মালয়েশিয়া সরকার গত ৩১ মে থেকে বাংলাদেশসহ ১৫টি দেশ থেকে বিদেশি কর্মী নিয়োগ সাময়িকভাবে স্থগিত করবে। এই সিদ্ধান্তের পেছনে প্রধান কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে অবৈধ অভিবাসীদের নিয়ন্ত্রণ ও জাতীয় নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। তবে, মালয়েশিয়া অভিবাসন ব্যয় কমাতে এবং কর্মী নিয়োগ প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা বজায় রাখতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এই আর্টিকেলে মালয়েশিয়া ওয়ার্ক পারমিট ভিসা বন্ধের পেছনের কারণ, প্রভাব, এবং বাংলাদেশের শ্রমবাজারের বর্তমান অবস্থা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করবো।
মালয়েশিয়া ওয়ার্ক পারমিট ভিসা বন্ধের কারণ, প্রভাব ও শ্রম বাজারের বর্তমান অবস্থা
মালয়েশিয়ার সিদ্ধান্ত ও প্রেক্ষাপট
ঢাকায় নিযুক্ত মালয়েশিয়ার হাইকমিশনার হাজনাহ মো. হাশিম জানিয়েছেন, ৩১ মে-এর মধ্যে যারা কর্মী ভিসা পেয়েছেন, তাদের মালয়েশিয়ায় পৌঁছাতে হবে। এই ডেডলাইনের পর আর কোনো কর্মী নিয়োগ করা হবে না। মালয়েশিয়া সরকার ইতিমধ্যে অবৈধ অভিবাসীদের ৭০০ রিঙ্গত জরিমানা দিয়ে দেশে ফিরে যাওয়ার সুযোগ দিচ্ছে এবং তাদের বিরুদ্ধে কোনো আইনি পদক্ষেপ নিচ্ছে না।
এই সিদ্ধান্তের পেছনে মূল কারণ হিসেবে মালয়েশিয়া সরকার বলছে যে, তারা অবৈধ অভিবাসী এবং দেশের নিরাপত্তা নিয়ন্ত্রণ করতে চায়। এই নীতির মাধ্যমে তারা অবৈধ অভিবাসী প্রবেশের সুযোগ বন্ধ করতে এবং দেশের নিরাপত্তা জোরদার করতে চায়।
শ্রমবাজারে সিন্ডিকেট ও দুর্নীতি
বাংলাদেশের শ্রমবাজারে সিন্ডিকেট ও দালালদের দৌরাত্ম্য প্রবাসী আয়কে নেতিবাচকভাবে প্রভাবিত করছে। মালয়েশিয়া, মালদ্বীপ এবং সৌদি আরবের মতো দেশে প্রবাসী আয়ের পরিমাণ কমে যাচ্ছে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে মালয়েশিয়া, মালদ্বীপ ও সৌদি আরব থেকে ৩৪১ কোটি ডলার রেমিট্যান্স এসেছে। সিন্ডিকেট ও দালালদের দৌরাত্ম্যের কারণে এসব দেশের শ্রমবাজার ঝুঁকিতে পড়েছে।
সিন্ডিকেট ও দালালরা প্রবাসী কর্মীদের সাথে প্রতারণা করে, এবং তারা প্রবাসী আয়ের একটি বড় অংশ আত্মসাৎ করে। এই সমস্যা সমাধানে সরকার এবং আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর সমন্বিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন।
প্রবাসী শ্রমিকদের সংকট
বাংলাদেশের মধ্যবিত্তদের জীবনযাত্রা বদলানোর প্রধান মাধ্যম হয়ে উঠেছে শ্রমবাজার। কিন্তু দালাল ও এজেন্সির প্রতারণার কারণে অনেক প্রবাসী নিঃস্ব হচ্ছেন। মালয়েশিয়ায় ৩২ হাজার কর্মী দালালদের কারণে মালয়েশিয়া যেতে পারেননি। এই কর্মীরা ঋণ করে ৫ থেকে ৬ লাখ টাকা দালাল ও এজেন্সিকে দিয়েছেন। ফলে, তারা বর্তমানে হতাশা নিয়ে গ্রামে ফিরেছেন।
প্রবাসী শ্রমিকদের জন্য প্রবাসে কাজ করা একটি বড় সুযোগ হতে পারে, তবে দালাল ও সিন্ডিকেটের কারণে তারা এই সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। অনেক প্রবাসী ঋণ করে বিদেশে কাজ করতে যান, কিন্তু দালালদের কারণে তারা এই ঋণ শোধ করতে পারেন না।
রেমিট্যান্সের অবস্থা
সৌদি আরব থেকে প্রবাসী আয়ের পরিমাণ ধারাবাহিকভাবে কমছে। ২০২১-২২ অর্থবছরে সৌদি আরব থেকে ৪৫৪ কোটি ডলার রেমিট্যান্স আসলেও ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে তা কমে ২১৬ কোটি ডলারে নেমে এসেছে। অন্যদিকে সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে প্রবাসী আয়ের পরিমাণ বৃদ্ধি পাচ্ছে।
মালয়েশিয়ায় প্রবাসী শ্রমিকদের জন্য পরিবেশ উন্নত করা হলে এবং তাদের স্বার্থ সুরক্ষিত করা হলে রেমিট্যান্স বৃদ্ধি পেতে পারে। রেমিট্যান্সের পরিমাণ কমে গেলে দেশের অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং সরকারের জন্য রাজস্ব সংগ্রহে সমস্যা হয়।
প্রস্তাবিত সমাধান
মালয়েশিয়া এবং অন্যান্য দেশগুলো থেকে প্রবাসী কর্মী নিয়োগ প্রক্রিয়া স্বচ্ছ করতে সরকারের কঠোর পদক্ষেপ প্রয়োজন। দালাল ও সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্য বন্ধ করতে এবং প্রবাসী শ্রমিকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে সরকারকে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। কিছু প্রস্তাবিত পদক্ষেপ হতে পারে:
- সরকারি নিয়ন্ত্রণ ও মনিটরিং: কর্মী নিয়োগ প্রক্রিয়ায় সরকারের সরাসরি নিয়ন্ত্রণ ও মনিটরিং থাকতে হবে। এই প্রক্রিয়ায় দালালদের ভূমিকা কমিয়ে আনতে হবে।
- প্রশিক্ষণ ও শিক্ষামূলক কার্যক্রম: প্রবাসী শ্রমিকদের জন্য প্রশিক্ষণ ও শিক্ষামূলক কার্যক্রম আয়োজন করতে হবে, যাতে তারা বিদেশে কাজ করার জন্য প্রস্তুত হতে পারে।
- আন্তর্জাতিক সহযোগিতা: প্রবাসী শ্রমিকদের সুরক্ষা ও তাদের অধিকার রক্ষার জন্য আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর সাথে সহযোগিতা করতে হবে।
- আর্থিক সহায়তা: প্রবাসী শ্রমিকদের জন্য অর্থনৈতিক সহায়তা এবং ঋণ প্রদান করতে হবে, যাতে তারা বিদেশে কাজ করার জন্য প্রস্তুত হতে পারে।
চুড়ান্ত মন্তব্য
বাংলাদেশের শ্রমবাজারে দালাল ও সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্য বন্ধ করতে হবে এবং প্রবাসী শ্রমিকদের সুরক্ষার জন্য সরকারকে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। মালয়েশিয়ায় বিদেশি কর্মী নিয়োগের সাময়িক স্থগিতাদেশ বাংলাদেশের অর্থনীতিতে বড় প্রভাব ফেলতে পারে।
তবে, জাতীয় নিরাপত্তা নিশ্চিত করার পর মালয়েশিয়া আবারো কর্মী নিয়োগ করতে পারে। এছাড়া, বাংলাদেশ সরকারের উচিত প্রবাসী শ্রমিকদের অধিকার ও সুরক্ষার জন্য আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর সাথে মিলে কাজ করা।
তাছাড়া এই আর্টিকেলে আমরা দেখেছি কিভাবে দালাল ও সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্য প্রবাসী শ্রমিকদের ক্ষতিগ্রস্ত করছে এবং এর ফলে দেশের অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। সরকার ও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর সমন্বিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে এই সমস্যার সমাধান সম্ভব। যাইহোক, পরবর্তীতে ভিসা সংক্রান্ত আপডেটের জন্য বাংলা আলো ওয়েবসাইটের ভিসা নামক ক্যাটাগরিটি অনুসরণ করুন।