শেষের কবিতা উপন্যাসের সারসংক্ষেপ । রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর । বই রিভিউ 

0
38

শেষের কবিতা 

রবীন্দ্রনাথ বাংলা সাহিত্যের এক অন্যতম কারিগরের নাম। নোবেল জয়ী এই কবি বাংলার এমন কোনো শাখা বাকি রাখে নি যেখানে তিনি লিখেন নি। গল্প উপন্যাস নাটক কবিতা গান সহ সকল ক্ষেত্রেই তার অবদান রয়েছে। আজ লিখবো তার এক অমর সৃষ্টি “শেষের কবিতা” নিয়ে। নামের ধাচের অনুযায়ী এটাকে কবিতা মনে হলেও মূলত এটি একটি উপন্যাস। বিভিন্ন পরিক্ষাতেও এসে থাকে এমন একটি প্রশ্ন যে, শেষের কবিতা একটি __ ? যেখানে অপশন হিসেবে কবিতা, উপন্যাস দুটোই থাকে। 

উপন্যাসটির ক্যাটাগরি যদি নির্ধারন করে দিতে হয় তবে বলবো এটা একটি রোমান্টিক উপন্যাস। ভালোবাসায় আচ্ছন্ন্য ছাড়া গুটি কয়েক মানুষের মনস্তাত্ত্বিক ধাচের উপন্যাস। শেষের কবিতা গল্পের মূল চরিত্র রয়েছে চারটি –  অমিত রায়, লাবন্য, কেতকি, শোভনলাল। প্রথমেই শেষের কবিতা উপন্যাসের সারসংক্ষেপ প্রদান করে নেয়া যাক। তারপর উপন্যাসের সম্পর্কে মতামত ও ভালো মন্দ তুলে ধরবো। 

শেষের কবিতা উপন্যাসের সারসংক্ষেপ

গল্পটা শুরু হয় অমিতকে দিয়ে। অমিতের পরিচয় প্রদানে বলতেই হয় অমিত একজন ব্যারিস্টার যার সাহিত্যের প্রতি ভালোবাসা প্রবল। বিলেতে পড়াশোনা করা অমিতের মনে প্রেমের কোনো কমতি নেই যেনো, নারীর প্রতি আগ্রহ থাকলেও খুব করে যেনো উৎসাহিত করে না তাকে। আর তাই তো আশে পাশে হাজারো সুন্দরী মেয়েদের আনাগোনা থাকা সত্ত্বেও তাদের তেমন মনে ধরে না তার। 

পরক্ষনেই কবি আমাদের নিয়ে যান শিলংয়ের দিকে যেখানে অমিত কিছু সময় কাটানোর জন্য বেড়াতে যান আর সেই রাস্তায় ঘটে যায় এক দুর্ঘটনা। দুপাশ থেকে আসা দুটি গাড়ির সংঘর্ষ ঘটে খানের একটিতে ছিলো অমিত। ভাগ্যক্রমে এখানে কারো জীবন না গেলেও মন চলে যায় অমিতের। কারন উপর পাশেই ছিলো যে আমাদের গল্পের দ্বিতীয় চরিত্র মায়াবতী লাবন্য। 

অমিত যখন অমায়িক ভদ্রতা ও দুঃখ প্রকাশ করলো উক্ত ঘটনার কারনে তখন যেনো মনে হলো ভুলটা অমিতের নয় বরং লাবন্যেরই। তাদের আলাপের মাধ্যমেই ভালোবাসা নামক অদেখা জিনিসের অস্থিস্ত লক্ষনীয় হয়ে উঠে সে ঘটনায়। 

অমিত ও লাবন্যের মাঝে একট বিষয় বেশ কমন লক্ষনীয় তারা উভয়েই সাহিত্য প্রেমি ছিলো। ঘটনার পর্যায়ক্রমে দেখা যায় অমিত ও লাবন্য একে অপরের প্রতি হারিয়ে যায়। এক সাথে সময় কাটানো, প্রকৃতি উপভোগ, নিজেদের ভালোবাসার গভিরতা প্রকাশের ভঙ্গিমায় লেখক আপনাকে ধরে রাখবে পুরোটা জুড়ে। বিয়ে করার প্রতিসুতি দিয়ে লাবন্যকে আংটি অব্দিও পরিয়ে দেয় অমিত। 

এভাবেই একটি সুন্দর ইতি ঘটতে পারতো কিন্তু লেখক চায়নি এমনটা হোক আর তাই তো ঘটনায় আসে টুইস্ট। গল্পে আসে নতুন মোড় চলে আসে নতুন চরিত্র কেতকি ও শোভন। শোভনের কথা বললে, সে হলো লাবন্যের বাবার প্রিয় ছাত্র। শোভন ও লাবন্য প্রায় সমবয়সী, লাবন্যকে শোভন মনে প্রানে ধারন করতো এবং সেটি প্রকাশও করেছিলো কিন্তু লাবন্যের দিক থেকে তখন সম্মতি ছিলো না। অন্যদিকে কেতকিও চলে আসে একই স্থানে এটা শুনে যে তার ভালোবাসার মানুষ ঢুব দিচ্ছে অন্যকারো প্রেমে। পরবর্তীতে যা ঘটার সেটাই ঘটে। 

কেতকি বা কেটি নামক মেয়ের সম্পর্কে বলতে গেলে যা তথ্য গুলো পাওয়া যায় তা হলো। বাংগালী হলেও হালচালে একদম বিলেতি ভাব লক্ষনীয়। এ জেনো লাবন্যের থেকে পুরোটা ভিন্ন কেউ। যাকে অমিত আগে থেকেই ভালোবাসে এবং তার আঙ্গুলে রয়েছে অমিতের দেয়া আংটি। যা সম্পর্কে পূর্বে লাবন্য অবগতি ছিলেন না। ঠিক এই মুহুর্তে গল্পে অমিতকে বলা যায় চরিত্রহীন একজন পুরুষ। 

একটা মানুষ আসলে কতজনকে ভালোবাসতে পারে? যেখানে প্রথম প্রেম ছিলো রঙ্গিন জগতের কেটি সেখানে কিভাবে তার থেকে ভিন্ন ধাচের মেয়ে লাবন্যের প্রেমে পড়লো অমিত? তবে কি ভালোবাসা এক সময়েই একাধিক ঘটতে পারে? যদিও তার আচরনের লক্ষনীয় হয়েছে প্রতারনার। কারন তার পূর্বের ভালোবাসার কথা গোপন করে গেছে লাবন্যের কাছ থেকে। 

পর সময় দেখা মিলে অমিত চলে যায় তার পুরনো ভালোবাসার কাছে আর লাবন্যের মনে হতে থাকে শোভন নামক ছেলেটা তাকে অনেক ভালোবাসে। এরপর যা হওয়ার সেটাই হলো লাবন্য হয়ে গেলো শোভনের আর অমিত তেটির। তবে এখানে অমিতের এক মন্তব্য লক্ষনীয় যা ছিলো কিছুটা এমন যে, “কেতকির সঙ্গে আমার সম্পর্ক ভালোবাসারই, কিন্তু সে যেন ঘড়ায় তোলা জল- প্রতিদিন তুলব, প্রতিদিন ব্যবহার করব। আর লাবন্যের সঙ্গে আমার যে ভালোবাসা, সে রইল দীঘি, সে ঘরে আনবার নয়, আমার মন তাতে সাঁতার দেবে” এই মন্তব্যের মাধ্যমেই বলা যায় অমিতের চরিত্রটি খুব একটা সুবিধার করে গড়ে তোলা হয়নি।

লাবন্যকে যে খুব একটা ভালো ভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে সেটাও কিন্তু নয়। পরবর্তীতে সে যতই শোভনের কাছে ফিরে যাক না কেনো মন পরে রয়েছে অমিতের কাছেই। এখানে বলা যেতেই পারে শোভনের সাথে কেবল দৈহিক সম্পর্কে আচ্ছন্ন্য লাবন্য মানসিকতার নয়। এখানে তাকে পথভ্রষ্টা হিসেবেই লক্ষনীয় হয়েছে অনেকটা। 

গল্পের শেষটা কিছুটা এমন ছিলো যে, যখন কেতকি শিলং পৌছে দেখে অমিতের কৃর্তি তখন রাগ হয়েই চলে যায় সেখান থেকে আংগুলের আংটি দিয়ে। একই পথে হাটে লাবন্যও। পরবর্তীতে লাবন্যের পরামর্শে অমিত পৌছে চেরাপুঞ্জি কেতকির রাগ ভাঙ্গাতে। তবে ফিরে এসে লাবন্যকে আর পায়নি সে। অনেক সময় পর যখন অমিত আর কেতকির বিয়ে হয় সে সময়কালীন লাবন্যের একটি চিঠি আসে অমিতের ঠিকানায় যেখানে উল্লেখ্য ছিলো যৌবনে শোভন লাবন্যকে ভালোবাসছিলো, কিন্তু অপমান ও অবজ্ঞার কারনে দূরে থাকলেও আজ সেই তার বর।

আর এভাবেই সমাপ্ত ঘটে রবীন্দ্রনাথের “শেষের কবিতা” নামক উপন্যাসটির। এটি ছিলো তার লেখা দশম উপন্যাস যা লিখা হয়েছিলো ১৯২৮ সালে। তার লেখা কালজয়ী উপন্যাস গুলোর মধ্যে এটি অন্যতম। এটা তো ছিলো কেবল সংক্ষেপ আপনি যখন উপন্যাসটি পড়বেন তখন লেখকের বচনভংগি সেখানে থাকা কবিতা উক্তি ডায়লক আপনাকে মুগ্ধ করবে। 

পরিশেষে, এই ছিলো শেষের কবিতা নামক রবীন্দ্রনাথ ঠাকুকের লেখা উপন্যাসইটি সারসংক্ষেপ যেখানে অল্প কিছু কথায় পুরো উপন্যাসের মূল ভাব ও গল্পটি সাজিয়ে তোলার চেষ্ঠা করেছি। এমনই যদি বিভিন্ন জনপ্রিয় বইয়ের রিভিউ জানতে ইচ্ছুক হয়ে থাকেন তবে অনুসরণ করুন বাংলা আলো ওয়েবসাইটের বই রিভিউ ক্যাটাগরিটি। ধন্যবাদ। 

Visited 432 times, 1 visit(s) today

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here