হুমায়ূন আহমেদের গল্পের বই এর তালিকা । সেরা ৫ টি গল্পের বইয়ের রিভিউ ও সারসংক্ষেপ

0
89
হুমায়ূন আহমেদের গল্পের বই এর তালিক

হুমায়ূন আহমেদের গল্পের বই এর সংখ্যা অনেক যার মধ্যে বাছাইকৃত সেরা ও জনপ্রিয় উপন্যাস গুলোর মধ্য থেকে সেরা ৫ টি বইয়ের রিভিউ ও আলোচনা থাকছে এই আর্টিকেলে।  

কথার জাদুকর হুমায়ূন আহমদকে চিনে না এমন বই প্রেমী পাওয়া মুশকিল। হুমায়ূন আহমেদের সাহিত্য যুবকদের বৃষ্টি আর জোৎস্নাকে ভালোবাসতে শিখিয়েছে। এমনিতে তার লেখা সব কয়টি বইটি খুব প্রিয় তার পাঠক সমাজের কাছে তবে এগুলো মধ্য থেকে সেরা ৫ টি বই নিয়ে আলোচনা করবো যা পড়লে হয়তো আপনি প্রেমে পড়ে যাবেন হুমায়ূন আহমেদের লেখার। 

গল্প বলে শুরু করলেও ঠিক গল্প নয়। হুমায়ূন আহমেদ এর লেখা বেশ কিছু সিরিজ ও উপন্যাসের মধ্য থেকে যেগুলো বেশ জনপ্রিয়তা লাভ করেছে সেগুলোর মধ্যে বিশেষ বিশেশ ৫ টি বইয়ের সম্পর্কে জানাবো যা পড়লে আপনি বুজে জাবেন কেনো তাকে কথার জাদুকর বলা হয়ে থাকে। 

হুমায়ূন আহমেদের গল্পের বই এর তালিকা 

বিংশ শতাব্দীর লেখকদের মধ্যে হুমায়ূন আহমেদ সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয়। সে সুবাদে তার লেখা বইয়ের সংখ্যাও কম নয়, প্রায় ৩০০ এর মতন। তার প্রতিটি লিখা বাংলা সাহিত্যের নতুন ধারা সৃষ্টি করেছে। যার কারনে তার হাতে লেখা শ্রেষ্ঠ বই গুলোর সংখ্যাও কম নয়। তবে এখানে কিছু বইয়ের তালিকা করছি যা পড়লে আপনার অবশ্যই ভালো লাগবে। 

দেবী 

১৯৮৫ সালে রহস্যময় গল্পের দ্বারা তৈরি হয় দেবী নামক উপন্যাসটি যা হুমায়ূন আহমেদের আরেক নতুন সৃষ্টি মিসিল আলীকে পাঠকের মাধ্যে তুলে ধরে। মিসির আলি যুক্তির মাধ্যমে রহস্যের উদ্ঘাটন আপনাকে বেশ মাতিয়ে রাখবে গল্পের মধ্যে। ঘাটন করার গল্প গুলো আপনাকে শান্তি দিবে। দেবী উপন্যাসে মিসির আলি রানু নামে এক শ্রুতি ভ্রমগ্রস্থ ও এক্সট্রা সেন্সরি পারসেপশন সমৃদ্ধ তরুণীর রহস্য উন্মোচনের চেষ্টা করেন।  

মিসির আলী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের খন্ডকালীন শিক্ষক। উপন্যাসটির মধ্যে মিসির আলীর ছাত্রী নীলার প্রতিবেশি রানুর গল্প নিয়েই সাজানো। রানু নিজের আশেপাশে কিছু একটার উপস্থিতি অনুভব করে যা ক্রমাগত বাড়তেই থাকে। তার স্বামী প্রাথমিক ভাবে এটাকে তোয়াক্কা না করলেও পড়ে গিয়ে ঘটে মহা বিপদে। উক্ত কেসটি মিসির আলী হাতে নেন এবং খুটিয়ে খুটিয়ে প্রতিটা বিষয়ের জট খুলেন কিন্তু আদৌও কি করতে পেরেছিলেন? জানতে উপন্যাসটি পড়তে পারেন। আমার বিশ্বাস আপনি মিসির আলীর যেকোনো একটি গল্প দিয়ে শুরু করলে তা আপনাকে সিরিজের শেষ অব্দি নিয়ে আনবে। 

হুমায়ূন আহমেদের গল্পের বই গুলোর মধ্যে এই উপন্যাসটি অন্যতম। যার অবলম্বনে ২০১৮ সালে একই নামে নির্মান করা হয়েছে সিনেমা যেখানে মিসির আলীর চরিত্রে অভিনয় করেছে চঞ্চল চৌধুরি আর রানুর চরিত্রে দেখা গেছে জয়া হাসানকে। 

ময়ূরাক্ষী 

হিমু সিরিজের প্রথম উপন্যাসটিই হচ্ছে ময়ূরাক্ষী। এর দ্বারা শুরু হিমুর পথ চলা এবং তার পরের গল্প সবারই জানা। বাংলা সাহিত্যে এক অমর নাম হয়ে গেছে হিমুর। যেখানেই হিমু সেখানেই যেনো নাম চলে আসে হুমায়ূন আহমেদের। ময়ূরাক্ষী উপন্যাসটি প্রথম প্রকাশিত হয় ১৯৯৯ সালে। গল্পটি কিছুটা এমন যে, হিমুর বাবা মনে করতেন যদি ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়র তৈরি করার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকে থাকে তবে অবশ্যই একজন মহাপুরুষ তৈরি করার জন্য একটা বিশ্ববিদ্যালয় থাকা প্রয়োজন। এবং পরবর্তীতে তিনি তৈরি করলেনও যার একমাত্র স্টুডেন্ট তার নিজের ছেলে হিমু। 

হিমুর বাবার দেয়া উপদেশ, নিষেদ করা কাজ আপনাকে নতুন করে ভাবাবে, ভাবিয়েছে সে সকল পাঠকদের যারা কিনা হিমু ভক্ত। ময়ূরাক্ষী উপন্যাস প্রকাশের পরেই হিমুর প্রতি মানুষের ঝোক বেড়ে যায় যার পর্যায়ক্রমে আসে নতুন আরো উপন্যাস এবং পরিণত হয় একটি সিরিজে। আপনি যদি হুমায়ূন আহমেদের গল্পের বই পড়া শুরু করতে চান তবে নির্সন্দেহে এটা দিয়ে শুরু করতে পারেন। 

দারুচিনি দ্বীপ 

হুমায়ূন আহমেদের গল্পের বই এর তালিকায় এবার রয়েছে দারুচিনি দ্বীপ। এটি হুমায়ূন আহমেদের লিখা শুভ্র সিরিজের বহুল পাঠিত বই। ১৯৯১ সালে প্রথমবারের মত বই মেলায় প্রকাশিত হলে বইটি পাঠক সমাজে ব্যাপক খ্যাতি অর্জন করে। পুরো উপন্যাস জুরে শুভ্র ও তাদের বন্ধুদের মিলে বাংলাদেশের সেন্টমার্টিন যাওয়াকে কেন্দ্র করে আলোচনা ও প্লানিং করতে দেখা যায়। যদিও উপন্যাসটির শেষ দিকে সেন্টমার্টিন পর্যান্ত যাওয়া দেখানো হয়নি তবে শেষমেশ সকলে মিলে ট্রেনে উঠা অব্দি দেখিয়েই ইতি ঘটানো হয়। 

উপন্যাসটিতে বন্ধুদের মাঝে গড়ে উঠা ভ্রমণের পরিকল্পনা ও সে পথে আসা বাধা গুলো এমন ভাবে উপর আলোকপাত করা হয়েছে যা কিনা প্রতিটা বন্ধুমহল এখনও মিল খুজে পাবে। উক্ত উপন্যাসের আলোকে ভিত্তি করে ২০০৭ সালে একই নামে বাংলা চলচিত্র নির্মান করা হয়েছে যেখানে অভিনয় করেছে রিয়াজ, পুর্নিমা, মোশারফ করিমের মত তারকারা। 

মধ্যাহ্ন 

হুমায়ূন আহমেদের হাতে লেখা শ্রেষ্ঠ উপন্যাস গুলোর মধ্যে মধ্যাহ্ন অন্যতম। মোট দুই খন্ডের উপন্যাসটি প্রথম খন্ডটি ২০০৬ সালে বং ২য় খন্ড ২০০৭ সালে প্রকাশিত হয়। মোট ৪০৮ পৃষ্ঠার উপন্যাসটি গড়া হয় ১৯০৫ সালে ইতিহাস কাঠামোর উপর ভিত্তি করে। লেখকের জন্ম পরবর্তী এবং বিংশ শতাব্দীর প্রথম ভাগের গ্রামীন বাংলার আলোকে তৈরি করা হয়েছে। এটি ইতিহাস সম্পর্কে জানালেও মোটেও ঐতিহাসিক কোনো উপন্যাস নয়। 

উপন্যাসে অন্যতম চরিত্র হরিচরণ সাহা, যিনি এক মুসলিম ছেলেকে আদর করার দায়ে সমাজ চুত্য হোন, পরবর্তীতে ঋষি সুলভ জীবন বেছে নেন। যার পরবর্তী পরিনিতি হয় মুসলিম হিসেবে এবং নাম রাখেন সিরাজুল ইসলাম। মধ্যাহ্নের শুরু থেকে শেষ অব্দি বিভিন্ন কাহিনির মাধ্যমে চলতে থাকে অব্যয়। উপন্যাসে বিশেষ পাওনা হিসেবে কখনো কখনো অতি অলৌকিক এবং ভৌত্তিক কর্মকান্ডের আচ পাওয়া যায়। এছাড়া উপন্যাসটিতে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলামের সংশ্লিষ্ট কিছু ঘটনা পাওয়া যায় যা উপন্যাসটিতে ভিন্ন মাত্রা এনে দিয়েছে। 

দিঘির জলে কার ছায়া গো 

যারা হিমু সিরিজ পড়েছেন বা পড়েননি তাদের কাছে বেশ প্রশংসা কুড়িয়েছেন হুমায়ূন আহমেদ এর “ দিঘির জলে কার ছায়া গো “ বইটি। বইটির মূল চরিত্রে থাকা মুহিব হলো হিমু পাগল। তার নামের উল্টো করলে হিমু হয়, হয়তো এটাই কারন অথবা অন্যকিছু। তবে সেটা মূল বিষয় নয়, মূল বিষয় হচ্ছে সে হিমু হতে চায়, হলুদ রঙের পাঞ্জাবি পড়ে খালি পায়ে হাটতে চায়। যারা হিমু সিরিজ পড়েছেন, যাদের হিমু চরিত্রটা ভালো লেগেছে তাদের প্রায় সকলেই কোনো না কোনো সময়ে হিমু হওয়ার স্বাদ জেগেছে। মুহিও তাদের বিপরীতে নয়। 

দিঘির জলে কার ছায়া গো মূলত একটি নাটকের নাম যেই নাটকে মুহিব কাজ করে এবং সেখান থেকে বেশ জনপ্রিয়তা পায় বলে কাজটি আর ছড়তে চায় না। মুহিবের সাথে হিমুর আরো এক দিন থেকে মিল রয়েছে। হিমুর যেমন রুপা আছে তেমনই মুহিবের আছে লীলা, যেনো রুপাই লীলা। কিন্তু গল্পের পর্যাক্রয়ে এখানে লীলার বিয়ে ঠিক হয়ে যায়। অন্যদিকে মুহিবের বাবা কারনবসত ধর্ষন মামলায় জেলে চলে যায়। মুহিব তার বাবাকে বাচাতে ছুটে এদিক ওদিক, বাড়ি বিক্রি করে ফেলে। এভাবেই এগোচ্ছে গল্প। জনপ্রিয় এই বইটি যেকোনো লাইব্রেরিতে অথবা অনলাইনে বইয়ের শপ যেমনঃ রকমারিতে পাওয়া যাবে। তাছাড়া আছে পিডিএফ এবং অডিও বুক ও শুনতে পারবেন। হাতে সময় থাকলে অবশ্যই মিস করা উচিৎ হবে না চমৎকার এই বইটি পড়ার থেকে। 

পরিশেষে, এই ছিলো হুমায়ূন আহমেদের গল্পের বই এর তালিকা ও সেই বই গুলোর খুবই শর্ট করে রিভিউ। অনেক গুলো ভালো বইয়ের মাঝে ৫ টি সিলেক্ট করা খুবই কষ্টসাধ্য কাজ কারন কোনোটা থেকে কোনোটা কম নয় তবুও করেছি এবং আশা করছি এই বই গুলো পড়ার মাধ্যমে হারিয়ে যেতে পারেন হুমায়ূন আহমেদের গল্পের দুনিয়ায়। পরবর্তীতে স্যার হুমায়ূন আহমেদের আরো বই এর রিভিউ ও সারসংক্ষেপ উপস্থাপন করা হবে যা হুমায়ূন আহমেদ নামক ট্যাগ লিস্টে পেয়ে যাবেন। 

Visited 13 times, 1 visit(s) today

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here