কিভাবে ই-পাসপোর্ট করতে হয় জেনে নিন | ই পাসপোর্টের সুবিধা, খরচ ও নিয়ম সমূহ

0
40

ই-পাসপোর্ট কথাটা হয়ত আপনারা অনেক আগেই শুনেছেন। সম্প্রতি আমাদের দেশে ই পাসপোর্ট সেবা চালু হয়েছে। ২০২০ সালের ২২ শে জানুয়ারি বাংলাদেশে ই কমার্স সেবার উদ্বোধন ঘটে থাকে।

উক্ত আর্টিকেলটি মূলত ই-পাসপোর্ট সম্পর্কে। আর্টিকেলের বিষয়বস্তু গুলো হচ্ছে ই-পাসপোর্ট কি এবং  কিভাবে ই-পাসপোর্ট করবেন।

মূল বিষয় নিয়ে শুরু করা করার আগে অল্প করে জেনে নিন ই-পাসপোর্ট কি সেই সম্পর্কে..

ই-পাসপোর্ট কি?

আপনাদেরকে যদি সহজভাবে বলা যায় তাহলে আপনারা বুঝতে ই-পাসপোর্ট আর মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট এর মধ্যে পার্থক্য হচ্ছে অনেকটা মূলত এটিএম কার্ড এবং চেকবইয়ের মতন।

আপনারা সকলেই জানেন যে চেক বই ব্যবহার করে গ্রাহক শুধুমাত্র এক লাখ টাকা তুলতে পারেনা, একাধিক কর্মকর্তার সিল স্বাক্ষর ইত্যাদি লাগে।

কিন্তু গ্রাহক চাইলে এটিএম কার্ড ব্যবহার করে খুব সহজেই স্বাচ্ছন্দে টাকা তুলতে পারেন। তাই বুঝতেই পারছেন ই-পাসপোর্টের সার্ভিস অনেকটা এটিএম কার্ডের মতই।

ই-পাসপোর্ট হলো মূলত একটি পাসপোর্ট যাতে লাগানো থাকবে মূলত ইলেকট্রনিক মাইক্রোপ্রসেসর চিপ।

আপাতত দৃষ্টিতে আপনি এই পাসপোর্ট বইটা দেখে কোন কিছু বুঝতে পারবেন না। ই-পাসপোর্ট দেখতে অনেকটাই Mrp পাসপোর্টের মতোই।

ই-পাসপোর্ট এর সুবিধা সমূহ

ই-পাসপোর্ট কি সেই সম্পর্কে ব্যাসিক ধারনা দেয়া হয়েছে এবার এটির সুবিধা সম্পর্কে বলার সময়।এর বেশ কয়েকটি সুবিধা সম্পর্কে। যেমনঃ

১. সাধারণত ই-পাসপোর্টে আপনারা মেয়াদ পাচ্ছেন ১০ বছর এতে অনেকের সুবিধা হবে বিশেষ করে প্রবাসীদের কেননা পরবর্তীতে পাসপোর্ট নবায়ন করতে অনেক ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়

২. ই-পাসপোর্ট বইয়ের সাথে একটি ডিজিটাল পাতা যোগ করে দেওয়া হবে। আর এই ডিজিটাল পাতায় উন্নত মানের মেশিন রিডেবল চিপ বসানো থাকবে। আর এর মাধ্যমে মূলত সংরক্ষিত থাকবে পাসপোর্ট কারীর সব ধরনের তথ্য।

৩. সাধারনত এর ডাটাবেজের থাকবে পাসপোর্ট কারীর তিন ধরনের ছবি, দশ আঙুলের ছাপ এবং চোখের আইরিশ।

এর ফলে ভ্রমণকালে অভিবাসন কর্তৃপক্ষ কম্পিউটারের সাহায্যে খুব দ্রুততম সময়ের মধ্যে পাসপোর্ট কারের সমস্ত তথ্য খুব সহজে বের করতে পারবেন।

তাছাড়া বিভিন্ন বিমানবন্দরে খুব দ্রুততার সাথেই পাসপোর্ট এর মাধ্যমে ভিসা চেক করা যাবে।

৪. ই-পাসপোর্ট এর সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো আপনি যখন বিমানবন্দরে ভিসা চেক করবেন তখন আপনাকে এক্ষেত্রে লাইনে দাঁড়াতে হবে না।

ঝামেলাবিহীন ভাবে নেট ব্যবহার করে আপনারা এর মাধ্যমে দ্রুততম সময়ে আপনার ভিষাটি চেক করতে পারবেন।

তাছাড়া ই-পাসপোর্টের আর অনেক ধরনের সুবিধা রয়েছে যার জন্য সাধারণত ই পাসপোর্ট এর জনপ্রিয়তা দিন দিন আরো বাড়ছে।

ই পাসপোর্ট এর মাধ্যমে আপনারা ঝামেলা মুক্তভাবে বিভিন্ন ধরনের কাজ করতে পারবেন।

আপনারা এতক্ষণে ই-পাসপোর্ট কি এবং এর সুবিধা  সম্পর্কে জানলেন এবার আমি আপনাদেরকে বলবো আপনারা কিভাবে ই-পাসপোর্ট করবেন এবং ই পাসপোর্ট তৈরি করতে আপনাদের খরচ কেমন হতে পারে।

অনলাইনের মাধ্যমে ই-পাসপোর্ট করার নিয়ম

আপনারা চাইলে এখন ঘরে বসে অনলাইনের মাধ্যমে ই পাসপোর্ট করতে পারবেন।তাহলে ই পাসপোর্ট করার সম্পূর্ণ প্রসেসটা আপনারা নিচে ধাপে ধাপে দেখুনঃ

ধাপ ১ঃ প্রথমে আপনাকে এর জন্য গুগলে গিয়ে সার্চ করতে হবে www.e-passport.govt.bd এই ওয়েবসাইটটি লিখে। তারপর এই ওয়েবসাইটটি আসার পর সরাসরি এই ওয়েবসাইটের ভেতরে ঢুকতে হবে।

শুরুতেই আপনার জেলা এবং বর্তমান ঠিকানার নিকটবর্তী পুলিশ স্টেশনের নাম দেওয়া মাত্রই স্থানীয় পাসপোর্ট অফিসের নাম দেখাবে।

আর আপনাদেরকে শুধুমাত্র এখানে ই পাসপোর্ট এর আবেদন পত্র জমা দিতে হবে। তাছাড়া আপনারা এখান থেকেই ই-পাসপোর্ট সরাসরি আপনার হাতে পাবেন।

ধাপ ২ঃ আবেদনের সময় আবেদনকারীর নাম জন্ম তারিখ, বর্তমান এবং স্থায়ী ঠিকানা, পেশা, জাতীয় পরিচয় পত্রের নাম্বার, পূর্ববর্তী পাসপোর্ট এর তথ্য, আপনার পিতা মাতার নাম এবং পেশা, যোগাযোগ নাম্বার এবং জরুরী ক্ষেত্রে আপনার যোগাযোগ নাম্বার দিতে হবে।

তারপরে আপনাকে পেমেন্ট এর সেকশনে আবেদন ফি জমা দিয়েছেন এর সম্বন্ধে কিছু তথ্য প্রদান করতে হবে।

ধাপ ৩ঃ আপনাকে সবকিছু ঠিকঠাক করে দিতে হবে কেননা একবার আবেদনপত্র জমা দেওয়ার পর আর কিছু ঠিক করতে পারবেন না।

কেননা আপনি এক্ষেত্রে একটি জাতীয় পরিচয় পত্র দিয়ে শুধুমাত্র একটি আবেদনপত্র জমা দিতে পারবেন।

তাই অবশ্যই একটি বিষয় খেয়াল রাখতে হবে সেটি হচ্ছে আবেদনের সময় সবকিছু যেনো জাতীয় পরিচয় পত্রের তথ্য অনুযায়ী হয়ে থাকে।

ধাপ ৪ঃ চূড়ান্তভাবে অনলাইনে আবেদন সম্পন্ন করার পর সর্বশেষ সেকশনে পাসপোর্ট অফিসের নির্ধারিত দিনপঞ্জি থেকে বায়োমেট্রিক এর জন্য সাক্ষাতের দিন খন ঠিক করে নিতে হবে এভাবে।

তারপরে অনলাইনে আবেদন শেষ হয়ে গেলে পূরণকৃত আবেদন ফরম টি ও বায়োমেট্রিক এর জন্য সাক্ষাতের সবাই সহ আবেদনের সামারি ডাউনলোড করে প্রিন্ট করে নিতে হবে।

ই-পাসপোর্ট করতে কত টাকা লাগে বা এর খরচ

সাধারণত ই-পাসপোর্টের তিন ধরনের ডেলিভারি আছে। যেখানে মূলত আবেদনপত্র জমা দেওয়ার পর থেকে নির্দিষ্ট কর্মদিবস পর এই ই-পাসপোর্ট হাতে পাওয়া যায়। যেমনঃ

১. রেগুলার : ২১ কর্মদিবসের মধ্যে
২. এক্সপ্রেস : ১০ কর্মদিবসের মধ্যে
৩. সুপার এক্সপ্রেস : ২ কর্মদিবসের মধ্যে

৫ বছর মেয়াদী ৪৮ পৃষ্ঠার ই পাসপোর্ট এর ডেলিভারি ফি

  •  রেগুলার পাসপোর্ট এর ক্ষেত্রে এ ক্ষেত্রে খরচ হবে ৪০২৫ টাকা।
  •  এক্সপ্রেস পাসপোর্টের ক্ষেত্রে এই ক্ষেত্রে খরচ হবে ৬৩২৫ টাকা।
  •  সুপার এক্সপ্রেস পাসপোর্টের জন্য খরচ হবে ৮৬২৫ টাকা।

১০ বছর মেয়াদী ৪৮ পৃষ্ঠার ই পাসপোর্ট ডেলিভারি ফি

  •  রেগুলার পাসপোর্ট এর জন্য খরচ হবে ৫৭৫০ টাকা।
  •  এক্সপ্রেস পাসপোর্ট এর জন্য খরচ হবে ৮০৫০ টাকা।
  •  সুপার এক্সপ্রেস পাসপোর্ট এর জন্য আপনার এক্ষেত্রে খরচ হবে ১০,৩৫০ টাকা।

৫ বছর মেয়াদী ৬৪ পৃষ্ঠার ই পাসপোর্ট ডেলিভারি ফি

  •  রেগুলার পাসপোর্ট ফি ৬৩২৫ টাকা।
  •  এক্সপ্রেস পাসপোর্ট এর জন্য খরচ হবে ৮৬২৫ টাকা।
  •  সুপার এক্সপ্রেস পাসপোর্ট ফি হচ্ছে ১২ হাজার ৭৫ টাকা।

দশ বছর মেয়াদী ৬৪ পৃষ্ঠার ই পাসপোর্ট ডেলিভারি ফি

  •  রেগুলার পাসপোর্ট করতে খরচ হবে ৮০৫০ টাকা।
  •  এক্সপ্রেস পাসপোর্ট করতে খরচ হবে ১০,৩৫০ টাকা।
  •  সুপার এক্সপ্রেস পাসপোর্ট করতে খরচ হবে ১৩,৮০০ টাকা।

আপনারা চাইলে এই ক্ষেত্রে অনলাইনের মাধ্যমে পেমেন্ট করতে পারেন। তাছাড়া আপনারা যদি অনলাইনের মাধ্যমে পেমেন্ট না করেন সরাসরি সোনালী ব্যাংক, ট্রাস্ট ব্যাংক, ঢাকা ব্যাংক, প্রিমিয়াম ব্যাংক এবং ব্যাংক এশিয়াতে আপনি সরাসরি যাওয়ার মাধ্যমে টাকা জমা দিয়ে সেখান থেকে রশিদ সংগ্রহ করতে পারবেন।

আর আপনাকে একটি বিষয় খেয়াল রাখতে হবে সেটি হচ্ছে ব্যাংক ডিপোজিট দেওয়া আবেদনকারীর নাম এবং ই-পাসপোর্টে দেওয়া আবেদনকারীর নাম হুবহু এক হতে হবে।

আর এক্ষেত্রে যদি আবেদনকারীর পরিচয় পত্রের ফটোকপি এবং সামারির প্রয়োজন হয়ে থাকে যেটা সাধারনত আপনারা অনলাইনে জমা দেওয়ার পরপরই ওয়েবসাইটের মাধ্যমে ডাউনলোড করে নিতে পারবেন খুব সহজেই।

আশাকরি এতক্ষণে কিভাবে ই-পাসপোর্ট করবেন মোটামুটি ধারনা চলে এসেছে আপনাদের।

যা যা কাগজপত্র লাগবে পাসপোর্ট করার জন্য

আপনাকে ই-পাসপোর্ট করার জন্য অনলাইনের মাধ্যমে আবেদন পত্রটি ডাউনলোড করে প্রিন্ট করে নিতে হবে।

তারপর আপনার এর সাথে প্রয়োজন হবে ১ কপি পাসপোর্ট সাইজের ছবি, জাতীয় পরিচয় পত্রের ফটোকপি এবং ব্যাংকের রশিদ।

আর সাধারণত যেসব আবেদনকারীর বয়স ১৮ বছরের নিচে তাদের জন্য নিজের জন্ম নিবন্ধন কার্ড এর সাথে বাবা-মা আর ভোটার আইডি কার্ডের ফটোকপি অবশ্যই লাগবে।

আপনারা এই কাগজপাতি গুলো যদি সব রেডি করতে পারেন তাহলে অবশ্যই আপনারা ই-পাসপোর্ট খুব সহজেই বা খুব দ্রুততার সাথে তৈরি করতে পারবেন।

আমাদের শেষ কথা

ই পাসপোর্ট এর রয়েছে অসংখ্য সুবিধা যার মাধ্যমে আপনারা ঝামেলা বিহীন ভাবে বিমানবন্দরে ভিসা চেকিং এর কাজ সহ আরো অনেক ধরনের কাজ সম্পন্ন করতে পারবেন।

তাছাড়া আপনারা ই পাসপোর্ট এর মেয়াদ একেবারে ১০ বছর করতে পারছেন।যার ফলে আপনাদের ঘন ঘন আর পাসপোর্ট নবায়ন করা লাগবে না।

আশাকরি আমাদের আজকের আর্টিকেলটি যারা পড়েছেন তারা বুঝতে পেরেছেন যে ই-পাসপোর্ট কি এবং কিভাবে ই-পাসপোর্ট করবেন সেই সম্পর্কে।

তারপরও যদি পাসপোর্ট সম্পর্কিত কোনো ধরনের প্রশ্ন থেকে থাকে আমাদেরকে কমেন্ট করে জানাতে পারেন।

Visited 1 times, 1 visit(s) today

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here