতা নিয়ে ভালোভাবে ধুয়ে নিন, পাতাগুলো ভালোভাবে পেস্ট করে নিন। আক্রান্ত স্থানে উক্ত পেস্ট করা তুলসী পাতা গুলো লাগে ৩০ মিনিটের মত রেখে দিন। এ ক্ষেত্রে কিছুটা স্বস্তি মিলবে এবং দিনে কয়েকবার একই কাজ করতে হবে।
অ্যালোভেরা
প্রাকৃতিক ভাবে ঔষুধ ও আন্টি-ইনফ্ল্যামেটরি থাকার কারনে অ্যালোভেরা জেল বেশ অনেক কিছু ক্ষেত্রেই কার্যক্রর ভুমিকা পালন করে থাকে। এটা যেকোনো ক্ষত স্থানে প্রশান্তি ও স্বস্তি প্রদান করে থাকে। মূলত অ্যালোভেরা এর মাধ্যমে মুখ অথবা ত্বকের যেকোনো স্থানের আলার্জি ভাব দূর করা সম্ভব। এক্ষেত্রে অ্যালোভেরা জেল উক্ত স্থানে রেখে ৩০ মিনিটের মত রেখে ধুয়ে ফেলতে হবে।
অলিভ অয়েল
অলিভ অয়েলের মধ্যে প্রচুর ভিটামিন ই রয়েছে যা যেকোনো ক্ষত ও চুলকানি সংক্রান্ত ব্যাপার তেলের মাধ্যমে হ্রাস পেয়ে থাকে। এক্ষেত্রে পদ্ধতি হলো উক্ত স্থানে মাখিয়ে দিতে হবে এবং বেশ কিছু সময় ধরে সেখানে রাখতে হবে। ধিরে ধিএ চুলকানি কমে আসবে।
ত্বক বা চর্ম এলার্জি দূর করার উপায়
১) শুষ্ক ত্বকে চুলকানির পরিমাণ বেশি হওয়ার কারণে সাবান ব্যবহারের পরিমাণ কমিয়ে আনতে হবে অথবা ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী নির্দিষ্ট সাবান ব্যবহার করতে হবে।
২) পলিস্টার ও উলের কাপুড় চুলকানি বাড়িয়ে দিতে পারে যার কারণে হালকা সুতির কাপড় পরিধান করতে হবে।
৩) অতিরিক্ত গরমে ঘামের ফলে চুলকানি বেড়ে যেতে পারে এক্ষেত্রে ঠান্ডা ও শুষ্ক আবহাওয়ায় থাকতে হবে।
৪) গরম পানিতে গোসল করার অভ্যাস যদি থেকে থাকে তবে তা পরিবর্তন করতে হবে।
৫) আপেল সিডার ভিনেগার – আমরা অনেকেই এটাকে ওজন কমানো ও হজমের সমস্যা দূর করার জন্য সেরা একটি উপায় হিসেবে বিবেচনা করি তবে এটা শুধুমাত্র উক্ত কাজে করে নাই তার পাশাপাশি ত্বকের এলার্জি ভাব হ্রাস করনেও কাজ করে। এক কাপ গরম পানিতে ১ টেবিল চামচ ভিনেগার মিশিয়ে নিন এবং স্থানে বেশি এলার্জি চুলকানি রয়েছে সেখানে মিশিয়ে রাখুন, আরাম মিলবে।
৬) যেহেতু ত্বকে এলার্জি চুলকানি ভাব আনার ক্ষেত্রে ধুলোবালি খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে সে ক্ষেত্রে এটাকে দূর করার জন্য আপনার আশেপাশের বস্তু ও পরিবেশকে সব সময় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে।
৭) ঠান্ডা থেকেও এলার্জির সমস্যা দেখা দিতে পারে এক্ষেত্রে বৃষ্টিতে ভেজা অথবা পুকুরে গোসল করা থেকে বিরত থাকতে হবে।
৮) নিত্য প্রয়োজনীয় এবং ব্যবহৃত বিভিন্ন উপাদান যেমন সাবান শ্যাম্পু ফেসওয়াশ সুগন্ধীতে থাকার কেমিক্যাল এর কারণে এলার্জি সমস্যা হতে পারে তাই সেগুলোর ব্যবহারে অবশ্যই সচেতন থাকতে হবে।
এলার্জি দূর করার ওষুধ
এলার্জি খুব সেনসিটিভ একটি বিষয় তাই এই বিষয়ে অনলাইন থেকে ঔষুধের সাজেশন নেওয়ার কখনই ঠিক নয়। এমন বেশ কিছু সুবিধা রয়েছে যেগুলোর পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ার ফলে এলার্জির মাত্রা বৃদ্ধি পেতে পারে।
মূলত এলার্জির সমস্যা দূর করার জন্য অ্যান্টিহিস্টামিন জাতীয় ঔষধ গ্রহন করা হয়ে থাকে। এরকম ওষুধগুলো বিভিন্ন মাধ্যমে পাওয়া পাওয়া যেতে পারে। যেমন: টেবলেট, সিরাপ, ড্রপ। অনেক সময় নাক বন্ধ থাকার সমস্যার জন্য যে ড্রপ গুলো দেওয়া হয় সেগুলো 7 দিনের বেশি সময় ব্যবহার করার নিয়ম নেই যদি এর পরবর্তী কোন সময় এটা ব্যবহার করা হয় তবে এলার্জির লক্ষণ আবার ফিরে আসতে পারে।
তাছাড়া বেশ কিছু রয়েছে যেগুলো ব্যবহারের মাধ্যমে চোখের এলার্জির ভাব কমে যায়। চুলকানির সমস্যায় ক্যালামাইন লোশন ও ১% মেন্থল ক্রিম খুব ভালো কাজ করে। তবে করার জন্য বলা হতে পারে বর্তমানে জনপ্রিয় এবং বহুল ব্যবহৃত এলার্জি দূর করার ঔষধ হিসেবে পরিচিত নাম গুলো নিম্মরূপ:
- Cetizin
- Loratin
- Alatrol
- Desloratadine
- Fexofenadine
এলার্জি চুলকানি দূর করার উপায় সংক্রান্ত কিছু প্রশ্ন ও উত্তর
১) এলার্জি কি ছোঁয়াচে রোগ এটা কি ধরার জন্য ছড়িয়ে থাকে?
এটি মোটেও ছোঁয়াচে রোগ নয়, আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা যখন কোন বস্তুকে ক্ষতিকারক হিসেবে চিহ্নিত করে কিন্তু মূলত সেটি খুব ক্ষতিকারক নয় তবে তার প্রতিক্রিয়ার ফলে শরীরে এলার্জির লক্ষণ দেখা দেয়।
২) এলার্জি জাতীয় ঔষধ বেশি খেলে কি সমস্যা হতে পারে?
মূলত যে কোনো ওষুধই মাত্রা অতিরিক্ত গ্রহণ করা ঠিক নয় তবে এলার্জির ক্ষেত্রে যে সকল ঔষধ ব্যবহার করা হয় সেগুলো যদি অতিরিক্ত মাত্রায় সেবন করা হয় তবে ইনফেকশন, গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা, বদহজম, হাড় ক্ষয়, ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপের মত সমস্যার সম্মুখীন হতে পারে।
৩) এলার্জির কারনে কি শ্বাসকষ্টের সমস্যা হতে পারে?
হ্যা হতে পারে, এক্ষেত্রে অ্যাজমার মত যদি শ্বাসতন্ত্রের রোগ থাকে তবে রোগের মাত্রা আরো বৃদ্ধি পেতে পারে।
পরিশেষে কিছু কথা
এই ছিলো এলার্জি চুলকানি দূর করার উপায় যেখানে দেহের বিভিন্ন স্থানের এলার্জি চুলকানি হওয়ার কারন, প্রতিরোধ ও প্রতিকারের উপায় গুলো জানানো হয়েছে। সম্পূর্ণ বিশ্বস্ত ও নিরাপদ ঘরোয়া উপায়ের পাশাপাশি মেডিক্যাল মাধ্যমও বলা হয়েছে। তবে মেডিক্যাল মেথড ব্যবহারের ক্ষেত্রে অবশ্যই পূর্বে ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহন করতে হবে। এমনই বিভিন্ন সমস্যার সমাধানের জন্য অনুসরন করুন বাংলা আলো ওয়েবসাইটের স্বাস্থ টিপস ক্যাটাগরিটি। সুস্থ থাকুন, সুস্থ রাখুন।
–