শখের ড্রাইভারই হোক বা প্রয়োজনের৷ ড্রাইভ করতে গেলে ড্রাইভিং লাইসেন্স থাকা অতীব প্রয়োজনীয়৷ জানুন ড্রাইভিং লাইসেন্সের নিয়ম সম্পর্কে।
ড্রাইভিং যেমন শখের বিষয় তেমনি অতিপ্রয়োজনীয়৷ যানজটের শহর ঢাকায়, সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে গন্তব্যে পৌছানোর নিত্য প্রতিযোগীতায় জিততে নিজস্ব বাহনের কোনই বিকল্প নেই৷ আর, বাইক বা কার রাইডিং যদি হয় শখের, তবে তো সারাদিনই এদিক-সেদিক ড্রাইভ করা হয়েই থাকে৷
ড্রাইভিং লাইসেন্স কি ?
যানবাহন চালনাকে বলা হয় ড্রাইভ আর যারা ড্রাইভ করেন তাদের বলা হয় ড্রাইভার৷ যানবাহন পরিচালনাকারী ড্রাইভারকে হতে হয় ড্রাইভিং এ দক্ষ৷ ড্রাইভার তার দক্ষতার পরিক্ষা দিয়ে সরকারীভাবে যে যানবাহন পরিচালনার ছাড়পত্র পান তাই হচ্ছে ড্রাইভিং লাইসেন্স৷
ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রাপ্তির পূর্বশর্তঃ
- লাইসেন্সের পূর্বশর্ত হচ্ছে লার্নার্স বা শিক্ষানবীস ড্রাইভিং লাইসেন্স৷
- ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য আবেদনকারী ব্যক্তির শিক্ষাগত যোগ্যতা হতে হবে কমপক্ষে ৮ম শ্রেণী পাশ৷
- পেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রাপ্তির জন্য বয়স হতে হবে নূন্যতম ২১ বছর ও অপেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য বয়স ১৮ বছর৷
- ব্যক্তিকে মানসিক ও শারীরিকভাবে সুস্থ থাকতে হবে৷
শিক্ষানবীস ড্রাইভিং লাইসেন্স পাওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস (কাগজপত্র)
- নির্ধারিত ফরমের মাধ্যমে অনলাইনে আবেদন করতে হবে৷
- ৩০০×৩০০ পিক্সেলে আবেদনকারীর ছবি৷ ছবির সাইজ সর্বোচ্চ ১৫০ কেবি হতে পারবে৷
- সর্বোচ্চ ৬০০ কেবি’র মধ্যে রেজিস্ট্রার্ড ডাক্তার কর্তৃক মেডিকেল সার্টিফিকেট৷
- জাতীয় পরিচয়পত্রের স্ক্যান কপি (সর্বোচ্চ ৬০০ কেবি)৷
- ইউটিলিটি বিলের স্ক্যান কপি যার সাইজ হতে পারবে সর্বোচ্চ ৬০০ কেবি৷
- ড্রাইভিং লাইসেন্স নবায়ন/পরিবর্তন/শ্রেণী সংযোজন/লাইসেন্সের ধরণ পরিবর্তন করতে চাইলে বিদ্যমান ড্রাইভিং লাইসেন্সের স্ক্যান কপি যার সাইজ হবে সর্বোচ্চ ৬০০ কেবি৷
রিটেন,ভাইভা ও ফিল্ড টেস্ট পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর পুনরায় একটি নির্ধারিত ফরমে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ও ফী প্রদান করে স্মার্টকার্ড ড্রাইভিং লাইসেন্স-এর জন্য সংশ্লিষ্ট সার্কেল অফিসে আবেদন করতে হবে।
আবেদনকারীর বায়োমেট্রিক্স (ডিজিটাল ছবি, ডিজিটাল স্বাক্ষর ও আঙ্গুলের ছাপ) নেওয়ার পর স্মার্ট কার্ড ইস্যু করা হয়।
স্মার্ট কার্ড ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রন্টিং সম্পন্ন হলে আবেদনকারীর মোবাইলে এসএমএস এর মাধ্যমে তা গ্রহণের বিষয়টি জানিয়ে দেওয়া হয়ে থাকে।
স্মার্টকার্ড ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রাপ্তির প্রক্রিয়া
স্মার্টফোন ড্রাইভিং লাইসেন্স পেতে হলে করণীয় বিষয়গুলো হচ্ছেঃ
- স্মার্টকার্ড ড্রাইভিং লাইসেন্সের নির্ধারিত ফর্মে আবেদন৷
- রেজিষ্টার্ড ডাক্তার কর্তৃক মেডিকেল সার্টিফিকেট সংগ্রহ করে জমা প্রদান৷
- ন্যাশনাল আইডি কার্ডের সত্যায়িত ফটোকপি৷
- পুলিশি তদন্ত প্রতিবেদন জমা
- সম্প্রতি তোলা ১ কপি পাসপোর্ট সাইজের ছবি৷
- পেশাদার লাইসেন্সের জন্য ১৬৭৯ টাকা ও অপেশাদারের জন্য ২৫৪২ টাকা বিআরটিএর নির্ধারিত ব্যাংকে জমাদানের রশিদ৷
অনলাইনে ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রাপ্তির প্রক্রিয়া
ড্রাইভিং লাইসেন্স পেতে আগ্রহী ব্যক্তিকে লার্নারস বা শিক্ষানবীস ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ সরকারী ওয়েবসাইট যার ঠিকানা bsp.brta.gov.bd তে আবেদন করতে হবে৷
আবেদন করার পর অনলাইনেই তার লাইসেন্স পাওয়ায় যাবে ও অনলাইন থেকে ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রিন্ট করে নিতে পারবেন৷
আবেদনের পর ২-৩ মাস প্রশিক্ষণ নেওয়া সাপেক্ষে নির্ধারিত তারিখে ও নির্ধারিত কেন্দ্রে লিখিত, মৌখিক এবং ফিল্ড টেস্টে অংশগ্রহণ করতে হবে৷
পরীক্ষায় অংশগ্রহনের জন্য প্রয়োজনীয় প্রমাণপত্র, শিক্ষানবীস ড্রাইভিং লাইসেন্সের মূল কপি ও লিখিত পরীক্ষায় অংশগ্রহনের জন্য সাথে করে কলম আনতে হবে৷
পেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্সের প্রকৃতি
পেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্স বিভিন্নরকম হতে পারে৷ যার মাঝে রয়েছে পেশাদার হালকা ড্রাইভিং লাইসেন্স, পেশাদার মধ্যম ড্রাইভিং লাইসেন্স ও পেশাদার ভারী ড্রাইভিং লাইসেন্স৷ এ তিন ড্রাইভিং লাইসেন্স পাবার প্রক্রিয়াও ভিন্নতর৷
পেশাদার হালকা ড্রাইভিং লাইসেন্সঃ পেশাদার হালকা ড্রাইভিং লাইসেন্স হচ্ছে শুরুর দিকের ড্রাইভিং লাইসেন্স৷
পেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্সে এর ব্যবহার ২৫০০ কেজি এর মাঝে যানবাহনের জন্য৷ এই ড্রাইভিং লাইসেন্স পেতে হলে প্রার্থীর বা আবেদনকারীর বয়স হতে হবে কমপক্ষে ২০ বছর৷
পেশাদার মধ্যম ড্রাইভিং লাইসেন্সঃ পেশাদার মধ্যম ড্রাইভিং লাইসেন্স যা কিনা মোটারযান ২৫০০ থেকে ৬৫০০ কেজির জন্য প্রযোজ্য হবে৷ পেশাদার মধ্যম ড্রাইভিং লাইসেন্স পেতে হলে প্রার্থীর বা আবেদনকারীর বয়স কমপক্ষে ২৫ বছর হতে হবে৷
পেশাদার ভারী ড্রাইভিং লাইসেন্সঃ পেশাদার ভারী ড্রাইভিং লাইসেন্স যা কিনা মোটরযান ৬৫০০ কেজির জন্য উর্ধ্বের জন্য প্রযোজ্য৷ পেশাদার ভারী ড্রাইভিং লাইসেন্স পেতে প্রার্থীর বয়স হতে হবে কমপক্ষে ২৬ বছর এবং পেশাদার মধ্যম ড্রাইভিং লাইসেন্স পাবার পর ৩ বছর মোটারযান চালনার অভিজ্ঞতা থাকতে হবে৷
ইতিকথা
ড্রাইভিং লাইসেন্স করা যেমন অতি প্রয়োজন তেমনি সঠিকভাবে ড্রাইভিং লাইসেন্স করার প্রক্রিয়া অনুসরণে লাইসেন্স প্রাপ্তি সহজতর হবার পাশাপাশি পরবর্তীতে নানাবিধ সমস্যার থেকে সহজে দূরে থাকা যায়৷
তাই ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রাপ্তির অনলাইন ও অফলাইনের পদ্ধতি যথাযথ অনুসরণ করে ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রাপ্তি নিশ্চিত করা উচিত৷