–
সঞ্চয়পত্র কি?
সঞ্চয়পত্র যা একটি সঞ্চয় স্কিম, এটাকে অনেকটা ফিক্সড ডিপোজিটও বলা যায়। দেশের জনগনের অর্থ ঝামেলা বিহীন ভাবে বিনিয়োগের পথ প্রশস্ত করতে সরকারের পক্ষ থেকে যে স্কিমটি চালু রয়েছে সেটাই সঞ্চয়পত্র হিসেবে পরিচিত।
গঠানুগতিক সংজ্ঞায় বলতে গেলে, বাংলাদেশ জাতীয় সঞ্চয় অধিদফতরের অধীনে পরিচালিত এমন একটি সঞ্চয় স্কিম যার উদ্দেশ্য জনগণকে সঞ্চয়ের দিকে নিয়ে আসা, বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র সঞ্চয় গুলো জাতীয় স্কিমে আহরণ করা, জনসাধারণের জন্য ঝামেলামুক্ত বিনিয়োগের পথ প্রশস্ত করা, এবং এসব এক নাম হলো সঞ্চয়পত্র।
অন্যভাবে বললে, সাধারণ মানুষের হাতে দীর্ঘ সময় টাকা ফেলে না রেখে তাদের ঝুঁকিমুক্ত বিনিয়োগের মাধ্যমে মুনাফা সুযোগ করে দেয়া, যাতে করে বিশেষ জনগোষ্ঠী (যেমন: অবসরপ্রাপ্ত, সরকারি কর্মকর্তা, কর্মচারী, বায়োজ্যেষ্ঠ নাগরিক, প্রবাসী বাংলাদেশি, শারিরিক প্রতিবন্ধি) এর আর্থিক ও সামাজিক নিরাপত্তা আওতায় আসার সুযোগ করে দেয়া হচ্ছে সঞ্চয়পত্রের মাধ্যমে।
কেনো সঞ্চয়পত্র কিনবেন?
এই বিষয়টি মোটামোটি সকলেরই জানা রয়েছে যে, সঞ্চয়পত্রের মাধ্যমে দেশের জাতীয় বাজেটের ঘাটতিও পূরণ করা হচ্ছে যা সামগ্রিক দেশ ও দেশের জাতীর জন্য কল্যাণকর। তবে তা যাই হোক, আপনার স্মরণে এই প্রশ্ন আসতেই পারে যে, “কেনো সঞ্চয়পত্র কিনবো?” Well, আপনাকে তাহলে কিছু কারণ দিচ্ছি যেগুলো বিবেচনায় রাখা উচিৎ এই সিদ্ধান্ত নিতে যে সঞ্চয়পত্র কিনবেন কি-না।
১) প্রথমেই যে বিষয়টি আসবে তা হলো সঞ্চয়পত্র কেনা হলো এক প্রকার ঝামেলামুক্ত বিনিয়োগ এবং এখানে ঝুঁকি বলতে তেমন কিছু নেই।
২) সঞ্চয়পত্রের মেয়াদ যখন শেষ হবে তখন উক্ত সেক্টর থেকে ভালো পরিমাণের মুনাফা পাওয়ার নিশ্চয়তা রয়েছে।
৩) সঞ্চয়পত্রে যে মুনফার হার প্রদান করা হয় তা অন্যান্য এফডিআর থেকে তুলনামূলক বেশি
৪) আপনার যদি বিশেষ কোনো প্রয়োজনে ইমার্জেন্সি অর্থের দরকার হয় তবে যেকোনো সময় সঞ্চয়পত্র ভাঙ্গাতে পারবেন।
৫) যদিও মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে ভেঙ্গে ফেললে মুনাফার হার কিছুটা কম পাবেন, তবে পাবেন শিওর। যা যেকোনো ব্যাংক কিংবা আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে বেশি হবে।
সঞ্চয়পত্রের প্রকারভেদ
মূলত অনেক ধরণের সঞ্চয়পত্র রয়েছে। বুঝার সুবিধার্থে সকল সঞ্চয়পত্রকে দুইটি ভাগে ভাগ করছি। প্রথম ভাগে থাকবে যারা বাংলাদেশি নাগরিক তাদের জন্য, আর অন্য ভাগে থাকবে যারা বাংলাদেশি তবে প্রবাসী। এবার বিভিন্ন মেয়াদ ভিত্তিতে সঞ্চয়পত্র গুলোকে পৃথক করা হয়েছে। নিম্মে সেসব সঞ্চয়পত্রের নাম ও মেয়াদ হাইলাইট করে দিচ্ছি।
বাংলাদেশি নাগরিকের জন্য রয়েছে:
- বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্র – মেয়াদ ৫ বছর
- মুনাফা ভিত্তিক সঞ্চয়পত্র – মেয়াদ ৩ বছর
- পরিবার সঞ্চয়পত্র – মেয়াদ ৫ বছর
- পেনশন সঞ্চয়পত্র – মেয়াদ ৫ বছর
বাংলাদেশি প্রবাসীদের জন্য রয়েছে:
- Wage Earner Development Bond
- Us Dollar Investment Bond
- Us Dollar premium Bond
কারা সঞ্চয়পত্র কিনতে পারবে?
এই পর্যায়ে জানাবো তাদের সম্পর্কে যারা বিনিয়োগের উদ্দেশ্যে সঞ্চয়পত্র ক্রয় করতে পারবে। সহজে বুঝার সুবিধার্থে প্রকারভেদ অনুযায়ী উপস্থাপন করছি।
৫ বছর মেয়াদী বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্র: ১৮ বছর পূর্ণ হয়েছে এমন যেকোনো বাংলাদেশি নাগরিক এই সঞ্চয়পত্রটি কিনতে পারবে একক ভাবে অথবা যৌথভাবে। আয়কর অধ্যাদেশ-১৯৮৪ এর ৬ষ্ঠ তফসিল এর পার্ট এ এর অনুচ্ছেদ ৩৪ অনুযায়ী মৎস্য খামার, হাঁস-মুরগীর খামার, পেলিটেড পোল্ট্রি ফিডস উৎপাদন, বীজ উৎপাদন, স্থানীয় উৎপাদিত বীজ বিপণন, গবাদি পশুর খামার, দুগ্ধ এবং দুগ্ধজাত দ্রব্যের খামার, ব্যাঙ উৎপাদন খামার, উদ্যান খামার প্রকল্প, রেশম গুটিপোকা পালনের খামার, ছত্রাক উৎপাদন এবং ফল ও লতাপাতার চাষ হতে অর্জিত আয়-যা সংশ্লিষ্ট উপ-কর কমিশনার কর্তৃক প্রত্যয়নকৃত।
৩ বছর মেয়াদী মুনাফা ভিত্তিক সঞ্চয়পত্র: এই সঞ্চয়পত্রে ৩ মাস পরপর মুনাফা প্রদান করা হয়। এটি কেনার জন্য অবশ্যই ব্যক্তিকে বাংলাদেশি নাগরিক হতে হবে যার বয়স থাকবে নূন্যতম ১৮ বছর। একক কিংবা যৌথভাবে এই সঞ্চয়পত্রটি কেনা যাবে। ব্যক্তিবর্গ ছাড়াও অটিস্টিকদের কেন্দ্র করে যেকোনো প্রতিষ্ঠান (শিক্ষা কিংবা অন্যান্য ক্যাটাগরি) ৩ মাস মেয়াদী সঞ্চয়পত্র কিনতে পারবে।
৫ বছর মেয়াদী পরিবার সঞ্চয়পত্র: ১৮ (আঠার) ও তদুর্ধ্ব বয়সের যে কোন বাংলাদেশী মহিলা পরিবার সঞ্চয়পত্র ক্রয় করতে পারবে। তাছাড়াও যে কোন বাংলাদেশী শারীরিক প্রতিবন্ধী (হোক পুরুষ কিংবা মহিলা) এবং যদি কোনো পুরুষ পরিবার সঞ্চয়পত্র ক্রয় করতে চায় তবে তার বছর অবশ্যই ৬৫ (পঁয়ষট্টি) ও তদুর্ধ্ব হতে হবে।
৫ বছর মেয়াদী পেনশন সঞ্চয়পত্র: অবসরপ্রাপ্ত সরকারী, আধা-সরকারী, স্বায়ত্তশাসিত, আধা-স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা/কর্মচারী, সুপ্রীম কোর্টের অবসরপ্রাপ্ত মাননীয় বিচারপতিগণ, সশস্ত্র বাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত সদস্য এবং মৃত চাকুরিজীবীর পারিবারিক পেনশন সুবিধাভোগী স্বামী/স্ত্রী/সন্তান – পেনশন সঞ্চয়পত্র ক্রয় করতে পারবেন। এটিতেও ৩ মাস পরপর মুনাফা ধরা হয়।
সঞ্চয়পত্রের ক্রয়সীমা ও লিমিটেশন সম্পর্কে
এই পর্যায়ে একেক করে প্রতিটি সঞ্চয়পত্রের ক্রয়ের ক্ষেত্রে ক্রয়সীমা ও সঞ্চয়পত্র গুলোর লিমিটেশন সম্পর্কে জানানো হবে।
৫ বছর মেয়াদী সঞ্চয়পত্রের ক্ষেত্রে একক হিসাবে সর্বোচ্চ ৩০ লক্ষ টাকা এবং যৌথ একাউন্টে ৬০ লক্ষ টাকা অব্দি সঞ্চয়পত্র ক্রয় করতে পারবে। অন্যদিকে যদি কোনো প্রতিষ্ঠান উক্ত সঞ্চয়পত্রটি ক্রয় করতে চায় তবে তার ক্ষেত্রে কোনো লিমিটেশন নেই।
সর্বনিম্ম ১০০০ টাকার সঞ্চয়পত্র ক্রয় করতে হবে এবং মোট সঞ্চয়পত্রের পরিমাণ যদি ৫০ লক্ষ টাকা হয় তবে কর দিতে হবে ৫% এবং ৫০ লক্ষ টাকার বেশি হলে কর দিতে হবে ১০%
৩ বছর মেয়াদী মুনাফা ভিত্তিক সঞ্চয়পত্রের ক্ষেত্রে একক নামে ৩০ লক্ষ টাকা ও যৌথ একাউন্টে ৬০ লক্ষ টাকা অব্দি সঞ্চয়পত্র ক্রয় করা যাবে। এক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ১ লক্ষ টাকার সঞ্চয়পত্র ক্রয় করতে হবে। অন্যদিকে যদি ৫০ লক্ষ টাকার অব্দি বিনিয়োগ হয় তবে ৫% কর কাটা হবে আর যদি ৫০ লক্ষ টাকার বেশি হয় তবে ১০% কর কাটা হবে।
পরিবার সঞ্চয়পত্রের ক্ষেত্রে সর্বনিম্ম ১০ হাজার টাকা থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ৪৫ লাখ টাকা অব্দি বিনিয়োগ করা যাবে। তাছাড়া এখানে আরেকটি কন্ডিশন হলো, ৫ বছর মেয়াদী বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্র, ৩ মাস মেয়াদী সঞ্চয়পত্র এবং পরিবার সঞ্চয়পত্র যদি একই ব্যক্তির থেকে থাকে তবে একত্রে সর্বোচ্চ ৫০ লক্ষ টাকা এবং যৌথভাবে ১ কোটি টাকা বিনিয়োগ করতে পারবে। অন্যদিকে কর কর্তনের ক্ষেত্রে একই নিয়ম ৫০ লাখ এর মধ্যে ৫% এবং বেশি হলে ১০% কাটা হবে।
পেনশন সঞ্চয়পত্রের ক্ষেত্রে ক্রয়সীমা হলো সর্বোচ্চ ৫০ লাখ এবং সর্বনিম্ম ৫০ হাজার টাকা। তবে আনুতোষিক ও সর্বশেষ ভবিষ্য তহবিল হতে প্রাপ্ত অর্থের বেশী নয়। কর কর্তন রেট হলো ৫০ লাখ অব্দি ৫% এবং এর বেশি হলে ১০%।
সঞ্চয়পত্র কেনার নতুন নিয়ম ২০২৩
এবছর সঞ্চয়পত্রে দেখা গেছে ব্যাপক পরিবর্তন কমিয়ে ফেলা হয়েছে মুনাফার হার। বর্তমানে যে যত বেশি বিনিয়োগ করবে তার মুনাফার হার তত কম। তবে এই বিষয়টির আওতায় ভুক্ত থাকছে না তারা যারা 15 লাখ কিংবা তার কম বিনিয়োগ করছে। যাদের বিনিয়োগ ১৫ লক্ষ টাকার অধিক তারাই নতুন বিধি-বিধানের আওতাভুক্ত হচ্ছে।
অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে উক্ত বিষয়ে অবগত করা হয়েছে। উক্ত প্রজ্ঞাপনে এটা বলা রয়েছে যে, যারা নতুন করে সঞ্চয়পত্র কিনতে চায় নতুন নিয়মটি তাদের ক্ষেত্রেই আরোপ করা হবে। তাছাড়া পূর্বে যাদের রয়েছে তাদের সঞ্চয়পত্র গুলোর মেয়াদ পূর্তির পূর্বে মুনাফার হারে কোন পরিবর্তন হবে না। মেয়াদ শেষের পর নতুন নিয়ম অনুযায়ী সঞ্চয় পত্রে মুনাফার ধার্য করা হবে। এই পর্যায়ে প্রতিটি সঞ্চয়পত্রের নতুন মুনাফার হার গুলো জানিয়ে দেওয়া হবে।
পাঁচ বছর মেয়াদী বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্র এর ক্ষেত্রে
যা মনটা ভালো রয়েছে আপনার বিনিয়োগ যদি পনেরো লক্ষ টাকার মধ্যে হয়ে থাকে তবে মুনাফার হাড়ের কোন পরিবর্তন হচ্ছে না পূর্বের ন্যায় মুনাফার ধার্যকৃত রয়েছে। যখনই আপনার বিনিয়োগ ১৫ লক্ষ থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ক্রয় সীমাবদ্ধি হবে সেক্ষেত্রে মুনাফার হারে কিছুটা পরিবর্তন হবে পূর্বের ন্যায়। বুঝার সুবিধার্থে একত্রে সকলের ক্ষেত্রে মুনাফার হারগুলো উপস্থাপন করা হচ্ছে।
বিনিয়োগ ১৫ লক্ষ টাকার নিচে হলে মুনাফার হার
১ম বছরান্তে ৯.৩৫% পাবেন
২য় বছরান্তে ৯.৮০% পাবেন
৩য় বছরান্তে ১০.২৫% পাবেন
৪র্থ বছরান্তে ১০.৭৫% পাবেন
৫ম বছরান্তে ১১.২৮% পাবেন
বিনিয়োগ ১৫ লক্ষ থেকে শুরু করে ৩০ লক্ষ টাকার ক্ষেত্রে মুনাফার
১ম বছরান্তে ৮.৫৪% পাবেন
২য় বছরান্তে ৮.৯৫% পাবেন
৩য় বছরান্তে ৯.৩৬% পাবেন
৪র্থ বছরান্তে ৯.৮২% পাবেন
৫ম বছরান্তে ১০.৩০% পাবেন
বিনিয়োগ ৩০ লক্ষ টাকার অধিক হলে মুনাফার হার
১ম বছরান্তে ৭.৭১% পাবেন
২য় বছরান্তে ৮.০৮% পাবেন
৩য় বছরান্তে ৮.৪৫% পাবেন
৪র্থ বছরান্তে ৮.৮৬% পাবেন
৫ম বছরান্তে ৯.৩০% পাবেন
তিন মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্রের ক্ষেত্রে
বিনিয়োগ ১৫ লক্ষ টাকার নিচে হলে মুনাফার হার
১ম বছরান্তে ১০.০০% পাবেন
২য় বছরান্তে ১০.৫০% পাবেন
৩য় বছরান্তে ১১.০৪% পাবেন
বিনিয়োগ ১৫ লক্ষ থেকে শুরু করে ৩০ লক্ষ টাকার ক্ষেত্রে মুনাফার
১ম বছরান্তে ৯.০৬% পাবেন
২য় বছরান্তে ৯.৫১% পাবেন
৩য় বছরান্তে ১.০.০০% পাবেন
বিনিয়োগ ৩০ লক্ষ টাকার অধিক হলে মুনাফার হার
১ম বছরান্তে ৮.১৫% পাবেন
২য় বছরান্তে ৮.৫৬% পাবেন
৩য় বছরান্তে ৯.০০% পাবেন
পরিবার সঞ্চয়পত্রের ক্ষেত্রে
বিনিয়োগ ১৫ লক্ষ টাকার নিচে হলে মুনাফার হার
১ম বছরান্তে ৯.৫০% পাবেন
২য় বছরান্তে ১০.০০% পাবেন
৩য় বছরান্তে ১০.৫০% পাবেন
৪র্থ বছরান্তে ১১.০০% পাবেন
৫ম বছরান্তে ১১.৫২% পাবেন
বিনিয়োগ ১৫ লক্ষ থেকে শুরু করে ৩০ লক্ষ টাকার ক্ষেত্রে মুনাফার
১ম বছরান্তে ৮.৬৬% পাবেন
২য় বছরান্তে ৯.১১% পাবেন
৩য় বছরান্তে ৯.৫৭% পাবেন
৪র্থ বছরান্তে ১০.০৩% পাবেন
৫ম বছরান্তে ১০.৫০% পাবেন
বিনিয়োগ ৩০ লক্ষ টাকার অধিক হলে মুনাফার হার
১ম বছরান্তে ৭.৮৩% পাবেন
২য় বছরান্তে ৮.২৫% পাবেন
৩য় বছরান্তে ৮.৬৬% পাবেন
৪র্থ বছরান্তে ৯.০৭% পাবেন
৫ম বছরান্তে ৯.৫০% পাবেন
পেনশন সঞ্চয়পত্র এর ক্ষেত্রে
বিনিয়োগ ১৫ লক্ষ টাকার নিচে হলে মুনাফার হার
১ম বছরান্তে ৯.৭০% পাবেন
২য় বছরান্তে ১০.১৫% পাবেন
৩য় বছরান্তে ১০.৬৫% পাবেন
৪র্থ বছরান্তে ১১.২০% পাবেন
৫ম বছরান্তে ১১.৭৬% পাবেন
বিনিয়োগ ১৫ লক্ষ থেকে শুরু করে ৩০ লক্ষ টাকার ক্ষেত্রে মুনাফার
১ম বছরান্তে ৮.৮৭% পাবেন
২য় বছরান্তে ৯.২৫% পাবেন
৩য় বছরান্তে ৯.৭৪% পাবেন
৪র্থ বছরান্তে ১০.২৪% পাবেন
৫ম বছরান্তে ১০.৭৫% পাবেন
বিনিয়োগ ৩০ লক্ষ টাকার অধিক হলে মুনাফার হার
১ম বছরান্তে ৮.০৪% পাবেন
২য় বছরান্তে ৮.৪২% পাবেন
৩য় বছরান্তে ৮.৮৩% পাবেন
৪র্থ বছরান্তে ৯.২৯% পাবেন
৫ম বছরান্তে ৯.৭৫% পাবেন
একাধিক নামে সঞ্চয়পত্র ক্রয়ের ক্ষেত্রে
তারমানে বোঝা গেল এখন থেকে ১৫ লক্ষ টাকা এর অধিক বিনিয়োগ করতে চাইলে আপনাকে অবশ্যই মুনাফার হার পূর্বে যা পেতেন তার থেকে কমে সন্তুষ্ট হতে হবে। আপনি যদি চান মুনাফার হার কম নিবেন না সে ক্ষেত্রে আপনি একাধিক নামে সঞ্চার পত্র ক্রয় করতে পারেন এবং প্রতিটি নামে 15 লক্ষ টাকা করে সর্বোচ্চ সঞ্চয় করতে পারেন। তবে এক্ষেত্রে কিছুটা রিস্ক রয়ে যায় কেননা ক্ষেত্রে অবশ্যই সাবধানতা অবলম্বন করতে হয়। না পারলে আপনার জরিমানা সহ জেল হতে পারে।
কেউ যদি সঞ্চয়পত্র কেনা সংক্রান্ত কোনো মিথ্যা তথ্যের সহায়তা নেয় তবে তার জেল জরিমানা হবে, পাশাপাশি উক্ত টাকার উৎস দেখাতে না পারলে কিংবা আয়কর নথিতে গোপন করলে সর্বোচ্চ ছয় মাসের জেল কিংবা ১ লক্ষ টাকা কিংবা উভয় দন্ডে দণ্ডিত হতে পারে।
সঞ্চয়পত্রে গ্রাহকের টিআইএন নাম্বার যাচাই
পূর্বে কখনো সঞ্চয়পত্র ক্রয়ের সময় গ্রাহকের টিআইএন নাম্বার আছে কিনা থাকলেও সেটি সঠিক কিনা যাচাই করা হতো না কিন্তু এখন থেকে গ্রাহকের টিন সার্টিফিকেট নাম্বার যাচাই করা হবে। সম্প্রতি তথ্য অনুযায়ী যাদের টিন সার্টিফিকেট রয়েছে তাদের বছর শেষে বাধ্যতামূলক ২০০০ টাকা কর প্রদান করতে হবে। পাশাপাশি সঞ্চয়পত্র ক্রয়ের ক্ষেত্রে টিন সার্টিফিকেটের গুরুত্ব এতটাই যে আপনার যদি টিআইএন নাম্বার না থাকে তাহলে আপনি সঞ্চয়পত্র ক্রয় করতে পারবেন না।
তবে বিষয়টি এমন নয় যে কোন পরিমাণ অর্থের সঞ্চয়পত্র করার ক্ষেত্রেই ৩ সার্টিফিকেট এর প্রয়োজন হবে। সাধারণত পূর্বে দুই লক্ষ টাকার উপরে সঞ্চয়পত্র ক্রয় করার ক্ষেত্রে টিআইএন নাম্বার প্রদান করতে হতো কিন্তু বর্তমানে ৫ লক্ষ টাকা অব্দি সঞ্চয়পত্রের বিনিয়োগ করার ক্ষেত্রে টিআইএন সার্টিফিকেট প্রয়োজন হবে না। তাছাড়া ডাকঘর থেকে ক্রয় কালে এক লক্ষ টাকা পর্যন্ত ক্রয় করা যাবে। এক লক্ষ টাকার বেশি সঞ্চয়পত্র ক্রয় নগদে করা যাবে না যদি ডাকঘর থেকে কেনা হয়।
কোথায় সঞ্চয়পত্র পাওয়া যাবে? কোথায় থেকে সঞ্চয়পত্র কেনা যাবে?
বর্তমানে চারটি স্থান থেকে নিরাপদ ভাবে সঞ্চয়পত্র ক্রয় করা যায়। সঞ্চয় পত্রের মত গুরুত্বপূর্ণ বিনিয়োগের ক্ষেত্রে অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে আপনার অর্থ কোন প্রকার দালাল বা তৃতীয় পক্ষের কাছে না পৌঁছায়। তাই সাবধানতার সহিত অফিসিয়াল নিয়ম অনুসারে সঞ্চয়পত্র ক্রয় করুন। নিম্মে চারটি স্থান বা উপায়ের কথা বলা হলো যেখানে বা যে মাধ্যমে সঞ্চয়পত্র ক্রয় করতে পারবেন।
জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তর: আপনি চাইলে সরাসরি জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তরের কাজ থেকে সঞ্চয়পত্র ক্রয় করতে পারেন সারা দেশ জুড়ে ৮৩ টি জেলা ভিত্তিক কার্যালয় রয়েছে জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তর আপনার এরিয়া অনুযায়ী কার্যালয় কোথায় সেটি প্রথমে খুজে বের করুন এবং উক্ত স্থানে গিয়ে সরাসরি সঞ্চয় পত্র ক্রয় করুন।
বাংলাদেশ ব্যাংক: নিরাপদে সঞ্চয়পত্র ক্রয় করার আরেকটি অন্যতম মাধ্যম হলো বাংলাদেশ ব্যাংক। সদরঘাট ও ময়মনসিংহ অফিস বাদে দেশের যেকোনো বাংলাদেশ ব্যাংকের অফিস থেকে সঞ্চয়পত্র করা যাবে। নগদ অর্থ কিংবা ব্যাংক ট্রান্সফারের মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে খুব সহজেই সঞ্চয়পত্র ক্রয় করা যায়।
পোস্ট অফিসের মাধ্যমে সঞ্চয়পত্র ক্রয়: প্রায় প্রতিটা এরিয়াতেই কোনো না কোনো পোস্ট অফিস বা ডাকঘর রয়েছে। খুব সাধারণ এবং ঝামেলা-বিহীন সঞ্চয়পত্র ক্রয় করার ক্ষেত্রে পোস্ট অফিসের সহায়তা নিতে পারেন। নগদ সর্বোচ্চ এক লক্ষ টাকা অব্দি পোস্ট অফিস থেকে সঞ্চয়পত্র ক্রয় করা যাবে।
ব্যাংকের মাধ্যমে সঞ্চয়পত্র ক্রয়: আপনার কি একটি ব্যাংক একাউন্ট রয়েছে? বেশ ভালো কেননা ব্যাংকের মাধ্যমেও সোজা পত্র ক্রয় করা খুবই সহজ। আপনাকে শুধু খেয়াল রাখতে হবে ইসলামী শরীয়া মোতাবেক পরিচালিত ব্যাংক বাদে অন্যান্য ব্যাংকগুলো থেকে আপনি সঞ্চয়পত্র ক্রয় করতে যাচ্ছেন। যেহেতু সঞ্চয়পত্রের সাথে সুদ জড়িত তাই ইসলামী শরীয়া মোতাবেক পরিচালিত ব্যাংকগুলোতে সঞ্চয়পত্র পাওয়া যাবে না। যাইহোক আপনাকে যা করতে হবে তাহলে উপস্থিত হয়ে সেখানে কর্মরত লোকদের জানাতে হবে যে আপনি সঞ্চয়পত্র করতে চাচ্ছেন। এক্ষেত্রে আপনি শুধুমাত্র অর্থ প্রদান করবেন বাকি কাজ করো তারা আপনার হয়ে করে দিবে।
সঞ্চয়পত্র কেনার নিয়ম
খুব সহজে এবং ছোট্ট করে যদি জানাতে চাই যে সঞ্চয়পত্র কিভাবে কিনতে হয় তবে আপনাকে চারটি বিষয় অবশ্যই স্মরণ রাখতে হবে। চারটি বিষয় বলতে এখানে চারটি ধাপ বোঝানো হচ্ছে। করার নিয়ম হিসেবে এই চারটি ধাপ অবশ্যই অতিক্রম করতে হবে নিম্নে চারটি ধাপ সম্পর্কে জানানো হলো:
১) খুব স্বাভাবিকভাবে একটি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট করে ফেলুন এবং আপনার ব্যাংক একাউন্টে সমপরিমাণ অর্থ জমা রাখুন যত টাকার সঞ্চয়পত্র কিনতে চাচ্ছেন।
২) উপরে উল্লেখিত চারটি স্থানের যেকোনো একটি স্থানে গিয়ে জানাতে হবে যে আপনি সজপত্র ক্রয় করতে চাচ্ছেন।
৩) একটি ডেবিট ইন্সট্রাকশন দেওয়া হবে যেখানে উল্লেখ থাকবে আপনি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে নির্দিষ্ট পরিমাণের অর্থ সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করবেন।
৪) এই পর্যায়ে আপনাকে শর্তগুলোর সম্মতি প্রদান করে বেশ কিছু ডকুমেন্টস সাবমিট করতে হবে। ডকুমেন্টসগুলো কি হবে তা পরবর্তী ধাপে উপস্থাপন করা হয়েছে। ব্যাস আপনার সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করার কাজ শেষ।
সঞ্চয়পত্র কিনতে কি কি ডকুমেন্টস প্রয়োজন?
ছতপ্রাপ্ত ক্রয় করার ক্ষেত্রে আপনাকে অবশ্যই সঞ্চয়পত্র ফরম পূরণ করতে হবে। আপনি কোথায় পাবেন? আপনি যে স্থান থেকে সঞ্চয়পত্র ক্রয় করবেন সেখানে মূলত আপনাকে সেটি প্রোভাইড করা হবে, অথবা আপনি যদি চান পূর্বে ফর্মটি পূরণ করে তারপর স্থানে গিয়ে উপস্থিত হবেন তবে অনলাইনে সঞ্চয়পত্র ফর্ম ডাউনলোড করে সেটিকে পূরণ করে জমা দিতে পারবেন।
সঞ্চয়পত্রের হোল্ডার এবং একজন নমিনি এর এক কপি করে পাসপোর্ট সাইজের রঙিন ছবি প্রদান করতে হবে। তাছাড়া উভয়ের জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি সাবমিট করতে হবে। নমিনির বয়স যদি ১৮ বছরের নিচে হয় তবে তার ক্ষেত্রে জন্ম নিবন্ধন এর ফটোকপি দিতে হবে।
তাছাড়া পাঁচ লক্ষ টাকার অধিক সঞ্চয়পত্র ক্রয় করতে চাইলে টিআইএন সার্টিফিকেট নাম্বার প্রয়োজন হবে। আপনি যদি না জেনে থাকেন টিআইএন সার্টিফিকেট কি সেক্ষেত্রে উক্ত লিংকে ক্লিক করে সে বিষয়ে জেনে নিতে পারবেন। খেয়াল রাখতে হবে যে, যে ব্যক্তি সঞ্চয়পত্র ক্রয় করবেন টিআইএন নাম্বার একই ব্যক্তির হতে হবে অন্য কারো টিআইএন নাম্বার দিয়ে সঞ্চপত্র কর করা যাবে না।
সঞ্চয়পত্র সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় তথ্য
এই পর্যন্ত সম্পর্কে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দেয়ার মাধ্যমে এবারের আর্টিকেল সমাপ্ত করা হবে। নিম্নে খুবই গুরুত্বপূর্ণ কিছু বিষয় সম্পর্কে অবগত করা হলো সঞ্চয়পত্র সম্পর্কে।
১) সঞ্চয় পত্র ক্রয় ক্ষেত্রে কোন প্রকার প্রসেসিং ফি নেই। যদি কেউ আপনার কাছ থেকে সঞ্চয়পত্র ক্রয়ের ক্ষেত্রে প্রসেসিং ফি বা কোন প্রকার হিডেন চার্জ দাবি করে তবে সরাসরি প্রশাসনের কাছে অবগত করুন।
২) আপনার বয়স যদি ১৮ বছরের কম হয় তবে আপনি কোনভাবেই সঞ্চয়পত্র ক্রয় করতে পারবেন না।
৩) একটি সঞ্চয়পত্রের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ তিনজনকে নমিনি দেওয়া যাবে। এমনকি নমিনের বয়স যদি ১৮ এর কম হয় তবেও কোন উপকার সমস্যা হবে না।
৪) সঞ্চয়পত্রকে জামানত হিসেবে ধরে কোন প্রকার লোন বা ঋণ নেওয়া যাবে না।
৫) এক বছরের পূর্বে যদি সঞ্চয়পত্র ভেঙ্গে ফেলা হয় তবে সঞ্চয় পত্র থেকে কোন প্রকার মুনাফা পাওয়া যাবে না। মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই যদি সঞ্চয়পত্র ভাঙতে চান বা টাকা উঠাতে চান তবে সঞ্চয়পত্রের Acknowledgement Copy নিয়ে যেখান থেকে সঞ্চয়পত্র ক্রয় করেছিলেন সেখানে যেতে হবে।
৬) সঞ্চয়পত্রের মেয়াদ শেষ হওয়ার ৭২ ঘণ্টার মধ্যে মুনাফা সহ মূল অর্থ নির্দিষ্ট ব্যাংক একাউন্টে যুক্ত হয়ে যাবে। সঞ্চয়পত্রের মোট মূল্য যদি 5 লক্ষ টাকা এর মধ্যে হয় সেক্ষেত্রে ৫% এবং ৫ লক্ষ টাকার বেশি হলে ১০% কর কাটার পর অর্থ জমা দেওয়া হবে।
পরিশেষে কিছু কথা
এতক্ষণ অব্দি জানানো হয়েছে সঞ্চয়পত্র সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য যেখানে সঞ্চয়পত্র কি সে তথ্য থেকে শুরু করে সঞ্চয়পত্রে কিভাবে বিনিয়োগ করে সে টাকা উঠানো যায় সেসব সম্পর্কে অবগত করা হয়েছে একটি আর্টিকেল এর মাধ্যমে। তবে একটি আর্টিকেল কখনোই কোন বিষয়কে পরিপূর্ণতা দিতে সক্ষম নয়, এক্ষেত্রে সময় ভেদে সঞ্চয় পত্র সম্পর্কে আরো অনেক তথ্য বাংলা আলো ওয়েবসাইটের প্রকাশ হবে যা জানার জন্য অবশ্যই ওয়েবসাইটের সঞ্চয়পত্র নামক ট্যাগটি অনুসরণ করতে হবে। আপনার বিনিয়োগের সফলতা কামণা করে এবারের আর্টিকেল এখানেই সমাপ্ত ঘটাচ্ছি। ধন্যবাদ।