ব্র্যাক ব্যাংক একাউন্ট খোলার নিয়ম । অনলাইনে ব্যাংক একাউন্ট । বাংলা আলো 

0
32

আপনি যদি ব্র্যাক ব্যাংক একাউন্ট খোলার নিয়ম জানতে ইচ্ছুক হোন তবে উক্ত আর্টিকেলটি আপনার জন্য। এখানে জানাবো ব্র্যাক ব্যাংকে যেকোনো একাউন্ট খোলার জন্য করনীয় সকল কাজ পাশাপাশি জানাবো একাউন্টের ধরন, সুবিধা ও অন্যান্য জিনিস সম্পর্কে। তাই পুরো আর্টিকেল সম্পূর্ণ পড়ুন এবং Brack Bank সংক্রান্ত সকল বিষয়ে জেনে নিন। 

ব্র্যাক ব্যাংক ২০০১ সালে বাংলাদেশে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকে বেসরকারি ব্যাংক হিসেবে বেশ খ্যাতি অর্জনে সক্ষম হয়েছে।  ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প বা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের জন্য খুব সহজে ঋণ প্রদান করে ব্যাংকটি। এই আর্টিকেলে জানবো ব্র্যাক ব্যাংক একাউন্ট খোলার নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত। তবে প্রথমেই জেনে নেয়া যাক কত ধরনের ব্যাংক একাউন্ট খোলা যায়। 

ব্রাক ব্যাংকের একাউন্টের প্রকারভেদ 

এই পর্যায়ে জানাবো ব্র্যাক ব্যাংকে কত ধরনের একাউন্ট রয়েছে সে সম্পর্কে। আমাদের মধ্যে অনেকেরই ভিন্ন ভিন্ন প্রয়োজনে বিভিন্ন ধরনের একাউন্ট খোলার প্রয়োজন হয়। আপনি যখন একটি ব্যাংকে একাউন্ট খুলতে যাবেন তখন সবার প্রথমেই দেখা উচিৎ কত ধরনের একাউন্ট ব্যাংকটি অফার করছে এবং আপনার চাহিদা পূরনের সাথে কোন একাউন্ট গুলো ভালো হবে। নিম্মে ব্র্যাক ব্যাংকের একাউন্ট সম্পর্কে জানানো হলো। 

কারেন্ট বা চলতি একাউন্ট: যাদের সচারচর ব্যাংকের মাধ্যমে লেনদেন করতেই হয় এটা তাদের জন্য। বিশেষ করে ব্যবসায়ীরা চলতি একাউন্ট ব্যবহার করে থাকে। কারন এখানে টাকা জমা ও উত্তোলনের জন্য কোনো লিমিটেশন নেই। যেকোনো সময় উক্ত কাজটি করা যায়। তবে এই সার্ভিসটির জন্য ব্যাংক আপনাকে কোনো অর্থ ইন্টারেস্ট হিসেবে প্রদান করবে না বরং নিদিষ্ট একটা অর্থ চার্জ করবে ব্যাংকের খরচ হিসেবে। 

সঞ্চয়ী বা সেভিংস একাউন্ট: জী এটা এমন একাউন্ট যেখানে আপনার আয়ের নিদিষ্ট অর্থ জমা করতে পারবেন। এবং যেকোনো সময় না হলেও সপ্তাহে ২ বার ব্যাংক থেকে টাকা উত্তোলন করার সুবিধা পাচ্ছেন। পাশাপাশি যেকোনো সময় একাউন্টে টাকা জমা রাখতে পারবেন। 

DPS একাউন্ট (এক ধরনের সঞ্চয়ী হিসাব): যারা কোনো টার্গেট পুরনের জন্য বা ভবিষতের কথা ভেবে দীর্ঘ মেয়াদী টাকা রাখতে চাচ্ছেন এটা তাদের জন্য ভালো হবে। এই একাউন্টে মাসিক, বাৎসরিক যেটা ইচ্ছা সেই সময় অনুযায়ী নিদ্দিষ্ট একটা পরিমাণের অর্থ জমা রাখবেন। এবং সেই জমাকৃত অর্থের উপর নির্ভর করে ব্যাংকও নিদিষ্ট সময়ের পড়ে নিদিষ্ট পরিমাণের ইন্টারেস্ট বা সুদ যুক্ত করে আপনাকে আসলের সাথে প্রদান করবে। তবে নিদিষ্ট সময়ের আগে তুলে নিলে সুদ প্রদান করা হবে না। 

ফিক্স ডিপোজিট: এটা অনেকটাই ডিপিএস এর মতই তবে এখানে মূল ফিচার্স হচ্ছে আপনি যে অর্থ জমা রাখবেন সেটার পরিমাণ, সময়, ইন্টারেস্ট রেট পরিবর্তন করা হবে না পাশাপাশি নিদিষ্ট সময়ের আগ পর্যন্ত আপনি একাউন্ট থেকে অর্থ তুলতে পারবেন না। 

ব্র্যাক ব্যাংক একাউন্ট খুলতে প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস 

প্রতিটি ব্যাংকের মতই ব্র্যাক ব্যাংক একাউন্ট খোলার জন্য বেশ কিছু কাগজপত্রের প্রয়োজন হয় ভেরিফিকেশনের জন্য। এক্ষেত্রে যে কাগজপত্র গুলো প্রয়োজন হয় সেগুলো হচ্ছে: 

  • আবেদনকারীর জাতীয় পরিচয়পত্র বা জন্মনিবন্ধন বা পাসপোর্টের ফটোকপি 
  • প্রয়োজন দুই কপি পাসপোর্ট সাইজের ছবি
  • এড্রেস ভেরিফিকেশনের জন্য প্রয়োজন হবে ইউটিলিটি বিলের যেকোনো একটি (বিদ্যুৎ বিল, পানি বিল, ইন্টারনেট বিল) এর কপি 
  • এমন একজন লাগবে যার ইতিমধ্যে ব্র্যাক ব্যাংকে একাউন্ট রয়েছে এবং তার রেফারেন্স প্রয়োজন
  • যাকে নমিনী দেয়া হবে তাদের বিস্তারিত পরিচয় সহ যাবতীয় তথ্য সমূহ
  • একাউন্ট খোলার ক্ষেত্রে মিনিমাম একটা চার্জ থাকবে যা প্রদান করতে হবে। 

ব্র্যাক ব্যাংক একাউন্ট খোলার নিয়ম 

আপনি যদি অফলাইনে সরাসরি ব্যাংকে গিয়ে একাউন্ট খুলতে চান তবে উপরে উল্লেখ্যিত কাগজপত্র গুলো নিয়ে ব্যাংকিং টাইপে সেখানে উপস্থিত হতে হবে। এই পর্যায়ে সেখানে কর্মরত লোকদের জানাতে হবে আপনি ব্যাসিক একাউন্ট খুলতে চাচ্ছেন। তারা আপনাকে উক্ত ব্যাংকের ফরম দিবে সেটাকে পুরণ করে কাগজপত্রের সাথে জমা দিতে হবে। অতঃপর আপনার একাউন্ট খোলা বিষয়ক সকল কার্য তারা সম্পন্ন করবে। এবার আসুন জেনে নেই যদি অনলাইনে ব্র্যাক ব্যাংক একাউন্ট খুলতে চাই তবে কি কি করতে হবে। 

অনলাইনে ব্র্যাক ব্যাংক একাউন্ট খোলার নিয়ম 

অনলাইনে ব্র্যাক ব্যাংকে একাউন্ট খোলার জন্য নির্ধারিত মোবাইল অ্যাপ রয়েছে যার নাম হচ্ছে “স্মার্ট ওপেনার”। প্লে স্ট্রোর থেকে সহজেই ইন্সটল করা যাবে অ্যাপটি। ইন্সটল হয়ে গেলে রেজিস্ট্রেশন করে নিতে হবে মোবাইল নাম্বারের মাধ্যমে। এরপর একাউন্ট খোলার জন্য এপ্লাই করতে হবে। রিকুয়েস্ট পাঠানোর পর ব্র্যাক ব্যাংকে প্রতিনিধি আপনার নিজ বাসায় এসে একাউন্ট খুলে দেয়া সংক্রান্ত কার্য সম্পাদন করে যাবে। 

তবে এই সেবাটি বর্তমানে কেবল ঢাকা মেট্রোপলিটন এরিয়ার মধ্যেই দেয়া হচ্ছে। দেশের সব স্থানে এখনও এই সার্ভিসটি চালু করা হয়নি তবে ধিরে ধিরে হয়ে যাবে। তাছাড়া ব্র্যাক ব্যাংকের ওয়েবসাইটের মাধ্যমেও ব্যাংক একাউন্ট খোলা যাবে। সেখানে হাইলাইটেড যে ফিচার্স গুলো আছে তা হলো: 

  • কোনো প্রকার ফরম পূরন করার মত ঝামেলা পোহাতে হবে না
  • কোনো স্থানে স্বাক্ষরের প্রয়োজন হবে না
  • ব্র্যাক ব্যাংকের কোনো ব্রাঞ্চের যাওয়া লাগবে না।

তাছাড়া অনলাইন একাউন্ট ওপেন করার যে জিনিস গুলো গুছিয়ে রাখা উচিৎ সেগুলো হলো: 

  • NID এর কপি 
  • আয়ের উৎসের ডকুমেন্টস
  • নমিনীর তথ্য যেমন পাসপোর্ট / জন্ম নিবন্ধন / NID 

অনলাইনে একাউন্ট খোলার জন্য এই লিংকে ক্লিক করে সরাসরি আবেদন পেজে চলে যান, এবং মোবাইল নাম্বার প্রদান করে ওটিপি সাবমিট করুন। তারপর যথাযথ তথ্য প্রদান করে একাউন্ট করে নিন। 

ব্র্যাক ব্যাংকে একাউন্ট খোলার সুবিধা সমূহ 

এবার জেনে নিন কিছু স্পেশাল সুবিধা সমূহ সম্পর্কে যেগুলো পেতে ব্র্যাক ব্যাংকে একাউন্ট খোলা উচিৎ। সুবিধা গুলো হচ্ছে – 

  • স্টুডেন্ট একাউন্টে সকল প্রকার চার্জ ফ্রি 
  • একাউন্ট খোলার পরপরই এটিএম কার্ড দিয়ে দেয়া হবে
  • সকল স্থানে গ্রহনযোগ্য ও কম চার্জে ব্যবহারযোগ্য 
  • সহজে ঋণ গ্রহন ও সহজ কিস্তিতে প্রদানের ব্যবস্থা

ব্র্যাক ব্যাংকের একাউন্ট চার্জ সমূহ 

নগদ জমা প্রদান করার ক্ষেত্রে নিজ ব্যাংকের এজেন্ট আউটলেট থেকে ফ্রিতে, ন্য ব্যাংকের এজেন্ট আউটলেট থেকে ০.২৫% এবং এজেন্ট আউটলেট থেকে শাখায় নগদ জমার ক্ষেত্রেও ০.২৫% লাগবে।

নগদ অর্থ উত্তোলন করার ক্ষেত্রে – নিজস্ব এটিএম, আউটলেট, শাখা থেকে ফ্রীতে টাকা উত্তোলন করা যাবে। তাছাড়া অন্যান্য আউটলেট থেকে উত্তোলনের ক্ষেত্রে ০.২৫% খরচ হবে (সর্বনিম্ম ১০ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ১০০ টাকা অব্দি)  

এটিএম কার্ডের চার্জ – আপনি যে কার্ডই ব্যবহার করছেন সেটার বাৎসরিক একটা চার্জ রয়েছে। একটা কার্ডে যতবেশি সুবিধা থাকবে সেটার চার্জ তত বেশি হবে। তবে ক্রেডিট কার্ডের ক্ষেত্রে বিল গ্রহন করাতে কোনো চার্জ ধার্য করা হয় না। আর এটিএম কার্ডের ক্ষেত্রে কার্ডের উপর ভিত্তি করে পিন রিসেট করার ফি ভিন্ন হয়। 

যেকোনো ইউটিলিটি বিল পরিশোধের ক্ষেত্রে ৬০০ টাকা পর্যন্ত বিনামূল্যে ও ৬০১ টাকা থেকে শুরু করে ১২০০ টাকা পর্যন্ত ১ টাকা খরচ হবে। তাছাড়া ১২০১ টাকা থেকে শুরু করে সর্বাধিক যাই হোক না কেনো ১২ টাকা চার্জ ধার্য করা হবে। 

আর সর্বশেষ, সঞ্চয়ী হিসাব মেইনটেইন চার্জ হিসেবে ৫০০০ টাকা পর্যন্ত ফ্রি এবং এর উপরে হলে উক্ত অর্থ অনুযায়ী চার্জ ধার্য করা হয়। এবং চলতি হিসেবের ক্ষেত্রে ফ্রি থাকে তবে ব্যাংক কতৃক একটা চার্জ নির্ধারন করা হয় যা পরিশোধ করতে হবে। 

ব্র্যাক ব্যাংক কাস্টমার কেয়ার হেল্পলাইন 

একাউন্ট খোলা হোক বা ব্যাংক একাউন্ট সংক্রান্ত যে কোনো তথ্য, জানার জন্য যোগাযোগ করতে পারেন ব্র্যাক ব্যাংকের হটলাইন নাম্বারে অথবা ইমেইল করতে পারেন তাদের। যথাসময়ে তারা আপনার সমস্যার সমাধান দিয়ে থাকবে। তাদের হটলাইন নাম্বার ও ইমেইল এড্রেস। 

নাম্বার – 16221 

ইমেইল – enquiry@bracbank.com

আর্টিকেল থেকে যা শিখলাম

তাহলে আর্টিকেলটি কিভাবে আপনাকে সাহায্য করলো? আর্টিকেলে জানানো হয়েছে ব্র্যাক ব্যাংক একাউন্ট খোলার নিয়ম সম্পর্কে এবং ব্র্যাক ব্যাংকের সাথে জরিত আছে এমন সকল বিষয় বস্তু সম্পর্কে। একাউন্ট করতে কি কি লাগবে থেকে শুরু করে একাউন্টের সুবিধা সমূহ নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। পাশাপাশি অফলাইন ও অনলাইনে কিভাবে ব্র্যাক ব্যাংকের একাউন্ট খোলা যায় সে নিয়েও রয়েছে বিস্তারিত। 

আপনি যদি অন্যান্য ব্যাংক এর অন্যান্য বিষয় সম্পর্কে জানতে ইচ্ছুক হয়ে থাকেন তবে বাংলা আলো ওয়েবসাইটের ব্যাংক নামক ক্যাটাগরিটি অনুসরণ করুন। কারনে সেখানে রয়েছে সেসকল তথ্য যা আপনার জানা প্রয়োজন। 

Visited 49 times, 1 visit(s) today

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here