বেগুন চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে জানুন, নিজে চাষ শুরু করুন

0
25

আসসালামু আলাইকুম। আশা করি সবাই আল্লাহর ইচ্ছায় অনেক ভালো আছেন। আজকে আপনাদের সাথে বেগুন চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব ইনশাআল্লাহ। বেগুন অত্যন্ত চাহিদা সম্পন্ন ফল জাতীয় একটি সবজি। বেগুনের বিভিন্ন জাত রয়েছে। কোন বেগুন পাতলা এবং লম্বা হয় আবার কোন বেগুনের রং হয় সবুজে বা মোটা আবার কোন বেগুণ হয় বেগুনি কালার কিন্তু মোটা। 

অঞ্চল এবং এলাকাভেদে বেগুনের চাহিদার পার্থক্য হয়ে থাকে। যেমনঃ কোন এলাকায় পাতলা বেগুনের চাহিদা বেশি। থাকতে পারে আবার কোন এলাকায় সবুজ বেগুনের চাহিদা তুলনামূলক বেশি থাকতে পারে। আবার, কোন এলাকায় মোটা, গোল এবং বেগুনি রঙের বেগুনের চাহিদা থাকতে পারে। 

মানুষের চাহিদার উপর ভিত্তি করে সেই জাতের বেগুন চাষ করলে সফলতা লাভ করা সম্ভব। তো চলুন বেগুন চাষ পদ্ধতি বিষয়ে বিস্তারিত জেনে নেয়া যাক।

বেগুন চাষ পদ্ধতি (বিস্তারিত) 

উপযুক্ত মাটি নির্বাচন

হালকা বেলে থেকে ভারী এটেল মাটি অর্থাৎ প্রায় সব ধরনের মাটিতেই বেগুনের চাষ করা হয়। হালকা বেলে মাটি আগাম জাতের বেগুন চাষের জন্য উপযোগী। এই ধরণের মাটিতে বেগুন চাষ করতে হলে প্রচুর পরিমাণ জৈবসারসহ অন্যান্য সার ঘন ঘন প্রয়োগ করতে হবে নিয়মতান্ত্রিকভাবে।

এটেঁল দোআঁশ ও পলি দোআঁশ মাটিও বেগুন চাষের জন্য উপযোগী এবং এই মাটিতে বেগুনের ফলন বেশী হয়। সাধারণত পলি মাটিতে বেগুন চাষ ভালো হয়ে থাকে। বেগুন চাষ পদ্ধতি সঠিকভাবে প্রয়োগের জন্য নির্বাচিত মাটি অবশ্যই গভীর, উর্বর ও সুনিষ্কাশিত হওয়া প্রয়োজন। কোন অবস্থাতেই যেন জমিতে পানি জমে না থাকে, সে বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে।


বেগুনের জাত নির্ধারণ


ভাল ফলন পেতে হলে বেগুনের উপযুক্ত জাত নির্বাচন করা একান্ত প্রয়োজন। বাংলাদেশে বেগুনের বহু জাত রয়েছে। এক জাত থেকে অন্যজাতে গাছের প্রকৃতি, ফলের রং, আকার, আকৃতি প্রভৃতি বিষয়ে বেশ পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়। এলাকাভেদে মানুষের চাহিদারও পার্থক্য হয়ে থাকে। একই জাতের বেগুন সব অঞ্চলে সমকন চাহিদাসম্পন্ন নয়।

বাংলাদেশে প্রধানতঃ লম্বা ফল, গোলাকর ফল ও গোলাকার এই তিন ধরণের বেগুনের চাষ বেশী হয়ে থাকে। সব জাতকে মৌসুম ভিত্তিক দুই ভাবে ভাগ করা যেতে পারে। যেমনঃ শীতকালীন বেগুন ও বারোমাসী বেগুন। শীতকালীন জাতের বেগুন রবি মৌসুমে চাষ করা হয়।

কারণ, এই জাতের বেগুন কেবলমাত্র রবি মৌসুমেই ফল দিতে পারে। আর বারোমাসী বেগুন বছরের যে কোন সময় চাষ করা যেতে পারে। নীচে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি জাতের পরিচিতি দেয়া হল।



ইসলামপুরী 

এটি শীতকালীন জাত। এ জাতের গাছে ও ফলে কাঁটা নেই। গাছের উচ্চতা মাঝারি ধরনের ও শাখা প্রশাখাযুক্ত। পাতার রং বেগুনী সবুজ। ফল গোলাকার, কচি অবস্থায় গাঢ় বেগুনী, পরিপক্ক অবস্থায় সবুজাভ বেগুনী। তবে কোন কোন সময় ত্বকে সবুজ বর্ণের ছোপ থাকতে পারে।

ফলের শাঁস মোলায়েম ও সুস্বাদু এবং বীজের সংখ্যা কম হয়ে থাকে। প্রতিটি ফলের ওজন ২০০ থেকে ৪০০ গ্রাম। গড়ে ফলন হয় ৩৬ টন (প্রতি হেক্টরে)। গাছ প্রতি গড়ে ফল ধরার সংখ্যা ১৩টি।


খটখটিয়া 

শীতকালে চাষ উপযোগী জাত। গাছ উচ্চতায় ও বিস্তৃতিতে মাঝারি, পাতা মাঝারী চওড়া। ফল দন্ডাকার ও কালচে বেগুনী। ফল লম্বায় ১৬ থেকে ২০ সেন্টিমিটার ও বেড়ে ৩.৫০ থেকে ৫.৫০ সেন্টিমিটার। প্রতিটি ফলের ওজন ১০০ থেকে ১২৫ গ্রাম। গড় ফলন ২৯ টন (প্রতি হেক্টর)।


লাফফা 

শীতকালীন জাত ফলের রং বেগুনী এবং গোলাকার। ফলের উপরিভাগ সামান্য খাদালো বা গর্তের মতো কিছুটা। ময়মনসিংহের গফরগাঁও এলাকার একটি জনপ্রিয় জাত।
 

ঈশ্বরদি  

হলো প্রধানত শীতকালীন একটি জাত। তবে অন্যান্য সময়ও চাষ করলে কিছু ফলন পাওয়া যায়। গাছ কাটাময়, পাতা খাটো ও চওড়া ধরনের। ফল বড়, গোলাকার এবং রং সবুজ ও তার উপর হালকা ডোরাকাটা। ফলে বীজ খুব সুস্বাদু নয়। এ জাতে পোকা মাকড়ের উপদ্রব খুব কম হয়ে থাকে। প্রতিটি ফলের ওজন ১৫০ থেকে ২৫০ গ্রামের মতো হয়।
 

উত্তরা (বারি বেগুন ১) 

বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনষ্টিটিউট কর্তৃক উদ্ভাবিত একটি উন্নত জাত হলো উত্তরা। শীতকাল হল এই বেগুন চাষ করার উপযুক্ত একটি সময়। গাছের পাতা ও কাণ্ড হালকা বেগুনী এবং পাতার শিরাগুলো গাঢ় বেগুনী হয়।

পাতার নীচের দিকে সামান্য নরম কাঁটা দেখা যায়। গাছ খাটো আকৃতির ও ছড়ানো হয়ে থাকে। প্রতি গুচ্ছে ৫ থেকে ৬টি ফল ধরে। ফলের রং বেগুনী এবং ১৮ থেকে ২০ সেন্টিমিটার লম্বা হয়। ফলের ত্বক খুবই পাতলা, শাঁস মোলায়েম এবং খেতে সুস্বাদু।

হেক্টর প্রতি গড়ে ৬৪ টন ফলন পাওয়া যায়। আল্লাহর রহমতে এ জাতটি ‘ঢলে পড়া’ নামক রোগ প্রতিরোধ করতে পারে। গাছ প্রতি গড়ে ১৯৫টি ফল ধরে।
 

কেজি বেগুন 

এটি হলো একটি শীতকালীন জাত। গাছের উচ্চতা মাঝারি বা মধ্যম ধরণের, পাতা চওড়া, ঢেউ খেলানো ফল বোঁটার দিক থেকে ক্রমান্বয়ে মোটা, দেখতে অনেকটা লাউয়ের মত হয়। ফলের রং হালকা সবুজ এবং গায়ে লম্বালম্বি হালকা আঁচড় আছে। বীজ অত্যন্ত কম, শাঁসালো, নরম এবং অত্যন্ত সুস্বাদু।

বেগুন ভাজা, বেগুনী, চপ ইত্যাদি তৈরিতে এর জুড়ি নেই। উপযুক্ত পরিচর্যা পেলে প্রতিটি ফলের ওজন গড়ে ১ কেজি পর্যন্ত পাওয়া যায় যা অনেকটাই বেশি ওজনসমৃদ্ধ। এই কারণে এ জাতটি এখন খুব জনপ্রিয় নয়। তবে এটি চমৎকার একটি জাত, এতে কোন সন্দেহ নেই।
 

শিংনাথ 

একটি বারোমাসী জাত। গাছ বেশ উঁচু, পাশেও অধিক, শাখা প্রশাখার সংখ্যা প্রচুর। পাতা সরু ধরনের। এর ফল সরু, লম্বায় প্রায় ৩০ সেন্টিমিটার ও বেগুনী রংয়ের। বেগুনের মধ্যে বীজ মাঝারি সংখ্যক হয় এবং তা খেতে সুস্বাদু।

এই জাতের বেগুনের মধ্যে কতকগুলি উপজাত আছে, যেগুলি ফলের আকার, আকৃতি, বর্ণের দিক থেকে পরষ্পর থেকে ভিন্ন। প্রতিটি ফলের ওজন ৭৫ থেকে ১৫০ গ্রাম। প্রতিটি গাছে গড়ে ৩৯ টি বেগুন ধরে এবং গড় ফলন ৩০ টন (প্রতি হেক্টর)।
 

ঝুমকো 

এই জাতের বেগুনের গাছ খাটো হয়। কিন্তু, খুবই উচ্চফলনশীল জাত। ফল খাটো, সরু এবং ৮ থেকে ১০ সেন্টিমিটার  পর্যন্ত লম্বা হয়ে থাকে। বেগুন গাছ গুচ্ছভাবে উৎপন্ন হয়। ফলের ত্বক খুব পাতলা ও শাঁস মোলায়েম হয়ে থাকে। সাধারণত ডগাতে পোকার আক্রমণ কম হয়।
 

ডিম বেগুন 

একটি উচ্চ ফলনশীল বারোমাসী জাত। এ জাতে পোকার উপদ্রব খুব কম হয়। ফল দেখতে ধবধবে সাদা এবং আকৃতিতে প্রায় ডিমের মত। প্রতিটি ফলের ওজন ৪০ থেকে ৬০ গ্রামের মতো হয়।
 

কাজলা (বারি বেগুন ৪) 

 এটি একটি উচ্চফলনশীল জাত। এ জাতের ফলের আকার লম্বা, রং কালচে বেগুনি, চকচকে। গাছ মাঝারি আকৃতির ছড়ানো। গাছপ্রতি ফলের সংখ্যা ৭০ থেকে ৮০টি, প্রতিটি ফলের ওজন ৫৫ থেকে ৬০ গ্রাম হয়ে থাকে। জাতটি ঢলে পড়া রোগ সহনশীল। বীজ লাগানোর ৯০ থেকে ৯৫ দিন পর ফল ধরে এবং ১৯০ দিন পর্যন্ত ফল ধরে। হেক্টর প্রতি ফলন ৫৫ থেকে ৬০ টন।
 

চমক এফওয়ান 

এটি একটি হাইব্রিড জাত। আষাঢ় থেকে পৌষ মাসের মধ্যে চারা রোপণ করতে হয়। চারা রোপণের ৫৫ থেকে ৬০ দিন পর ফল ধরে। গাছ ও পাতা বড়, অনেক ডালপালা, বেগুন লম্বায় প্রায় ২৫ সেন্টিমিটার। প্রতিটি গাছে ১৫ থেকে ২০ কেজি ফল ধরে।


চাষের মৌসুম সম্পর্কে 


বাংলাদেশের জলবায়ুতে বছরের যে কোন সময়ই বেগুনের চাষ করা যেতে পারে। রবি মৌসুম অর্থাৎ শীতকালের জন্য সাধারণতঃ আগষ্ট থেকে অক্টোবর পর্যন্ত বীজ বোনার উপযুক্ত সময়। খরিপ মৌসুম অর্থাৎ বর্ষাকালীন বেগুনের জন্য জানুয়ারি থেকে মে মাস পর্যন্ত বীজ বোনার উপযুক্ত সময়।


চারা তৈরি করা 


বেগুন চাষের জন্য প্রথমে বীজতলায় চারা করে তা মূল জমিতে রোপণ করতে হয়। বীজতলা এমন স্থানে তৈরী করতে হবে যেখানে বৃষ্টির পানি জমে থাকবে না অর্থাৎ পানি সুনিষ্কাশিত হতে হবে, সর্বদা আলোবাতাস পায় – এমন ছায়ামুক্ত জমি হতে হবে।

ভালো ফলন পাওয়ার জন্য সরাসরি জমিতে চারা রোপণ করতে হয়। অন্যস্থানে চারা বুনে নিয়ে তারপর বেগুন চাষের মূল জমিতে রোপণ করা হলে বেগুনের ফলন তেমন ভালো হয়না, পরিমাণে কম বেগুন পাওয়া যায়।
 

বীজতলা তৈরির জন্য মাটি গভীরভাবে (অন্তত ২০ সেন্টিমিটার) চাষ দিতে হবে। বীজতলায় মাটি হতে হবে উর্বর। উর্বরতা কম থাকলে জৈব সার ও সামান্য পরিমাণ ফসফেট জাতীয় সার ব্যবহার করা যেতে পারে। প্রতি বর্গ মিটার বীজতলার জন্য ০.১০ ঘন মিটার পচা গোবর সার ও ৩০ গ্রাম টিএসপি সার ব্যবহার করা যেতে পারে।

চাষের পর সম্পূর্ণ জমিকে কয়েকটি ছোট ছোট বীজতলাতে ভাগ করে নিতে হবে। প্রত্যেকটি বীজতলার মাঝে এক হাত চার আঙুল পরিমাণ ফাঁকা রাখতে হবে। এছাড়া বীজতলার পাশে ড্রেন করে দিতে হবে।

প্রত্যেক বীজতলার শেষ মাথায় নির্দিষ্ট আকারের একটা খুটি পুঁতে দিতে হবে। অল্প সংখ্যক চারা উৎপাদনের জন্য বীজতলা হিসেবে কাঠের বাক্স, প্লাস্টিকের ট্রে অথবা বড় টব ব্যবহার করা যেতে পারে।
 

প্রতি হেক্টর জমিতে বেগুন চাষের জন্য ২৫০ থেকে ৩০০ গ্রাম বীজের প্রয়োজন হয়। ১ গ্রাম বেগুন বীজে প্রায় ২০০ থেকে ২৫০ টি বীজ থাকে এবং শতকরা ৭৫ থেকে ৮০টি বীজ অঙ্কুরিত হয়।

বীজতলাতে বীজ ছিটিয়ে বা সারি করে বোনা যেতে পারে। সারিতে বুনলে সারি থেকে সারির দূরত্ব ৫ সেন্টিমিটার দিতে হবে। বীজ বোনার পর বীজতলার মাটি হালকা করে চেপে দিতে হবে। বীজতলাতে চারার দূরত্ব ২ থেকে ৩ সেন্টিমিটার হলে চারার বৃদ্ধি ভাল হয়। বীজ বোনার পর ঝাঁঝরি দিয়ে হালকা ভাবে পানি ছিটিয়ে সেচ দিতে হবে।

পলিথিন শীট বা বস্তা দিয়ে বীজতলা ঢেকে দেওয়া যেতে পারে। আর যে স্থানে চারা বোনা হবে, সে স্থানে গ্লাসের মুখের আকৃতির মতো জায়গা ছিদ্র করে নিতে হবে। এটা গুরুত্বপূর্ণ। গ্রীষ্মকালে সকালে ও সঁন্ধ্যায় হালকাভাবে পানি সেচ দেওয়া প্রয়োজন। চারা গজানোর পর ২ থেকে ৩ দিন হালকা সেচ দেওয়া উত্তম।
 

জমি তৈরি চারা রোপণ


সাধারণত মাঠের জমি তৈরির জন্য ৩ থেকে ৫ বার চাষ ও মই দিয়ে মাটি ঝুরঝুরে করে নিতে হবে। ৩৫ থেকে ৪৫ দিন বয়সের চারা রোপণের উপযোগী হয়। এ সময় চারাতে ৫/৬টি পাতা গজায় এবং চারা প্রায় ১৫ সেন্টিমিটার পর্যন্ত লম্বা হয়।

প্রয়োজনে দুই মাস পর্যন্ত চারা বীজতলার রেখে দেওয়া যায়। চারা তোলার সময় যাতে শিকড় নষ্ট না হয়, সেজন্য চারা তোলার দেড় থেকে ২ ঘন্টা আগে বীজতলায় পানি দিয়ে মাটি ভিজিয়ে নিতে হবে।

চারা রোপণের দূরত্ব জাত, মাটির উর্বরতা ও উৎপাদন মৌসুমের উপর নির্ভর করে। সাধারণত বড় আকারের বেগুনের জাতের ক্ষেত্রে ৯০ সেন্টিমিটার দূরে সারি করে সারিতে ৬০ সেন্টিমিটার ব্যবধানে চারা লাগানো যেতে পারে এবং ক্ষুদ্রাকার জাতের ক্ষেত্রে ৭৫ সেন্টিমিটার সারি করে সারিতে ৫০ সেন্টিমিটার ব্যবধানে চারা লাগানো যেতে পারে। জমিতে লাগানোর পর পরই যাতে চারা শুকিয়ে না যায় সে জন্য সম্ভব হলে বিকালের দিকে চারা লাগানো উচিত।

সার প্রয়োগ


বেগুন মাটি থেকে প্রচুর পরিমাণে খাদ্য উপাদান শোষণ করে। বেগুন চাষ পদ্ধতি এর ক্ষেত্রে সার প্রয়োগের বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ। বেগুনের সন্তোষজনক উৎপাদন সার ব্যতীত সম্ভব নয়। সারের পরিমাণ মাটির উর্বরতা শক্তির উপর নির্ভর করে।

বেগুন চাষের জন্য হেক্টর প্রতি নিম্ন লিখিত পরিমাণে সার সুপারিশ করা যেতে পারে। প্রথম কিস্তি সার চারা লাগানোর ১০থেকে২৫ দিন পর, দ্বিতীয় কিস্তি ফল ধরা আরম্ভ হলে এবং তৃতীয় ফল তোলার মাঝামাঝি সময়ে দিতে হবে। জমিতে রস না থাকলে সার প্রয়োগের পর পরই সেচ দিতে হবে।


পোকামাঁকড় ব্যবস্থাপনা


বেগুনের সবচেয়ে ক্ষতিকর পোকা হল বেগুনের ডগা ও ফল ছিদ্রকারী পোকা। কোন কোন এলাকায় ক্ষুদ্র লাল মাঁকড় প্রধান শত্রু। এছাড়া কাঁটালে পোকা বা ইপলাকনা বিট্‌ল, জাব পোকা, ছাতরা পোকা, বিছা পোকা, পাতা মোড়ানো পোকা, থ্রিপস, কাটুই পোকা ইত্যাদি বেগুনের ক্ষতি করে থাকে। IPM পদ্ধতিতে এসব পোকা নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা নিতে হবে।

তবে একটা বিষয় আমাদের জন্য জেনে রাখা প্রয়োজন যে, শীতকালে বেগুন চাষের জমিতে পোকামাঁকড়ের আক্রমণ তুলনামূলক কম হয়। এক্ষেত্রে শীতকালকে অনেকটা নিরাপদ বলা যায়।


রোগ ব্যবস্থাপনা


এ দেশে বেগুনের ঢলে পড়া ও গোঁড়াপঁচা হলো দু’টি মারাত্মক রোগ। অনেক বেগুন ক্ষেতেই এ রোগ দেখা যায়। ফল পঁচা রোগেও অনেক বেগুন নষ্ট হয়। এ ছাড়া মোজেইক, ক্ষুদে পাতা, শিঁকড়ে গিঁট ইত্যাদি রোগও বেগুন ফসলের ক্ষতি করে থাকে।

এ সমস্যা থেকে বাঁচার জন্য সঠিক রোগ ব্যবস্থাপনা করতে হবে। পোকামাঁকড় দূর করে এমন মেডিসিন স্প্রে করতে হবে আর তা নির্দিষ্ট সময় মেনে এবং সঠিক পদ্ধতিতে।
 

ফল সংগ্রহ ফলন


ফল সম্পূর্ণ পরিপক্ক হওয়ার পূর্বেই সংগ্রহ করতে হবে। ফল যখন পূর্ণ আকার প্রাপ্ত হয় অথচ বীজ শক্ত হয় না তখন ফল সংগ্রহ করার উপযুক্ত হয়। সংগ্রহের সময় ফলের ত্বক উজ্জ্বল ও চকচকে থাকবে। অধিক পরিপক্ক হলে ফল সবুজাভ হলুদ অথবা তামাটে রং ধারণ করে এবং শাঁস শক্ত ও স্পঞ্জের মত হয়ে যায়।

অনেকে হাতের আঙুলের চাপ দিয়ে ফল সংগ্রহের উপযুক্ত কিনা তা নির্ধারণ করতে পারেন। এক্ষেত্রে দুই আঙুলের সাহায্যে চাপ দিলে যদি বসে যায় এবং চাপ তুলে নিলে পূর্বাবস্থায় ফিরে আসে তবে বুঝতে হবে বেগুন কচি রয়েছে আর চাপ দিলে যদি নরম অনুভূত হয়, অথচ বসবে না এবং আঙ্গুলের ছাপ থাকে তাহলে বুঝতে হবে সংগ্রহের উপযুক্ত হয়েছে।

মন্তব্য 

উপরে আমরা বেগুন চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে বিস্তারিত জানার চেষ্টা করলাম। মোটকথা, বেগুন চাষের জন্য সবার আগে আপনাকে সঠিক এবং উপযুক্ত ভূমি নির্বাচন করতে হবে। এরপর আপনাকে তিন থেকে পাঁচটি চাষ দিয়ে ভূমি উপযুক্ত করে নিতে হবে আর পোকামাঁকড় দমন করার জন্য প্রয়োজনে মাটিতে উপযুক্ত ঔষধ মিশিয়ে নিতে হবে। 

জমিকে বিভিন্ন লাইনে লাইনে ভাগ করে নিতে হবে এবং পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা রাখতে হবে। বেগুন গাছ জন্মানোর পরে সেগুলো যত্ন নিতে হবে, অতিরিক্ত অপ্রয়োজনীয় পাতা কেটে ফেলতে হবে। সর্বোপরি এ সমস্ত কাজ এবং আরো আনুষঙ্গিক কাজগুলো সঠিকভাবে সম্পাদন করার মাধ্যমে আপনি বেগুন চাষে সফলতা লাভ করতে পারবেন ইনশাআল্লাহ। আজকে এ পর্যন্তই। পরবর্তীতে নতুন কোন বিষয় নিয়ে সামনে আসব ইনশাআল্লাহ।

Visited 1 times, 1 visit(s) today

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here