অনেক ধরনের ব্যাংক একাউন্ট হয় তবে সেসব একাউন্ট একাধিক লোকের মাধ্যমে খোলা হলে সেটাকে এক কথায় যৌথ একাউন্ট বলে। জেনে নিন যৌথ ব্যাংক একাউন্ট খোলার নিয়ম ও আনুসাঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে।
একটি ব্যাংকে অনেক ধরনের একাউন্ট থাকে। তবে বর্তমানে আমাদের দেশের প্রচলিত কিছু ব্যাংক একাউন্ট ধরন হচ্ছে : চলতি একাউন্ট, সঞ্চয় একাউন্ট, ডিপোজিট, ডিপিএস যা কিনা সল্প মেয়াদি হয়ে থাকে। এই সকল একাউন্ট এর যাবতীয় তথ্য ও পরিচালনা যখন একজনের কাছে থাকবে সেটি হবে একটি সাধারণ একাউন্ট। তবে যখন এটি একাধিক মানুষের আধিনে থাকবে বা উক্ত একাউন্টটি একাধিক মানুষ ব্যবহার করবে তখন এটিকে যৌথ ব্যাংক একাউন্ট বলা হবে।
একটি যৌথ একাউন্ট তৈরি ও দায়িত্বে রাখতে ব্যংক কর্মকর্তাদের অধিক সতর্কতা অবলম্বন করতে হয় কারন। যেহেতু দুইজন একই একাউন্ট ব্যবহার করছে তাই প্রতিটি লেনদেন কঠোর ভাবে নিরাপত্তা দিয়ে পরিচালন করতে হয়।
অনেকেই আছেন যারা ভাই বোন, মা বাবা, স্বামী স্ত্রী, বাবা ছেলে, দুই বন্ধু, এমনকি একাধিক ব্যবসায়ীক অংশীদার একত্রে একটি ব্যাংক একাউন্ট খুলতে ইচ্ছুক হলে যে সিস্টেমে একাউন্ট তৈরি করা হয় সেটাই যৌথ একাউন্ট নামে পরিচিত। একটি যৌথ ব্যাংক একাউন্ট সাধারণত চলতি হিসাব অথবা সঞ্চয় হিসাবে খোলা হয়ে থাকে। এবার যৌথ ব্যাংক একাউন্ট খোলার নিয়ম সম্পর্কে বলি যাতে করে আপনি যখন যৌথ ব্যাংক একাউন্ট খুলতে যাবেন তখন কোনো প্রকার সমস্যার সম্মুখীন না হতে হয়।
যৌথ ব্যাংক একাউন্ট খোলার নিয়ম
বাংলাদেশের সব ধরনের ব্যাংকে যৌথ ব্যাংক একাউন্ট খোলার ব্যবস্থা আছে তাই আপনার পছন্দের যেকোনো একটি ব্যাংক থেকে চাইলেই সহজে যৌথ ব্যাংক একাউন্ট তৈরি করতে পারেন। যেহেতু যৌথ ব্যাংক একাউন্ট পরিচালনার ক্ষেত্রে ভেরিফাইয়ের ব্যাপার বেশি তাই যৌথ ব্যাংক একাউন্ট খোলার জন্যও সাধারণ ব্যাংক একাউন্ট থেকে বেশি রুলস ফলো করতে হয়। আপনার বুজার সুবিধার্থ নিম্মে এক এক করে সব গুলো নিয়ম সম্পর্কে জানাচ্ছি :
১) যে দুইজন ব্যক্তি ব্যাংক একাউন্ট যৌথ ভাবে খুলতে ইচ্ছুক সেই দুইজনের স্বাক্ষর করা আবেদন পত্রের প্রয়োজন হবে। একাউন্ট খোলার সময় দুইজনকে উপস্থিত থেকে আবেদন পত্রে স্বাক্ষর করতে হবে।
২) ব্যাংক একাউন্টটি পরিচালনার ক্ষেত্রে কে থাকবে তা স্পষ্ট ভাবে উল্লেখ্য করা থাকতে হবে।
৩) ধরুন, আল্লাহ না করুক দুইজনের মধ্যে কেউ যদি মারা যায় এক্ষেত্রে মৃত্য ব্যক্তির পক্ষ থেকে টাকা কে গ্রহন করবে সেই বিষয়ে বিস্তারির তথ্য দেয়া প্রয়োজন হবে। এবং সেখানেও দুই জনের সুস্পষ্ট স্বাক্ষর করতে হবে।
৪) একজন কিংবা দুইজনই যদি মারা যায় তবে উক্ত একাউন্টটি বন্ধ করে দেয়া হবে।
৫) যৌথ ব্যাংক একাউন্ট যে পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহন করবে সে উক্ত একাউন্ট বন্ধ করে দেয়ার ক্ষমতা রাখে।
যৌথ ব্যাংক একাউন্ট খোলার জন্য কি কি ডকুমেন্টস প্রয়োজন হয়
১) যে দুইজনের আওতায় ব্যাংক একাউন্ট থাকবে তাদের উভয়েরই জাতীয় পরিচয় পত্র অথবা সেটা যদি না থাকে তবে জন্ম নিবন্ধন এর ফটোকপি জমা দিতে হবে।
২) উভয়ের দুই বা ততাধিক রঙ্গিন পাসপোর্ট সাইজের ছবি
৩) নমিনি বা নমিনিগণের বিস্তারিত তথ্যের বিবরণ জমা দিতে হবে।
৪) ইউটিলিটি বিল যেমন – বিদ্যুৎ, গ্যাস বা পানি বিলের কপি
৫) টিআইএন সার্টিফিকেট এবং নিদিষ্ট পরিমানের টাকা দিতে হবে।
৬) যদি কোনো ট্রাস্ট প্রতিষ্ঠান হয় তবে ট্রাস্টের দলিল এবং সকল ট্রাস্টির স্বাক্ষর দিতে হবে।
৭) যদি যৌথ ব্যাংক একাউন্টটি কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হয়ে থাকে তবে ম্যানেজিং কমিটির রেজুলেশনের প্রয়োজন হয়।
যৌথ ব্যাংক একাউন্টের সুবিধা
এটি এমন এক ধরনের একাউন্ট যেখানে দুইজন মালিকানা থাকে। এই ধরনের একাউন্টে সকল একাউন্টধারীরা সকল লেনদেন দেখার অনুমতি পেয়ে থাকে। এতে করে যদি কোনো প্রতিষ্ঠান, মসজিদ, স্কুল, কলেজ এমনকি পরিবারও হয় তবে এর এক্সেস পাওয়া সহজ হয়। তবে এছাড়াও যৌথ ব্যাংক একাউন্টের বেশ কিছু সুবিধা রয়েছে যা নিম্মে উল্লেখ্য করা হচ্ছে :
- সহজ ও সকলের এক্সেস পারমিশন পাওয়া যায়
- লেনদেন পরিচালনা করা খুব সহজ
- প্রতিদিনের খরচ পরিচালনার ক্ষেত্রে সহজ হয়
- অনেক ব্যাংক একাউন্টে প্রতিটা একাউন্ট হোল্ডারকে ডেবিট কার্ড এবং চেক বইয়ের সুবিধা দেয়
- একাউন্টের অর্থ শতভাগ নিরাপদে থাকে কারন একজনকে বাদে অন্য জন টাকা উত্তোলন করতে পারে না।
- অংশীদারিদের ক্ষেত্রে এই একাউন্টটি তাদের সম্পর্ক মজবুদ রাখতে সহায়তা করে।
- যেকোনো কঠিন ও বড় প্রজেক্টে আর্থিক সুবিধা বেশি পাওয়া যায়।
যৌথ ব্যাংক একাউন্টের অসুবিধা
পৃথিবীতে এমন কোনো কিছু নেই যার সুবিধা আছে আর অসুবিধা নেই, তেমনই যৌথ ব্যাংক একাউন্টের ব্যাপারও। কিছু অসুবিধা রয়েছে অবশ্য যা নিম্মে উল্লেখ্য করছি :
- যেহেতু এক পক্ষকে ছাড়া অন্য পক্ষ টাকা উত্তোলন করতে পারে না তাই গুরুত্বপূর্ণ সিচুয়েশনে সমস্যাতে পড়ার সম্ভাবনা থাকে।
- দুই পক্ষের মতামত ব্যাতিত ব্যাংক একাউন্ট বন্ধ করা যায় না। তবে ক্ষেত্র বিশেষে একাউন্ট পরিচালনায় যে থাকবে সে করতে পারবে।
- যেকোনো বিষয়ে দুইটি পক্ষেরই মতামত প্রয়োজন হবে।
পরিশেষে, এই ছিলো যৌথ ব্যাংক একাউন্ট খোলার নিয়ম এবং উক্ত একাউন্ট খোলার জন্য কি কি প্রয়োহন সেগুলো নিয়ে বিস্তারত তথ্য। এবং শেষমেশ উক্ত একাউন্টের সুবিধা ও অসুবিধা সম্পর্কে জানানো হয়েছে যা আপনাকে সাহায্য করবে উক্ত একাউন্টটি খোলা আপনার জন্য ঠিক হবে কি না। ব্যাংক সংক্রান্ত সকল তথ্য জানতে ভিজিট করুন বাংলা আলো ওয়েবসাইটের ব্যাংক নামক ক্যাটাগরিটি।