কাঠ বাদাম চাষ পদ্ধতি ও কাঠ বাদাম এর উপকারিতা
কাঠ বাদামের নাম শুনেনি এমন মানুষ অনেক কমই পাওয়া যাবে ৷ কাঠ বাদাম এশীয় অঞ্চলের ফল ৷ জানা যায় ইরান হচ্ছে এর উৎপত্তিস্থল ৷ বাদামের ইংরেজি নাম হচ্ছে Almond আর কাঠ বাদামের ইংরেজি হচ্ছে Indian Almond.
কাঠবাদাম গাছের রসালো ফলের ভিতরে তিন থেকে চার সেন্টিমিটার দীর্ঘ কয়েকটি বীজ থাকে, যা পরিপক্ব ফল থেকে বের করে নিয়ে সরাসরি ভেজে খাওয়া হয়। এই বিচিগুলিই কাঠবাদাম নমে পরিচিত। বিচিগুলো বাদামের গন্ধ যুক্ত।
কাঠ বাদামের বৈজ্ঞানিক নাম Prunus dulcis. ইরানে উৎপত্তিস্থল ও এশীয় অঞ্চলের ফল হলেও বর্তমানে প্রায় সারা বিশ্বে এর উৎপাদণ ও চাষ করা হয় ৷
কাঠ বাদাম চাষ পদ্ধতিঃ
কাঠবাদাম চাষ সাধারণত বাংলাদেশে তেমন হয়না ৷ তবে কাঠ বাদাম বাংলাদেশে চাষ করার উপযুক্ত ফল ৷
কাঠ বাদাম চাষের জন্য হালকা বেলে-দোআঁশ, দোআঁশ মাটি সবচেয়ে ভালো ৷
বাদাম চাষ করার পূর্বে জমিকে ভালোমত প্রস্তুত করে নিতে হবে ৷ জমি প্রস্তুতি হিসেবে আগাছা, গাছ তুলে ফেলতে হবে ৷
মাটি কুপিয়ে বা হাল দিতে হবে যেন মাটি ঝুরঝুরে হয় ৷
ঝুরঝুরে মাটিতে সার প্রয়োগ করতে হবে ৷ সার হিসেবে কম্পোস্ট সার ভালো হবে ৷ কম্পোস্ট সার প্রয়োগ করে মাটি ও সার নাড়াচাড়া করে দিতে হবে ৷
অতপর কিছুটা পানি দিতে হবে ৷ এভাবে কমপক্ষে ৭ দিন রেখে দিয়ে মাটি প্রস্তুত হতে দিতে হবে ৷
মাটি প্রস্তুত হবার পর এবার কাঠবাদাম গাছের চারা বুনতে হবে ৷ চারা বুননের জন্য গর্ত করে সেখানে পুনরায় কিছু কম্পোস্ট সার দিতে হবে ৷
চারা গাছ কতটুকু লম্বা/বয়সী হিসেব করে গর্ত করতে হবে ৷
গর্তে চারা গাছ বুনে দিয়ে মাটি ফালানোর পর পানি দিতে হবে ৷ গাছে নিয়মিত পানি দিতে হবে ৷
কাঠ বাদাম গাছ বুনার পর চারিদিকে বেড়া দিয়ে চারা গাছকে গরু,ছাগলের হাত থেকে নিরাপদ করতে হবে ৷
শীতকালে সাধারণত কাঠবাদাম গাছে ফল আসে ও পেকে যায় ৷ ফল পাকলে একা একাই গাছ থেকে বাদাম পরে যায় ৷
এই ফল ভেঙে ভেতর থেকে কাঠ বাদাম বের করতে হয় ৷
কাঠ বাদাম গাছ চাষ :
কাঠবাদামের গাছ সাধারণত ৩০ থেকে ৩৫ মিটার (১১৫ ফুট) পর্যন্ত উঁচু হয়ে থাকে ।
বাদাম গাছটির উপরের দিক থেকে আনুভূমিকভাবে ডালপালা বের হয় ।
কাঠবাদাম গাছ চাষ করার জন্য তেমন আলাদা পদ্ধতি নেই ৷
বরং সাধারণ কাঠ বাদাম চাষ পদ্ধতি অনুসরণ করে কাঠ বাদাম গাছ চাষ করা যায় ৷
কাঠবাদাম এর ফল রসালো প্রকারের ও ভেতরের প্রকোষ্ঠে কয়েকটি করে বিচি থাকে । ফল পাকার পর এই বিচিগুলো খাবার যোগ্য হয় ।
বিচিগুলো খেতে অনেকটা আখরোটের মতো। গাছের বয়স বাড়লে এর উপরের দিকের ডালপালা অনেকটা চ্যাপ্টা হয়ে যায়, দেখতে ফুলদানীর মতো লাগতে পারে।
শাখা-প্রশাখাগুলো স্তরে স্তরে সাজানো থাকে। পাতাগুলো আকারে বেশ বড় হয়, ১৫-২৫ সেমি (৫.৯ – ৯.৮ ইঞ্চি) দীর্ঘ, এবং ১০-১৪ সেমি (৩.৯-৫.৫ ইঞ্চি) চওড়া, ডিম্বাকার, এবং
চকচকে সবুজ বর্ণের হয় । শুষ্ক মৌসুমে পাতা ঝরে যায় । ঝরার আগে পাতাগুলো গোলাপী-লাল বা হলদেটে-খয়েরি রঙের হয়ে যায় (এর কারণ হলো ভায়োলাক্সান্থিন, লুয়েটিন ও যিক্সান্থিন নামের রঞ্জক পদার্থ)।
কাঠ বাদাম খাওয়ার নিয়ম :
কাঠ বাদাম বিভিন্নভাবে খাওয়া যায় ৷ যার মধ্যে রয়েছে পানিতে ভিজিয়ে খাওয়ার পদ্ধতি ৷ এটি সবচেয়ে প্রচলিত ৷
সকালে ওঠার কিছু সময় পর ভিজিয়ে রাখা কাঠ বাদাম খেয়ে নিন ৷ এতে করে সারাদিন শরীরে শক্তি পাবেন ও খুদামন্দা দূর করবে ৷ কাঠ বাদাম ভিজিয়ে রাখতে হবে ৮ ঘন্টা ৷
এরপর কাঠ বাদাম খাওয়ার উপযোগী হবে ৷ ভেজানো কাঠ বাদামের খোসা খুব সহজেই ছাড়িয়ে নেওয়া যায় ৷
ভেজানো কাঠ বাদাম ৫-৭ টির বেশি খাওয়া ঠিক নয় ৷
কাঠ বাদাম খোসা সহ খেতে হবে না খোসা ছারা এ নিয়ে বিস্তর মতামত রয়েছে ৷ তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, কাঠবাদাম খোসাসহ খেলে সবচেয়ে ভালো হয় ৷
কেননা এর খোসায় রয়েছে পলিফেলন, এছাড়াও এটি প্রাকৃতিক আশের এর উৎকৃষ্ট উপাদান হিসেবে বিবেচ্য হয় ৷
তবে কাঠবাদাম ভিজিয়ে খেতে চাইলে খোসা খাবেন না ৷ তখন কেবলমাত্র কাঠ বাদাম খেয়ে নিন ৷ নাহলে হজমে ও পুষ্টিতে কিছু ঘাটতি থেকে যেতে পারে ৷
কাঠ বাদাম এর উপকারিতা :
ছোট একটা খাবার, কিন্তু এত পুষ্টিগুণে ভরপুর! বলছি ফল হিসেবে কাঠ বাদামের গুণের কথা।
এই এক কাঠ বাদাম আপনাকে যে পরিমাণ উপকার করবে জানলে নিশ্চিতভাবেই অবাক হবেনই আপনি।
প্রচুর পরিমাণ নিউট্রিশনে ভরপুর এই কাঠ বাদাম আপনাকে করে তুলতে পারে লাবণ্যময়ী, যার ফলে বয়স কমে যাবে আপনার!
এছাড়া কাঠ মাদামে রয়েছে প্রচুর পরিমানে ভিটামিন ও পটাশিয়াম।
প্রতিদিন সকালে দুটো করে কাঠ বাদাম যদি নাস্তার তালিকায় রাখেন, অল্পকিছু সময় পর ফলাফল আপনি নিজেই পাবেন।
• কাঠ বাদামের সবথেকে শক্তিশালী গুণ হল, মস্তিষ্ককে সুস্থ রাখতেও এটি দক্ষ। কাঠ বাদামে ভিটামিন ই এবং পটাশিয়াম থাকার ফলে স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি করে কাঠ বাদাম।
• গর্ভাবস্থার কাঠবাদাম খাওয়া অনেক উপকারী৷ এ সময়ে পানিতে ভিজিয়ে রাখা কাঠবাদাম খেলে মা ও শিশু, দুজনেরই শরীর সুস্থ থাকবে৷
কাঠ বাদামে থাকা ফলিক এসিড বাচ্চার জন্মের সমস্যা দূরীকরণে ম্যাজিকের মত কাজ করে৷ কোষ গঠন ও টিস্যু বৃদ্ধিতেও অতুলনীয় কাঠবাদাম৷৷
• সকাল বেলা উঠেই দুটো কাঠ বাদাম খেয়ে নিলেই সারাদিন তরতাজা থাকা যায়।
এনার্জি লেভেল ঠিক রাখতে রোজ রোজ কাঠ বাদাম খাওয়া উচিত।
• ভিটামিন ই, এ, বি১, বি৬ থাকার ফলে চুলও ভাল রাখে কাঠ বাদাম।
ম্যাগনেশিয়ামের জন্য চুল গোড়া থেকে সুস্থ থাকে ও তাড়াতাড়ি বৃদ্ধি পায়৷
• কাঠ বাদামে থাকা ফসফরাস, মিনারেল, ভিটামিন হাড় ও দাত সুস্থ, সুন্দর রাখতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে ৷
তাই হাড়, দাত সুস্থ ও সুন্দর রাখতে কাঠ বাদাম খেতে পারেন নিয়মিত৷
• খিদে পেলে অল্প করে কাঠ বাদাম খেয়ে নিতে পারেন। এতে খিদে কিন্তু দূর হয়ে যাবে। আবার আপনার ওজনও থাকবে নিয়ন্ত্রণেই।
প্রোটিন যুক্ত এই বাদাম খেলে সুগার লেভেল বৃদ্ধি পাবার ও
কোন ঝুকি থাকছেনা৷ তাই মাত্রাতিরিক্ত খাবার খাওয়ার ইচ্ছেও থাকে না ২-৩ টে কাঠ বাদাম খেয়ে নিলে।
আর এজন্যই ওজন বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনাও থাকে কম।
• এছাড়াও কাঠ বাদামে রয়েছে অতিপ্রয়োজনীয় ভিটামিন ই। ভিটামিন ই ত্বক সুন্দর রাখে আর মুখে বয়সের ছাপ পড়ে না।
নিঃসন্দেহ সৌন্দর্য সচেতন সকলেই কাঠ বাদাম খাদ্য তালিকায় রাখতে পছন্দ করবেন!
• এদিকে কোলেস্টেরল লেভেলও ঠিক রাখতে পারে কাঠ বাদাম। এর মধ্যে থাকে ম্যাগনেসিয়াম, পটাশিয়াম, প্রোটিন।
যার ফলে হার্টকেও সুস্থ রাখে কাঠ বাদাম।
• খাবার হজমের জন্যও কাঠ বাদামের জুড়ি মেলা ভার।
এতে যে ফাইবার থাকে, তা হজম শক্তি বাড়ায় এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে।
বয়স বাড়ার ফলে শারীরিক দূর্বলতা ও কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে তাই কাঠ বাদাম খাদ্য তালিকায় রাখা উচিত৷
শেষ কথা :
কাঠ বাদাম চাষে যেমন আর্থিকভাবে লাভবান হওয়া যায় তেমনি এর পুষ্টিগুণ ও একজন মানুষের প্রয়োজনীয় পুষ্টির চাহিদা মেটাতে পারে ৷
আমাদের দেশে এর উৎপাদণ তুলনামূলকভাবে কম হয় বিধায় কাঠবাদাম চাষে বেশ লাভ করার সুযোগ রয়েছে ৷
তাই আর্থিক হোক বা শারীরিক, কাঠ বাদাম খুবই উপকারী ৷