জেনে নিন তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম, ফজিলত ও বিধিবিধান | বাংলা আলো

0
36
জেনে নিন তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম, ফজিলত ও বিধিবিধান | বাংলা আলো

আসসালামুআ’লাইকুম। আশা করি আল্লাহর অশেষ রহমতে সবাই ভাল আছেন। আমরা প্রায় সবাই তাহাজ্জুদ নামাজের বিষয়ে কমবেশি জানি। কিন্তু তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম কি? কিভাবে পড়তে হয়? এর ফযীলত কি? এ বিষয়েই আমাদের আজকের এ আর্টিকেল। তো চলুন সেগুলো জেনে নেয়া যাকঃ 

 

তাহাজ্জুদ নামাজের ফযীলত

 

ফরজের পরে তাহাজ্জুদের নামাজ আল্লাহ্ তা’আলার নিকট সবচেয়ে প্রিয়। এটি নিরাপদে জান্নাত লাভের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপায়। এ নামাজ অনেক ফযীলতপূর্ণ। যে ব্যক্তি রাত জেগে তাহাজ্জুদের নামাজ আদায় করে; তাঁর ফযীলত বুঝার জন্য সহিহ্ বুখারীর একটি হাদিস আপনাদের জন্য উল্লেখ করা হলোঃ

 

উবাদাহ ইবনু সামিত (রাযি.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি রাতে জেগে ওঠে (উপরোক্ত) দু‘আ পড়ে-

 

(দু‘আর অর্থ) ‘‘এক আল্লাহ্ ব্যতীত প্রকৃত কোন ইলাহ নেই। তিনি এক তাঁর কোন শরীক নেই। রাজ্য তাঁরই। যাবতীয় প্রশংসা তাঁরই। তিনিই সব কিছুর উপরে শক্তিমান। যাবতীয় হা’মদ আল্লাহরই জন্য, আল্লাহ্ তা‘আলা পবিত্র, আল্লাহ্ ব্যতীত সত্য কোন ইলাহ নেই।

 

আল্লাহ্ মহান, গুনাহ হতে বাঁচার এবং নেক কাজ করার কোন শক্তি নেই আল্লাহর তাওফীক ব্যতীত।’’ অতঃপর বলে, ‘‘হে আল্লাহ্! আমাকে ক্ষমা করুন।’’ বা (অন্য কোন) দু‘আ করে, তাঁর দু‘আ কবূল করা হয়। অতঃপর উযূ করে (সালাত আদায় করলে) তার সালাত কবূল করা হয়।

 

তাহাজ্জুদ নামাজ আদায়ের সঠিক সময় কোনটি?

 

উত্তম সময় হলো অর্ধেক রাতের পরে। রাতের শেষ তৃতীয়াংশে পড়া উত্তম। তবে ঘুম থেকে না জাগার সম্ভাবনা থাকলে ইশার নামাজের পর দু রাকআত সুন্নতের পর ও বিতরের আগে তা পড়ে নেয়া জায়েয আছে।

 

রাতের শেষ তৃতীয়াংশে তাহাজ্জুদ আদায় করা এবং তখন দুআ করা খুব গুরুত্বপূর্ণ। ক্বুরআনের ২টি আয়াত এবং সহিহ মুসলিমের একটি হাদিস আপনাদের জন্য উল্লেখ করা হলোঃ-

 

کَانُوۡا  قَلِیۡلًا مِّنَ الَّیۡلِ مَا یَہۡجَعُوۡنَ 

 

অর্থঃ রাতের সামান্য অংশই এরা ঘুমিয়ে কাটাতো।

 

وَ  بِالۡاَسۡحَارِ ہُمۡ  یَسۡتَغۡفِرُوۡنَ 

 

অর্থঃ আর রাতের শেষ প্রহরে এরা ক্ষমা চাওয়ায় রত থাকতো।

 

(সূরা যারিয়াতঃ আয়াত ১৭ ও ১৮)

 

আবূ হুরাইরাহ্ (রাযি.) হতে বর্ণিত। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মহামহিম আল্লাহ্ তা‘আলা প্রতি রাতে রাতের শেষ তৃতীয়াংশ অবশিষ্ট থাকাকালে পৃথিবীর নিকটবর্তী আসমানে অবতরণ করে ঘোষণা করতে থাকেনঃ

 

“কে আছে এমন, যে আমাকে ডাকবে? আমি তার ডাকে সাড়া দিব। কে আছে এমন যে, আমার নিকট চাইবে? এবং আমি তাকে তা দিব। কে আছে এমন আমার নিকট ক্ষমা চাইবে? আমি তাকে ক্ষমা করব।” (মুসলিম ৬/২৩, হাঃ ৭৫৮, আহমাদ ৭৫৯৫)

 

সুতরাং, আমরা যারা আল্লাহর ক্ষমা পেতে চাই, আমাদের জীবনের বিভিন্ন সমস্যা থেকে পরিত্রাণ পেতে চাই, নিজেদের নেক ইচ্ছা এবং চাওয়ার বাস্তবায়ন চাই; তাদের উচিত তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম জেনে নেয়া এবং শেষ রাতে তাহাজ্জুদের নামাজের সিজদায় বেশি বেশি দুআ করা।

 

তাহাজ্জুদ নামাজ পড়ার নিয়ম

 

অনেকটা ফরয নামাজের মতোই তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম। যে কোন সূরা দিয়ে এ নামাজ আদায় করা যায়। দু রাকআত দু রাকআত করে যথা সম্ভব লম্বা কিরাআত, লম্বা রুকু ও সেজদা সহকারে একান্ত নিবিষ্ট মনে পড়তে হয়। তবে সংক্ষেপে নামাজ পড়াও জায়েয আছে; তবে যতটুকু পারা যায় লম্বা কিরাআত, লম্বা রুকু ও লম্বা সিজদা করে পড়া উত্তম।

 

রাকআত সংখ্যা হলো সর্ব নিম্ন দু রাকআত। আর সর্বোচ্চ ৮ রাকাআত পড়া উত্তম। তবে আরও বেশী পড়া জায়েয আছে। এরপরে বিতর নামায পড়া উত্তম। তবে আপনি যদি ইশার পর বিতর পড়ে থাকেন; তাহলে আপনাকে পুনরায় বিতর পড়তে হবেনা।

 

তাহাজ্জুদের নামাজ জামাআতেও পড়া যায়। রামাযান ছাড়া অন্য সময় মাঝে-মধ্যে জামাআতে পড়া জায়েজ আছে। তবে নিয়মিতভাবে নয়। রামাযানে তারাবীহ জামাআতে পড়া সুন্নত। এ নামাজ ঘরে পড়া উত্তম। তবে মসজিদে পড়াও জায়েজ আছে।

 

তাহাজ্জুদের নামাজের কিরাআত উঁচু বা নিচু উভয় আওয়াজে পড়া জায়েয আছে। তবে কারো কষ্টের কারণ হলে চুপিচুপি পড়া কর্তব্য। তাহাজ্জুদের নামাজ ছুটে গেলে; তাহাজ্জুদে অভ্যস্ত ব্যক্তি কোন কারণ বশত: রাতে পড়তে না পারলে সূর্য উঠার পর ও যুহরের সময় হওয়ার পূর্বে তা পড়ে নিতে পারে।

 

নিয়মিত তাহাজ্জুদ পড়া আল্লাহ্ তা’আলার নিকট অত্যন্ত পছন্দনীয় আমল। এতে সুবিধা অনুযায়ী ক্বুরআনের যে কোন সুরা পাঠ করা যায়। তবে যথা সম্ভব লম্বা সূরা, লম্বা রুকু ও সেজদা সহকারে দীর্ঘ সময় ধরে তাহাজ্জুদ পড়া উত্তম।

 

তবে কোন ব্যস্ততা বা অন্য কোন কারণে কেবল দু রাকআত বা চার রাকআত পড়লেও সওয়াব পাওয়া যাবে ইনশাআল্লাহ। তবে আমাদের উচিত, তাহাজ্জুদের নামাজ শেষ রাতের দিকে আদায় করা। এটা সবচেয়ে উত্তম।

 

তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম অত্যন্ত সহজ। আমাদের উচিত এ নামাজের প্রতি মনোযোগী ও যত্নবান হওয়া। আল্লাহ্ তা’আলা আমাদেরকে তার পছন্দীয় আমল গুলো সম্পাদন করার তাওফিক দান করুন। আমীন।

Visited 3 times, 1 visit(s) today

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here