স্টুডেন্ট? পড়াশোনার জন্য দেশের বাইরে যেতে চান? যার কারনে স্টুডেন্ট পাসপোর্ট করার নিয়ম জানতে ইচ্ছুক? তাহলে আপনি সঠিক স্থানেই আছেন কারন এখানে জানানো হবে সেই প্রসেস সম্পর্কে যার দ্বারা স্টুডেন্ট পাসপোর্ট করা যাবে অনলেইনের মাধ্যমেই।
বাংলাদেশে বসবাসকারী শিক্ষার্থীদের মধ্যে দেশের বাইরে গিয়ে অর্ডার করার প্রবণতা ব্যাপক। একটা সময়ের পর উচ্চশিক্ষার জন্য দেশের বাইরে অধ্যায়নের চিন্তাভাবনা করে থাকে। আর যেহেতু একটি দেশ থেকে অন্য দেশে ভিজিট করতে পাসপোর্ট এর প্রয়োজন তাই শিক্ষার্থীরা যখন উচ্চশিক্ষার জন্য দেশের বাইরে যায় তখন তাদের পাসপোর্ট করাতে হয় যাকে স্টুডেন্ট পাসপোর্ট হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।
অনেকেই আছে যারা দেশের বাইরে যাওয়ার ব্যাপারে চিন্তাভাবনা করছে তবে এখন অব্দি তারা পাসপোর্ট সংক্রান্ত সঠিক ধারাটি পাচ্ছে না তাদের জন্য এবারের আর্টিকেলে জানাবো সেই সকল নিয়ম একজন স্টুডেন্টের করা উচিত স্টুডেন্ট পাসপোর্ট করার ক্ষেত্রে। স্টুডেন্ট পাসপোর্ট করার নিয়ম এবং অনলাইনে কিভাবে উক্ত পাসপোর্ট করা যায় সেই সকল পদ্ধতি সম্পর্কে।
স্টুডেন্ট পাসপোর্ট করার জন্য কি কি ডকুমেন্টস প্রয়োজন?
স্বাভাবিক পাসপোর্ট তৈরি করতে যে সকল কাগজপত্র প্রয়োজন সেগুলোর পাশাপাশি যদি স্টুডেন্ট পাসপোর্ট করার দরকার হয় তবে শিক্ষার্থীর যাবতীয় সকল সার্টিফিকেট বা সনদপত্রের প্রয়োজন হবে। তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো সেই সনদ যেটির পরবর্তী ধাপে দেশের বাইরে উচ্চশিক্ষার জন্য যাচ্ছে। যেমন আপনি যদি বিবিএ করতে দেশের বাইরে যেতে চান তবে এইচ এস সি এর সার্টিফিকেটের প্রয়োজন রয়েছে।
আবেদনকারী শিক্ষার্থীর বয়স 18 উপরে হলে তার জাতীয় পরিচয় পত্রের ফটোকপি সাবমিট করতে হবে তাছাড়া জন্ম নিবন্ধনের কপি দিতে হবে এক্ষেত্রে জন্মনিবন্ধন অবশ্যই ইংরেজি ভার্সন হতে হবে। তাছাড়া আবেদনকারী শিক্ষার্থীর সদ্যতোলা চার কপি পাসপোর্ট সাইজের ছবি প্রয়োজন হবে।
স্টুডেন্ট পাসপোর্ট করার নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত
এই পর্যায়ে জানাবো স্টুডেন্ট পাসপোর্ট করার নিয়ম সম্পর্কে। সাধারণত পাসপোর্ট দুই রকমের হয়ে থাকে একটি 48 পৃষ্ঠার এবং অন্যটি 64 পৃষ্ঠার। স্বাভাবিক পাসপোর্ট করার নিয়ম আর স্টুডেন্ট পাসপোর্ট করার নিয়ম আলাদা কিছু নয় বরং অনেকটা একই কার্যক্রম সম্পাদন করতে হয়। স্টুডেন্ট পাসপোর্ট করার ক্ষেত্রে যে সকল ধাপগুলো অতিক্রম করে যেতে হবে সেগুলো নিম্নে সংক্ষেপে জানিয়ে দেওয়া হলো।
একটা সময় ছিল যখন পাসপোর্ট করার জন্য পাসপোর্ট অফিসে গিয়ে বারবার ঘুরে আসতে হতো সেখানে গিয়ে একটি পাসপোর্ট করার জন্য প্রচুর সময় নষ্ট করতে হতো। কিন্তু বর্তমানে চিত্রপটটি একদম ভিন্ন বর্তমানে আপনি নিজেই নিজের পাসপোর্ট করাতে ঘরে বসে অনলাইনের মাধ্যমে আবেদন করতে পারবেন। প্রাথমিক আবেদন অনলাইনে করার পরবর্তী ধাপে প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস ও অন্যান্য কার্যসম্পাদনের করার জন্য আপনাকে পাসপোর্ট অফিসে অবশ্যই যেতে হবে। অনলাইনে ঘরে বসে পাসপোর্ট এর আবেদন এবং তার পরবর্তী কার্যক্রম গুলো নিম্নে উপস্থাপন করা হচ্ছে।
প্রথম ধাপঃ পাসপোর্টের জন্য টাকা জমা দেওয়া
অনেকেই ভাবছেন প্রথম ধাপেই টাকা জমা দেওয়ার বিষয়টি আসছে কেন মূলত অনলাইনে পাসপোর্ট করতে হলে আপনাকে প্রথমেই টাকা পরিশোধ করে দিতে হবে এর কারণ হলো যখন আপনি অনলাইনে ফরম পূরণ করবেন তখন সেখানে টাকা জমা দেওয়ার তারিখ উল্লেখ করে দিতে হবে তাই সমস্যা এড়াতে প্রথমেই পাসপোর্ট এর অর্থ জমা দেওয়ায় বুদ্ধিমানের কাজ।
বর্তমানে মোবাইল ব্যাংকিং সার্ভিস প্ল্যাটফর্ম বিকাশ, রকেট, শিওর ক্যাশ এর মাধ্যমেও পাসপোর্টের টাকা জমা দেওয়া যায়। তাছাড়া সোনালী ব্যাংকের মাধ্যমে খুব সহজেই পাসপোর্টের টাকা জমা দিতে পারবেন।
পাসপোর্ট করার ক্ষেত্রে রেগুলার যে পাসপোর্ট ফি সেটা হল 3450 টাকা। এবং আপনি যদি জরুরি ভিত্তিতে পাসপোর্ট করাতে চান তবে আপনার খরচ হবে 6,900 টাকা। টাকা জমা দেওয়া হয়ে গেলে পরবর্তী ধাপের জন্য কার্যক্রম শুরু করতে পারেন।
দ্বিতীয় ধাপঃ অনলাইনে পাসপোর্ট এর ফরম পূরণ করা
মূলত পাসপোর্ট করার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ধাপে হলো অনলাইনে ফরম পূরণ করা কারণ এখানে ছোট্ট একটি ভুল আপনার পাসপোর্ট করার ক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাঁড়াবে। অনলাইনে পাসপোর্ট আবেদন করার ক্ষেত্রে অবশ্যই আপনার জাতীয় পরিচয় পত্রে যেরকম ইনফরমেশন দেয়া রয়েছে এবং আপনার একাডেমিক সার্টিফিকেটগুলো তে যে সকল ইনফরমেশন দেয়া রয়েছে সেগুলোর সাথে সমন্বয় রেখে তথ্য প্রদান করতে হবে। যেকোনো নাম, ঠিকানা, তারিখ সঠিকভাবে দেওয়া হচ্ছে কিনা সে বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে।
১) আবেদন করার জন্য প্রথমে সরাসরি এখানে ক্লিক করে সরাসরি আবেদনের ড্যাশবোর্ডে চলে গিয়ে আবেদন করার প্রাথমিক ধাপ গুলো একেক করে সম্পন্ন করতে হবে।
শুরুতেই আপনার জেলা এবং বর্তমান ঠিকানার নিকটবর্তী পুলিশ স্টেশনের নাম দেওয়া মাত্রই স্থানীয় পাসপোর্ট অফিসের নাম দেখাবে।
আর আপনাদেরকে শুধুমাত্র এখানে ই পাসপোর্ট এর আবেদন পত্র জমা দিতে হবে। তাছাড়া আপনারা এখান থেকেই ই-পাসপোর্ট সরাসরি আপনার হাতে পাবেন।
২) আবেদনের সময় আবেদনকারীর নাম জন্ম তারিখ, বর্তমান এবং স্থায়ী ঠিকানা, পেশা, জাতীয় পরিচয় পত্রের নাম্বার, পূর্ববর্তী পাসপোর্ট এর তথ্য, আপনার পিতা মাতার নাম এবং পেশা, যোগাযোগ নাম্বার এবং জরুরী ক্ষেত্রে আপনার যোগাযোগ নাম্বার দিতে হবে।
তারপরে আপনাকে পেমেন্ট এর সেকশনে আবেদন ফি জমা দিয়েছেন এর সম্বন্ধে কিছু তথ্য প্রদান করতে হবে।
৩) আপনাকে সবকিছু ঠিকঠাক করে দিতে হবে কেননা একবার আবেদনপত্র জমা দেওয়ার পর আর কিছু ঠিক করতে পারবেন না।
কেননা আপনি এক্ষেত্রে একটি জাতীয় পরিচয় পত্র দিয়ে শুধুমাত্র একটি আবেদনপত্র জমা দিতে পারবেন।
তাই অবশ্যই একটি বিষয় খেয়াল রাখতে হবে সেটি হচ্ছে আবেদনের সময় সবকিছু যেনো জাতীয় পরিচয় পত্রের তথ্য অনুযায়ী হয়ে থাকে।
৪) চূড়ান্তভাবে অনলাইনে আবেদন সম্পন্ন করার পর সর্বশেষ সেকশনে পাসপোর্ট অফিসের নির্ধারিত দিনপঞ্জি থেকে বায়োমেট্রিক এর জন্য সাক্ষাতের দিন খন ঠিক করে নিতে হবে এভাবে।
তারপরে অনলাইনে আবেদন শেষ হয়ে গেলে পূরণকৃত আবেদন ফরম টি ও বায়োমেট্রিক এর জন্য সাক্ষাতের সবাই সহ আবেদনের সামারি ডাউনলোড করে প্রিন্ট করে নিতে হবে।
তৃতীয় ধাপঃ ফরমের প্রিন্ট সত্যায়ন করা ও ছবি তোলা
ডাউনলোড করা ফরমটি প্রিন্ট করে দুই কপি রাখতে হবে। আবেদনকারী ফরমের যথাযথ স্থানে স্বাক্ষর প্রদান করবে এবং নিজের ৪ কপি ছবি সহ জরুরি ডকুমেন্টস (শিক্ষার্থীর সনদ গুলো) নিয়ে পাসপোর্ট অফিসে সত্যায়িত করবে এবং জমা দিতে যাবে। প্রথম শ্রেণীর যে কর্মকর্তার কাছ থেকে কাগজগুলো সত্যায়িত করাবেন যার নাম, মোবাইল নাম্বার, জাতীয় পরিচয় পত্রের নাম্বার ফরমে লিখে দিতে হবে। সব শেষে আরেকবার সব কিছু ভালো ভাবে চেক করে নিন, কারন একবার সাবমিট করলে সেগুলো সংশোধন করার সুযোগ থাকবে না।
মূলত অনলাইনে ফরম পূরনের ১৫ দিনের মধ্যেই প্রিন্ট কপি, সত্যায়িত ছবি, জাতীয় পরিচয়পত্র ও শিক্ষার্থীর সনদ ও স্টুডেন্ট আইডি কার্ডের কপি অফিসে নিয়ে যেতে হবে এবং সেখানে ছবি তোলাতে হবে। যেদিন ছবি তুলবেন যেদিন কোনো ভাবে সাদা রঙয়ের কোনো পোশাক পরে যাবেন না। সব শেষে ফিংগারপ্রিন্ট নেয়া হবে আপনার কাছ থেকে।
এই পর্যায়ে পাসপোর্ট রিসিভের একটি রশিদ দিয়ে দেয়া হবে আপনাকে এবং আপনার আবেদনটি পুলিশ ভেরিফিকেশনের জন্য চলে যাবে। সব কিছু ঠিক থাকবে ১৫ দিনের মধ্যেই আপনার পাসপোর্ট হাতে পেয়ে যাবেন।
স্টুডেন্ট পাসপোর্ট করার নিয়ম সংক্রান্ত প্রশ্ন ও উত্তর
স্টুডেন্ট পাসপোর্ট করার পরে কি ওয়ার্কিং ভিসায় দেশের বাইরে যাওয়া যাবে?
আপনার বয়স যদি ১৮ এর উপর হয়ে থাকে তাহলে কোনো সমস্যা হবে না আপনি এই পাসপোর্টের মাধ্যমেই ওয়ার্কিং ভিসার জন্য আবেদন ও সেই ভিসায় দেশের বাইরে যেতে পারবেন। স্টুডেন্ট পাসপোর্টে আপনার প্রদান করা একাডেমিক সনদ গুলোর সাথে রাখবেন যদি ইমিগ্রেশনের সময় দেখতে চায় তবে দেখাতে হবে।
স্টুডেন্ট পাসপোর্ট করতে কত সময় লাগে?
রেগুলার : ২১ কর্মদিবসের মধ্যে
এক্সপ্রেস : ১০ কর্মদিবসের মধ্যে
সুপার এক্সপ্রেস : ২ কর্মদিবসের মধ্যে
পাসপোর্টের মেয়াদ কত দিন থাকে?
দুই ধরনের মেয়াদ থাকে। ৫ বছর ও ১০ বছর মেয়াদী।
পরিশেষে কিছু কথা
স্টুডেন্ট পাসপোর্ট করার নিয়ম সম্পর্কে জানানো হলো, আশা করি শিক্ষার্থীরা যারা দেশের বাইরে যাওয়ার পরিকল্পনা করছে বা ভবিষতে যাবে তাদের বেশ উপকৃত করেছে কন্টেন্টটি। তাছাটা পাসপোর্ট ও ভিসা সম্পর্কে আরো বিস্তারিত তথ্যের পাশাপাশি প্রতিটি দেশের ভিসার সকল তথ্য জানতে বাংলা আলো ওয়েবসাইতের ভিসা ক্যাটাগরিটি অনুসরণ করুন। ধন্যবাদ।