কুমিল্লার দর্শনীয় স্থান সমূহের নাম | কুমিল্লায় অবস্থিত ভ্রমন যোগ্য স্থানের বিস্তারিত

0
21

আমাদের দেশে ভ্রমণ করার মতো এমন অনেক জায়গা আছে যেগুলো সম্পর্কে আমরা হয়তো জানিনা। আর তাই কুমিল্লার দর্শনীয় স্থান সমূহের বর্ণনা থাকবে এই আর্টিকেলে।

 

বাঙালি অনেকটাই ভ্রমণপ্রিয়। শুধু বাঙালি বললে ভুল হবে, ঘুরতে ভালোবাসেনা এমন মানুষ পৃথিবীতে খুঁজে পাওয়া বেশ কষ্টসাধ্য একটা বিষয়। তবে ভ্রমণের জন্য যে শুধু দেশের বাহিরে যেতে হবে এমনটা কিন্তু নয়। আমাদের দেশেই ভ্রমণের জন্য এমন ঐতিহ্যময় স্থানসমূহ আছে যেগুলোর সম্পর্কে হয়তো আপনি আগে জানতেন না।

 

কুমিল্লা ! ঢাকা থেকে প্রায় ১০০ কিলোমিটার দূরে দক্ষিণ পূর্বদিকে অবস্থিত। জেলাটির আয়তন প্রায় ৩০৮৫ বর্গমিটার। খাদি কাপড় এবং রসমালাই এর জন্য সমাদৃত কুমিল্লা জেলা প্রত্নতাত্ত্বিক ও ঐতিহাসিক স্থানের জন্য অনেক বিখ্যাত।

 

এছাড়াও কুমিল্লার দর্শনীয় স্থান সমূহের জন্যেও কুমিল্লা অনেক জনপ্রিয়। চলুন তবে কুমিল্লার দর্শনীয় স্থান গুলোর সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।

 

কুমিল্লার দর্শনীয় স্থান সমূহ

 

কুমিল্লার দর্শনীয় স্থান সমূহের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ৫ টি স্থান হচ্ছে ময়নামতি জাদুঘর, ময়নামতি ওয়ার সিমেট্রি, ইটাখোলা মুড়া, জাহাপুর জমিদার বাড়ি, শালবন বৌদ্ধ বিহার আরো প্রভৃতি। চলুন নিচে এসকল দর্শনীয় জায়গার ব্যাপারে সংক্ষিপ্তভাবে জেনে নেওয়া যাক।

 

১। ময়নামতি জাদুঘর (Maynamati Museum)

 

কুমিল্লার দর্শনীয় স্থান সমূহের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে ময়নামতি জাদুঘর, যেটি কুমিল্লা থেকে ১৪ কিলোমিটার দূরে সালমানপুরে অবস্থিত রয়েছে। কুমিল্লার সালমানপুরে অবস্থিত এই জাদুঘর হচ্ছে প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন এর সংগ্রহশালা। 

 

প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন এর জন্য বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ একটি স্থান হিসেবে বিবেচিত হয় ময়নামতি জাদুঘর। কুমিল্লার এই জাদুঘরে কুমিল্লার নানান স্থানের সপ্তম এবং অষ্টম শতাব্দীর বিভিন্ন নিদর্শন রাখা হয়েছে।

 

জাদুঘরে সংরক্ষিত নিদর্শনগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে স্বর্ণ ও রৌপ্য মুদ্রা, ছোট বড় পাথরের মূর্তি, পোড়ামাটির ফলক, লোহা ও তামার সামগ্রী, মাটির বিভিন্ন খেলনা, কাঠের নিদর্শন, ব্রোঞ্জ ইত্যাদি।

 

ময়নামতির জাদুঘরে গেলে দেখা মিলবে স্থানটিকে ঘিরে গড়ে তোলা সুন্দর ও মনোরম ফুলের বাগান সাথে মনোরম বিশ্রামাগার।

 

২। ময়নামতি ওয়ার সিমেট্রি (Maynamati War Cemetery)

 

কুমিল্লার আরো একটি বিখ্যাত দর্শনীয় জায়গা হচ্ছে ময়নামতি ওয়ার সিমেট্রি, যেটি কুমিল্লা থেকে প্রায় ৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। 

 

ময়নামতি ওয়ার সিমেট্রিতে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে নিহত সৈন্যদের কবরস্থান রয়েছে। এই স্থানকে ঘিরে অনেক গল্প রয়েছে যেটি আপনি স্থানটিতে গেলেই বুঝতে পারবেন। 

 

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় নিহত হওয়া ৭৩৭ জন সৈন্যকে দাফন করা হয় এই জায়গাতে। এটি এমন একটি কবরস্থান যেখানে হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান ও ইহুদি সব ধর্মের সৈন্যদের দাফন করা হয়েছিল। “ইংরেজদের কবরস্থান” নামে অনেকের মাঝে পরিচিত এই স্থানটি।

 

এই স্থানে গিয়ে কিছুক্ষণ দাড়িয়ে থাকলে আপনার মনে হবে সৈন্যরা যেন সারিবদ্ধ ভাবে ঘুমিয়ে আছে।

 

৩. ইটাখোলা মুড়া (Itakhola Mura)

কুমিল্লা সংলগ্ন জনপ্রিয় দর্শনীয় জায়গা গুলোর মধ্যে একটি হচ্ছে ইটাখোলা মুড়া, যেটি কুমিল্লা সদর উপজেলা থেকে প্রায় ৯ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত রয়েছে। 

 

এই দর্শনীয় স্থানে রয়েছে সপ্তম কিংবা অষ্টম স্থানে নির্মাণ করা একটি বৌদ্ধবিহার। প্রাচীনকাল বা অনেককাল আগে থেকেই এখানে ইট পড়ানো হতো। আর তাই এই জায়গাটির নামকরণ করা হয়েছে ইটাখোলা মুড়া নামে।

 

এখানে নানান প্রত্নতাত্ত্বিক খনন করার ফলে দেখা মিলেছে বৌদ্ধ স্তূপের এবং একটি বৌদ্ধ মঠ এর। এই স্থানটির প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনগুলোর উদ্ধার করাটা অনেকটাই কঠিন একটা কাজ বলা চলে। এর কারণটা হচ্ছে এই স্থানটি প্রায় ৫ টি সাংস্কৃতিক যুগ অতিক্রম করে ফেলেছে। ফলে নিদর্শনগুলো খুঁজে পাওয়াটা কিছুটা কষ্টসাধ্য বটে।

 

৪. জাহাপুর জমিদার বাড়ি (Jahapur Zamidar Bari)

 

যদিও কালের পরিবর্তন হওয়ার ফলে এখন জমিদারি বাড়ি দেখার সুযোগ হয়ে উঠেনা তবে কুমিল্লার এই জাহাপুর জমিদার বাড়ি এখনও ইতিহাসের সাক্ষী হয়েই রয়ে গিয়েছে।

 

কুমিল্লার দর্শনীয় স্থান গুলোর মধ্যে অন্যতম জনপ্রিয় একটি স্থান হচ্ছে জাহাপুর জমিদার বাড়ি। প্রায় ৪০০ বছর পূর্বে গৌরি মোহন এর হাত ধরে জাহাপুর গ্রামেই নির্মিত হয় এই জমিদার বাড়িটি। প্রায় ৩ একর জায়গা নিয়ে অবস্থিত এই জমিদার বাড়িটি।

 

জমিদার বাড়িটি প্রবেশ দ্বারের দুই পাশে দুটি দারুন সিংহ মূর্তি রয়েছে।  বাড়িটিতে সর্বমোট প্রাসাদ রয়েছে ১০ টি। জাহাপুর জমিদার বাড়িতে হাতের তৈরি কারুকার্য যেমন নকশা করা চেয়ার, রূপার হাতলের ছাড়া প্রভৃতির দেখা মিলবে।

 

৫. শালবন বৌদ্ধ বিহার (Shalbon Buddha Bihar)

 

কুমিল্লা ভ্রমণে গেলে শালবন বৌদ্ধ বিহারে যেতে পারেন, কারণ এখানে দেখা মিলবে প্রাচীনকালের নানান প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন এর। এটি বাংলাদেশের প্রাচীর সভ্যতার নিদর্শন হিসেবে অত্যন্ত জনপ্রিয় একটি স্থান।

 

প্রাচীনকালে এই অঞ্চলে ছিল শাল এবং গজারির বন, যার উপরে ভিত্তি করেই এই প্রাচীন সভ্যতা সমৃদ্ধ স্থানটির নাম দেওয়া হয়েছে শালবন। বিহারটি অনেকটাই পাহাড়পুর বিহারের মত হলেও আকারের দিক থেকে কিছুটা ছোট আকৃতির এই বৌদ্ধ বিহারটি।

 

বিভিন্ন সময়ে খনন এর মাধ্যমে স্বর্ণ ও রৌপ্য মুদ্রা, সিলমোহর, মাটির মূর্তি, পড়া মাটির ফলক তাম্রলিপি, ব্রোঞ্জ, টেরাকোটা ইত্যাদি উদ্ধার করা হয়। উদ্ধারকৃত এসব নিদর্শন ময়নামতি জাদুঘরে সংরক্ষিত রয়েছে।

পরিশেষে

 

আজকে আমরা ৫ টি সেরা কুমিল্লার দর্শনীয় স্থান এর সম্পর্কে জানতে পেরেছি। আপনাদের মধ্যে যারা ভ্রমণ করতে বা ঘুরতে অনেক পছন্দ করেন তারা সময় করে কুমিল্লার দর্শনীয় স্থান গুলো থেকে ঘুরে আসবেন। আশা করছি আপনাদের ভ্রমণ অনেক আনন্দদায়ক হবে। কুমিল্লার দর্শনীয় স্থান গুলোর সম্পর্কে জেনে আপনার কাছে কেমন লেগেছে আমাদের জানাবেন অবশ্যই।

Visited 5 times, 1 visit(s) today

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here