কনফেকশনারি ব্যবসার আইডিয়া || শুরু থেকে শেষ অব্দি

0
90

আসসালামু আলাইকুম। আশা করি আল্লাহর ইচ্ছায় সবাই ভালো আছেন। আমাদের দৈনন্দিনের খাদ্য তালিকার মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছে কনফেকশনারি বা বেকারি খাবারের আইটেমগুলো। এসব খাবার খেতে খেতে যদি আপনার মনে হুট করে ব্যবসার আইডিয়া চলে আসে তবে এই আর্টিকেলটি আপনার জন্যই। আজকে কনফেকশনারি ব্যবসার আইডিয়া নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব ইনশাআল্লাহ।

কনফেকশনারি ব্যবসা আইডিয়া বুঝতে হলে আমাদেরকে ধাপে ধাপে অনেক কিছু বুঝতে হবে। যেমন: কনফেশনারী ব্যবসার জন্য দোকান কোথায় নেওয়া হবে? দোকানের আকার আকৃতি কেমন হবে? যে স্থানে কনফেকশনারি ব্যবসা প্রতিষ্ঠা করা হবে সেখানকার মানুষজনের রুচির অবস্থা কেমন? দোকানে ডেকোরেশন কনফেকশনারি খাবারের উৎপাদন এবং খাবারের মান কেমন হবে? প্রভৃতি বিবেচনা করা একান্ত জরুরী। তাই সব গুলো একেক করে ভালো ভাবে বুঝে নিবো এখান থেকে। তাহলে চলুন আমরা ধাপে ধাপে বিষয়গুলো জেনে নেই। 

ধাপে ধাপে কনফেকশনারি ব্যবসার আইডিয়া

কনফেকশনারি ব্যবসার জন্য সঠিক পরিকল্পনা প্রণয়ন করুন 

শুধুমাত্র কনফেশনারী ব্যবসার ক্ষেত্রে নয় বরং যেকোনো ব্যবসার ক্ষেত্রে পরিকল্পনা প্রণয়ণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। ভুল পরিকল্পনার কারণে আপনার সমস্ত শ্রম ও অর্থ সব কিছু একেবারে ধূলিস্যাৎ হয়ে যেতে পারে।

তাই সঠিক পরিকল্পনা প্রণয়ন করতে হবে আপনাকে। ব্যবসার মূলধন ও স্থান, মানুষের জীবন যাত্রার মান প্রভৃতি এ পরিকল্পনার আওতার মধ্যে পড়ে। আমরা সেগুলো সামনে জানবো ইনশাআল্লাহ।

ব্যবসার জন্য মূলধন নির্ধারণ করুন 

যেকোন ব্যবসার জন্য মূলধন নির্ধারণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। কনফেকশনারি ব্যবসার আইডিয়া বোঝার ক্ষেত্রে আপনাকে মূলধন নির্ধারণ এর বিষয়টা ভালোভাবে বুঝে নিতে হবে। 

বর্তমান সময়ের প্রেক্ষাপটে আপনি যদি একটি ছোটখাটো কনফেকশনারি  ব্যবসা দিতে চান তাহলে চার থেকে পাঁচ লক্ষ টাকা যথেষ্ট। ব্যবসার এই মূলধন গুলো আপনি বিনিয়োগ করবেন বিভিন্ন ধাপে ও বিভিন্ন পর্যায়ে।

যেমনঃ দোকানে ডেকোরেশনের জন্য কিছু টাকা রাখবেন, কনফেকশনারি খাবার পণ্যগুলোর জন্য কিছু টাকা রাখবেন, তার পাশাপাশি অন্যান্য জিনিসও রাখার চেষ্টা করবেন যাতে মানুষ আকৃষ্ট হয়। 

কনফেকশনারি ও বেকারি খাবারের উৎপাদন খরচ, দোকানের ডেকোরেশন এর খরচ, দোকানের বিদ্যুৎ সংযোগ, প্রয়োজনে গ্যাস ও পানির সংযোগ ইত্যাদি এ বিষয়গুলো আপনাকে বিবেচনা করতে হবে। আর আপনি কনফেকশনারি ব্যবসা যখন দিবেন তখন কয়েক মাসের জন্য কস্ট বেনিফিট এনালাইসিস (Cost Benefit Analyses) করে নিবেন।

কস্ট বেনিফিট এনালাইসিস বা CBA হল ব্যবসার জন্য লাভ হওয়ার আগ মুহূর্ত পর্যন্ত আর্থিক খরচের একটি হিসাব। এই হিসাবের মধ্যে আছে আপনার কনফেকশনারি ব্যবসা প্রতিষ্ঠার সমস্ত কিছুর আর্থিক বিবরণ। এমনকি ব্যবসা দেওয়ার প্রথম কয়েক মাস দোকান ভাড়া সহ আপনি কিভাবে খরচ গুলো করে লাভের দিকে এগিয়ে যেতে পারেন; সে বিষয়টাও কস্ট বেনিফিট এনালাইসিস প্রক্রিয়ায় আলোচনা করা হয়। 

কনফেকশনারি ব্যবসার আইডিয়া এর ক্ষেত্রে কস্ট বেনিফিট এনালাইসিসটা করে নিবেন। এর ফলে প্রথমে আপনার টাকা পয়সা খরচ হলেও আপনার ভিতরে হতাশা জাগবে না ইনশাআল্লাহ। কারণ আপনি প্রথম কয়েক মাস দোকান ভাড়া সহ যাবতীয় বিভিন্ন খরচের হিসাব ধরে রেখেছেন, যা মূল আপনার কনফেকশনারি ব্যবসার বিনিয়োগেরই একটা অংশ।

আপনাকে সে খরচ গুলো বহন করে লাভের দিকে এগিয়ে যেতে হবে ধৈর্য্য সহকারে। তাই কস্ট বেনিফিট এনালাইসিস কে গুরুত্ব দিতে হবে কনফেকশনারি ব্যবসার ক্ষেত্রে। শুধুমাত্র কনফেকশারি ব্যবসার ক্ষেত্রেই নয়; বরং যে কোনো ব্যবসার ক্ষেত্রেই কস্ট বেনিফিট এনালাইসিস গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়।

কনফেশনারি ব্যবসার জন্য উপযুক্ত স্থান নির্ধারণ 

সফল ব্যবসার জন্য নির্বাচন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। কারণ সব জায়গায় সব ব্যবসার জন্য উপযুক্ত নয়। যেমনঃ গ্রামের প্রত্যন্ত অঞ্চলে যদি বড় বড় প্রাইভেট কার বিক্রয় সংক্রান্ত ব্যবসা শুরু করা হয়; তাহলে সে ব্যবসা লস খাওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। 

কারণ, প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলের মানুষের জীবনযাত্রা গাড়ি কেনার জন্য সাধারণত উপযুক্ত থাকে না। এই বিষয়গুলো আপনাকে উপলব্ধি করতে হবে। কনফেশকশনারির ব্যবসা করার জন্য আপনাকে বাজার সংলগ্ন কোন স্থান বাছাই করে নিতে হবে দোকান দেওয়ার জন্য। 

কেননা বাজারে বিভিন্ন ধরনের লোকদের আনাগোনা প্রচুর থাকে এবং সেখানে বিক্রি হওয়ার সম্ভাবনাও তুলনামূলক বেশি থাকে। এছাড়া শহরাঞ্চলে রানিং রোড গুলো বা রানিং রোড সংলগ্ন বিভিন্ন গলিতে আপনি এই ব্যবসা দিতে পারেন যেখানে মানুষ পর্যাপ্ত পরিমাণে বিচরণ করে। 

তাই কনফেশনচরি ব্যবসা আইডিয়া নির্ধারণ করার ক্ষেত্রে স্থান নির্বাচন আপনাকে বুঝে শুনে করতে হবে। উপযুক্ত স্থান নির্বাচন করতে পারলে এ ব্যবসা থেকে  প্রচুর পরিমাণে লাভ করতে পারবেন ইনশাআল্লাহ।

কনফেকশনারি ব্যবসার জন্য উপযুক্ত ডেকোরেশন করুন 

কনফেকশনারি ব্যবসা করার জন্য আপনাকে উপযুক্ত ডেকোরেশন করতে হবে। যেমনঃ ডিসপ্লে করার জন্য কিছু স্পেশাল শো-কেস রাখতে হবে আর সেটা দোকানের সম্মুখভাগে রাখতে হবে। এছাড়াও আরও কিছু শো-কেস আশপাশে দেয়াল সংলগ্ন হতে পারে। 

দোকানের এই ডিসপ্লে গুলো যাতে আকর্ষণীয় হয় সে বিষয়টা আপনাকে লক্ষ্য রাখতে হবে এবং ডিসপ্লের মধ্যে পর্যাপ্ত লাইটিংয়ের ব্যবস্থা রাখতে হবে যাতে ভেতরে থাকা কনফেকশনারি আইটেমগুলো মানুষ স্পষ্ট ভাবে দেখতে পারে। 

এছাড়া আর একটি উত্তম কাজ হল ডিসপের মধ্যে কনফেকশনারি খাবার গুলোর প্রত্যেকটার দাম আলাদা আলাদাভাবে লিখে রাখা। যাতে মানুষ সহজে দাম গুলো বুঝতে পারে।

পাশাপাশি অন্যান্য পণ্য‌ও‌ দোকানে রাখুন 

মানুষের চাহিদা বিবেচনা করে কনফেকশনারি আইটেমের পাশাপাশি অন্যান্য আইটেমও দোকানে রাখতে পারেন। সেটা হতে পারে কিছু কসমেটিক আইটেম এবং বিভিন্ন ধরনের কোল্ড ড্রিংকস। 

তবে তেমন চাহিদা না থাকলে এগুলো না রাখাতে কোন সমস্যা নেই। আপনি শুধুমাত্র কনফেকশনারি খাবার আইটেমগুলো নিয়েই আপনার ব্যবসা করে যেতে পারেন।

কখনোই মানহীন কনফেকশনারি আইটেম নিয়ে ব্যবসা করবেন না 

বর্তমানে একটা জিনিস দেখা যায় যা খুবই দুঃখজনক আর তা হলো কনফেকশনারি আইটেমগুলো অধিকাংশই স্বাস্থ্যসম্মত প্রক্রিয়ায় তৈরি হয় না এবং স্বাস্থ্যসম্মত প্রক্রিয়ায় সেগুলো বিক্রয়ের জন্য সংরক্ষণ করা হয় না। এছাড়া একদিনের খাবার অন্যদিন কৌশলে চালিয়ে দেয়া হয়। এসব বাসি খাবার মানব স্বাস্থ্যের জন্য বড় হুমকিস্বরূপ।

আপনি সফল হতে চাইলে এ কাজগুলো থেকে অবশ্যই বিরত থাকবেন। ভেজালে সয়লাবের এই সময়ে আপনি যদি ভালো এবং স্বাস্থ্যসম্মত কনফেকশনারি আইটেম মানুষের কাছে পৌছাতে পারেন, তাহলে মানুষ আপনাকে বিশেষভাবে মনে রাখবে এবং আপনার ব্যবসা সফলতার উপর টিকে থাকবে ইনশাআল্লাহ। 

তাই আপনি যেখান থেকে কনফেকশনারি আইটেম গুলো সংগ্রহ করবেন সেটা যেন স্বাস্থ্যসম্মত হয় পণ্য যাতে ভেজাল না থাকে। খাবারে যাতে কোন প্রকার জাতীয় কোন পদার্থ মিলনা না হয় এগুলা খেয়াল রাখবেন। 

এছাড়া কৃত্রিম বিভিন্ন রং এবং বাসি-পঁচা খাবার বিক্রয় করা থেকেও আপনাকে বিরত থাকতে হবে। টাটকা এবং বিশুদ্ধ কনফেকশনারি খাবার পণ্য উৎপাদন এবং তাকে তাদের হাতে পৌঁছানোর ক্ষেত্রে আপনাকে বদ্ধপরিকর থাকতে হবে।

কনফেকশনারি আইটেমগুলো কি কি রাখতে পারেন? 

কনফেকশনারির এই খাবার আইটেমগুলো বিভিন্ন ধরনের হয়ে থাকে সবগুলোর চাহিদা এক সমান নয়। কোন কনফেকশনারি পণ্যের চাহিদা খুব বেশি এবং কোন প্রবণের চাহিদা মধ্যম আবার কোন কোন পন্যের চাহিদা কম।

সবচেয়ে বেশি চাহিদা সম্পন্ন কিছু কনফেকশনারি আইটেম হলো পাউরুট, বিস্কুট, কেক ইত্যাদি। এছাড়া বার্গার, পেস্ট্রি, স্যান্ডউইচ, পিজাসহ বিভিন্ন ফাস্টফুড আইটেমের চাহিদাও প্রচুর রয়েছে। তাই এই বিষয়গুলো আপনাকে ভালোভাবে বিবেচনা করতে হবে।

কনফেকশনারি ব্যবসায় কোন খাতের আনুমানিক কত খরচ ধরবেন? 

এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় অনেকের মানে এ বিষয়ে প্রশ্ন জাগতে পারে যে, কোন খাতে আসলে কত টাকা বরাদ্দ রাখতে হবে কনফেকশন এর ব্যবসার ক্ষেত্রে?

যদি আপনাকে এ বিষয়ে আইডিয়া দিতে বলা হয়, তাহলে বলতে পারি যে, আপনি দোকান ভাড়া এবং অ্যাডদডভান্স এর জন্য এক থেকে দেড় লক্ষ টাকা ধরতে পারেন ছোট কনফেকশনারি ব্যবসার ক্ষেত্রে। 

এছাড়া কনফেকশনারি পণ্য এবং অন্যান্য আনুষঙ্গিক কারো পন্যের জন্য ধরতে পারেন আরো এক থেকে দেড় লক্ষ টাকা। 

দোকান ডেকোরেশনের জন্য দিতে পারেন এক লক্ষ টাকা। আর এছাড়া অন্যান্য টুকটাক কাজের জন্য থাকতে পারেন আরো ৫০ হাজার টাকার মত। 

সব মিলিয়ে চার থেকে পাঁচ লক্ষ টাকার মধ্যে ছোটখাটো কনফেকশনারি ব্যবসার আইডিয়া আপনি করে ফেলতে পারেন। মনে রাখবেন যে কনফেকশনারি ব্যবসা একটি লাভজনক ব্যবসা। কেননা এ পণ্যের প্রচুর চাহিদা রয়েছে বর্তমানে। 

বর্তমানে চায়ের দোকান থেকে শুরু করে বড় বড় বিভিন্ন দোকানে এ কনফেকশনারি এবং বেকারি আইটেম গুলো পাওয়া যায়। মানুষের নিকট এই বেকারি আইটেমগুলো খুবই জনপ্রিয়।

কনফেকশনারি ব্যবসার জন্য ট্রেড লাইসেন্স করে নিন 

আপনার যদি কনফেকশনারি ব্যবসার ক্ষেত্রে নিজের একটা ব্র্যান্ড করার ইচ্ছা থাকে, তাহলে আপনাকে অবশ্যই ট্রেড লাইসেন্স করতে হবে। ট্রেড লাইসেন্স খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় নিজের একক একটি ব্র্যান্ড প্রতিষ্ঠার জন্য। 

তাই আপনি ব্যবসা শুরু করার পর নিজের ব্যবসা জন্য ব্র্যান্ডিং করার জন্য ট্রেড লাইসেন্স করে নিতে পারেন। এতে আপনার ব্যবসায়ের গ্রহণযোগ্যতা এবং পরিচিতি এবং তার পাশাপাশি সফলতা বৃদ্ধি পাবে ইনশাআল্লাহ।

উপরের আলোচনা থেকে আমরা কনফেকশনারি ব্যবসা করার আইডিয়া বিষয়ে কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জানলাম। আপনি যদি সঠিক পরিকল্পনা প্রণয়ন করে পর্যাপ্ত পরিমাণে মূলধন বিনিয়োগের মাধ্যমে মানসম্মত পণ্য মানুষের নিকট পৌঁছানোর জন্য বদ্ধপরিকর থাকেন, তাহলে এ ব্যবসা আপনার জন্য উপযুক্ত। নিজের আলাদা ও বিশেষ পরিচিতি এবং ব্র্যান্ডিং এর জন্য ট্রেড লাইসেন্স করে নিতে পারেন।

কনফেকশনারি ব্যবসা করার জন্য স্থান নির্বাচনের বিষয়টিও খুব গুরুত্বপূর্ণ যা আলোচনা করা হয়েছে। এই বিষয়গুলো মাথায় রেখে যদি আপনি সৎভাবে ব্যবসা চালিয়ে যেতে পারেন, তাহলে এ ব্যবসা থেকে আপনি বড় সফলতা লাভ করতে পারবেন ইনশাআল্লাহ। 

মন্তব্য 

আজকে এই পর্যন্তই ছিল কনফেকশনারি ব্যবসার আইডিয়া সংক্রান্ত এই আর্টিকেল। আশা করি পরিষ্কার একটা ধারণা পেয়ে গেছেন কিভাবে এই ব্যবসাটি করতে হয় সে বিষয়ে। এমনই আরো অন্যান্য ব্যবসার আইডিয়া জানতে অনুসরণ করুন বাংলা আলো ওয়েবসাইটের ব্যাবসা সংক্রান্ত ক্যাটাগরিটি। ধন্যবাদ। 

Visited 18 times, 1 visit(s) today

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here