অন্যান্য সেক্টরের মত ব্যাংকিং সেক্টর এখন প্রযুক্তির ছোয়ায় বেশ আধুনিক। বর্তমানে অনলাইনেই করা যাচ্ছে ব্যাংকিং কার্যক্রম খুব সহজে। যেখানে ব্যাংকিং সেখানে লোন এর বিষয়টি স্বাভাবিক ভাবেই চলে আসে। তবে প্রশ্ন হচ্ছে অনলাইনে যেমন ব্যাংকিং কার্যক্রম করা যায় তেমনই কি অনলাইনে লোন পাওয়ার উপায় রয়েছে? উত্তর হ্যা, রয়েছে। এবং উক্ত আর্টিকেলে কভার করবো এই বিষয়টি নিয়েই।
বাংলাদেশের পেক্ষাপটে চিন্তা করলে, ব্যাংক থেকে একটি স্বাভাবিক পর্যায়ে লোন গ্রহন করতে মাস খানিকের মত সময় লেগে যায়, তাছাড়া রয়েছে এতো এতো কন্ডিশন। কিন্তু আমরা অনেকেই আছি যারা মাঝে মাঝে আর্থিক ভাবে খুব সমস্যায় পড়ে থাকি এবং খুব দ্রুত সেটিকে রিকোভার করার জন্য ইন্সট্যান্ট অর্থের প্রয়োজন। ঠিক তেমন সিচুয়েশনের জন্য প্রয়োজন তাৎক্ষণিক লোনের ব্যবস্থা।
আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতেও অনলাইনে লোন পাওয়ার উপায় রয়েছে অনেক। সেখানের মানুষের প্রয়োজন অনুযায়ী ১০০০ থেকে শুরু করে লাখ টাকার লোন ও অনলাইনে জোগার করে নিতে পারে। কিন্তু সত্যি কথা বলতে বাংলাদেশের পেক্ষাপটে এখন অব্দিও তেমন ভাবে কার্যকর কোনো উপায় নেই।
তাহলে কি অনলাইনে লোন পাওয়ার উপায় নেই কোথায় কোনো? আছে অবশ্যই আছে, তবে সংখ্যায় তুলনামূলক নাই এর সমান। খুব ঘাটাঘাটির পর জানা গেলো বাংলাদেশে অনলাইনে লোন পাওয়ার উপায় রয়েছে স্রেফ দুইটি। একটি সরাসরি ব্যাংকের সাথে যুক্ত উপায়, অন্যটি সরকার প্রদত্ত। তাছাড়া আরো বেশ কিছু উপায় রয়েছে যেগুলো ৯০% স্ক্যাম করে থাকে। আপনারা হয়তো ইতিমধ্যেই শুনেছেন অনলাইনে লোন পাওয়ার অ্যাপ। সত্যি কথা বলতে এমন কোনো বিষয় প্রকৃতপক্ষে নেই।
আবার শতকরায় ১০% হয়েও থাকে, তবে তাদের কন্ডিশন ও ঋনের সুদের হার এতোটাই বেশি যে, ঋনের সুদের টাকা পরিশোধ করতে হবে আরেক স্থান থেকে ঋণ নিয়ে। তবে যেমনটা বললাম, সঠিক উপায়েও বাংলাদেশ থেকে অনলাইনে ঋণ পাওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে। এবার সেই উপায় সম্পর্কে জানাবো।
বাংলাদেশ থেকে অনলাইনে লোন পাওয়ার উপায়
সিটি ব্যাংক এর মাধ্যমে অনলাইনে লোন পাওয়ার উপায়
বাংলাদেশের প্রায় প্রতিটি ব্যাংকই বিভিন্ন প্রয়োজনে সুবাদে লোন বাড়ির প্রদান করে থাকে তাদের গ্রাহকদের। তবে ক্ষেত্র বিশেষে অনলাইনে লোন প্রদানের পলিসি প্রায় কোনো ব্যাংকেই নেই। আপনাকে তার জন্য যেতে হবে সরাসরি ব্যাংকে, প্রসেস সম্পন্ন করে হবে অনেক এবং পরবর্তীতে সময় নিয়ে ভেরিফাই করার পরেই আপনার লোন এপ্রুভ করা হবে।
তবে এই ধারা থেকে বেরিয়ে এসে সিটি ব্যাংক দিয়েছে এক নতুন মাত্রা। শুরু করেছে অনলাইনে লোন প্রদানের ব্যবস্থা। এক্ষেত্রে তাদের নিয়ম ও পদ্ধতি গুলোর বিষয়ে জানাচ্ছি।
সিটি ব্যাংক বেশ কিছু দিন আগে থেকেই মোবাইল ব্যাংকিং প্লাটফর্ম বিকাশের সাথে যুক্ত হয়ে একত্রে উক্ত সেবাটি প্রদান করে যাচ্ছে। এক্ষেত্রে বিকাশের গ্রাহকরাই কেবল এই সার্ভিসটি উপভোগ করতে পারবেন।
আপনি যদি লোন পাওয়ার যোগ্য হিসেবে বিবেচিত হোন তবে দুই মিনিটের মধ্যেই আপনার বিকাশ একাউন্টে টাকা যুক্ত হয়ে যাবে। এক্ষেত্রে লোন পাওয়ার জন্য বিকাশে ড্যাশবোর্ডে থাকা Loan নামক অপশনে ক্লিক করার মাধ্যমে বাকি প্রসেস গুলো সম্পন্ন করতে হবে।
বিকাশ আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে আপনার লেনদেন পর্যাবেক্ষনের মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নিবে আপনাকে লোন প্রদান করা যায় কি না। এক্ষেত্রে একজন গ্রাহন ৫০০ টাকা থেকে শুরু করে ২০,০০০ টাকা অব্দি প্রদান করে থাকবে। আপনি যত টাকা পাবেন তা যখন গ্রহন করতে যাবেন তখনই লিস্ট দেখা যাবে।
তাছাড়া সিটি ব্যাংক হতে প্রদানকৃত লোন পরিশোধ করা যাবে বিকাশের মাধ্যমেই। পর পর ৩ মাসের কিস্তিতে উক্ত ঋনের সব টাকা বিকাশ কেটে নিবে। এক্ষেত্রে যদি গ্রাহক সময়েই আগেই ঋণ পরিশোধ করে দেয় তবে সুদের অর্থের ক্ষেত্রে কিছুটা সাশ্রয়ী হবে। পরিশোধের সময় অতিক্রম হয়ে গেলে বিলম্ব ফি প্রযোজ্য হবে। এক্ষেত্রে বিলম্ব ফি মোট লোনের পরিমাণের ২% (বার্ষিক হারে)
বাংলাদেশ সরকারি ওয়েবসাইটের মাধ্যমে অনলাইনে লোন পাওয়ার উপায়
এটা আমাদের সকলের জানা যে, বাংলাদেশ সরকারের বিভিন্ন কার্যক্রমের খবর ও বিভিন্ন ধরনের সাহায্য গ্রহনের জন্য একটি ওয়েবসাইট রয়েছে। অনলাইনে লোন পাওয়ার উপায় হিসেবে বিশ্বস্ত সেই মাধ্যমই ব্যবহার করবো আমরা। নিম্মে পুরো প্রক্রিয়াটি তুলে ধরছি।
১ম ধাপ
প্রথমেই https://www.mygov.bd/ এই লিংকের মাধ্যমে কাঙ্ক্ষিত ওয়েবসাইটে চলে যেতে হবে। এই পর্যায়ে উক্ত পেজের নিজের দিকে স্ক্রোল করতে থাকলে থাকলে “প্রয়োজনীয় সেবার জন্য আবেদন” নামক হেডিংয়ের আওয়াত বেশ কিছু খাত দেখানো হবে। আপনার যে খাতে লোন গ্রহন করার ইচ্ছা রয়েছে সেই খাতে ক্লিক করুন।
২য় ধাপ
সেবা খাত অনুসারে সেবার প্রতিটি ক্যাটাগরি অনুযায়ী থাকায় আপনার সমস্যার সমাধান করাটা খুব সহজ হবে। এক্ষেত্রে একেক করে প্রতিটা খাতের ব্যাপারে পড়বেন। এখানে যেহেতু সকল ধরনের খাতের জন্য আর্থিক সাহায্য ও ঋনের অপশন রয়েছে তাই স্পেসিফিক করে কোনো বিষয়কে হাইলাইট করে বলছি না। আপনার চাহিদা মোতাবেক খাত ও সেক্টরে ক্লিক করে আবেদন প্রসেস শুরু করুন।
৩য় ধাপ
এই পর্যায়ে আপনাকে উক্ত সাইটে একটি একাউন্ট করে নিতে হবে। এক্ষেত্রে উপরে থাকা রেজিস্ট্রেশন অপশনে ক্লিক করে সেখানে নাম্বার অথবা ইমেইল সহ যাবতীয় ব্যাসিক তথ্য সমূহ প্রদান করে রেজিস্ট্রেশন এবং লগিন করে নিন।
৪র্থ ধাপ
এখন পুনরায় পূর্বের স্থানে এসে বাকি প্রসেসে অগ্রসর হোন। আপনাকে একটি আবেদন ফরম দেয়া হবে সেই ফরমের প্রতিটি তথ্য খুব গুরুত্বের সহকারে পুরন করতে হবে। আবেদন ফরম পূরণ করার ক্ষেত্রে কিছু দিকনির্দেশনা রয়েছে সেগুলো হলো:
- আবেদন ফরমে লাল মার্ক করা অপশন গুলো অবশ্যই পুরন করতে হবে। তাছাড়া বাকি অপশনগুলো ঐচ্ছিক।
- আবেদন প্রক্রিয়া চলা কালীন সময় অব্দি যেকোনো তথ্য সংশোধন ও সংরক্ষন করা যায়। তবে একবার আবেদন করা হয়ে গেলে সেটাকে পরিবর্তন করার জন্য প্রথমে ব্যবস্থাপনা অপশন থেকে ড্রাফটে রেখে পুনরায় আবেদন করতে হবে।
- প্রতিটি আবেদনের জন্য একটি করে ট্রাকিং নাম্বার দেয়া হয়ে থাকে যার মাধ্যমে আবেদনের ফলাফল থেকে শুরু করে সকল প্রসেসিং এর আপডেট জানা যায় এই ওয়েবসাইটের মাধ্যমেই।
অনলাইনে লোনের আবেদন পদ্ধতি
অনলাইনে ঋণের আবেদন করার ক্ষেত্রে আপনাকে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত বেশ কিছু ধাপ অতিক্রম করে যেতে হবে। যেখানে প্রতিটি কার্যক্রমে গুরুত্বসহকারে সম্পাদন করতে হবে যার প্রেক্ষিতে আপনাকে ঋণ প্রদান করা হবে কিনা সেটাও অনেকাংশেই নির্ভরশীল। অনলাইনে লোন এর আবেদন পদ্ধতির ক্ষেত্রে নিম্মের ধাপগুলো অবশ্যই অনুসরণ করবেন।
১) আপনি ঠিক কত টাকা ঋণ প্রয়োজন সেটি পূর্বনির্ধারিত হতে হবে।
২) যে কোনো ঋণ গ্রহণের পূর্বে এই ঋণ পরিশোধের উপায় ও EMI পরিকল্পনাটি দেখে নেওয়া উচিত। এক্ষেত্রে পার্সোনাল লোন ইলিজিলিবিটি ক্যালকুলেটর এর সাহায্য নিতে পারেন। আপনি ঠিক যতটা ঋণ নিচ্ছেন তা পরিশোধের সময় ও প্রত্যেকবার কত টাকা করে পরিশোধ করতে হবে তা এখান থেকে খুব সহজেই নির্ণয় করে ফেলতে পারবেন এতে করে ঋণ পরিশোধের ক্ষেত্রে বেশ সুবিধাজনক অবস্থান বেছে নিতে পারবেন।
৩) নিজের পরিচয় প্রমানের জন্য KYS ফর্ম পূরণ করুন। এবং ওটিপির মাধ্যমে মোবাইল নাম্বার ভেরিফাই করুন।
৪) এই পর্যায়ে এসে মাসিক কিস্তি বা ইনস্টলমেন্ট এর পরিকল্পনা বেছে নিতে পারেন বা কত টাকা প্রতি মাসে ব্রেইনের জন্য পরিশোধ করতে চাচ্ছেন সেটি সিলেক্ট করে দিতে হবে।
৫) সবশেষে ইলেকট্রিক ভাবে স্বাক্ষর প্রদান করতে হবে এবং সাথে সাথেই আপনার অর্থ ডিজিটাল মাধ্যমে অথবা ব্যাংক একাউন্টের মাধ্যমে পাঠিয়ে দেওয়া হবে।
অনলাইনে লোন পাওয়ার ক্ষেত্রে কি কি ডকুমেন্টস প্রয়োজন হয়
- ব্যক্তিগত পরিচয় হিসেবে জাতীয় পরিচয় পত্র, জন্ম নিবন্ধন কপি, ড্রাইভিং লাইসেন্স, পাসপোর্ট – এগুলো যে কোন একটি হলে হবে।
- আপনার বর্তমান ও স্থায়ী ঠিকানা।
- বেতন বৃদ্ধির ক্ষেত্রে পে-স্লিপ, এবং অন্যান্য ক্ষেত্রে আয়ের এর উৎস হিসেবে প্রমান সরূপ ডকুমেন্টস।
- কর্মস্থানের পেপার অন অথবা ব্যবসায় বিবরণ প্রদান করতে হবে।
তাছাড়া ফরমে বা কন্ডিশনে সময়ের সাথে সাথে আরো কিছু ডকুমেন্টস যোগ বিয়োগ হতেই পারে।
পরিশেষে কিছু কথা
অতঃপর সমাপ্ত ঘটলো অনলাইনে লোন পাওয়ার উপায় সংক্রান্ত বিশেষ আর্টিকেল যেখানে আলোচনা করা হয়েছে বাংলাদেশ থেকে কিভাবে খুব সহজেই অনলাইনে লোন পাওয়া যায়। উল্লেখ্য যে, অনলাইনে লোন দেয়ার নাম করে যে সকল অ্যাপ রয়েছে সেসব থেকে দূরে থাকাই ভালো। ভারতে ইতিমধ্যে উক্ত বিষয়টি এভেইলেবল হলেও বাংলাদেশে তেমন কোনো অ্যাপ বিশ্বস্ত ভাবে নেই। আপনি যদি এমনই ব্যাংকিং কার্যক্রম সম্পর্কে জানতে অনুসরণ করুন বাংলা আলো ওয়েবসাইটের ব্যাংক ক্যাটাগরি।