–
সহজ ও নিরাপদ বিনিয়োগের মাধ্যম অনেকেই পোস্ট অফিসে টাকা রাখতে চায়। এক্ষেত্রে পোস্ট অফিসে টাকা রাখার নিয়ম সংক্রান্ত আর্টিকেলটিতে কভার করা হয়েছে সেই সকল বিষয় যার যা অনুসরণ করার মাধ্যমে সঠিক এবং নিরাপদ উপায় পোস্ট অফিসে টাকা জমা রাখতে পারবেন।
সাল ১৮৭২ নিয়ম করা হয় এখন থেকে পোস্ট অফিসে যে কেউ টাকা জমা রাখতে পারবে। যা তখন থেকে এখন অব্দি ডাক বিভাগের আওতায় ডাকঘর সঞ্চয় ব্যাংকে টাকা বিনিয়োগ করার সবচাইতে নিরাপদ হিসাবে গণ্য করা হয়। যেহেতু ডাকঘর কোন আর্থিক প্রতিষ্ঠান নয়, তাই এখানে সরাসরি অর্থ জমা রাখার বিধি নিয়ম নেই। পোস্ট অফিসে টাকা রাখার উপায় হচ্ছে সঞ্চয়পত্র ক্রয়।
তবে এখানে আরো একটি বিশেষ সুবিধা রয়েছে যে এখানে অর্থ জমা রাখার জন্য সঞ্চয় পত্র ব্যবহার করা হয় যা অন্যান্য বেসরকারি ব্যাংকগুলোর মত নয়। এখান থেকে ক্রয় কৃত সঞ্চয় পত্র আপনি যেকোনো সময় ইচ্ছে হলে ভাঙ্গিয়ে টাকা তে কনভার্ট করতে পারেন অথবা উত্তোলন করে নিতে পারেন।
যেখানে ঝুঁকি কম সেখানে মনে হয় কিন্তু কম এটা অবশ্যই মেনে চলতে হবে যার কারণে পোস্ট অফিসে টাকা রাখা অন্যান্য বেসরকারি ব্যাংকে টাকা রাখার তুলনায় তুলনামূলক কম মুনাফা প্রদান করে। তবে যারা একদম ঝামেলাবিহীন এবং নিরাপদ ভাবে নিজের টাকা জমা রাখতে চান তাদের জন্য সবচেয়ে ভাল মাধ্যম হয়েছে পোস্ট অফিস।
এই পর্যায়ে পোস্ট অফিসে টাকা রাখার নিয়ম সংক্রান্ত যতগুলো বিষয় রয়েছে তার প্রত্যেকটি এক এক করে উপস্থাপন করা হবে যেখানে পোস্ট অফিসের একাউন্ট খোলা থেকে শুরু করে পোস্ট অফিস থেকে পুনরায় ওই টাকা উত্তোলন করা সংক্রান্ত প্রত্যেকটা বিষয় তথ্য প্রদান করা হবে এই আর্টিকেলের মাধ্যমেই।
প্রথমেই জেনে নিব পোস্ট অফিসে টাকা রাখার জন্য যে একাউন্ট খুলতে হয় সে একাউন্ট খোলার জন্য একজন গ্রাহকের কি কি ডকুমেন্টস প্রয়োজন হতে পারে।
পোস্ট অফিসে একাউন্ট খুলতে যা যা প্রয়োজন
- যে ব্যক্তি টাকা রাখবে উক্ত ব্যক্তির জাতীয় পরিচয় পত্র এবং দুই কপি পাসপোর্ট সাইজের ছবি
- যাকে নমিনি রাখা হবে তার দুই কপি ছবি
- ২ লক্ষ টাকার বেশি রাখা যায় না বিধায় চেকের মাধ্যমে পরিশোধ করতে হবে
- চেকের মাধ্যমে পরিশোধ করার ক্ষেত্রে টিন সার্টিফিকেট এর প্রয়োজন হবে
- চেকের অপর পাতায় “Good for Payment” লিখে ব্যাংক থেকে ইন্টিমেশন ফরম জমা দিতে হবে
- যে টাকা আমানত রাখবে তাকে সশরীরে উপস্থিত থাকতে হবে
পোস্ট অফিসে একাউন্ট খোলার নিয়ম
পোস্ট অফিসের একাউন্ট খোলার জন্য আপনাকে সশরীরে উপস্থিত থাকতে হবে এটা বাধ্যতামূলক কারণ সেখান থেকে উক্ত ফরমের আপনাকে সাইন করতে হবে। বলতো পোস্ট অফিসে দুই ধরনের একাউন্ট খোলার নিয়ম রয়েছে একটি হচ্ছে মেয়াদ ভিত্তিক এবং অন্যটি হচ্ছে সাধারণ হিসাব একাউন্ট। এক এক করে দুই ধরনের হিসাব খোলার নিয়ম সম্পর্কে জানাচ্ছি।
মেয়াদী হিসাব একাউন্ট
মেয়াদ ভিত্তিক ডাকঘর সঞ্চয় পত্র ক্রয় অনেকটা ব্যাংকের ফিক্সড ডিপোজিট সিস্টেম এর মত। সর্বনিম্ন তিন বছর মেয়াদী সঞ্চয়পত্র ক্রয়ের মাধ্যমে অর্থ জমা রাখতে পারবেন। সাধারণত দেখা যায় মেয়াদ ভিত্তিক টাকা জমা রাখার ক্ষেত্রে সেটা সাধারণ হিসাবের তুলনায় অধিক মুনাফা প্রদান করে থাকে।
মুনাফার হার মেয়াদান্তে মুনাফা ১১.২৮%। মেয়াদী হিসাব ৩ বছরের জন্য করতে হবে যদি আপনি ১১.২৮% হারে মুনাফা পেতে চান। তবে ১ (এক) বছর, ২ (দুই) বছর অথবা ৩ (তিন) বছর মেয়াদী হিসাব খোলা যায়। এক্ষেত্রে মুনাফার হার ১ (এক) বছরের জন্য ১০.২০%, ২ (দুই) বছরের জন্য ১০.৭০% এবং ৩ (তিন) বছরের জন্য ১১.২৮%। আমানতকারী ইচ্ছা করলে প্রতি ৬ মাস অন্তর মুনাফা উত্তোলন করতে পারেন। সে ক্ষেত্রে ১ম বছরে ৯.০০%, ২য় বছরে ৯.৫০% এবং ৩য় বছরে ১০.০০% হারে মুনাফা প্রদেয়।
এক্ষেত্রে মুনাফা থেকে ১০% কর্তন করা হবে। সর্বোচ্চ ১০ লক্ষ টাকা এককভাবে এবং একই ব্যাপার যৌথভাবে ২০ লক্ষ টাকা জমা রাখা যাবে। বাংলাদেশের যেকোনো নাগরিক নিজে অথবা নাবালক এর পক্ষে হয়ে সঞ্চয় পত্র ক্রয় করতে পারেন। তিন বছর মেয়াদী সঞ্চয় পত্রে যদি এক লক্ষ টাকার সঞ্চয়পত্র ক্রয় করে থাকেন তাহলে বছর শেষে ৩০,৪৫৬ টাকা রিটার্ন পাবেন।
সাধারণ হিসাব
আপনি যদি পোস্ট অফিসে সাধারণ হিসাব খোলার মাধ্যমে টাকা জমা রাখতে চান, তবে এ ক্ষেত্রে মাসিক ভিত্তিতে হিসাব করা হয়ে থাকবে। যেখানে আপনি চাইলে প্রতি মাসে মুনাফা টাকা উত্তোলন করার সুযোগ পাবেন। এক্ষেত্রে প্রতিবছর ৭.৫% হারে মুনাফা প্রদান করা হবে যেখান থেকে মুনাফার ওপর ১০% অর্থ করা হবে হিসাবে।
হাফিজউদ্দিন পোস্ট অফিসের সাধারণ হিসাব ফুলের থাকেন তবে বছর শেষে মুনাফার পরিমাণ দাঁড়াবে ৬৭৫০ টাকা। এক ব্যক্তি ১০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত জমা রাখতে পারবে এবং যৌথভাবে ২০ লক্ষ টাকা। মেয়াদী হিসাব এর অনুরূপ সাধারণ হিসাব ও বাংলাদেশের সকল ধরনের নাগরিকরা খুলতে পারবে।
একাউন্ট খোলার নিয়ম
জানালাম ডাকঘর পোস্ট অফিসে টাকা জমা রাখার জন্য যে দুইটি প্রধান হিসাব রয়েছে সেগুলো। আপনি যেই অ্যাকাউন্টটি খুলে থাকেন না কেন, একাউন্ট খোলার নিয়ম একই থাকবে। এ ক্ষেত্রে উক্ত একাউন্ট এর ফরম পূরণ করতে হবে আপনাকে উপস্থিত থেকে সেখানে স্বাক্ষর প্রদান করতে হবে। অ্যাকাউন্ট খোলার কার্যক্রম সম্পন্ন হওয়ার পর আপনাকে একটি পাপড়ি দেয়া হবে যার মাধ্যমে পরবর্তীতে টাকা উত্তোলন অন্যান্য লেনদেন করতে পারবেন।
উল্লেখ্য যে একজন ব্যক্তি একটি মাত্র একাউন্ট খুলতে পারবেন। যদি এমনটা দেখা যায় আপনি একটি পোস্ট অফিসে গিয়ে একটি একাউন্ট খোলার পর অন্য একটি পোস্ট অফিস থেকেও আরো একটি একাউন্ট খুললে তবে শেষ দিকে রীতিমত অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হবে।
পোস্ট অফিসে টাকা জমা রাখার নিয়ম
এখন অব্দি ও পোস্ট অফিসের সাথে যুক্ত কার্যক্রমগুলো অনলাইন ভিত্তিক হয়ে উঠেনি যার কারণে পোস্ট অফিসের টাকা জমা রাখা হোক বা উত্তোলন করা অনলাইনে সেটা করা সম্ভব হচ্ছে না। অন্যদিকে পোস্ট অফিস সেতু একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান বা ব্যাংক নয় সেহেতু সরাসরি টাকা জমা রাখার কোনো ব্যবস্থা এখানে থাকছে না। পোস্ট অফিসের মাধ্যমে টাকা জমা রাখার জন্য আপনাকে যেহেতু সঞ্চয় পত্র ক্রয় করতে হবে সে ক্ষেত্রে আপনাকে সরাসরি পোস্ট অফিসে উপস্থিত হয়ে সঞ্চয় পত্র ক্রয় বিক্রয় সংক্রান্ত কার্যক্রম ঘটাতে হবে।
অ্যাকাউন্ট খোলার সময় আপনাকে পাশ হই দেয়া হয়েছিল সেটি অবশ্যই রয়েছে আপনার যখন আপনি সঞ্চয়পত্র ক্রয় অথবা বিক্রয় সংক্রান্ত কার্যক্রম সংঘটিত করবেন তখন উক্ত পাস বইয়ের মাধ্যমে যে সকল কাজ করা হবে।
এক্ষেত্রে আপনি নগদ অর্থ নিয়ে সঞ্চয় পত্র ক্রয় করতে পারবেন তবে সেটা কোনভাবেই 2 লক্ষ টাকার বেশি নয়। আপনি যদি লক্ষ টাকার অধিক মূল্যের সঞ্চয়পত্র ক্রয় করতে চান তবে অবশ্যই আপনাকে চেকের মাধ্যমে উক্ত সঞ্চয়পত্রের অর্থ পরিশোধ করতে হবে বা জমাকৃত অর্থ প্রদান করতে হবে।
তাহলে বিষয়টি এমন হচ্ছে যে, আপনাকে প্রথমে টাকা জমা রাখতে হবে ব্যাংকে এবং উক্ত ব্যাংক থেকে চেক গ্রহণ করে সেটি ব্যবহার করে ডাকঘর সঞ্চয় পত্র ক্রয় করার মাধ্যমে পোস্ট অফিসে টাকা জমা রাখা যাবে।
পোস্ট অফিসে টাকা রাখার নিয়ম সংক্রান্ত কিছু প্রশ্ন উত্তর
১) পোস্ট অফিসে টাকা রাখা নিরাপদ কি-না?
স্বাভাবিকভাবে এটা অনেকে জানতে চাই যে পোস্ট অফিসে টাকা রাখার সলেই নিরাপদ হবে কিনা এ ক্ষেত্রে বলতে হচ্ছে, সঞ্চয়পত্র ক্রয় বা ডাকঘর সঞ্চয় ব্যাংকে টাকা জমা রাখা হয়েছে যেহেতু এটি একটি সরকারি বিনিয়োগ, সেহেতু নিশ্চিন্তে এখানে টাকা রাখা যাবে এবং এটা অন্যান্য বেসরকারি ব্যাংকে টাকা রাখার চেয়ে অধিক গুণ বেশি নিরাপদ।
২) পোস্ট অফিসে সর্বোচ্চ কত টাকা জমা রাখা যায়?
পোস্ট অফিসে সঞ্চয়পত্র ক্রয়ের মাধ্যমে আপনি এককভাবে ১০ লক্ষ টাকা এবং যদি যৌথ একাউন্ট করে থাকেন সেক্ষেত্রে ২০ লক্ষ টাকা অব্দি সঞ্চয়পত্রের টাকা জমা রাখতে পারবেন।
৩) পোস্ট অফিসে টাকা রাখা কি লাভজনক হবে?
যেহেতু অন্যান্য ব্যাংকের তুলনায় পোস্ট অফিসে টাকা রাখার ক্ষেত্রে মুনাফার হার শতকরা তুলনামূলকভাবে কম সেহেতু পোস্ট অফিসে টাকা রাখার চেয়ে ব্যাংকে টাকা রাখা বেশি লাভজনক হবে। তবে যেহেতু পোস্ট অফিসে টাকা রাখার ক্ষেত্রে কোন প্রকার ঝুঁকি থাকছে না অন্যদিকে ব্যাংকে টাকা রাখা বেশ ঝুঁকিপূর্ণ তাই আপনি যদি নিরাপদ বিনিয়োগ করতে চান তবে আপনার জন্য পোস্ট অফিসে টাকা রাখা লাভজনক হবে।
৪) মেয়াদী হিসাব সঞ্চয়পত্র ক্রয় নাকি সাধারণ হিসাব কোন একাউন্টে টাকা রাখা বেশি ভালো?
এখানে আপনার প্রয়োজন এর উপর নির্ভর করবে আপনি কোনটিতে যাবেন কেননা মেয়াদী হিসেবে আপনাকে একটি নির্দিষ্ট সময় অব্দি টাকা উত্তোলন করার কোন সুযোগ থাকছে না তবে মেয়াদী হিসেবে সাধারন হিসেবে তুলনায় অধিক মুনাফা প্রদান করা হয় তাই আপনার যদি সময় প্রযাপ্ত থেকে থাকে এবং একটি নির্দিষ্ট সময় পরেই টাকা উত্তোলন করতে চান তবে আপনি মেয়াদী হিসেবে সঞ্চয়পত্র ক্রয় করতে পারেন। অন্যদিকে আপনার যদি প্রতিমাসে মুনাফার টাকা প্রয়োজন হয় এবং যেকোন সময়ে সঞ্চয়পত্র বিক্রি করা বা ভেঙে টাকা তোলার ইচ্ছা থাকে তবে আপনি সাধারণ হিসাব একাউন্ট খুলে সেখানে টাকা জমা রাখতে পারেন।
পরিশেষে কিছু কথা
অতএব, এই ছিল পোস্ট অফিসে টাকা রাখার নিয়ম সংক্রান্ত বিস্তারিত তথ্য আর্টিকেল। যেখানে আলোচনা করা হয়েছে পোস্ট অফিসে টাকা রাখার উপায় থেকে শুরু করে কত ধরনের হিসাবে টাকা রাখা যায় এবং পোস্ট অফিসে টাকা রাখার জন্য কি কি ডকুমেন্টস প্রয়োজন হয় সেই সকল তথ্য সম্পর্কে। বিনিয়োগের অন্যতম সেরা মাধ্যম হচ্ছে পোস্ট অফিস যদি সেটিকে নিরাপদ ভাবে রাখতে চান। তাছাড়া বিনিয়োগ সংক্রান্ত অন্যান্য আরো ব্যাপার সম্পর্কে জানতে অনুসরণ করুন বাংলা আলম ওয়েবসাইটের ব্যাংক বিষয়ক ক্যাটাগরিটি, ধন্যবাদ।