হেলথ টিপস : স্বাস্থ্য রক্ষায় আপনার করনীয় | সুস্থ যদি থাকতে চান

0
15

বর্তমানে ডায়বেটিস, প্রেসার, কোষ্ঠকাঠিন্যের মতো রোগ অনিয়ন্ত্রিত খাদ্যাভ্যাস এর কারণে হয়ে থাকে। তাই স্বাস্থ্য রক্ষায় ও রোগ প্রতিরোধে করনীয় উপায় সংক্রান্ত এই আর্টিকেল।

সুন্দর জীবটা দুর্বিষহ হয়ে যায়, যখন আমাদের শরীর স্বাস্থ্যের অবস্থা শোচনীয় থাকে। আনন্দময় জীবনযাপনের জন্য সুস্থ থাকা জরুরি।

আজকাল ছোট থেকে বড় – প্রায় সবারই ক্ষেত্রে রোগে আক্রান্ত থাকতে দেখা যায়। জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন করার মাধ্যমে সুস্থ জীবনযাপন করা সম্ভব।

স্বাস্থ্য যেন ভাল থাকে, সে জন্য আপনাকে উদ্যোগী হতে হবে। আমাদের আজকের বিষয় হলো – স্বাস্থ্য রক্ষায় আপনার করণীয়। তো চলুন সে করণীয়গুলো একে একে জেনে নিইঃ

খাবার বুঝেশুনে খান

আমাদের মধ্যে এমন অনেকেই আছেন, যারা সারাদিন বাছবিচার ছাড়াই বিভিন্ন রকম খাবার খান। স্বাস্থ্যকর খাবারের চেয়ে বেশি বাইরের অস্বাস্থ্যকর খাবারটা তুলনামূলক অনেক বেশি খেয়ে থাকেন।

ফলে শরীরে রোগ বাসা বাঁধে। গ্যাস্ট্রিক, আলসার এবং কোষ্ঠকাঠিন্য হওয়ার প্রবল সম্ভাবনা থাকে। গ্যাস্ট্রিক এবং কোষ্ঠকাঠিন্যে ভোগা রোগী সমাজে অহরহ।

এসব রোগ থেকে বাঁচার জন্য মানসম্মত খাবার খেতে হবে। যেমনঃ বিভিন্ন ফল, সবজি। এছাড়া খালিপেটে চা, কফি খাওয়া বর্জন করতে হবে।

বিভিন্ন ধরনের কোমল পানীয়, যেমন – কোকাকোলা, স্প্রাইট এ জাতীয় ড্রিংকস খাওয়া বাদ দিতে হবে। খালিপেটে তো দূরের কথা, ভরা পেটেও এসব খাবেন না। শরীরে প্রচুর ক্ষতি করে এগুলো। তাই এসমস্ত খাবার পরিহার করে চলুন।

সাপ্তাহিক খাদ্যতালিকা মেনে চলুন

সপ্তাহে কতদিন কি খাবেন – এ ব্যাপারে একটা চার্ট করে নিতে পারেন। আপনার খাবারে যেন বিভিন্ন ধরনের শাকসবজি এবং নানা পদের ফলমূল থাকে – সেটা খেয়াল রাখুন।

তৈলাক্ত এবং গুরুপাক জাতীয় খাবার, যেমন, – ভাজাপোড়া খাদ্যতালিকা থেকে বাদ দিন। এছাড়া আপনার খাদ্যাতালিকা এমনভাবে করুন, যাতে খাবারে রকমফের থাকে।

লন্ডন কিংস কলেজের গবেষক ডাক্তার মেগান রসির মতে, শুধুমাত্র বেশি বেশি সবজি ও ফল খাওয়াই যথেষ্ট নয়। বরং তার মধ্যে দরকার রকমফের।

তিনি বলেন, প্রতি সপ্তাহে সব ধরন মিলিয়ে যদি কমপক্ষে ৩০ রকমের সবজি ও ফল খাওয়া যায়, তবে তা স্বাস্থ্যের জন্য খুবই ভালো।

তাই আপনার সাপ্তাহিক খাদ্যের চার্ট, এ বিষয়গুলো খেয়াল রেখে তৈরি করুন এবং অবহেলা ছাড়া তা মেনে চলুন।

পর্যাপ্ত বিশুদ্ধ পানি পান করুন

শুধুমাত্র স্বাস্থ্যের জন্য উপকারি খাবার খেয়ে যাওয়াটাই যথেষ্ট নয়। বরং সেই সাথে পর্যাপ্ত পানিও পান করতে হবে। কারণ, স্বাস্থ্যকর বিভিন্ন খাবার, যেমন – বিভিন্ন ধরনের শাকসবজি হজমের জন্য প্রচুর পানি প্রয়োজন।

অনেক ডাক্তারের মতে, একজন প্রাপ্তবয়ষ্ক ব্যক্তির জন্য প্রতিদিন কমপক্ষে ২.৫ থেকে ৩ লিটার পানি পান করা জরুরি। কম পানি পান করার কারণে পেটে কোষ্ঠকাঠিন্যের মতো রোগ হতে পারে এবং পাইলসের মতো ভয়ঙ্কর রোগ হতে পারে।

এছাড়াও, শুধু তৃষ্ণা মেটানোর জন্যই নয়; বরং শরীরের আদ্রতা ধরে রাখার জন্য পর্যাপ্ত পানি প্রয়োজন। শরীরের মধ্যে অভ্যন্তরীণ জলীয় চাহিদা পূরণ করে অন্যান্য কাজের জন্যও পানি দরকার।

তাই পানি পানে সচেতন হোন। কতটুকু আকারের গ্লাসে পানি পান করছেন সেটা দেখুন। কাচের গ্লাসে পানি পান করার চেষ্টা করুন। প্রতিদিন কমপক্ষে ১০ গ্লাস পানি করুন।

ঘুমে অবহেলা বন্ধ করুন

আমরা অনেকেই সারাদিন কাজে ব্যস্ত থাকি। আবার রাতে দেরি করে ঘুমাতে যাই। অনেকে আবার কাজই করেন সারারাত জেগে। রাতে মোটেই ঘুমান না।

এটি একটি মারাত্মক ভুল। আমাদের শরীর একটা যন্ত্রের মতো। কাজের পাশাপাশি এটির দরকার পর্যাপ্ত পরিমানে বিশ্রামের। এজন্য ঘুম খুব গুরুত্বপূর্ণ।

রাত দশটা থেকে দুইটা পর্যন্ত হলো ঘুমের জন্য উপকারি একটি সময়। তাই রাতে ঘুমানোর অভ্যাস করুন। কমপক্ষে ছয় ঘন্টা ঘুমান।

পরে আরও ঘুমের দরকার হলে দুপুরে খাওয়াদাওয়া করার পর কিছুক্ষণ হেটে তারপর ঘুমাতে পারেন। সারারাত্রি জেগে থাকা পরিহার করুন।

আরো পড়ুন : চোখ ভালো রাখতে করনীয় ৮ টি কার্যকর টিপস

একজন প্রাপ্তবয়ষ্ক মানুষের জন্য প্রতিদিন মোট কমপক্ষে ৮ ঘন্টা ঘুমানো জরুরি। ঘুমে অবহেলা করলে ও রাত জাগলে বিভিন্ন রোগ হয়। যেমনঃ নতুন জিনিস শেখার ক্ষমতা কমে যায়, মনে দ্বিধাদ্বন্দের রোগ হয় ইত্যাদি।

সুতরাং, রাত জাগা পরিহার করুন। রাতে কাজ করতে চাইলে ঘুম থেকে শেষ রাতে উঠে কাজ করতে পারেন।

কিছু হলেই আন্দাজে মেডিসিন নয়

আমরা অধিকাংশ মানুষই স্বাস্থ্যের প্রতি বেশ উদাসীন। অনেকেই ভাবে, যেভাবে ইচ্ছা জীবনযাপন করি, পরে রোগ হলে ডিসপেনসারিতে গিয়ে ওষুধ নিলেই হবে। বিভিন্ন মানুষের পরামর্শে তারা ওষুধ খায় ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়াই।

এটাও একটা মারত্মক ভুল। এটা মানুষকে আরো বড় রোগ এবং মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়। সবার রোগের জন্য সবসময় সাধারণত একই ওষুধ প্রযোজ্য হয়না।

আপনি স্বাস্থ্যের প্রতি খেয়াল রাখুন। যদি এরপর কোনো রোগ হয়, তাহলে রেজিস্টার্ড ডাক্তারের পরামর্শ ব্যতীত কোনো মেডিসিন নিবেন না।

স্বাস্থ্য রক্ষায় করণীয়গুলো ঠিকমতো মেনে চললে রোগের পরিমাণ অনেক কমে যাবে ইনশা আল্লাহ্। তাই সচেতন হোন।

নিয়মিত ব্যায়াম করুন

সুস্বাস্থ্যের জন্য আপনার গুরুত্বপূর্ণ একটি করণীয় হলো নিয়মিত ব্যায়াম করা। ব্যায়াম করলে স্বাস্থ্য ভালো থাকে এবং শরীরে রোগের পরিমাণ কমে যায়।

তাই প্রতিদিন ভোরে ফ্রী হ্যান্ড এক্সারসাইজ করুন। কমপক্ষে ২০ মিনিট জগিং করুন। এছাড়া খোলা পরিবেশে দীর্ঘ নিঃশ্বাস নিন, সেটা ৫ সেকেন্ড ধরে রাখুন। অতঃপর ধীরে ধীরে ছেড়ে দিন।

এছাড়াও প্রতিদিন সঠিক নিয়মে পুশআপ করবেন। এ ব্যাপারে আরও বিস্তারিত জানতে গুগল এবং ইউটিউব সার্চ করুন। ব্যায়াম করার পর পর্যাপ্ত পানি পান করবেন অবশ্যই.

হতাশা এবং দুশ্চিন্তা পরিহার করুন

আমরা অনেকেই বিভিন্ন কারণে হতাশ হই এবং দুশ্চিন্তা করি। এটা স্বাস্থ্য রক্ষার সম্পূর্ণ বিপরীত। সুস্থতার জন্য ডিপ্রেশনমুক্ত থাকা জরুরি।

নিজেকে ভাল কাজে ব্যস্ত রাখুন। ছুটির দিনে রিফ্রেশমেন্টের জন্য ঘুরতে পারেন বিভিন্ন সুন্দর জায়গায়। হতাশ হবেন না। অতীত নিয়ে কষ্ট পাওয়া নিরর্থক।

বরং আপনি অতীত থেকে শিক্ষা নিয়ে আপনার জীবনে সেগুলো মেনে চলুন। পরিশ্রমী এবং ধৈর্য্যশীল হোন। হাসিখুশি থাকার চেষ্টা করুন। শরীরের সুস্থতার জন্য মানসিক সুস্থতাও জরুরি।

নেশাদ্রব্য পরিহার করতে হবে অবশ্যই

যদি কোনো প্রকার নেশাদ্রব্য সেবন করার এবং ধূমপান করার অভ্যাস থাকে, তাহলে তা অবশ্যই ত্যাগ করতে হবে। না হলে স্বাস্থ্য রক্ষায় করণীয় কাজগুলো করা মূল্যহীন।

তাই আপনাকে সব রকমের বাজে অভ্যাস থেকে দূরে থাকতে হবে। শুধু ধূমপানই নয় বরং জর্দা খাওয়াও পরিহার করতে হবে। কেননা, জর্দা ভয়ঙ্কর ক্ষতি করে, যা হয়তো আমরা অনেকেই জানি না।

আমাদের সমাজে পানের সাথে জর্দা খাওয়া ব্যক্তির সংখ্যা নেহায়েৎ কম নয়। অথচ তারা হয়তো জানেই না যে, স্বাস্থ্যের জন্য কতটা ক্ষতিকর এই জর্দা। তাই সাবধান হোন।

উপরোক্ত করণীয়গুলো নিয়মিত মেইনটেইন করে চলুন। তাহলে শরীর সুস্থ এবং রোগমুক্ত হবে ইনশা আল্লাহ্। ধীরে ধীরে বাজে অভ্যাসগুলো ত্যাগ করুন এবং স্বাস্থ্যের প্রতি খেয়াল রাখুন।

 

Visited 4 times, 1 visit(s) today

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here