ভিসা কার্ড সম্পর্কে আমাদের সকলেরই জানা তবে ভিসা কার্ড করার নিয়ম সম্পর্কে অনেকেই অবগত নয়। তাই এই আর্টিকেলে জানাবো কিভাবে ভিসা কার্ড তৈরি করতে বা বানাতে পারবেন, পাশাপাশি ভিসা কার্ড সংক্রান্ত যাবতীয় সকল বিষয় নিয়েও আলোচনা করবো।
মুদ্রার প্রচলন প্রথম থেকেই শুরু ছিলো না, সভ্যতার ক্রমের ধারায় এটা মানুষের প্রয়োজনীয় বস্তু হয়ে গেছে। কিন্তু বর্তমানে আমরা দিন দিন আধুনিক হয়েই যাচ্ছি। একটা সময় মানুষ ধাতব মুদ্রা দিয়ে বিনিময়ের কার্জ সম্প্রাদন করতো, এর পর কাগজের মুদ্রার মাধ্যমে বিনিময় কার্জ শুরু হলো। তবে এটাকেও যখন মানুষ নিরাপদ ভাবে নিতে পারছে না তখনই আরো সিকিউর পথ হিসেবে চলে এসেছে কার্ড ব্যবহারের প্রয়োজন। ভিসা কার্ড এমন এক ধরনের কার্ড যার মাধ্যমে লেনদেন করা যায় সরাসরি অর্থ বিনিময় না করেই। আসুন জানি বিস্তারিত।
ভিসা কার্ড এর কাজ কি? ও ভিসা কার্ডের প্রকারভেদ
মূলত যে ধরনের কার্ডের মাধ্যমে যেকোনো সময়, যেকোনো স্থান থেকে যেকোনো ধরনের লেনদেন (যেমন – টাকা তোলা, টাকা জমা, কেনাকাটা, পেমেন্ট, বিল পরিশোধ সহ সব কিছু) করা যায় তাকে ভিসা কার্ড বলা হয়। ভিসা কার্ড অনেক ধরনের হয়ে থাকে যেগুলোর মধ্যে উল্লেখ্যযোগ্য হলো –
১. ভিসা ক্লাসিক কার্ড
২. ভিসা গোল্ড কার্ড
৩. ভিসা প্লাটিনাম কার্ড
৪. ভিসা সিগন্যাচার কার্ড
৫. ভিসা ইনফিনিটি কার্ড
আপনি আপনার চাহিদা মোতাবেক যেকোনো কার্ড বাছাই করে নিতে পারেন। প্রতিটা কার্ডই ভিসা কার্ড তবে ব্যবহারের লিমিট ও সুবিধা ভেদে কিছু পার্থক্য লক্ষনীয়। এবার জেনে নেয়া যাক ভিসা কার্ড দিয়ে কি কি করা যায় সেগুলো সম্পর্কে।
ভিসা কার্ড দিয়ে কি করা যায়
ভিসা কার্ডের মাধ্যমে যে সকল কাজ করা যায় তা নিয়ে কিছুক্ষন আগে এক বাক্যের বিবৃতি প্রকাশ করেছিলাম। এবার একটু বিস্তারিত বলা যাক। ভিসা কার্ডের মাধ্যমে আপনি কাজ গুলো করতে পারবেন সেগুলো হলোঃ
১) দেশের এমনকি দেশের বাইরেও যেকোনো এটিএম বুথ থেকে টাকা উত্তোলন করার জন্য ভিসা কার্ড অন্যন্য। বর্তমানে পৃথিবীতে প্রতিটা উন্নত অনুন্নত দেশেও ভিসা কার্ড ব্যবহার করার জন্য এটিএম বুথ ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে।
২) একসাথে থেকে অন্য স্থানে টাকা আদান প্রদান করার মত কাজেও ভিসা কার্ড ভুমিকা পালন করে। এমনকি আপনি যদি দেশের বাইরেও টাকা পাঠাতে চান তবেও তা সম্ভব।
৩) দেশে প্রচলিত অন্যান্য কার্ড গুলোতে যেমন নিষেধাজ্ঞা রয়েছে, ভিসা কার্ডের ক্ষেত্রে তেমন কোনো নিষেধাজ্ঞা নেই। আপনি যেকোনো সময়, যেকোনো এমাউন্টের অর্থ যেকোনো কারেন্সিতে ব্যবহার করতে পারেন। এই কার্ডের সবচেয়ে বড় ব্যবহৃত সুবিধা হলো এটিতে রয়েছে ডুয়েল কারেন্সি।
৪) যেহেতু এই কার্ডে রয়েছে ডুয়েল কারেন্সি তাই উক্ত কার্ডের মাধ্যমে দেশের বাইরেই অনলাইন মার্কেটপ্লেস থেকে পেমেন্ট গ্রহন ও ই-কমার্স সাইট গুলো থেকে কেনাকাটার জন্য পেমেন্ট প্রদান করাও সম্ভব হয়ে থাকবে।
৫) তাছাড়া দেশে যত প্রকার অনলাইন ভিত্তিক লেনদেন আছে সেই সকল লেনদেন করতে সক্ষন হবেন যদি আপনার কাছে একটি ভিসা কার্ড থেকে থাকে।
৬) অন্যান্য যে কার্ড গুলো রয়েছে (যেমন – ডেবিট কার্ড, ক্রেডিট কার্ড, শপিং কার্ড ইত্যাদি) ওই গুলোতে লক্ষনীয় যে আপনি যে ব্যাংকের কার্ড গ্রহন করবেন; কেবল ঐ ব্যাংকের যেকোনো এটিএম বুথ থেকেই টাকা তুলতে পারবেন। কিন্তু আপনার কাছে যদি ভিসা কার্ড থেকে থাকে তবে যেকোনো স্থান থেকে যেকোনো এটিএম বুথ থেকেই টাকা তোলা যাবে।
অনেক তো জানা হলো ভিসা কার্ডের সম্পর্কে। এবার তবে জেনে নেয়া যাক কিভাবে ভিসা কার্ড করা যায় বা ভিসা কার্ড করার নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত।
ভিসা কার্ড করার নিয়ম (বিস্তারিত)
এতো সময় ধরে যে কার্ডটি সম্পর্কে পড়ে আসছিলেন, নিশ্চই এবার সেই কার্ড কিভাবে পাওয়া যায় সেই সম্পর্কে জানতে ইচ্ছুক হচ্ছেন। চিন্তা নেই, এখন বললো সেই বিষয়েই। জনপ্রিয়তার শীর্ষে থাকা কার্ডটি চাইলেই খুব অল্প কিছু স্টেপ পুরণের মাধ্যমেই নিজের হাতে নিয়ে আসতে পারেন। আমাদের দেশীয় অনেক গুলো ব্যাংক রয়েছে যেখানে খুব অল্প পরিমাণের চার্জ প্রদানের মাধ্যমে আপনি ভিসা কার্ড গ্রহন করতে পারবেন। এক্ষেত্রে উল্লেখ্যযোগ্য কিছু ব্যাংকের নাম হলো:
- ডাচ বাংলা ব্যাংক লিমিটেড
- ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড
- এবি ব্যাংক লিমিটেড
- শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড
- ব্যাংক এশিয়া ইত্যাদি
তাছাড়াও সরকারি – বেসরকারি আরো অনেক ব্যাংক রয়েছে যেখানে সহজেই ভিসা কার্ডের জন্য আবেদন ও সেখান থেকেই গ্রহন করার সুবিধা পাওয়া যায়।
ভিসা কার্ড পাওয়ার প্রসেস সমূহ
প্রথমেই আপনাকে নিদিষ্ট ব্যাংকে চলে যেতে হবে যেখানে গ্রাহকদের ভিসা কার্ডের সুবিধা দিয়ে থাকে। সেখান উপস্থিত হয়ে কর্মরত লোকদের জানান দিয়ে হবে উক্ত বিষয়ে। আপনি যদি ওই ব্যাংকে পূর্ব থেকেই গ্রাহক হয়ে থাকেন তাহলে তো আপনার একটি একাউন্ট করাই আছে। আর যদি তা না হয়ে থাকে তবে প্রথমেই উক্ত ব্যাংকে একটি একাউন্ট করতে বলা হবে। কোন ব্যাংকের একাউন্ট কিভাবে খুলবেন অথবা ব্যাংক একাউন্ট খোলার জন্য কি কি ডকুমেন্টস প্রয়োজন হয় তা জানতে এখানে ক্লিক করুন।
তবে এমনিতে যে কোনো ডকুমেন্টস প্রয়োজন হয়েই থাকে তা হলো – জাতীয় পরিচয় পত্রের ফটোকপি, ২ কপি ছবি, নমিনির ইনফরমেশন, ব্যাংক একাউন্টের তথ্য সমূহ। এসব তথ্য প্রদানের পর ব্যাংকের এজেন্টের মাধ্যমে একাউন্ট তৈরি ও ভিসা কার্ড গ্রহন করতে পারেন।
ভিসা কার্ড দেয়ার পর আপনাকে একটি কোড নাম্বার দেয়া হবে যেটা এটিএম বুথ থেকে পরবর্তীতে চেঞ্জ করে নিবেন। আপনার কার্ডের পিন নাম্বার একান্ত ব্যক্তিগত ব্যাপার। এটা কখনই কারো সাথে শেয়ার করবেন না। কারন কার্ড থেকে বা কার্ডের মাধ্যমে টাকা উত্তোলনের জন্য কেবল পিন নাম্বার জানাই যথেষ্ট।
এবং এই ছিলো ভিসা কার্ড করার নিয়ম গুলো। তবে এখানেই সকল বিষয় গুলো শেষ নয়। জানার আছে আরো অনেক বিষয়ই আপনি যদি প্রকৃত পক্ষেই ভিসা কার্ড গ্রহন করতে চান তবে আপনার অবশ্যই উক্ত বিষয় গুলো সম্পর্কে অবগত থাকা প্রয়োজন। এতে করে আপনার আর্থিক লেনদেন গুলো সুন্দর ও সেফ ভাবে সংগঠিত হয়ে থাকবে।
ভিসা কার্ড ও মাস্টার কার্ডের পার্থক্য কি
এক কথায় যদি উত্তর দেয়া হয় তাহলে বলতে হচ্ছে ভিসা কার্ড ও মাস্টার কার্ডের মধ্যে তেমন উল্লেখযোগ্য কোনো পার্থক্যই নেই বললেই চলে। এটা এমন যে, একটা হলো কোকা-কোলা এবং অন্যটি হলো পেপসি। কেউ কারো থেকে কম যায় না, এবার সেটা সার্ভিসের দিন থেকে হোক বা গ্রহণযোগ্যতা।
তবে ব্যবহারের দিক থেকে ইউজার এক্সপ্রিরিয়ান্স ভিসা কার্ডের উপর ভালো বেশি। দুইটি কার্ডই ইন্টারনেশনাল পর্যায়ে ব্যবহার করা যায়। সিকিউরিটির দিক থেকে উভয়ই ভালো কারন দুটিই চলে কম্পিউটারের প্রোগ্রামের উপর নির্ভর করে। তাই বলা যাচ্ছে মাস্টার কার্ড ও ভিসা কার্ডের মধ্যে তেমন উল্লেখ্যযোগ্য কোনো পার্থক্য নেই। তবে আপনি জেনে নিতে পারেন ডেবিট কার্ড ও ক্রেডিট কার্ডের মধ্যে পার্থক্য গুলো সম্পর্কে।
ভিসা কার্ড থেকে বিকাশে টাকা আনার নিয়ম
Bkash সম্পর্কে আমরা সকলেই অবগত। মোবাইল ব্যাংকিং এর দিক থেকে যে বর্তমানে অনেকটা রাজ করছে দেশের অর্থনীতিতে। সে যাই হোক, আমাদের বিষয় যেহেতু ভিসা কার্ড, তাই বিকাশে টাকা আনার জিন্য ভিসা কার্ডের কিভাবে ব্যবহার করা যায় সেই বিষয়েই এখন দেখবো।
- উক্ত কাজের জন্যই প্রথমে বিকাশ অ্যাপে লগিন করে নিতে হবে।
- ড্যাশবোর্ড থেকে “ADD MONEY” অপশনে ক্লিক করতে হবে।
- এবার নতুন পেজ থেকে কার্ড টু বিকাশ এবং পরবর্তীতে ভিসা অপশন সিলেক্ট করে দিতে হবে।
- যে বিকাশ নাম্বারে টাকা পাঠাবেন সেটা সিলেক্ট করে দিতে হবে, পাশাপাশি কত টাকা পাঠাবেন সেই বিষয়েও জানিয়ে দিতে হবে।
- তার পরের ধাপটি হবে আপনার ভিসা কার্ডের তথ্য দেয়ার। সঠিক ভাবে পুরন করে পে অপশনে ক্লিক করলেই টাকা চলে যাবে নিদিষ্ট বিকাশ একাউন্টে।
ভিসা কার্ড সম্পর্কে FAQ
১) ভিসা কার্ড করতে কত টাকা লাগে?
এই প্রশ্নের সঠিক জবাব মূলত পরিবর্তনশীল। কারন এটা বিভিন্ন ব্যাংকের টার্ম এন্ড কন্ডিশনের উপর নির্ভর করে থাকে। আপনি যে ব্যাংক থেকে ভিসা কার্ডটি গ্রহন করবেন সেই ব্যাংকে নির্ধারিত চার্জের অনুযায়ী আপনার কাছ থেকে ভিসা কার্ডের চার্জ ধার্য করা হবে। তবে প্রাথমিক ধারনার জন্য বলে রাখছি – ভিসা কার্ড করার জন্য প্রায় ১ হাজার টাকার আশেপাশে কোনো এক এমাউন্টের প্রয়োজন হয়।
২) ভিসা ক্রেডিট কার্ড কিভাবে করতে হয়?
ভিসা কার্ড মূলত ডেবিট কার্ডের মত কাজ করে থাকে। আপনি ক্রেডিট ভিসা কার্ড করতে পারবেন না। আপনার যদি ক্রেডিট কার্ডের প্রয়োজন হয় তবে দেখে নিন ক্রেডিট কার্ড করার নিয়ম।
৩) ভিসা কার্ড দিয়ে সর্বোচ্চ কত টাকা তোলা যায়?
ভিসা কার্ড দিয়ে একজন গ্রাহক সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকা ডেইলি উত্তোলন করতে পারবেন।
আর্টিকেল শেষে কিছু কথা
অতঃপর সমাপ্ত ঘটলো বহুল কাঙ্ক্ষিত ভিসা কার্ড করার নিয়ম সংক্রান্ত আর্টিকেলটির। এখানে উল্লেখ্য ছিলো ভিসা কার্ড কি, ভিসা কার্ডের ব্যবহার ও কেনো অন্যান্য কার্ড থেকে এই কার্ডটি আলাদা সেই বিষয়ে। অতঃপর ভিসা কার্ড করার নিয়ম সম্পর্কে জানানোর মাধ্যমে আর্টিকেলের যথার্থা প্রদান করা হয়েছে। ব্যাংকিং বিষয়ে আরো অন্যান্য বিষয় জানতে দেখতে পারেন বাংলা আলোর ব্যাংক ক্যাটাগরি।