জাতীয় পরিচয়পত্র খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি ডকুমেন্টস৷ জাতীয় পরিচয়পত্রের মাধ্যমে যেমন বাংলাদেশি হিসেবে নিজের পরিচয় পেশ করা যায়, তেমনি দাপ্তরিক, প্রশাসনিক কাজে এর প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম৷
প্রয়োজনীয় এ ডকুমেন্টে না চাইতেও অনেক সময় ভুল তথ্য এসে পরে৷ যা সংশোধন করা জরুরি হয়ে দেখা দেয়৷
জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধনী করার পদ্ধতি ভুক্তভোগী বেশিরভাগ বেশিরভাগ মানুষই জানেন না৷ আবার বসতি পরিবর্তন, ছবি পরিবর্তন, ধর্ম পরিবর্তন ইত্যাদি নানাবিধ কারনেও জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধনের প্রয়োজন দেখা দেয়৷
জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধন করার নিয়ম জেনে নেওয়া তাই সকলের জন্য খুবই প্রয়োজনীয়৷ তাহলে আসুন, আজকে এ আর্টিকেলের মাধ্যমে জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধনের নিয়ম জেনে নেই৷
জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধন করার নিয়ম
পরিচয়পত্র সংশোধন করার জন্য নির্দিষ্ট কিছু নিয়ম বা পন্থা রয়েছে৷ প্রথমত, জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধন করতে ব্যক্তির নাম, পিতার নাম, মাতার নাম, জন্মতারিখ ইত্যাদি বিষয়গুলো প্রয়োজন হয়৷ আবার বলা চলে পরিচয়পত্র সংশোধন সাধারণত এসকল বিষয়েরই হয়ে থাকে৷
পরিচয়পত্র সংশোধন করার জন্য এক বা একাধিক সংশোধনী আনতে একই সমপরিমাণ ফি দিতে হয়৷ পরিচয়পত্র সংশোধনীর মধ্যে রয়েছে:
- নাম সংশোধন
- পিতা/মাতার নাম সংশোধন
- জন্মতারিখ সংশোধন
- পরিচয়পত্রের অন্যান্য তথ্য সংশোধন
- জাতীয় পরিচয়পত্রের ঠিকানা পরিবর্তন
নাম সংশোধনঃ
নামের কোন ভুল হলে সাধারণত নাম সংশোধন করার প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়৷ নাম সংশোধন করতে চাইলে ব্যক্তিকে তার এসএসসি, এইচএসসি বা শিক্ষাগত যোগ্যতার কোন সনদপত্র দাখিল করতে হবে৷
যদি কোন কারনে এসএসসি বা এরকম কোন সনদপত্র তার না থাকে তাহলে নিচের ডকুমেন্টসগুলোও সে সাবমিট করতে পারে৷
- অনলাইন জন্মনিবন্ধন সনদ
- পাসপোর্ট বা ড্রাইভিং লাইসেন্স
- এমপিওসিট বা সার্ভিস বহি
- বিয়ের কাবিননামা
পিতা বা মাতার নাম সংশোধনঃ
পিতা বা মাতার নাজমে কোনরূপ ভুল হলে তা সংশোধন করার প্রয়োজন দেখা দেয়৷ আর সেজন্য প্রয়োজন হয় কিছু ডকুমেন্টের৷ পিতা বা মাতার নাম সংশোধন করতে এসএসসি বা এইচএসসি অথবা সমমানের কোন সনদ দিতে হয়৷ সঙ্গে অবশ্যই পিতা-মাতার জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি বা জন্মনিবন্ধনের কপি দিতে হবে৷
পিতা-মাতার নাম সংশোধনের জন্য দাখিল করতে হবেঃ
- এসএসসি বা এইচএসসি অথবা সমমানের সনদ
অথবা,
- অনলাইন জন্ম নিবন্ধন সনদ
অথবা,
- পাসপোর্ট/ড্রাইভিং লাইসেন্স
সাথে নিম্নোক্ত যে কোন একটি দিতে হবেঃ
- পিতা-মাতার জাতীয় পরিচয়পত্র
- পিতা-মাতার জন্ম নিবন্ধন
- চাকরি করলে অফিস প্রধানের সত্যয়নপত্র
- পিতার সকল সন্তানের নামের ক্রম ও জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বরসহ ওয়ারিশন সনদ/প্রত্যয়নপত্র
- ভাই বা বোনের জাতীয় পরিচয়পত্র
ভোটার আইডি কার্ডের জন্মতারিখ সংশোধন করতে চাইলেঃ
ভোটার আইডি কার্ডের জন্মতারিখ সংশোধন করা প্রায়শই প্রয়োজন হয়ে পরে৷ জন্মতারিখ ভুল হলে কোন প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস ই করা যায়না৷
ভোটার আইডি কার্ডের জন্মতারিখ সংশোধন করার জন্য এসএসসি সনদপত্র প্রয়োজন পরে৷ এসএসসি সনদপত্রে উল্লেখিত জন্মসাল অনুযায়ী জন্মতারিখ সংশোধন করা যায়৷
এসএসসি সনদপত্র না থাকলেও জন্মতারিখ সংশোধন করা যায়৷ সে সকল সময়ে নিম্নের যে কোন ১টি বা ২ টি বা প্রয়োজন সাপেক্ষে সবগুলো ডকুমেন্টস সাবমিট করতে হতে পারে৷
জন্মতারিখ প্রমাণ করতে প্রয়োজনীয় প্রমাণপত্রঃ
- এসএসসি বা এইচএসসি অথবা সমমানের সনদ
- পাসপোর্ট
- অনলাইন জন্মনিবন্ধন
- ড্রাইভিং লাইসেন্স
জন্মতারিখ প্রমাণ করতে চাইলে ভ্যাটসহ আবেদন ফি পরবে ২৩০ টাকা৷
জাতীয় পরিচয়পত্রের অন্যান্য তথ্য সংশোধনঃ
জাতীয় পরিচয়পত্রে অন্যান্য অনেক তথ্য রয়েছে৷ যেমনঃ শিক্ষাগত যোগ্যতা, ব্যক্তির পেশা, মোবাইল নাম্বার, ধর্ম, ঠিকানা ইত্যাদি তথ্য৷
এসকল তথ্য সংশোধন করতে ১১৫ টাকা আবেদন ফি দিয়ে পরিচয়পত্র সংশোধন করতে হবে৷
ভোটার আইডি কার্ডের ঠিকানা পরিবর্তনঃ
সাধারণত মেয়েদের বেলায় ভোটার আইডি কার্ডের ঠিকানা পরিবর্তনের প্রয়োজন দেখা দেয়৷ বিয়ের পূর্বের ঠিকানা বিবাহের পর পরিবর্তনের প্রয়োজন হয়ে পরে৷ আর এসকল কথা মাথায় রেখে ভোটার আইডি কার্ডের ঠিকানা পরিবর্তনের সুযোগ রাখা হয়েছে৷
অনলাইনের মাধ্যমে ভোটার আইডি কার্ডের ঠিকানা পরিবর্তন করা যায়না বিধায় একটি ঠিকানা পরিবর্তন ফর্ম পূরণ করে নিকটস্থ নির্বাচন কমিশন অফিসে জমা দিতে হবে৷
পরিচয়পত্র সংশোধনে জটিলতাঃ
জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধনে কিছু জটিলতা দেখা দিতে পারে৷ পরিচয়পত্র সংশোধনের জন্য দেওয়া ডকুমেন্টসে যদি সঠিকভাবে তথ্য না থাকে তখন দেখা দেয় বিপত্তি৷
অনেকসময় প্রদত্ত ডকুমেন্টসে তথ্য সঠিকভাবে না থাকায় পরিচয়পত্র সংশোধনে বিপত্তি ঘটে৷ আপনি যদি এনআইডিতে দেওয়া আপনার নাম মোঃ আব্দুল আউয়াল মিয়া থেকে মোঃ আব্দুল আউয়াল করতে চান তবে আপনার দেওয়া ডকুমেন্টসে আপনার নাম মোঃ আব্দুল আউয়াল ই থাকতে হবে৷
তাই পরিচয়পত্র সংশোধন করার পূর্বে দেখে নিন যে, যে ডকুমেন্টস দিয়ে পরিচয়পত্র সংশোধন করতে চাচ্ছেন তা সঠিক কিনা৷ সঠিক তথ্য সে ডকুমেন্টসে না থাকলে পরিচয়পত্র সংশোধন করতে যেয়ে হয়রানি ব্যতীত অন্যকিছু পাবেন না৷
জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধন করতে কতদিন লাগেঃ
সাধারণত জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধন করতে ১৫ থেকে ১ মাসের ভেতরে সময় লাগে৷ সঠিক তথ্যসহ আবেদন করলে সময় কম লাগে৷ তবে কখনও কখনও অতিরিক্ত ভেরিফিকেশনের জন্য ৭-১০ দিন সময় বেশি লাগতে পারে৷
শেষকথা
জাতীয় পরিচয়পত্র বা পরিচয়পত্র সংশোধনের বিষয়ে পর্যাপ্ত জ্ঞান রাখা আবশ্যক৷ তাই এ বিষয়ে নিজে জানার পাশাপাশি অপরকে অবহিত করা উচিত৷
তাই এ সম্পর্কিত আজকের এ তথ্যবহুল আর্টিকেল থেকে অপরকে জানান ও আরও গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে জানতে আমাদের এ ওয়েবসাইটে নিয়মিত ভিজিট করুন৷