ঘরোয়া ব্যবসা কি? এর সুবিধা ও কিভাবে শুরু করবো?

0
32

আজকে আমরা ঘরোয়া ব্যবসা এর সংজ্ঞা, এ ব্যবসার সুবিধা, শুরু করার পদ্ধতি এবং অন্যান্য বিষয় জানবো। সল্প মূলধনে শুরু করার জন্য পার্ফেক্ট উপায়। আসুন বিস্তারিত জানি।

অনেকেই হয়তো মনে করেন, ব্যবসা করতে হলে বড় অংকের মূলধন লাগে, বড় স্পেস বা জায়গা লাগে এবং বড়সড় প্রস্তুতির দরকার হয়। আসলে এই ধারণা সম্পূর্ণ সঠিক নয়।

কিছু কিছু ব্যবসার ক্ষেত্রে এগুলো দরকার পড়ে সত্যি। তবে সামান্য পরিমাণ মূলধন এবং আলাদা স্পেস বা জায়গা ভাড়া করা ব্যতীতও ব্যবসা করা যায়।

আর এ ব্যবসাটি হলো নিজের ঘরকে কাজে লাগিয়ে ব্যবসা করা, যা ঘরোয়া ব্যবসা নামে পরিচিত। 

নিজের ঘরকে ব্যবসার পণ্য রাখার স্থান হিসেবে ব্যবহার করে, নামমাত্র মূলধন বিনিয়োগ করে ঘরোয়া ব্যবসা শুরু করা যায়।

আমাদের আজকের আলোচনার বিষয় হলো – ঘরোয়া ব্যবসা কি? এর সুবিধা ও কিভাবে শুরু করবো? 

আমরা ঘরোয়া ব্যবসার সংজ্ঞা, এ ব্যবসার সুবিধা, শুরু করার পদ্ধতি এবং অন্যান্য বিষয় জানবো ইনশা আল্লাহ্।

তো চলুন, সেগুলো জেনে নেয়া যাক..

ঘরোয়া ব্যবসা কি?

 

সাধারণত ঘরে বসে বিভিন্ন পণ্য বিক্রয়ের মাধ্যমে লাভ অর্জন করার প্রক্রিয়াই হলো ঘরোয়া ব্যবসা। বর্তমানে আমরা ফেইসবুকে পেইজে ও গ্রুপে প্রায়ই দেখি বিভিন্ন মানুষ বিভিন্ন পণ্য বিক্রয় করছে।

 

যেমন – কেউ পোশাক বিক্রি করছে অথবা কেউ হাতে তৈরি খাবার বিক্রি করছে। এদের অনেকেরই নিজস্ব দোকান নেই। তারা যে কাজটি করছে তা হচ্ছে ঘরোয়া ব্যবসা

 

ধরুন, আপনি ঘরে পণ্য স্টক করে বিক্রয় করছেন। সে পণ্যটি হল পাঞ্জাবি। সেই পাঞ্জাবির গুনগত মান, তার দাম, তার ছবি প্রভৃতি মানুষের নিকট তুলে ধরার মাধ্যমে বিক্রয় করে লভ্যাংশ অর্জন করছেন।

আপনার এ কাজটিই হলো ঘরোয়া ব্যবসা। সামান্য পরিমাণ মূলধন নিয়ে ব্যবসা শুরু করা যায়। 

মাত্র ১০ হাজার টাকা মূলধন হলেই এ ব্যবসাতে নামা যায়। কিছু ক্ষেত্রে ১০ হাজারের কম টাকাতেও ব্যবসাতে নামা সম্ভব হয়।

ঘরোয়া ব্যবসার সুবিধা

 

সাধারণত দোকান নিয়ে ব্যবসা করতে গেলে ভালো পরিমাণ অর্থের প্রয়োজন হয়। তাছাড়া পর্যাপ্ত পরিমাণে লাভের জন্য বেশি পরিমাণে পণ্য সংগ্রহ করার প্রয়োজন হয় অনেক সময়।

 

ধরুন, আপনি চালের আড়ত দিবেন। সেক্ষেত্রে আপনার আর এর জন্য টাকা অ্যাডভান্স করে ভাড়া নিতে হবে। আবার দোকানে টুকটাক ডেকোরেশন এবং ইলেকট্রিসিটির ব্যবস্থাও করতে হয়।

 

দোকান সামলানোর জন্য কর্মচারীর প্রয়োজন হয়। সব মিলিয়ে কয়েক লক্ষ টাকার একটা ব্যাপার রয়েছে এখানে। কিন্তু ঘরোয়া ব্যবসার ক্ষেত্রে এতকিছুর ঝামেলা নেই।

 

ধরুন, আপনি কাপড় নিয়ে ব্যবসা করবেন। তাহলে শুধুমাত্র কাপড়ের খরচটি এখানে মুখ্য।

আপনি যদি আনুমানিক ১০,০০০/- টাকার কাপড় কেনেন, তাহলে সেটা রাখার জন্য পজিশন বা জায়গার প্রয়োজন। যেহেতু আপনি ব্যবসা করবেন।

এক্ষেত্রে ঘর বা রুমটি হল আপনার দোকানের মত। এক্ষেত্রে আপনার আলাদা দোকান ভাড়া লাগছে না। তাছাড়া ইলেকট্রিসিটি এবং কর্মচারী ব্যাপারটিও এখানে জড়িত নেই।

ফলে নামমাত্র মূলধন বিনিয়োগ কাঙ্খিত ব্যবসায় সহজে নামার একটা ভালো সুযোগ রয়েছে।

মূলত, এতো সুবিধার কারণে মানুষ বর্তমানে ব্যাপক হারে ঘরোয়া ব্যবসার সাথে যুক্ত হচ্ছে। 

 

কিভাবে শুরু করবেন?

 

ঘরোয়া ব্যবসা শুরু করার পূর্বে আপনাকে পরিকল্পনা করতে হবে যে কিভাবে কি করবেন। প্রথমে আপনাকে বাছাই করতে হবে যে আপনি কোন ব্যবসা টা ভালো বুঝেন।

পরবর্তীতে উক্ত ব্যবসার জন্য মূলধন কেমন খরচ করবেন তার একটু হিসেব করতে হবে। এরপর সে পণ্যটি পাইকারি বাজার অথবা উৎপাদকের কাছ থেকে ক্রয় করার ব্যাপারটি দেখতে হবে।

তবে কিছু ক্ষেত্রে আছে যেখানে  উৎপাদক অথবা পাইকার এর ব্যাপারটা তেমন একটা থাকেনা।

যেমন টেইলারিং এর কাজ। এক্ষেত্রে উৎপাদক বা পাইকারি বাজার থেকে পণ্য ক্রয় ব্যাপারটি সবক্ষেত্রে জড়িত নেই।

তবে যেহেতু আপনাকে পরিপূর্ণ ধারণা দিতে চাচ্ছি, তাই সব কিছুই এখানে উল্লেখ করলাম।

এখন প্রশ্ন হল যে আপনি কি কি ব্যবসা থেকে আপনার ব্যবসা টি বাছাই করবেন এবং শুরু করবেন?

আপনার সুবিধার জন্য কিছু ঘরোয়া ব্যবসার আইডিয়া নিচে দেয়া হলঃ

 

হাতে তৈরি খাবারের ব্যবসা

বিভিন্ন মানুষের রূচি বিভিন্ন রকম। এমন অনেক মানুষের রয়েছে যারা ঘরে তৈরি খাবার বেশি পছন্দ করেন।

এই বিষয়টা লক্ষ্য রেখে আপনিও হাতে তৈরি খাবারের ব্যবসা শুরু করতে পারেন। যেমন শীতের দিনে পিঠা বিক্রয় করতে পারেন, সারা বছরের জন্য বিরিয়ানি অফার করতে পারেন।

আপনি ব্যবসা শুরু করার পর আপনার আশেপাশের মানুষদের সেটা জানান এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে এ বিষয়টি প্রচার করুন। তাহলে আপনি ব্যবসায়ে সফলতা লাভ করবেন ইনশা আল্লাহ্।

 

বিভিন্ন পোশাক বিক্রয়ের মাধ্যমে ব্যবসা 

বর্তমানে অনেক মানুষ এই অনলাইন থেকে পোশাক ক্রয় করছেন। সবাই সব সময় মার্কেটে গিয়ে সাধারণত পণ্য ক্রয় করেন না।

বিভিন্ন কারণে তারা তাদের পছন্দের পোশাকটি অনলাইন থেকে অর্ডার করে থাকেন। মানুষ সাধারণত তুলনামূলক কম দামে ভালো মানের পণ্য পেতে পছন্দ করে।

তাই আপনি তাদের এই চাহিদার প্রতি লক্ষ্য রেখে মানসম্মত বিভিন্ন পোশাক বিক্রয়ের মাধ্যমে আয় করতে পারেন। যেমনঃ পাঞ্জাবি, শার্ট, গেঞ্জি ইত্যাদি।

 

ব্লগিংয়ের মাধ্যমে ব্যবসা

আপনি যদি ভাল আর্টিকেল লিখতে পারেন তাহলে ব্লগিংয়ের মাধ্যমে ঘরোয়া ব্যবসা করতে পারেন।

ডোমেইন হোস্টিং কিনে সুন্দর মত ওয়েবসাইট ডিজাইন করে নিজের জন্য একটা পার্সোনাল ব্লগ সাইট তৈরি করতে পারেন।

মানুষের জন্য উপকারী এমন আর্টিকেল নিয়মিত সেখানে পাবলিশ করবেন। যদি আপনার ওয়েবসাইটের বাড়ে তাহলে বিভিন্ন মানুষের বিজ্ঞাপন অর্থের বিনিময় পোস্ট করার মাধ্যমে আয় করতে পারেন। এটাকে পেইড প্রমোশন বলা হয়।

নিজের একটি ল্যাপটপ বা কম্পিউটার এবং ইন্টারনেট সংযোগ থাকলেই ব্লগের মাধ্যমে ঘরোয়া ব্যবসাতে নেমে যেতে পারেন। 

 

টেইলারিং বা সেলাই এর মাধ্যমে ব্যবসা

টেইলারিং বা সেলাইয়ের কাজ একটি নিত্য প্রয়োজনীয় বিষয়। বর্তমানে এই কাজের প্রচুর চাহিদা রয়েছে।

আপনার যদি সেলাই মেশিন থাকে তাহলে আপনিও এই লাভজনক ঘরোয়া ব্যবসায় নেমে যেতে পারেন। অনলাইনে ওয়েবসাইট খুলে মানুষকে আপনার কাজের ব্যাপারে জানাতে পারেন।

এছাড়াও ফেসবুকের মতো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে আপনার কাজগুলো অফার করতে পারেন। আপনার আশেপাশের পরিচিত মানুষদের আপনার কাজের ব্যাপারে জানাতে পারেন।

মানুষের কাপড়ের বিভিন্ন কাজ করার মাধ্যমে ভালো পরিমাণে আয় করছেন অনেকেই তাই আপনিও এ কাজটি ব্যাপারে ভেবে দেখতে পারেন।

শুধু অন্যের কাজ করে দেওয়াই নয় বরং নিজের ব্র্যান্ড প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করতে পারেন।

 

কার এবং বাইক ওয়াশ এর মাধ্যমে ব্যবসা

অনেক মানুষের কাছে কার এবং বাইক ওয়াশ করাটা বিরক্তিকর বিষয়। তাছাড়া অনেকে সময়ের কারণে এ কাজগুলো নিজে করতে চায়না।

তাই সে অর্থের বিনিময়ে তার কার এবং বাইক ওয়াশ করিয়ে নিতে চায়। মানুষের চাহিদা কে লক্ষ্য করে আপনিও কার এবং বাইক ওয়াশ এর ব্যবসা দিতে পারেন নিজের বাসাতেই।

বাড়ির নিচের খোলা প্লেস বা কোন বড় স্টোররুমের মত প্লেস থাকলে সেখানে আপনি কার এবং বাইক ওয়াশ এর ব্যবসা দিতে পারেন।

নিজস্ব একটি ওয়েবসাইট খুলে মানুষকে কার এবং বাইক ওয়াশ সম্পর্কিত বিষয়টা প্রচার করতে পারেন। এটি বেশ লাভজনক ব্যবসা গুলোর একটি।

আরো পড়ুন : গ্রামে করা যায় এমন ১০ টি ব্যবসা সম্পর্কে 

সফলতার জন্য যা করবেন 

 

যে ব্যবসাতেই নামেন না কেন আপনাকে সে ব্যবসা সম্পর্কে ভাল মত জ্ঞান অর্জন করতে হবে। বিভিন্ন খুঁটিনাটি বিষয় জানতে হবে। আর প্রাথমিক পর্যায়ে কম মূলধন বিনিয়োগ করে ব্যবসায় নামতে হবে।

 

সর্বোপরি সততা, ধৈর্য এবং পরিশ্রমের সাথে আপনাকে কাজ করতে হবে। মানুষের নিকট আপনার দেয়া নতুন ব্যবসাটি প্রচার করতে হবে। 

 

সাধারণত প্রচার যত বেশি হয় বিক্রয়ের পরিমাণ ততো বেড়ে যায়। সফলতা পেতে হলে আপনাকে এই কাজ গুলো যত্নসহকারে করতে হবে।

 

ঘরোয়া ব্যবসা একটি দারুন আয় প্রক্রিয়া। এতে ঝামেলা তুলনামূলক কম থাকে এবং বেকারত্ব দূরীকরণে এটি একটি দারুন উপায়। তাই আপনিও আপনার ঘরোয়া ব্যবসা শুরু করে দিতে পারেন।

 

Visited 3 times, 1 visit(s) today

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here