পাইকারি ব্যবসা শুরু করার নিয়ম | ১০টি লাভজনক পাইকারি ব্যবসার আইডিয়া

0
92

যাদের কাছে যথেষ্ট পরিমাণে মূলধন আছে এবং পাইকারি ব্যবসা শুরু করার নিয়ম ও কিছু পাইকারি ব্যবসার আইডিয়া জানতে চান, তাদের জন্য আজকের এই আর্টিকেল।

 

আসলে পাইকারি ব্যবসা কাকে বলে? এটি একটি জরুরি প্রশ্ন। সহজ ভাষায়, উৎপাদনকারীর নিকট থেকে পণ্য সংগ্রহ করে খুচরা ব্যবসায়ীদের কাছে পণ্য বিক্রয়ের প্রক্রিয়া কে পাইকারি ব্যবসা বলে।

 

এটি মূলত নিজে কোন ব্যবসা নয়; বরং ব্যবসা এর একটি প্রক্রিয়া মাত্র। সাধারণত, প্রায় সব পণ্য অথবা দ্রব্যেরই পাইকারি ব্যবসা করা যায়। পাইকারি ব্যবসা যিনি করেন, তিনি উৎপাদক ও খুচরা ব্যবসায়ী বা ভোক্তার মাঝে সেতুবন্ধন হিসেবে কাজ করেন।

পাইকারি ব্যবসা শুরু করার নিয়ম

 

যে পণ্য নিয়েই পাইকারি ব্যবসা শুরু করেন না কেন, এক্ষেত্রে মূলধনের পরিমাণ বিবেচ্য বিষয়। কেননা, ভাল পরিমাণে মূলধন ছাড়া এই প্রক্রিয়ায় ব্যবসা করা যায় না।

 

মূলধন কত বিনিয়োগ করতে হয় – এটার সংখ্যা নির্ধারণ করতে হবে আপনাকে আপনার বাছাই করা ব্যবসায়ীক পণ্যের ভিত্তিতে। যেমন ধরুন, ফলের পাইকারি ব্যবসা করতে ১ লক্ষ টাকাই যথেষ্ট।

 

কিন্তু জুতা অথবা রডের পাইকারি ব্যবসার জন্য এই মূলধন যথেষ্ট নয়। তাই পণ্যের মান অনুযায়ী মূলধন হিসাব করতে হবে আপনাকে। এছাড়াও আপনি যে পণ্যের পাইকারি ব্যবসা শুরু করবেন, সে পণ্যে উৎপাদক বা উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান খুঁজে বের করতে হবে।

 

তাদের সাথে কথা-বার্তা বলে মাল আনতে হবে। পাইকারিভাবে ব্যবসা করতে হলে বিপুল পরিমাণে মাল কিনতে হয়। এজন্য পণ্য মজুদ করার জন্য গোডাউন এর ব্যবস্থাও আপনাকে করতে হবে।

 

এর পাশাপাশি ট্রেড লাইসেন্স করে ফেলতে হবে। কেননা, পাইকারি ব্যবসা হলো বেশি সময় ধরে করার একটি ব্যবসা। দীর্ঘদিন ঝামেলামুক্ত ভাবে এবং সুবিধাজনক পন্থায় ব্যবসা করার জন্য ট্রেড লাইসেন্স গুরুত্বপূর্ণ।

 

আরো জানুন : ১০ টি অনলাইন ব্যবসা সম্পর্কে 

 

তাছাড়াও, আপনার ব্যবসায়ীক পণ্যের জন্য ক্রেতাও যোগাড় করতে হবে। কারণ, পণ্য ক্রেতা অথবা খুচরা ব্যবসায়ীর নিকট অর্থের বিনিময়ে হস্তান্তর ব্যাতিত ব্যবসা করা সম্ভব নয়।

 

সুতরাং উপরোক্ত তথ্যের ভিত্তিতে পাইকারি ব্যবসা শুরু করা জন্য ৪টি নিয়ম আমরা জানতে পারলাম। সেগুলো হলোঃ

 

  • যথেষ্ট পরিমাণে মূলধনের ব্যবস্থা
  • উৎপাদনকারীর সাথে যুক্ত হয়ে পণ্য সংগ্রহ
  • ট্রেড লাইসেন্স করা
  • ক্রেতার যোগান

 

১০টি লাভজনক পাইকারি ব্যবসার আইডিয়া

 

বিভিন্ন ধরনের পণ্যর পাইকারি ব্যবসা রয়েছে। তার মধ্যে লাভজনক পাইকারি ব্যবসার আইডিয়া নীচে দেয়া হলোঃ

 

১। ফলের পাইকারি ব্যবসা

 

স্বাস্থ্যসম্মত এবং শরীরের জন্য বিভিন্ন দিক দিয়ে উপকারিতার জন্য ফল সবার কাছে পরিচিত। বাংলাদেশে ফলের বাজারে প্রচুর পরিমাণে ফল প্রতিদিন বিক্রয় হয়ে থাকে।

 

কলা, আপেল, আঙুর সহ বিভিন্ন ফলের অনেক চাহিদা রয়েছে। কলার কথা বিশেষভাবে বলি, তাহলে এটি দোকানে বিক্রয়ের পাশাপাশি বিভিন্ন চায়ের দোকানেও প্রতিদিন প্রচুর বিক্রী হয়ে থাকে।

 

পুরনো ঢাকার বাদামতলী হলো ফলের বৃহৎ মার্কেট; যেখান থেকে আপনি কম দামে ফল পাইকারিভাবে কিনে নিজে পাইকারি ব্যবসা করতে পারেন। ফল সাধারণত, বক্স হিসাবে বিক্রয় হয়। প্রতি বক্সে ১৬ থেকে ২০ কেজির মতো ফল থাকে।

 

২। চালের পাইকারি ব্যবসা

 

বাংলাদেশের মানুষের প্রধান খাদ্য হলো ভাত। তাই চালের রয়েছে বিশাল চাহিদা। ধান উৎপাদনে বাংলাদেশ বিশ্বের শীর্ষ দেশগুলোর একটি। চালের পাইকারি ব্যবসা লাভজনক পাইকারি ব্যবসা এর মধ্যে একটি।

 

চালের পাইকারি ব্যবসা এর জন্য সাধারণত বৃহৎ মূলধনের দরকার হয়। নূন্যতম ৮ লক্ষ টাকা হলে আপনি চালের পাইকারি ব্যবসা শুরু করতে পারেন। বাংলাদেশের পাবনা জেলা চালের জন্য বিখ্যাত।

 

এছাড়া কুমিল্লাতে স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী কালো চাল পাওয়া যায়। তাই আপনি পাবনা ও কুমিল্লা থেকে কম দামে চাল কিনে পাইকারি ব্যবসা করতে পারেন।

 

৩। চা পাতার পাইকারি ব্যবসা

 

শুধুমাত্র বাংলাদেশেই নয় বরং সারা বিশ্বের একটি জনপ্রিয় পানীয় হলো চা। শ্রীলঙ্কা হলো চা উৎপাদনে বিশ্বের শীর্ষ দেশগুলোর একটি। এছাড়া বাংলাদেশের সিলেট অঞ্চলও চা উৎপাদনে বেশ ভাল অবস্থানে আছে।

 

চা এর বিভিন্ন ক্যাটাগরি রয়েছে। যেমনঃ ওলোং চা, সবুজ চা, প্যারাগুয়ে চা। এছাড়া চা পাতা সাধারণতঃ সিডি, আরডি, ডাস্ট, বিওপি প্রভৃতি গ্রেডের হয়ে থাকে।

 

আপনি নূন্যতম দেড় লক্ষ টাকা বিনিয়োগে চা পাতার পাইকারি ব্যবসা শুরু করতে পারেন। সিলেট থেকে সরাসরি উৎপাদকের কাছ থেকে কম চা পাতা সংগ্রহ করে সেগুলো খুচরা ব্যবসায়ী এবং সাধারণ ক্রেতার কাছে বিক্রয়ের মাধ্যমে ব্যবসা করতে পারেন।

 

৪। রেডিমেড কাপড়ের পাইকারি ব্যবসা

 

রেডিমেড গার্মেন্টস কাপড়ের প্রচুর চাহিদা রয়েছে বর্তমানে। ছোট বাচ্চা থেকে শুরু করে যুবক এবং বয়স্ক লোকদের বিভিন্ন রেডিমেড কাপড়ের ব্যবসা বেশ ভালো চলছে অনেক অাগে থেকেই।

 

আপনার যদি পরিচিত এমন কোন গার্মেন্টস থাকে, তাহলে মানসম্মত বিভিন্ন রেডিমেড কাপড়; যেমন – বাচ্চাদের পোশাক, বড়দের টি-শার্ট, পাঞ্জাবি প্রভৃতি সেখান থেকে স্বল্প মূল্যে সংগ্রহ করতে পারেন।

 

যেসব জায়গা রেডিমেড পোশাক বিক্রয়ের উপযোগী; এমন স্থানে দোকান নিয়ে এই পাইকারি ব্যবসা শুরু করতে পারেন। প্রাথমিকভাবে, ২ লক্ষ টাকা মূলধন যথেষ্ট এই ব্যবসা শুরু করার জন্য।

 

৫। থান কাপড়ের পাইকারি ব্যবসা

 

গজ ভিত্তিতে থান কাপড় অনেকেই কিনে থাকেন বিভিন্ন প্রয়োজনে। অনেকে কাপড় কিনে নিজে টেইলর দিয়ে তৈরি করে পড়তে পছন্দ করেন। আবার গার্মেন্টস এ পোশাক তৈরির জন্যও থান কাপড়ের প্রয়োজন আছে।

 

পুরনো ঢাকার ইসলামপুরে বিভিন্ন ধরনের থান কাপড় পাওয়া যায়। গ্রামে যারা থান কাপড় তৈরি করেন, তারা মূলত উৎপাদক। তাদের নিকট থেকে কম দামে থান কাপড় ক্রয় করে সেগুলো খুচরা ব্যবসায়ীদের নিকট এবং সাধারণ ক্রেতাদের নিকট বিক্রয়ের মাধ্যমে পাইকারি ব্যবসা করতে পারেন।

 

৬। রডের পাইকারি ব্যবসা

 

এখন প্রচুর পরিমাণে বিল্ডিং তৈরির কাজ দেখা যায়। তাছাড়া বিভিন্ন প্রয়োজনে রড কিনতে হয় মানুষকে। মজবুত দালানের জন্য ভাল মানে রড অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

 

বর্তমানে BSRM, KSRM এর মতো বিভিন্ন কোম্পানির রড রয়েছে, যেগুলো মানে বেশ ভাল। আপনি যদি ভাল মাের রড উৎপাদনকারীর নিকট থেকে ভাল রড সংগ্রহ করতে পারেন এবং পর্যাপ্ত মূলধন থাকে, তাহলে রডের পাইকারি ব্যবসা করতে পারেন।

 

রডের ব্যবসার ক্ষেত্রে আপনার অবশ্যই ক্রেতা এবং বাজার থাকা জরুরি। কেননা, রডের ক্রেতা সবাই নয়, তাই বাজারজাতকরণের বিষয়টা খেয়াল রাখতে হবে। পর্যাপ্ত ক্রেতা এবং বাজারজাত সুবিধা থাকলে আপনি এ লাভজনক পাইকারি ব্যবসাটি করতে পারেন।

 

৭। জুতার পাইকারি ব্যবসা

 

সঠিকভাবে করতে পারলে জুতার পাইকারি ব্যবসা করে মাসে লক্ষাধিক টাকা অর্জন অসম্ভব কিছু নয়। কারণ, বর্তমান সময়ের প্রেক্ষাপটে জুতা হলো বহুল চাহিদাসম্পন্ন একটি পণ্য।

 

জুতার বিভিন্ন ক্যাটাগরি এবং সাইজ রয়েছে। এসব সম্বন্ধে আপনার জ্ঞান থাকলে জুতা উৎপাদনকারীর নিকট থেকে বিভিন্ন ধরনের জুতা কিনে স্টক করে পাইকারি ব্যবসা করতে পারেন।

 

শুধু দোকান বা শো-রুমেই নয়; বরং এর পাশাপাশি অনলাইনে মার্কেটিং করার মাধ্যমে জুতার পাইকারি ব্যবসা করতে পারেন। এর ফলে এ ব্যবসায় অল্প সময়েই লাভবান হতে পারবেন ইনশা আল্লাহ্।

 

৮। ইলেক্ট্রিক পণ্যের পাইকারি ব্যবসা

 

তার, সকেট, সুইচ সহ বিভিন্ন খুঁটিনাটি ইলেক্ট্রিক পণ্যের বেশ ভালো চাহিদা রয়েছে। আপনি এসব পণ্যের পাইকারি ব্যবসা করতে পারেন। এজন্য আপনার প্রয়োজন ২টি বিষয়।

 

তাহলো উপযুক্ত ব্যবসায়ীক স্থান এবং সঠিক উৎপাদকের নিকট হলে মাল সংগ্রহ করা। পুরনো ঢাকার গুলিস্তানের কাপ্তান বাজার কমপ্লেক্স হলো বৃহত্তম ইলেক্ট্রিক মার্কেট। এখান থেকে পাইকারিভাবে ব্যবসা করার জন্য কম দামে মাল সংগ্রহ করতে পারেন।

 

তবে, আপনি যেখান থেকেই মাল কিনেন না কেন, প্রতারক হতে সাবধানে থাকবেন এবং পণ্য কোর পূর্বে অবশ্যই ভালভাবে যাচাই করে নিবেন। ইলেক্ট্রিক পণ্যের পাইকারি ব্যবসা লাভজনক; তাই আপনিও তা শুরু করতে পারেন।

 

৯। ভোজ্যতেলের পাইকারি ব্যবসা

 

প্রতিদিন বাসা-বাড়ি থেকে শুরু করে বিভিন্ন ধরনের হোটেল এবং রেঁস্তোরায় ভোজ্যতেল রান্নার কাজে ব্যবহৃত হয়। ভোজ্যতেল হিসেবে সয়াবিন তেল, সরিষার তেল এবং অর্গানিক অলিভ অয়েল ব্যবহার করা হয়।

 

স্বাস্থ্যসম্মত এবং মান বিবেচনায় সবচেয়ে উত্তম হলো অর্গানিক অলিভ অয়েল। যদিও আমাদের দেশে তা খুব কম লোকই ব্যবহার করে। আপনি বিভিন্ন ধরনের তেল উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান থেকে সংগ্রহ করে পাইকারি ব্যবসা করতে পারেন।

 

বাংলাদেশের বিভিন্ন গ্রামাঞ্চলে আসল সরিষার তেল এবং অলিভ অয়েল পাওয়া যায়। আপনি সেসব খাঁটি তেল শহরে এনে পাইকারি ব্যবসা করতে পারেন। এ ব্যবসা লাভজনক; কেননা মানুষ খাঁটি পণ্য কেনার ব্যাপারে বেশ আগ্রহী।

 

১০। প্লাস্টিক প্রোডাক্টের পাইকারি ব্যবসা

 

বর্তমানে বিভিন্ন কাজের জন্য অনেক ধরনের প্লাস্টিকের পণ্য রয়েছে। বয়াম, চামচ, জগ থেকে শুরু করে অনেক কিছু, যা কিনা আমাদের দৈনন্দিন বিভিন্ন কাজে ব্যবহৃত হয়ে থাকে।

 

দামে বেশ সস্তা হওয়ায় প্লাস্টিক এর পণ্য ক্রয়ে মানুষের আগ্রহ রয়েছে। তাই আপনি প্লাস্টিকের মানসম্মত পণ্য উৎপাদনকারীর নিকট থেকে ক্রয় করে পাইকারি ব্যবসা করতে পারেন।

 

এক্ষেত্রে ২ লক্ষ টাকা মূলধন থাকলে সহজেই এ ব্যবসা শুরু করা সম্ভব। তবে ব্যবসায়ীক পণ্যগুলো যেন মানসম্মত হয়, সেটা অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে আপনাকে।

 

আপনি যদি পাইকারি ব্যবসা করে সফলতা লাভ করতে চান; তাহলে আপনাকে শৃঙ্খলার সাথে সঠিকভাবে কাজ করতে হবে। আপনার যে ব্যবসা তে আগ্রহ আছে, সেটা পারিপার্শ্বিক অবস্থানুযায়ী লাভজনক কি না তা খতিয়ে দেখতে হবে।

 

যে পণ্য নিয়ে পাইকারি ব্যবসা করবেন, তার জন্য উপযুক্ত স্থান নির্বাচন এবং পর্যাপ্ত মূলধন বিনিয়োগ করতে হবে। এর পাশাপাশি ধৈর্য্য, সততা, নিয়মানুবর্তিতা এবং কঠোর পরিশ্রম এর সাথে কাজ করে যেতে পারলে ব্যাপক সফলতা পাওয়া অসম্ভব কিছু নয়।

 

Visited 14 times, 1 visit(s) today

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here