কিভাবে উকুন দূর করা যায় । চুলের উকুন দূর করার ১০ টি উপায়

0
100

আপনি কি মাথার উকুনের যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ হয়ে রয়েছেন এবং জানতে চাচ্ছেন কিভাবে উকুন দূর করা যায়?  তবে এই আর্টিকেলটি আপনার জন্য আশীর্বাদস্বরূপ হতে যাচ্ছে। কারণ এখানে জানানো হয়েছে এমন ১০ টি ঘরোয়া উপায় সম্পর্কে যেগুলো অবলম্বন করার মাধ্যমে মাথার উকুন দূর করা সম্ভব।  তাই অহেতুক ক্যামিকাল জাতীয় পণ্যের উপর সময় নষ্ট না করে জেনে নিন ১০ টি ঘরোয়া পদ্ধতি সম্পর্কে যেগুলো দ্বারা মাথার উকুন দূর করা যাবে। 

কুকুর একটি পরজীবী পোকার নাম  যার বসবাস মানুষের মাথার চুলে।  এমন এক ধরনের পোকা যেটা একবার ঘরে প্রবেশ করলে ওই ঘরে থাকা সকল মানুষের মাথায় ছড়িয়ে যায়।  মূলত উকুন এর সমস্যা বার শুরু হলে তার থেকে পরিত্রান পাওয়া খুব কষ্টসাধ্য ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়।  চুলের গোড়া যখন ভেজা থাকে,  অথবা যখন চুল ময়লা থাকে তখন উকুন খুব দ্রুত বৃদ্ধি পেতে থাকে চুলে।  ছোট বড়, নারী পুরুষ – সকলকেই উকুনের আক্রমণ করতে সক্ষম। 

মাথার চুলে উকুনের প্রভাব 

ইংরেজিতে পেডিকুলোসিস বলা হয় উকুনের আক্রান্ত হওয়াকে। মূলত রক্তচোষা উকুনের আক্রমনের স্বীকার হওয়াকেই পেডিকুলোসিস বলা হয়। যে সকল প্রাণীর রক্ত গরম সেই সকল ধরনের প্রাণীদেরই উকুন আক্রমন করতে সক্ষম। 

মাথায় উকুন এর প্রভাব বিস্তার শুরু করার ৭ থেকে ১০ দিনের মধ্যেই ডিম পাড়ে এবং ডিম পাড়ার ১০ দিনের মধ্যেই উকুন বড় হয়ে যায়। এক সাথে একাধিক ডিম ও দ্রুত বাচ্চা উকুনে পরিণত হওয়ার কারনে মাথায় একবার উকুনের বাস শুরু হলে খুব দ্রুত গতিতে তা ছড়িয়ে পড়তে থাকে। 

উকুনের সমস্যা শুরু হলে অনেকেই আছে যারা খোলামেলা আলোচনা করতে চায় না, যার ফলে এটা ক্রমানয়ে বাড়তেই থাকে। এর প্রতিরোধে আপনাকে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহন করতে হবে। কেননা, উকুন চুলের পাশাপাশি স্বাস্থ্যেরও ব্যাপক ক্ষতি সাধন করে থাকে। 

প্রতিদিন নিয়ম করে একাধিকবার খাবারের প্রয়োজন হয় উকুনের। শুচের মত মুখ ব্যবহার করে তারা মাথার চামড়া ভেদ করে রক্ত খেয়ে বেচে থাকে। এবং এই ঘটনাটি যখন ঘটে তখন উকুমের মুখের লালা মানুষের চামড়ায় লেগে থাকে যা পরবর্তীতে চুলকানি সহ চর্ম রোগের অনেক গুলো কারনের একটি। তাছাড়া মাথা থেকে রক্ত চুষে নেয়ার জন্য প্রায় সময় মাথা ব্যাথা থাকে। মাথায় উকুনের বসবাসের জালা সেই বুজে যার হয়ে থাকে কারন এটি সব সময় চুলকানি ও মাথায় বিরক্তিকর অনুভূতি দিতেই থাকে। 

এই উকুনের পাঁয়তারা থেকে বাচতে অনেকেই বিভিন্ন ক্যামিক্যাল জাতীয় সেম্পু, ওষুধ ও অন্যান্য উপাদান ব্যবহার করে থাকে যা অনেক ক্ষেত্রেই পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করে। তাই এবারের আর্টিকেলে আপনাকে জানাবো এমন কিছু ঘরোয়া পদ্ধতি যা অবলম্বন করার মাধ্যমে উকুন দূর করতে পারবেন। ঘরোয়া পদ্ধতি অবলম্বন করে কিভাবে উকুন দূর করা যায় সে বিষয়েই জানাতে যাচ্ছি। 

উকুন দূর করার ঘরোয়া পদ্ধতি 

পেট্রোলিয়াম জেলি 

মাথার উকুন  দূর করার জন্য পেট্রোলিয়াম জেলি খুব কার্যকর হতে পারে। পেট্রোলিয়াম জেলি আপনার মাথায় যে ভাব আনতে সক্ষম হবে যার কারণে বেশ কয়েকবার মাথায় করার প্রয়োজন হতে পারে তবে দূর করার জন্য পেট্রোলিয়াম জেলি ব্যবহার করতে পারেন। 

এটি ব্যবহার খুব সহজ।  প্রথমে কিছু পেট্রোলিয়াম মাথার ত্বকে ভালোভাবে মিশে দিন।  এবং এভাবে সারারাত রেখে দেওয়ার পর সকালে   চিকন চিরুনি ব্যবহার করে মাথা আঁচড়িয়ে নিলেই উকুন সব পরতে থাকবে। এভাবে কয়েকদিন করতে থাকলে মাথায় আর উকুন থাকবে না। 

নারিকেল তেল 

মাথার উকুন দূর করার জন্য খুব কমন একটি পদ্ধতি হলো নারিকেল তেলের ব্যবহার। ২০১০ সালে ব্রাজিলে একটি গবেষণা চালানো হয় এই বিষয়ক, সেখানের তথ্য মতে নারিকেল তেল বেশ কার্যকরী প্রভাব রাখে মাথার উকুন দূরীকরণে। 

এক্ষেত্রে নারিকেল তেল হাল্কা গরম করে নিয়ে মাথায় ভালো ভাবে মিশিয়ে ফেলুন। কয়েক ঘন্টা সেভাবে রেখে চিকন চিরুনি ব্যবহার করে আচড়াতে থাকুন। একেক করে সব উকুন মাথা থেকে চলে আসবে। তাছাড়া নারিকেল তেলের সাথে যদি কিছুটা লবঙ্গ মিশিয়ে নিন তাহলে অধিকাংশ উকুন মারা পড়বে মাত্র ৪ ঘন্টায়। তারপর সেগুলো আঁচড়িয়ে নামিয়ে ফেলুন।

অলিভ ওয়েল 

যদি মাথায় শাথার উকুনের আবির্ভাব বেশি হয়ে যায় তবে অলিভ ওয়েলের মাধ্যমে তা দূর করতে পারবন। এক্ষেত্রে অলিভ ওয়েল ব্যবহার করতে হবে রাতে, তাহলে সারারাত সেই তেল মাথায় থাকবে এবং দিনে শ্যাম্পু করে নিলে কিছুটা উকুন পড়বে এবং বাকিটা চিরুনির মাধ্যমে। 

বেকিং সোডা 

বেকিং সোডার কাজ কেবল কাপুড়ের উপরই নয় বরং মাথার উপরেও রয়েছে। এবার প্রশ্ন হচ্ছে  বেকিং সোডা দিয়ে কিভাবে উকুন দূর করা যায়?  প্রথমে সামান্য পরিমাণের বেকিং সোডা নিন এবং তার থেকে তিনগুণ কন্ডিশনার একত্রে মিশিয়ে 15 মিনিট পর্যন্ত মাথায় রেখে দিন।  পরিশেষে ঘন বা চিকন চিরুনি ব্যবহার করে চুল টেনে দিলে চিরন এর সাথে উকুন এবং তার পাশাপাশি উকুনের ডিম চলে আসবে।  এভাবে একাধিকবার করার মাধ্যমে মাথার উকুন এর আবির্ভাব থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। 

নিমের তেল 

নিম গাছ ও  নিম এর ব্যবহার সম্পর্কে আমরা সকলেই জানি এটা যে কত কার্যকরী একটা উপাদান সেটা নতুন করে বলাবাহুল্য। তবে নিমের তেল উকুন দূর করার জন্য কিভাবে ব্যবহার করবেন সেটা অবশ্য জানা দরকার এক্ষেত্রে আপনি যে রেগুলার শ্যাম্পু ব্যবহার করেন গোসল করার সময় সেই শ্যাম্পুর সাথে মিমের কয়েক ফোটা তেল মিশিয়ে তারপর মাথা তে এপ্লাই করুন।  এসময় মাথার ত্বকে ভালোভাবে ঘোষে  নিতে হবে। এরপর গোসল শেষে চিরুনি দিয়ে মাথা আচড়াতে জীবিত এবং মৃত উকুনগুলো নেমে পড়ে যাবে। 

লেবুর রস 

লেবুকে আমরা প্রাকৃতিকভাবেই জীবাণুনাশক হিসেবে চিনে থাকে।  এক্ষেত্রে লেবুর রস উকুন দূর করার জন্য বেশ কার্যকর।  লেবুর রস মাথায় ব্যবহার করতে হবে সপ্তাহে 2 বার এর বেশি বা কম কোনোভাবেই যেন না হয়।  প্রথমে লেবু লেবুর রস বের করে নিতে হবে এরপর সরাসরি সেটিং মাথায় ঢেলে ভালোভাবে মেখে নিন।  ঘন্টা দু’একের মত সেটিকে মাথায় রাখুন এরপর চিরুনি দিয়ে মাথা আচড়িয়ে নিন। 

ভিনেগার 

ভিনেগারে থাকে অ্যাসিডিক অ্যাসিড যা উকুন মারার জন্য খুবই উপকারী।  ভিনেগার দিয়ে কিভাবে মাথার উকুন দূর করা যায়?  প্রথমেই ভিনেগার  এর সাথে মিনারেল ওয়াটার বা পানি মিশিয়ে নিন।  এবার ভালোভাবে সেটিকে মাথায় প্রতিটি স্থানে লাগিয়ে রাখুন। এটা বেশ কার্যকর হয় যদি রাতে ঘুমানোর সময় করা যায়।  কারণ এতে করে উকুনগুলো অ্যাসিটিক এসিডের প্রভাবে মারা পড়বে এবং সকালে শ্যাম্পু করে ভালোভাবে মাথা ধুয়ে নিতে হবে,  এটা সপ্তাহে দুই থেকে তিনবার নিয়মিত করলে উকুনের আবির্ভাব থেকে মুক্ত পাওয়া সম্ভব। 

মেয়োনিজ 

মাথা থেকে উকুন দূর করা আরেকটি চমৎকার উপায় হল মেয়োনিজ ব্যবহার করা।  মেয়োনিজ মাথায় লাগানোর ফলে সেগুলো সেখানে থাকা উকুনগুলোর শ্বাস রুদ্ধ করে মেরে ফেলে। এমতাবস্তায়  মাথায় মেয়োনিজ লাগিয়ে 5 থেকে 6 ঘন্টা রেখে দিন এবং তারপর হালকা গরম পানি ও শ্যাম্পু ব্যবহার করে ভালোভাবে মাথা ধুয়ে ফেলুন।  কোন প্রকার গামছা তোয়ালে ব্যবহার না করে হেয়ার ড্রেসার এর মাধ্যমে মাথার চুল গুলো শুকিয়ে নিন। সবশেষে চিকন ও সরু চিরুনি ব্যবহার করে মাথাকে ভালোভাবে আজ রাতে হবে যার ফলে নিত উকুনগুলো সহ যদি কোন কোন জীবিত থাকে সেগুলো নেমে নিচে  আসবে। 

পেয়াজের রস

ঘরোয়া উপায় কিভাবে উকুন দূর করা যায় তা জানতে চাইলে সবচেয়ে সহজ পদ্ধতি হলো পেঁয়াজ ব্যবহার করার মাধ্যমে উকুন দূর করা পেঁয়াজের রস উকুন তাড়াতে আপনাকে ব্যাপক সহায়তা করবে।  প্রথমেই কিছু পেঁয়াজ বেটে নিতে হবে,  এরপর সেগুলো ছাঁকনির সাহায্যের থেকে শুধুমাত্র রস সংগ্রহ করুন। পেঁয়াজ থেকে বের করা রস মাথায় লাগিয়ে দুই থেকে তিন ঘণ্টা রেখে দিতে হবে এবং পরবর্তীতে হালকা গরম পানি ও শ্যাম্পু ব্যবহার করে মাথা ধুয়ে ফেলতে হবে। 

 প্রথমেই এই কাজটি পরপর তিনদিন করতে হবে,  কিছুটা উপকার দেখা দিলে পরবর্তী সপ্তাহে মাত্র একবার উক্ত কাজটি করবেন এবং মোটামুটি উকুনের আবির্ভাব শেষ হওয়ার দিকে হলে মাসে একদিন একই কাজ করে নিবেন তাতে করে উকুনের বংশ একদম নির্বংশ হয়ে যাবে আপনার মাথা থেকে। 

রসুন 

শেষ করবো রসুন দিয়ে কিভাবে উকুন দূর করা যায় সেই পদ্ধতি বলার মাধ্যমে।  প্রথমেই 10 থেকে 15 কোয়া রসুন খোসা ছাড়িয়ে বেটে নিন। তার সাথে দুই থেকে তিন চামচ লেবুর রস মেশান এবং তা দিয়ে পেস্টের মতো তৈরি করুন।  চিপেস্ট মাথার প্রত্যেকটা তোকে ভালো করে লাগিয়ে দিন যেন কোন অংশ বাদ না যায়।  এভাবে 25 থেকে 30 মিনিট চুলে লাগিয়ে রাখুন।  নির্দিষ্ট সময় অতিক্রম হওয়ার পর হালকা গরম পানি দিয়ে মাথাটাকে ধুয়ে নিন।  ঠিক একই রকম কাজ সপ্তাহে তিনদিন করতে হবে তাহলে উকুনের সমস্যা থেকে খুব দ্রুত মুক্তি পাওয়া যাবে।

পরিশেষে কিছু কথা

এই ছিল কিভাবে উকুন দূর করা যায় সেই বিষয়ক বেশকিছু পদ্ধতি অবলম্বন করার মাধ্যমে ঘরোয়া উপায়ে অথবা ঘরে বসে কোন প্রকারের কেমিক্যাল জাতীয় প্রোডাক্ট ব্যবহার ছাড়াই মাথায় থাকা উকুন দূর করতে সক্ষম হবেন। উকুন এর মত বিরক্তিকর জিনিস থেকে মুক্ত পাওয়ার জন্য উপরের দশটি পদ্ধতির একটি অথবা একাধিক উপায় অবলম্বন করলে আশা করি শীঘ্রই আপনার সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।  লাইফ স্টাইল এবং স্বাস্থ্য বিষয়ক আরও অন্যান্য উপকৃত হওয়ার মত আর্টিকেল যদি আপনার প্রয়োজন হয়ে থাকে তবে বাংলা আলম ওয়েবসাইটের লাইফ স্টাইল এবং স্বাস্থ্য টিপস ক্যাটাগরিটি ভিজিট করুন। 

Visited 11 times, 1 visit(s) today

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here