কচু শাক রান্না-উপকারিতা ও কচুর চাষ পদ্ধতি
কচু শাক চিনে না এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া যাবে না।
আপনি কি জানতে চান কচু শাকের জানা অজানা গুণাবলি সম্পর্কে?
চারপাশে চেনা অচেনা, অনেক ধরনের গাছপালা দিতে সংগঠিত আমাদের এই পৃথিবী। এই সকল উদ্ভিদের মধ্যে কিছু যেমন উপকারী আবার ঠিক তেমনি করে কিছু আবার বেশ অপকারি। আমরা ঠিক কয়জনইবা উপকারী উদ্ভিদের গুনাবলি সম্পর্কে জানি? অনেক উদ্ভিদের এমন অনেক গুণাবলি রয়েছে যা মানুষের অনেকটা জানার বাইরে। তাই নিজেদের জন্য উপকারী কিংবা অপকারী উদ্ভিদ সম্পর্কে জেনে রাখা আমাদের কর্তব্য।
আমাদের সকলের পরিচিত এবং জনপ্রিয় একটি উদ্ভিদ হলো কচু। কচু গাছকে আমরা প্রায় সকলে চিনে থাকি। রাস্তার পাশে, ঝোপ ঝাঁড়ে,মাঠের আশেপাশে নিজের অজান্তে বেড়ে উঠে এই গাছ। অনেকে আবার কচু গাছ বাণিজ্যিকভাবে চাষাবাদ করে থাকে। বাণিজ্যিকভাবে চাষাবাদকৃত কচু বিক্রির মাধ্যমে আয় করে নিজের স্বচ্ছলতা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে।
কচু শাক
একটি কচু গাছের সবচেয়ে উপকারি অংশ হল কচু শাক।কচু শাক পছন্দ করে না এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া যাবে না। ব্যবহারিক নানাবিধ গুণাবলি এর কারণে কচু শাক বয়সভেদে আমাদের সকলের পছন্দের একটি শাক হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে।
কচু শাক রান্না
কচু শাক রান্না আমাদের সকলের প্রিয় একটি খাবারের নাম। কচু শাক রান্না পছন্দ করেন, এমন মানুষের খুব কমই দেখা মেলে । কিন্তু আপনি কি জানেন কিভাবে রান্না করতে হয় কচু শাক? চলুন জেনে নেই কচু শাক রান্নার সঠিক রেসেপিটি।
উপকরণ
- কচু শাক(পরিমাণমতো)।
- পেঁয়াজ কুচি(২ টেবিল চামচ)।
- রসুন কুচি (২ টেবিল চামচ)।
- কাঁচা মরিচ( ৩ থেকে ৪ টি)।
- চিংড়ি মাছ(৩ থেকে ৪ টি)।
- মরিচ গুড়ো (হাফ চামচ)।
- হলুদ গুড়ো (হাফ চামচ)।
- পানি এক কাপ।
- তেল(পরিমাণমতো)
- লবন(স্বাদমতো)
প্রথমেই পরিমাণ মতো কচু শাক ভালো মতো ধুয়ে সিদ্ধ করে ফ্রিজে রেখে দিন। কিছুক্ষণ পর তা নামিয়ে ফেলুন। এক কড়াইতে তেল(পরিমাণমতো) গরম করে নিন। তেল গরম হলে আপনি সামান্য পেয়াজকুচির(২ টেবিল চামচ)সাথে, রসুন কুচি (২ টেবিল চামচ)সাথে ৪ টা মরিচ সহ ভেজে নিন। হালকা ভাজা হয়ে গেলে পরিমাণমতো চিংড়ি মাছ( ৪ টি) একসাথে ভেজে নিন।
ভাজা হয়ে গেলে তার সাথে পরিমাণ মতো হলুদ গুড়া (হাফ চামচ), মরিচ গুড়া(হাফ চামচ) সেই সাথে পানি দিয়ে আপনাকে এক কাপ পানি দিয়ে কষিয়ে ঝোল বানিয়ে ফেলতে হবে। কিছুক্ষণ পর সেই সিদ্ধ করে কচু শাখ দিয়ে ভালোমতো রান্না করতে হবে। বার বার নাড়িয়ে দেখতে হবে যে হয়েছে কিনা। সর্বশেষ সিদ্ধ হয়ে গেলে তা উপরে উঠে আসলে আপনার রান্না হয়ে গেছে। রান্নাকৃত কচু শাক নামিয়ে গরম গরম ভাতের সাথে পরিবেশন করুন।
কচু (Taro)গাছ ইংরেজি
কচু আমাদের মধ্যে সকলের পরিচিত একটি গাছ। অনেকের কচু খেয় থাকলেও কচুর জনপ্রিয় একটি অংশ হল তার শাক।তাই কচুর শাক হিসেবে সকলে খেয়ে থাকে।কচু একটি বাংলা নাম হলেও কচুর ইংরেজি নাম হল Taro ।
এটি একটি ভারতীয় বংশোদ্ভোত গাছ। মূলত ভারতীয় দীপপুঞ্জের দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার মধ্যে কচু গাছের আদিনিবাস বলে ধারণা করা হয়।
কচু (Taro) শাকে কি এলার্জি আছে
কচু শাক আমাদের সকলের কাছে খুবই পছন্দের একটি শাক। কচু শাক রান্না খেতে পছন্দ করে থাকে কম বেশি সবাই। কিন্তু অনেকের ক্ষেত্রে কচু শাক খাওয়ার ফলে নানাবিধ এলার্জি সমস্যা দেখা দেয়।
চলুন তাহলে জেমে নেই কচু শাক খেলে কি কি ধরনের এলার্জি সমস্যা দেখা যায়-
- অনেকের ক্ষেত্রে কচু শাখ কিংবা কচুকাটতে গেলে হাতে চুলকানি ভাব দেখা দেয়।
- কচু শাক খাওয়ার ফলে শরীর ফোলা ভাব দেখা যায়।
- এই শাখ খাওয়ার ফলে শরীরে নানা ধরণের খোস পাচড়া হতে দেখা যায়।
- শাক খাওয়ার ফলে চোখ ফোলা ভাব দেখা যায়।সেই সাথে শরীর জ্বালাপোড়ার মতো সমস্যা দেখা যায়।
এই সকল এলার্জি জনিত সমস্যা দেখা যায় কচু শাক খাওয়ার ফলে।
কচু শাকের উপকারিতা
কচুশাকের রয়েছে বেশ কিছু উপকারি দিক। চলুন তাহলে জেনে নেই …
- কচুশাকে বিদ্যমান রয়েছে আয়রণ। যা আমাদের শরীরে রক্তশূন্যতা প্রতিরোধ করতে ভূমিকা পালন করে থাকে।
- এতে রয়েছে ভিটামিন এ। যা আমাদের রাতকানা রোগের সমস্যা সমাধানে বেশ পালন করে।
- এই শাকে রয়েছে ফাইবার কিংবা আশ যা আমাদের খাবার হজম করতে করে থাকে।
- কচুশাকে রয়েছে ভিটামিন সি।যা আমাদের শরীরে ভিটামিন সি এর অভাব পূরন করতে ভূমিকা পালন করে থাকে।
- আমাদের শরীরে বিদ্যমান অক্সিজেনের অভাব পূরন করতে ভূমিকা পালন করে।
- আমাদের দাঁত এবং হাঁড় গঠনে ভূমিকা পালন করে।
- কচু শাক গর্ভবতী মা ও শিশুর বৃদ্ধি ও বিকাশে ভূমিকা পালন করে।
- কচুশাক শরীরে কোলেস্টেরল এর অভাব পূরণ করতে সাহায্য করে।যা উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত রোগীদের ক্ষেত্রে ভূমিকা পালন করে থাকে।
কচু শাকের অপকারিতা
বহু উপকারী সম্পন্ন কচু শাকের রয়েছে বেশ কিছু অপকারিতা। কচু শাকের অপকারিতা সম্পর্কে চলুন জেনে নেই।
- কচু শাকে বিদ্যমান রয়েছে অক্সলেট নামক পদার্থ। কচু শাক খাওয়ার ফলে তাই শরীরের মধ্যে চুলকানির সমস্যা দেখা দিয়ে থাকে।
- শাক খাওয়ার ফলে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা দেখা দিয়ে থাকে।
- এই শাক খাওয়ার ফলে নানা ধরণের এলার্জি জনিত সমস্যা দেখা দেয়।
Best Fishing Blog Visit Now
কচুর চাষ পদ্ধতি
কচু বেশ পুষ্টিকর এবং উপকারি খাবার। তাই অনেকেই বাণিজ্যিকভাবে কচু চাষ করে থাকে।চলুন জেনে নেই কচুর চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে-
মাটি নির্বাচন
কচু চাষ করতে হলে আপনাকে কচুর জন্য পরিমিত পরিমাণ মাটি নির্বাচন করতে হবে।যেহেতু কচু উচু ভূমি কিংবা নিন্মভূমি সব ভূনিতে হয়ে থাকে।তাই পলি দোঁ আশ এবং এটেল মাটি কচু চাষের জন্য নির্বাচন করতে হবে।
কচুর জাতঃ
আপনি কচু চাষের আগে তার জাত নির্বাচন করে নিতে হবে।কচুর জনপ্রিয় এবং ফলনশীল একটি জাতের মধ্যে অন্যতম হল পানি কচু।তাই কচু চাষের জন্য এই জাত নির্বাচন করা শ্রেয়।
রোপনের উত্তম সময়
মূলত বাংলা মাস হিসেবে করে রোপন করতে হবে কচু।তাই বাংলা বৈশাখ মাসের মধ্যে , কার্তিক মাসে নতুবা ফাল্গুন মাসে কচু লাগানোর উত্তম সময় হিসেবে বিবেচিত হয়।
চারা রোপনের নিয়ম
কচু চাষের জন্য মূলত চারা রোপন করতে হবে।প্রথমে ছোট ছোট কচি চারা সমূহ সংগ্রহ করে সেই চারাগুলো রোপন করতে হবে।চারা রোপনের জন্য সারি থেকে সারির দূরত্ব হতে হবে ৬০ সেন্টিমিটার এবং চারা থেকে চারার মধ্যে বিদ্যমান দূরত্ব হতে হবে ৪৫ সেন্টিমিটার।
মূলত কচুর চারাসমূহ ভেজা মাটি এবং যেকোনো ছায়াযুক্ত স্থানে রোপন করতে হবে। কাদামাটিতে একদম গভীরে গিয়ে কচুর চারা রোপন করতে হবে।
সার পদ্ধতি
কচুর চারা রোপনের ২০ থেকে ২৫ দিনের মধ্যে মূলত সার রোপন করতে হবে।ইউরিয়া,গোবর, টিএসপি ২ থেকে ৩ কিস্তিতে প্রয়োগ করে নিতে হবে।
কচু গাছের পরিচর্যা
কচু গাছে মাঝে মাঝে সার প্রদান করতে হবে। সারের পাশাপাশি আগাছা পরিষ্কার করে দিতে হবে।অনেক সময় কচু গাছের গোড়ায় পানি জমে থাকে।তাই যাতে পানি জমে না থাকে সেই জন্য আপনাকে মাটির থেকে পানি সরানোর ব্যবস্থা করতে হবে।
এছাড়াও অনেক সময় কচুর খেতে নানা ধরণের কিটনাশক এর প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়।তাই পোকা মাকড়ের প্রাদুর্ভাব কমাতে কিটনাশক প্রয়েগ করতে হবে।
Like Best Shoes Review Visit Now
কচুর ফলন সংগ্রহ
সাধারণত কচু রোপনের ১৪০ থেকে ১৮০ দিনের মধ্যে কচুর ফলন সংগ্রহ করতে হবে।একটি চারা রোপন করে ১০-১৫ দিনের মধ্যে কচুর লতি সংগ্রহ করে নিতে হবে।সঠিক পরিচর্যা করলে একটি কচু ক্ষেত থেকে আনুমানিক ৩-৫ টন কচু সংগ্রহ করা যায়।এছড়াও কচুর লতি সংগ্রহ করা যায় ১.৫ থেকে আনুমানিক ২ টন।
উপসংহার
নানাবিধ গুণসম্পন্ন উপকারি হল কচু।কচু আমাদের সকলের পছন্দের খাবার হলেও এর মধ্যে বিদ্যমান রয়েছে নানা ধরণের গুণাবলি।তাই নিয়মিত কচু শাক আমাদের খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করা উচিত।