ব্যবসা বাণিজ্য

রেস্টুরেন্ট ব্যবসার আইডিয়া | কিভাবে শুরু করা যায়, পুজি ও নিয়ম | কমপ্লিট গাইডলাইন

বর্তমান জেনারেশনে রেস্টুরেন্টে খাওয়া দাওয়াতে মানুষের ঝোক বেড়েই চলছে। সেই সুবাদে এই সেক্টরে রেস্টুরেন্ট ব্যবসায় খুবই লাভজনক হতে পারে।

সাম্প্রতিককালে মানুষের জীবনযাত্রায় বেশ পরিবর্তন এসেছে। এখনকার সময়ে তারা পরিবার পরিজন নিয়ে ভ্রমণে বা ঘুরতে যায়। তারই সাথে বেড়েছে রেস্টুরেন্ট ব্যবসায়ের চাহিদা।এ চাহিদার ব্যাপারটা মাথায় রেখে অনেকে রেস্টুরেন্ট ব্যবসায় নামছেন।

বিশেষত তরুণ উদ্যোক্তারা এ কাজে বেশি আগ্রহী। কিন্তু অনেকেই ব্যবসায় দেয়ার পর সমস্যায় পড়ে যান। এক্ষেত্রে সঠিকভাবে কাজ করা প্রয়োজন। কিভাবে সঠিক নিয়মে রেস্টুরেন্ট ব্যবসায় শুরু করবেন এবং বাধা উত্তরণ করে সফলতা লাভ করবেন – আজ সে ব্যাপারে আপনাদের জানাবো ইনশা আল্লাহ্।

 

পূর্ব পরিকল্পনা ও লক্ষ্য নির্ধারণ করুন

আপনাকে অবশ্যই কাজ করার আগে লক্ষ্য নির্ধারণ করতে হবে। শুধু রেস্টুরেন্ট ব্যবসায়ের ক্ষেত্রেই নয়, বরং সব ব্যবসায়ের ক্ষেত্রেই এটা গুরুত্বপূর্ণ।অনেকেই ভুল লক্ষ্য নির্ধারণের কারণে ছিটকে গেছে।

আপনি কোথায় রেস্টুরেন্ট দিতে চান, সেখানকার মানুষের অর্থনৈতিক অবস্থা কি,  কি কি খাবার মেনু রাখতে চান, ডেকোরেশন কি করবেন, বিনিয়োগ কত করা যায় – ইত্যাদি সম্পর্কে পূর্বে পরিকল্পনা করে লক্ষ্য নির্ধারণ করতে হবে। ভুল পরিকল্পনার কারণে অনেকেই তাদের ব্যবসায়ে সফল হতে পারেননি। অার্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন।

আরো পড়ুন : অনলাইনে ব্যবসা করার উপায়

উদাহরণস্বরুপ, আপনি যদি ইটালিয়ান খাবারের রেস্টুরেন্ট কোনো প্রত্যন্ত অঞ্চলে দেন, যেখানে আশেপাশে কোনো ঘুরার প্লেস নেই এবং সেখানকার মানুষের জীবনযাত্রার মান নিম্ন; তাহলে রেস্টুরেন্ট ব্যবসায়ে ব্যর্থ হওয়া স্বাভাবিক। অতএব, পূর্ব পরিকল্পনা ও লক্ষ্য নির্ধারণ যেন সঠিক হয়, সেটা খেয়াল রাখা জরুরী।

 

নির্দিষ্ট ক্যাটাগরি ঠিক করুন

কোন খাবারের আইটেমটাকে আপনার রেস্টুরেন্টের প্রধান মেনু করবেন, তা ঠিক করুন। কেননা কোনো রেস্টুরেন্টে যদি হরেক রকম খাবারে সয়লাব থাকে, তাহলে মানুষ দ্বিধায় পড়ে যায়। তারা বুঝতে পারে না যে আসলে এই রেস্টুরেন্ট প্রধানত কোন খাবারের জন্য!

তাই আপনাকে এাটা নির্দিষ্ট ক্যাটাগরি বেছে নিতে হবে।যেমন ধরুন, ইটালিয়ান ফাস্টফুড আইটেম সিলেক্ট করলেন। এখন ইটালিয়ান পাস্তা, পিজা, বার্গার প্রভৃতি আইটেমকে কেন্দ্র করে কাজ করলেন। আপনার রেস্টুরেন্টের প্রধান বা বিশেষ খাবার মেনু হলো ইটালিয়ান পাস্তা। তাহলে মানুষের জন্য এটা বুঝা সহজ যে আপনার রেস্টুরেন্টের বিশেষত্ব হলো ইটালিয়ান পাস্তা।

এর সাথে সাবমেনু হিসেবে অন্যান্য আইটেম রাখতে পারেন; যেমনঃ বার্গার বা স্যুপ, পিজা ইত্যাদি। তবে প্রধান খাবার মেনু হলো ইটালিয়ান পাস্তা।

 

ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলুন

যারা রেস্টুরেন্ট ব্যবসায়ে জড়িত, তাদের সাথে কথা বলুন। তাদের কাছে জানুন যে, তাদের এখানে লোকসমাগম কেমন, মানুষের কোন খাবার বেশি পছন্দ, স্বাস্থ্যকর খাবার সরবরাহের ক্ষেত্রে তারা কি পদক্ষেপ নিয়েছে ইত্যাদি। স্বাভাবিকভাবে তাদের কাছে তা জেনে নেয়ার চেষ্টা করতে হবে।

কোনো সমস্যায় পড়লে তারা কিভাবে তা সমাধানের চেষ্টা করেন, তাদের কাছে সে সম্পর্কে জেনে নিতে পারেন।

 

মার্কেট এনালাইসিস করুন

আপনি যে স্থানে রেস্টুরেন্ট ব্যবসায় টি দিতে চান, সে স্থান সম্পর্কে ধারণা নিন। সেখানকার লোকদের খাবার রুচি কেমন,অার্থিক অবস্থা কি রকম, তারা কি নিয়মিত রেস্টুরেন্টে খাবার খেতে পছন্দ করে নাকি মাঝেমাঝে খায়, কোন খাবারটা তাদের বেশি প্রিয় – এ তথ্যগুলো যাচাই করে সংগ্রহ করুন।

 

বাজেট নির্ধারণ করুন

আপনি কেমন আয়তনের রেস্টুরেন্ট ব্যবসায় দিতে চান তার জন্য বাজেট নির্ধারণ করুন। রেস্টুরেন্টের জন্য ফ্লোর নেয়া, তা সাজানো গোছানো, যন্ত্রপাতি, বিজনেস স্কেল, ডেকোরেশন করা, আলোকসজ্জা প্রভৃতির জন্য একটা খরচের হিসাব বের করুন।

প্রাথমিকভাবে খাবার মেনুর পরিমাণ কম রেখে শুরু করতে পারেন। এতে বাজেট খরচ কমিয়ে আনা সম্ভব। তবে খাবারের মান ভালো থাকাটা জরুরি বিষয়। তাই এ ব্যাপারে সজাগ থাকতে হবে আপনাকে।

 

কাস্টমার রিভিউ

আপনার রেস্টুরেন্টের মান ঠিক আছে কি না তা জানতে হলে ও সমস্যা পেলে তা সমাধান করার জন্য কাস্টমারদের স্যাটিসফ্যাকশন জরুরি। কেননা, রেস্টুরেন্টের মান ভালো না হলে রেস্টুরেন্ট ব্যবসায় টিকে থাকা ও প্রতিষ্ঠিত হওয়া সম্ভব হয়না।

কাস্টমারদের কাছ থেকে ভাল রিভিউ পেতে খাবারের পরিচ্ছন্নতা ও স্বাস্থ্যকর পরিবেশে রান্নার ব্যবস্থা করতে হবে। সেটা দৃশ্যমান রাখতে হবে, যাতে কাস্টমারদের মনে সন্দেহ না জাগে।

 

সোশ্যাল মার্কেটিং করার ব্যবস্থা গ্রহন করুন

আপনার রেস্টুরেন্ট ব্যবসায়টি সচল রাখতে এবং পরিচিতি বাড়াতে সোশ্যাল মার্কেটিং করাটা গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, মানুষ বর্তমানে ইন্টারনেটে বেশি সময় দিচ্ছে। ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ, ইন্সটাগ্রামসহ বিভিন্ন সাইটে তারা নিয়মিত ব্রাউজ করে।

আপনার ব্যবসায়ের জন্য অন্যান্য কাজগুলোর পাশাপাশি ফেসবুকে বিজনেস পেজ খুলতে পারেন। সেখানে খাবার সংক্রান্ত পোস্ট করে শেয়ার এবং পেজ বুস্ট করার মাধ্যমে দ্রুত পরিচিতি বাড়বে ইনশা আল্লাহ্।

 

রেস্টুরেন্ট ব্যবসায়ের ক্ষেত্রে সমস্যা ও উত্তরণের উপায়

এ ব্যবসায়ে অনেক টাকা বিনিয়োগ করেও লস খেয়ে যায় অনেকে। এসবের জন্য অনেক কারণ রয়েছে। তার মধ্যে আপনাকে প্রথমেই যে কারণটি বলতে চাচ্ছি, তা হলো সঠিক পরিকল্পনা ছাড়াই ব্যবসায়ে নেমে যাওয়া। পরিকল্পনায় গাফিলতি করার কারণে ব্যবসায় শুরুর পর টিকে থাকতে না পেরে গুটিয়ে নেয় অনেকে।

এছাড়াও আরও অন্যান্য উল্লেখযোগ্য কারণ হচ্ছে – ভুল প্লেসে রেস্টুরেন্ট প্রতিষ্ঠা করা, খাবারের মান সংরক্ষণের ব্যাপারে সঠিক পদক্ষেপ না নেয়া, প্রথমে ভালো সার্ভিস দিয়ে টাকার লোভে রেস্টুরেন্টের মান ধরে রাখার ব্যাপারে যত্নবান না হওয়া, অযথা মূল্য বৃদ্ধি, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে খাবার তৈরী, স্টাফদের অসৌজন্যমূলক আচরণ, পার্কিং ব্যবস্থা না থাকা ইত্যাদি।

এসব কারণগুলো সমাধান করে সাফল্য লাভ করা রেস্টুরেন্ট ব্যবসায়ের ক্ষেত্রে একটু কষ্টকর হলেও সঠিক নিয়মে পরিশ্রমের মানসিকতা থাকলে সহজে সম্ভব। সমস্যা কাটিয়ে সফল হতে হলে আপনাকে যা করতে হবেঃ

ব্যবসায় শুরুর পূর্বে এ সম্পর্কে কোর্স করতে পারেন। এটা সফলতার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। বর্তমানে ইউটিউবে এমন অনেক টিউটোরিয়াল পাওয়া যায়, সেগুলো দেখতে পারেন।

অংশীদারে মূলধন বিনিয়োগ করে ব্যবসায়ের পূর্বে স্ট্যাম্প ও স্বাক্ষরসহ সহ চুক্তিপত্র করে নেয়া।

প্রথমবারেই বড় বিনিয়োগ না করা। বরং অল্প করে ধাপে ধাপে বিনিয়োগ করার ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। এতে আর্থিকভাবে ক্ষতির সম্ভাবনা কমে যায়।

আপনার রেস্টুরেন্ট টি দেখতে যেন দুর্দান্ত লাগে, সে অনুযায়ী সাজানো ও আসন বিন্যাস করা।

স্টাফদের আচরণ তদারক করা। তারা কেমন সার্ভিস দিচ্ছে, কোনো সমস্যা হচ্ছে কি না তা খেয়াল রাখা।

খাবারের মানের ক্ষেত্রে যত্নবান হওয়া। কেননা খাবারের মান ভালো হলে তা জনপ্রিয় হওয়ার ও প্রচারের সম্ভাবনা বেড়ে যায়।

রেস্টুরেন্টের বাইরে গাড়ি পার্কিং এর ব্যবস্থা রাখা।

রেন্টুরেন্টের আঙিনা বাগান করে সাজানো, যাতে তা দৃষ্টিনন্দন লাগে।

অনলাইনে রিভিউয়ের ব্যবস্থা করা। কেউ কোনো সমস্যার কথা জানালে তা গুরত্ব দেয়া ও সমাধানের ব্যবস্থা গ্রহন করতে হবে।

সততা,ধৈর্য্য এবং পরিশ্রমী মনোভাব নিয়ে সুশৃঙ্খল ভাবে কাজ করা। এটা সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ।

 

বর্তমানে পৃথিবীতে সেরা লাভজনক ব্যবসায়ের মধ্যে রেস্টুরেন্ট ব্যবসায় অন্যতম। এ ব্যবসায় প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেলে কোটিপতি হওয়া অসম্ভব নয়। তবে এজন্য আপনাকে সেরকমভাবে কাজে নামতে হবে। একটা ব্যবসায় ভাল অবস্থানে চলে যাওয়ার পর সে অবস্থানটা ধরে রাখার জন্য প্রচেষ্টা চালাতে হবে।

প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেলেই যে সব কিছু হয়ে গেল, ব্যাপারটা তা নয়। বরং তা ধরে রাখার জন্য সজাগ থেকে কাজ করা জরুরী। অতএব আপনি যদি মনে করেন যে আপনি ধাপে ধাপে সুন্দরভাবে কাজ করতে পারবেন, তাহলে আপনার দেরী করা অনুচিত।

 

 

Bangla Alo

Recent Posts

মন ভালো রাখার উপায় || মন সুস্থ রাখার ১০ টি টিপস

মানুষের মন যেহেতু আছে এটা ভালো কিংবা খারাপ থাকবে এটা খুব স্বাভাবিক একটা বিষয়।  একটা…

4 weeks ago

বাংলাদেশের সেরা ১০ টি মেডিকেল কলেজ

বাংলাদেশে মেডিকেল শিক্ষার ক্রমবর্ধমান জনপ্রিয়তার সাথে সাথে, ভালো মানের মেডিকেল কলেজের তালিকা জানা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।…

2 months ago

সেরা ১০ টি গল্পের বই || বাছাইকৃত লেখকের সেরা ১০ টি বই

গল্পের বই পছন্দ করেন? পড়ার জন্য সেরা গল্পের খোজে আছেন? সে সুবাদে অনলাইনে সার্চ করে…

2 months ago

ভিসা ও পাসপোর্ট কি? একটি ভিসা এবং পাসপোর্টের মধ্যে পার্থক্য সমূহ

যারা সঠিক তথ্যটি জানেনা তাদের অনেকের ধারণা - ভিসা এবং পাসপোর্ট মূলত একই কাজ করে…

2 months ago

ইসলামী ব্যাংক প্রবাসী লোন নেয়ার পদ্ধতি সম্পর্কে বিস্তারিত (২০২৪)

আপনার কি Loan বা ঋণ প্রয়োজন? আচ্ছা আপনি কি একজন প্রবাসী কিংবা আপনার পরিবারের কেউ…

2 months ago

ইসলামে নিষিদ্ধ ব্যবসা || যে সকল ব্যবসা ইসলামের দৃষ্টিতে হারাম

একজন মুমিন ব্যক্তি হিসেবে আপনার অবশ্যই জেনে রাখা উচিত আপনি যে ব্যবসা পরিচালনা করছেন তাকে…

2 months ago