মার্কেটিং সাধারণত দুইভাবে করা হয়ে থাকে। অনলাইন মার্কেটিং ও অফলাইন মার্কেটিং। এই দুই ধরণের মার্কেটিং এ বেশ তফাৎ রয়েছে, যদিও উদ্দেশ্য একই।
মার্কেটিং শব্দটি একটি ইংরেজি শব্দ (Marketing), যার বাংলা অর্থ হলো বাজারজাতকরন। মূলত, কোনো সার্ভিস বা প্রোডাক্টকে বিক্রয়ের উদ্দেশ্যে মানুষের নিকট তুলে ধরার যাবতীয় কৌশলই হলো মার্কেটিং।
অনেকেই হয়তো ভাবতে পারেন যে, মার্কেটিং মানে বোধ হয় পণ্য বিক্রয় করা। কিন্তু এটা ভুল ভাবনা। মার্কেটিং হলো পণ্য বা সার্ভিস কে মানুষের নিকট বিস্তারিত ভাবে তুলে ধরা।
তবে এটা সত্য যে মার্কেটিং এর সাথে সেলস বা বিক্রয়ের একটা যোগাযোগ আছে। মার্কেটিং এর উদ্দেশ্যই হলো বিক্রয় করা ও লাভ প্রাপ্তি। কিন্তু বিক্রয় করা মার্কেটিং এর সংজ্ঞা নয়।
তো চলুন আমরা এই দুই প্রকার মার্কেটিং সম্বন্ধে জেনে নেইঃ
অনলাইন মার্কেটিং কি?
ইন্টারনেটে কোনো প্রোডাক্ট বা সার্ভিস সম্পর্কে কৌশলগত প্রচারণা করাই হলো অনলাইন মার্কেটিং। যাতে উদ্দেশ্য থাকে, অনলাইনে মানুষকে উক্ত প্রোডাক্ট বা সার্ভিস গ্রহন করার ব্যাপারে ধারণা এবং তথ্য প্রদানের মাধ্যমে আগ্রহী করে তোলা।
বিভিন্নভাবে অনলাইন মার্কেটিং করা যায়। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো – সোশ্যাল মিডিয়া, ওয়েবসাইট, সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন, গুগল অ্যাডওয়ার্ডস ইত্যাদি।
বিভিন্ন সাইটগুলোতে বিজনেস রিলেটেড প্রোডাক্ট বা সার্ভিস গুলো কাঙ্খিত ভিজিটরদের কাছে বিক্রয়ের জন্য সুন্দরভাবে উপস্থাপন করা হয় অনলাইন মার্কেটিং প্রক্রিয়ায়।
উদাহরণস্বরূপ, বর্তমানে ফেসবুকে আমরা হয়তো প্রায়ই বিভিন্ন স্পন্সর্ড পোস্ট দেখি। কেউ পণ্য/প্রোডাক্ট বিষয়ে প্রচারণা চালাচ্ছে আবার কেউবা সার্ভিস প্রোভাইড করছে। এটাই হলো অনলাইন মার্কেটিং।
মানুষ ইন্টারনেটে বেশি বিচরণ করছে বর্তমান সময়ে। তাই সেখানে ব্যবসায়িক প্রচারণা ও লাভের জন্য একটা অনুকূল পরিবেশ রয়েছে। তুলনামূলক কম খরচে ঘরে বসেই অনলাইনে মার্কেটিং করা যায়। ফলে এর গ্রহনযোগ্যতাও বেশি।
অফলাইন মার্কেটিং কি?
অনেক আগের সময় থেকে আজ পর্যন্ত আমরা বিভিন্ন জায়গায় নানারকম প্রোডাক্ট বা সার্ভিসের প্রচারণা বা বিজ্ঞাপন দেখে থাকি। দেয়ালে পেইন্ট আকারে বিভিন্ন বিজ্ঞাপন, ব্যানার, পোস্টার, বিলবোর্ড ইত্যাদি স্থানে এমন প্রচারণা আজও কম নয়।
এটাই হলো অফলাইন মার্কেটিং প্রক্রিয়া। ব্যস্ততার এ সময়ে এসব বিজ্ঞাপনে মানুষ একটু কমই আকৃষ্ট হয়! মানুষ অনলাইন কেন্দ্রিক হয়ে যাওয়ায় অফলাইন মার্কেটিং এর বিষয়টাতে কম রেসপন্স মিলে।
এছাড়া রাস্তায় বিভিন্ন কোম্পানি কর্তৃক নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মীরা পণ্য বা সার্ভিসের প্রচারণা কৌশলের সাথে চালিয়ে থাকে। এর উদ্দেশ্য পণ্যের গ্রহনযোগ্যতা বাড়িয়ে তোলা।
কি আছে পণ্য বা সার্ভিসটিতে? কেন এটা ভাল? কেন দাম কম বা বেশি? – এই বিষয়গুলো স্পষ্টভাবে তুলে ধরে সেসব কর্মীরা। তবে সত্য কথাগুলো আকর্ষণীয় ভাবে তথ্যবহুল করে মানুষের কাছে তুলে ধরতে পারলে অফলাইন মার্কেটিং থেকেও কাঙ্খিত সাফল্য অর্জন অসম্ভব নয়।
অনলাইন ও অফলাইন মার্কেটিং এর মধ্যে পার্থক্য
উদ্দেশ্যগত দিক একই হলেও অনলাইন ও অফলাইন মার্কেটিং এর মধ্যে অনেক পার্থক্য রয়েছে। অনলাইন মার্কেটিং এ অফলাইন মার্কেটিং এর চেয়ে তুলনামূলক বেশি রেসপন্স পাওয়া যায়।
অফলাইন মার্কেটিং বলতে সাধারণত ট্রেডিশনাল মার্কেটিং কে বুঝানো হয়। টেলিভিশন, রেডিও, পত্রিকাসহ এ জাতীয় বিভিন্ন মাধ্যমে বিজ্ঞাপন দেয়া হয় বাজার গবেষণার ভিত্তিতে।
কিন্তু এ মার্কেটিং এ খরচটা বেশি পড়ে। কারণ আপনার প্রোডাক্ট বা সার্ভিসটি সবার জন্য প্রয়োজনীয় ও প্রযোজ্য নাও হতে পারে। কিন্তু অফলাইনে মার্কেটিং এর জন্য বিজ্ঞাপন দিতে গেলে ঠিকই সব মানুষের হিসাব ধরে চার্জ করা হয়!
বিষয়টা পরিষ্কারভাবে আপনার বুঝার স্বার্থে একটা উদাহরণ দেয়া যেতে পারে। ধরুন, আপনার ব্র্যান্ড আছে যেটা হলো পুরুষের জন্য, জেন্টস ফ্যাশন। তো স্বাভাবিকভাবে আপনার কাঙ্খিত কাস্টমার হলো ছেলেরা।
মেয়েরা এখানে বাদ পড়ছে। কিন্তু টেলিভিশন, রেডিও বা পত্রিকায় মার্কেটিং এর জন্য নারী পুরুষ নির্বিশেষে সবার হিসাব ধরেই চার্জ করা হয়ে থাকে!
অনলাইন মার্কেটিং এ আবার সুবিধা বেশি। কেননা এখানে অল্প খরচে কাঙ্খিত ক্রেতাদের কাছে পৌছানো যায়। আপনি যদি শুধু ছেলেদের কাছে প্রচারনা করতে চান, অনলাইনে সেটা সম্ভব। যেমনঃ ফেসবুক পেজ বুস্ট। এটাতে টার্গেট অডিয়েন্স করা যায়।
পত্রিকা বা টেলিভিশনে মার্কেটিং করার জন্য বিজ্ঞাপন দিতে যদি কয়েক লক্ষ টাকা লাগে, সে জায়গায় অনলাইন মার্কেটিং এর জন্য ৪/৫ হাজারই যথেষ্ট। ফেসবুকে মাত্র ৫ ডলার খরচ করেও বুস্ট করা যায়; যার বাংলেদেশি মূল্য ৫০০/- টাকারও কম!
সব শেষে বলবো, একটা প্রোডাক্ট বা সার্ভিস কে মানুষের নিকট পরিচিত করার জন্য অনলাইন আর অফলাইন – দুই মার্কেটিংই কার্যকর। অনলাইনে মানুষের উপস্থিতি বেশি বলে সেটার জনপ্রিয়তা, গ্রহনযোগ্যতা এমনকি সুযোগ-সুবিধাও বেশি। পরিকল্পনা ও সিদ্ধান্ত আপনার।