মানুষের জীবনে আশা-নিরাশা, সুখ-দুঃখ ও দুশ্চিন্তা-হতাশা রয়েছে। জীবনে চলার পথে প্রত্যেক মানুষই কোনো না কোনো সমস্যার মুখোমুখি হোন। অনেক সময় সেসব সমস্যার উপযুক্ত সমধান না পেয়ে হতাশায় ভুগতে থাকেন। আল্লাহ তাআলা পবিত্র কোরআনে বলেন, ‘সঙ্গত কোনো প্রয়োজন পূরণের জন্য বান্দা নিজ প্রভুর কাছে ধৈর্য ও নামাজের মাধ্যমে সাহায্য প্রার্থনা করবে।’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ১৫৩)। মানুষের বিশেষ কিছুর প্রয়োজন হলে কিংবা শারীরিক-মানসিকভাবে কোনো দুশ্চিন্তা দেখা দিলে ‘সালাতুল হাজত বা প্রয়োজনের নামাজ’ পড়ার বিধান রয়েছে।
সালাতুল হাজত কি?
সালাতুল হাজাত বা ‘প্রয়োজনের নামাজ’— একটি বিশেষ নফল ইবাদত। কোন বৈধ/ হালাল চাহিদা পূরনের জন্য মহান আল্লাহ তায়ালার সন্তষ্টির উদ্দেশ্যে দুই রাকাত নফল সালাত আদায় করাই ‘সালাতুল হাজত’। (ইবনু মাজাহ, হাদিস- ১৩৮৫)।
কখন সালাতুল হাজত পড়া যায়?
আল্লাহর কাছে সাহায্য চাওয়ার জন্য এই সালাত আদায় করা অন্যতম একটি মাধ্যম। সালাতুল হাজতের কোন নির্দিষ্ট সময় নেই। আপনি যখন কোন বিপদে পড়বেন, অভাবগ্রস্থ হবেন, তখনই আপনার প্রয়োজনীয়তা পূরণের উদ্দেশ্যে এই সালাত আদায় করে দোয়া করতে পারেন।এই নামাজ পড়ার কোনো নির্দিস্ট সময় নেই বা কোন সময় পড়তে হবে তা হাদিসে উল্লেখ করা নেই।
সালাতুল হাজত নিষিদ্ধ ওয়াক্ত ব্যাতীত যেকোনো সময়েই পড়া যায়।
সালাতুল হাজত নামাজের ফজিলত
আমাদের সবচেয়ে বড় আপনজন এবং সবচেয়ে বড় সাহায্যকারী হলেন মহান আল্লাহ তায়ালা। যখন কেউ সাহায্য করতে পারে না, তখন মানুষের সবচেয়ে বড় এবং একমাত্র সাহায্যকারী হলেন মহান আল্লাহ।সালাতুল হাজতের নামাজ পড়ার মাধ্যমে আমরা যেমন আমাদের প্রয়োজন এবং বিপদ আপদের কথা আল্লাহর সমীপে প্রকাশ করতে পারি।
তেমনি আআল্লাহর অশেষ রহমতের মাধ্যমে আমাদের সমস্যা থেকে পরিত্রাণ পেতে পারি। তাছাড়া,সালাতুল হাজত যেহেতু নফল ইবাদত সেহেতু আমরা নফল ইবাদত করার মাধ্যমে আল্লাহতালার অধিক অনুগ্রহ প্রাপ্ত বান্দা হয়ে উঠতে পারি।
হজরত হুজাইফা (রা.) হতে বর্ণিত, যখন কোনো বিষয় রাসুল (সা.)-কে চিন্তিত করে তুলত, তখন তিনি নামাজ পড়তেন।’ (আবু দাউদ)
অন্য একটি হাদিসে নবীজি (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি পরিপূর্ণ অজু করে সুন্দরভাবে দুই রাকাত নামাজ পড়বে, সে আল্লাহর কাছে যা চাইবে তা তিনি দান করবেন দ্রুত অথবা দেরিতে।’ (মুসনাদে আহমদ)
হাদিসে এসেছে রাসূল (সা.) বলেছেন, ‘ফরজ নামাজের ঘাটতি থাকলে নফল নামাজ তা পূরণ করে দেয়। তাই তোমরা বেশি বেশি নফল নামাজ পড়।’
সালাতুল হাজত নামাজের নিয়ম
সালাতুল হাজতের নির্দিষ্ট কোনো নিয়ম নেই। হাজত বা প্রয়োজনের নিয়তে অন্যান্য নামাজের মতোই দু-রাকাত নফল নামাজ আদায় করবেন। তবে নিষিদ্ধ সময় (সূর্যোদয় এবং সূর্যাস্ত, দ্বিপ্রহর) ও মাকরুহ সময় ব্যতিত অন্য যেকোনো সময় তা পড়া যাবে। অন্যান্য নামাজের মতই উত্তম ভাবে অজু করে, নিজে পবিত্র হয়ে নিন।
তারপর আল্লাহর কাছে সাহায্য প্রার্থনার নিয়তে দুই রাকাত নফল সালাত আদায় করুন। সালাত শেষে আল্লাহ তায়ালার হামদ ও ছানা এবং রাসুলুল্লাহ (সাঃ) – এর উপর দরুদ শরীফ পাঠ করুন। ( আপনি চাইলে ২ রাকাত করে ৪ রাকাত বা তার বেশি পড়তে পারেন)।এরপর নিজের মনের কথা ব্যক্ত করে আল্লাহর নিকট দোয়া করবেন।
সালাতুল হাজত নামাজের নিয়ত
নিয়ত অন্তরের সাথে সম্পৃক্ত। তাই অন্তর থেকে- আমি মহান আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য কিবলামুখী হয়ে দুই রাকাত হাজতের নামাজ আদায় করছি, আল্লাহু আকবার। এভাবে নিয়ত করে সালাত আদায় করলেই হবে, ঈন-শা-আল্লাহ।
তবে আপনি চাইলে আরবিতে নিয়ত করতে পারেন –
আরবি নিয়তের বাংলা উচ্চারণ – “নাওাইতুওয়া নুসাল্লিয়া লিল্লাহী তায়ালা রাকাতাই সালাতুল হাজত নাফলী রাসুল্লাহীতায়ালা মুতাওয়াজজিহান ইলা জিহাতীল কাবাতিশ শারীফাতি আল্লাহ আকবর।”
যে দোয়াটি সালাতুল হাজত নামাজের পর পড়ার কথা হাদিসে এসেছে
উচ্চারণ : ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহুল হালিমুল কারিম, সুবহানাল্লাহি রাব্বিল আরশিল আজিম। আলহামদুলিল্লাহি রাব্বিল আলামিন, আছআলুকা মুজিবাতি রাহমাতিক; ওয়া আজা-ইমা মাগফিরাতিক, ওয়াল গানিমাতা মিন কুল্লি বিররিউ ওয়াস সালামাতা মিন কুল্লি ইছমিন লা তাদাঅলি- জাম্বান ইল্লা গাফারতাহু ওয়ালা হাম্মান ইল্লা ইল্লা ফাররাজতাহু ওয়ালা হাজাতান হিয়া লাকা রিজান- ইল্লা কাজাইতাহা ইয়া আর হামার রাহিমীন। — তিরমিজি, ইবনে মাজা ও নাসায়ি
এই দোয়াটি পড়তেই হবে — বিষয়টি এমন নয়। আপনি আপনার মতো করে দোয়া করলেও কোনো অসুবিধা নেই।
পরিশেষে
মহান আল্লাহতালা মুসলিম উম্মাহকে সকল কঠিন বিপদ থেকে এই সালাতুল হাজত নামাজ এবং দুরুদের মধ্য দিয়ে সকলকে সাহায্য চাওয়ার তৌফিক দান করুক। মুসলমানদের জন্য বিপদে ভীত না হয়ে ধৈর্য্যের সাথে সালাতুল হাজত নামাজের নিয়মে সালাত আদায় করে আল্লাহর কাছে দোয়া করা উত্তম।