ফজরের নামাজের পরের আমল | ফজর নামাজ পড়ে যেসব দোয়া ও আমল করবেন

0
35

ফজরের নামাজের পরের আমল গুলো করার ব্যাপারে আমাদের প্রত্যয়ী হতে হবে। সম্ভব হলে এ ঘণ্টাখানেক সময় আমল বা যিকরে কাটাতে হবে। সকল প্রকার ইবাদতই হলো যিকর। তবে বিভিন্ন প্রকার আমল ও যিকরের বিভিন্ন স্বাদ, উপকার ও আধ্যাত্মিক প্রভাব রয়েছে।

 

মুমিনের দিবস শুরু হয় সালাতুল ফজর বা ফজরের নামাজ আদায়ের মাধ্যমে। ফজরের পর

থেকে সূর্যোদয়ের আধাঘণ্টা বা আরাে পরে সালাতুদ দুহা বা চাশতের নামাজ আদায় পর্যন্ত

সময় হাদীসের আলােকে আমলের অন্যতম সময়।

 

ক্বুরআন ও হাদীসে ফজর ও আসরের নামাজের বিশেষ ফযীলত বলা হয়েছে এবং এ দু সালাতের পরে আমলের বিশেষ ফযীলত ও সাওয়াব বর্ণনা করা হয়েছে। ফজরের নামাজের পরের আমল – ফজর নামাজ পড়ে যেসব দোয়া ও আমল করবেন – সে ব্যাপারে আমাদের আজকের এই আর্টিকেল। তো চলুন, নামাজের পরের আমল সম্পর্কে জেনে নিইঃ

ফজরের নামাজের পরের আমলের ব্যাপারে জরুরি কথা

 

ফজরের পর থেকে সূর্যোদয় পর্যন্ত সময়ে

রাসূলুল্লাহ (সঃ) ও সাহাবীগণের যুগে সমবেতভাবে বা শব্দ করে কোন আমল বা যিকরের প্রচলন ছিল না। কোনাে হাদীসে নেই যে কোনাে দিন রাসূলুল্লাহ (সঃ) বা সাহাবীগণ সকলে সমবেতভাবে সমস্বরে বা একত্রে জোরে জোরে কোন আমল করেছেন অথবা যিকর করেছেন।

 

এজন্য এ সময়ের যিকরের সুন্নাত হলো – প্রত্যেকে বসে বসে নিজের মতাে আমল, যিকর ও দু’আর মধ্যে সময় কাটানো। বিভিন্ন হাদীসে ফজর নামাজের পরের আমল ও যিকর শেষে ‘দুহার সালাত পড়ে মসজিদ থেকে বাহির

হওয়ার কথা বলা হয়েছে। তবে রাসূলুল্লাহ (সঃ) নিজে ‘দুহার সালাত’ মসজিদে নিয়মিত পড়তেন বলে জানা যায় না।

ফজরের পরে আমল ও যিকরের ফযীলত

 

আব্দুল্লাহ ইবনু উমার (রা) বলেন :

“রাসূলুল্লাহ (সঃ) ফজরের সালাতের পর (সূর্য পুরােপুরি উঠে মাকরুহ ওয়াক্ত শেষ হয়ে) সালাত জায়েয হওয়ার সময় পর্যন্ত তার বসার স্থান থেকে

উঠতেন না। তিনি বলেন: যে ব্যক্তি ফজরের সালাত আদায় করার পরে সালাত

জায়েয হওয়ার সময় পর্যন্ত তার বসার স্থানে বসে থাকবে; সে একটি মাকবূল হজ্ব

ও একটি মাকবূল উমরার সাওয়াব পাবে।” (হাদীসটি গ্রহণযােগ্য)

 

জাবির ইবনু সামুরাহ (রা) বলেছেন: “রাসূলুল্লাহ (সঃ) যখন ফজরের নামাজ আদায় করতেন, তখন সূর্য ভালভাবে উঠে যাওয়া পর্যন্ত তার বসার স্থানে আসন গেড়ে বা পায়ের উপর পা

মুড়ে বসে থাকতেন।”

 

অন্য বর্ণনায় তিনি বলেছেন: “রাসূলুল্লাহ (সঃ) ফজরের সালাত আদায় করে সূর্যোদয় পর্যন্ত তাঁর

সালাতের স্থানে বসে থাকতেন। সূর্যোদয়ের পরে তিনি উঠতেন। তাঁর বসা অবস্থায় সাহাবায়ে কেরাম কথাবার্তা বলতেন, জাহেলী যুগের কথা বলতেন, কবিতা পাঠ করতেন এবং হাসতেন। আর তিনি শুধু মুচকি হাসতেন।”

উমার (রা) বলেন :

 

كان رسول الله لا إذا صلى الصبح جلس في مصلاه وجلس الناس حوله

حتى تطلع الشمس ثم دخل على نسائه امرأة امرأة يسلم عليه ويدعو له

 

“রাসূলুল্লাহ (সঃ) যখন ফজরের নামাজ আদায় করতেন, তখন তার সালাতের স্থানে বসে থাকতেন। মানুষেরা তার আশেপশে বসতেন। সূর্যোদয় পর্যন্ত তিনি এভাবে থাকতেন। এরপর তিনি একে একে তার সকল স্ত্রীর ঘরে গিয়ে তাদেরকে সালাম দিতেন ও তাঁদের জন্য দু’আ করতেন।” (আল্লামা হাইসামীর পর্যালােচনায় হাদীসটির সনদ গ্রহণযােগ্য)

 

রাসূলুল্লাহ (সঃ) -এর পরে সাহাবীগণও সুযােগমতাে ফজরের সালাতের পরে মসজিদে বা ঘরে সূর্যোদয় পর্যন্ত বসে ব্যক্তিগতভাবে আমল এবং যিকর ওযীফায় রত থাকতে ভালবাসতেন।

 

তাবেয়ী মুদরিক ইবনু আউফ বলেন, আমি চলার পথে দেখলাম বিলাল (রা) ফজরের নামাজ আদায় করে বসে রয়েছেন। আমি বললাম, “বসে রয়েছেন কেন?” তিনি বললেন : “সূর্যোদয়ের জন্য অপেক্ষা করছি।”

ফজরের নামাজের পর আমল ও যিকর এর প্রকারভেদ

 

ফজর নামাজের পরের আমল অনেক আছে, যা সুন্নাহ্ দ্বারা সাব্যস্ত হয়েছে। ফজরের পরের আমল বা যিকর এর ফযীলত ও গুরুত্ব রয়েছে। এখন প্রশ্ন হলোঃ এ সময়ে আমরা কোন আমল কীভাবে করব? এ সময়ের যিকরের বিষয়ে সুন্নাতে কোনাে সুস্পষ্ট নির্দেশনা আছে কিনা? নাকি আমার ইচ্ছামতাে যিকর আযকার করব?

আমরা আগেই বলেছি, রাসূলুল্লাহ (সঃ) তাঁর উম্মতকে উজ্জ্বল আলােকিত রাজপথে রেখে গিয়েছেন। কোনাে প্রকার অস্পষ্টতা বা দ্বিধার মধ্যে রেখে যাননি। উম্মতকে সবকিছুই শিখিয়ে গিয়েছেন। উম্মতের কোনাে কিছু বানানাের প্রয়ােজন নেই। প্রয়ােজন শুধু তার সুন্নাতের হুবহু অনুসরণ। এ সময়ে আমল ও যিকরের গুরুত্ব যেমন বিভিন্ন হাদীসে বর্ণিত হয়েছে, তেমনি এ সময়ের আমল ও আমলের পদ্ধতিও বিভিন্ন হাদীসে শেখানাে হয়েছে।

 

এ সময়ের মাসনূন যিকরগুলাে প্রথমত দু প্রকার: নির্ধারিত ও অনির্ধারিত। নির্ধারিত যিগুলাে নির্ধারিত সংখ্যায় ফজরের পরে আদায় করতে হবে। এরপর বাকি সময় অনির্ধারিত যেগুলাে অনবরত বা যত বেশি সম্ভব পালন করতে হবে। তবে এই আর্টিকেলে নির্ধারিত দোয়া ও আমল তুলে ধরা হবে ইনশা আল্লাহ্।

 

নির্ধারিত আমল ও যিকরগুলাে নিম্নরূপ :

 

(১). যে সকল আমল ফজরের নামাজের পরে পালনের নির্দেশ দেওয়া

হয়েছে। এগুলাে দুই প্রকার : শুধুমাত্র ফজর সালাতের পরে পালনীয় আমল এবং ফজর ও মাগরিবের পরে পালনীয় যিকর।

 

(২). যে সকল আমল ও যিকর পাঁচ ওয়াক্ত সালাতের পরে পালনীয়; স্বভাবতই

সেগুলিকে ফজর সালাতের পরে আদায় করতে হবে।

 

(৩). যে সকল আমল ও যিকর সকাল ও বিকালে বা সকাল ও সন্ধ্যায় পালন

করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে; সুবহে সাদিক থেকেই সকাল শুরু, এজন্য এসকল আমল ফজর সালাতের আগেও আদায় করা যায়।

 

তবে এই আর্টিকেলে নামাজের শেষে যে আমল করবেন – সেগুলো দেয়া হলোঃ

 

ফজরের নামাজের পরের দোয়া, আমল ও যিকর

 

আমল ও যিকরগুলো আপনারা বিশুদ্ধ আরবি উচ্চারণে করবেন। কেননা, বিশুদ্ধ আরবি উচ্চারণ বাংলাতে সম্ভব নয়। তাই আরবি শিখতে হবে আমাদের। আল্লাহ্ তাওফিক দান করুক। আমীন।

 

সালাম ফেরানোর পর ৩ বার ইস্তেগফার পাঠ করা। (সহিহ্ নাসাই)

 

ফজরের নামাজের পাশাপাশি অন্যান্য ওয়াক্তের সকল ফরয নামাজের পর ইস্তেগফার পাঠ করা যায়।

 

اللهم أنت السلام، ومنك السلام، تباركت يا ذا

الجلال والإكرام .

 

(আল্লা-হুম্মা আনতাস সালা-মু ওয়া মিনকাস সালামু

তাবা-রক্তা ইয়া যালজালালি ওয়াল-ইকরম)। (১ বার পড়বেন, ফজরসহ প্রত্যেক ফরয নামাজের পর পড়া যায়)

 

“হে আল্লাহ! আপনি শান্তিময়। আপনার নিকট থেকেই শান্তি বর্ষিত হয়। আপনি বরকতময়, হে মহিমাময় ও সম্মানের অধিকারী!” (সহিহ্ মুসলিম)

 

ফজরসহ প্রত্যেক ফরয নামাজের পর ১ বার সূরা ইখলাস, ১ বার সূরা আল ফালাক্ব এবং ১ বার সূরা নাস পাঠ করা। (আবু দাউদ, সহীহুত তিরমিযী)

১ বার আয়াতুল কুরসি পাঠ করা। (আরবিতে দেয়া হলো) :

 

اللَّهُ لَا إِلَٰهَ إِلَّا هُوَ الْحَيُّ الْقَيُّومُ ۚ لَا تَأْخُذُهُ سِنَةٌ وَلَا نَوْمٌ ۚ لَّهُ مَا فِي السَّمَاوَاتِ وَمَا فِي الْأَرْضِ ۗ مَن ذَا الَّذِي يَشْفَعُ عِندَهُ إِلَّا بِإِذْنِهِ ۚ يَعْلَمُ مَا بَيْنَ أَيْدِيهِمْ وَمَا خَلْفَهُمْ ۖ وَلَا يُحِيطُونَ بِشَيْءٍ مِّنْ عِلْمِهِ إِلَّا بِمَا شَاءَ ۚ وَسِعَ كُرْسِيُّهُ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ ۖ وَلَا يَئُودُهُ حِفْظُهُمَا ۚ وَهُوَ الْعَلِيُّ الْعَظِيمُ

 

উচ্চারণ : আল্লাহু লা ইলাহা ইল্লা হুওয়াল হাইয়্যুল ক্বয়্যুম লা তা’খুজুহু সিনাতুও ওয়ালা নাউম। লাহু মা ফিস্ সামাওয়াতি ওয়ামা ফিল্ আরদি, মান জাল্লাজি ইয়াশফাউ ইনদাহু ইল্লা বি ইজনিহ। ইয়া’লামু মা বাইনা আইদিহিম ওয়ামা খলফাহুম, ওয়ালা ইউহিত্বুনা বিশাইয়িম্ মিন ই’লিমহি ইল্লা বিমা শা-আ। ওয়াসিআ কুরসিয়্যুহুস্ সামাওয়াতি ওয়াল আরদা, ওয়ালা ইয়াঊদুহু হিফজুহুমা,ওয়াহুওয়াল আ’লিয়্যুল আজিম, (সূরা আল বাক্বারাহ, আয়াত : ২৫৫)।

 

হাদিসে এসেছে, ” যে ব্যক্তি প্রত্যেক ফরয সালাতের পরে এটি পড়বে, তাকে মৃত্যু ব্যতীত অন্যকিছু জান্নাতে যাওয়ার পথে বাঁধা হয়ে দাঁড়াবে না।” (সহীহুল জামে)

 

لا إله إلا الله وحده لا شريك له، له الملك وله

الحمد يحيي ويميت وهو على كل شيء قدير

 

(লা ইলা-হা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শারীকা লাহু, লাহুল মূলকু ওয়ালাহুল হা’মদু ইয়ুহয়ী ওয়াইয়ুমীতু ওয়াহুয়া ‘আলা কুল্লি শাই’ইন ক্বদীর)।

 

অর্থঃ “একমাত্র আল্লাহ্ ছাড়া কোনাে হক্ক ইলাহ নেই, তাঁর কোনাে শরীক নেই, রাজত্ব তাঁরই এবং সকল প্রশংসা তাঁর। তিনিই জীবিত করেন এবং মৃত্যু দান করেন। আর তিনি সকল কিছুর ওপর ক্ষমতাবান”।

 

মাগরিব ও ফজরের নামাজের পর উপরােক্ত আমল ১০ বার করে করতে হবে। (তিরমিযী)

পরিশেষে

আমাদের সব মুসলিমের উচিত নামাজের পরের আমল এর ব্যাপারে গুরুত্বারোপ করা। হাদিস দ্বারা সুসাব্যস্ত এই আমলগুলো করা সহজ, কিন্তু অনেক ফযীলতপূর্ণ। তাই এই দোয়া, আমল ও যিকরগুলো আমাদেরকে বিশুদ্ধ উচ্চারণে শিখতে হবে।

 

যতটুকু সম্ভব সে অনুযায়ী আমল করতে হবে। নামাজের পরের আমল গুলো করার পাশাপাশি অন্যান্য ফরয নামাজের পরের আমলের প্রতিও আমাদের যত্নবান হতে হবে। বানোয়াট আমল পরিহার করতে হবে। আল্লাহ্ তা’আলা আমাদেরকে সুন্নাহ্ অনুযায়ী আমল করার তাওফিক দান করুন। আমীন।

 

Visited 27 times, 1 visit(s) today

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here